।। কাজী মুফতি আতাউর রহমান ।।
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের যিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন অত:পর জ্ঞানদান করেছেন। দুরুদ ও সালাম শেষনবী রাহমাতুল্লিল আলামিনের উপর।
ইলিমের গুরুত্বও প্রয়োজনীয়তা : ইলম আরবী শব্দ। অর্থ জ্ঞান। ইসলামের পরিভাষায় কোরআনও হাদীস ভিত্তিক এমন জ্ঞান অন্বেষণ করা যার মাধ্যমে ইসলামি জীবন ব্যবস্থার উপর চলা সহজ হয়। বিদ্যা হল আলোক স্বরূপ।
আলো যেমন অন্ধকার দূরিভূত করে তেমনি বিদ্যা অজ্ঞানতার অন্ধকার দূর করে। জ্ঞান সত্য সুন্দর কল্যানের পথকে আলোকিত করে। ইসলামের দৃষ্টিতে জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক নর-নারীর উপর ফরজ। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন : পড় তোমার প্রতিপালকের নামে যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। মানুষকে সৃষ্টি করেছেন জমাট রক্ত থেকে। সেই প্রভুর নামেই পড়। যিনি সম্মানিত। যিনি শিক্ষা দিয়েছেন কলমের সাহায্যে। মানুষকে শিখিয়েছেন যা তারা জানত না।
( সূরা আলাক আয়াত নং- ১-৫), তিনি আরও বলেন : করুনাময় আল্লাহ শিক্ষা দিয়েছেন কোরআন। সৃষ্টি করেছেন মানুষ, তাকে শিখিয়েছেন বর্ণনা। ( সূরা আর রাহমান আয়াত নং- ১-৪), পবিত্র কোরআনে এরশাদ হচ্ছে : নিশ্চয় আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে জ্ঞানীরাই কেবল তাঁকে ভয় করে । ( সূরা ফাতির আয়াত নং- ২৮) হাদীস শরীফে রাসূল সাল্লাল্ল্হাু আলাইহিস সালাম বলেন : ইলম (জ্ঞান) অর্জন করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরজ এবং অপাত্রে ইলম ( জ্ঞান) স্থাপনকারি যেন শুকরের গলায় জহরত-মুক্তা বা স্বর্ণ স্থাপন করা।( ইবনে মাজাহ ১ম খন্ড) তিনি আরও বলেন : যে ব্যক্তি দ্বীনি ইলম অন্বেষণ করে তা তার পূর্বকৃত গুনাহের জন্য কাফফারা।
( তিরমিযিও ইবনে মাজাহ), ইসলাম শব্দের অর্থ হচ্ছে: আনুগত্যও আত্মসমর্পণ। তাই প্রত্যেক মুসলমানরা আনুগত্য করবে। কীভাবে আনুগত্য করবে এবং কি কি কাজ থেকে বিরত থাকবে তা জানার জন্য ইলম বা জ্ঞানের প্রয়োজন। তাই আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ও ওহির সূচনাতেই জ্ঞানের গুরুত্ব প্রকাশ করে আয়াত নাজিল করেন। তিনি বলেন : বলুন যারা জানে আর যারা জানে না তারা কি সমান ? ( সূরা যুমার ), ধর্মীয় মূল্যবোধ ভিত্তিক শিক্ষা কর্মসূচি অতীব বড় প্রয়োজন। শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড।
শিক্ষার উপর ভিত্তি করেই রচিত হয় গোটা জাতীয় সত্তার কাঠামো, জাতীয় ইতিহাস,ঐতিহ্য,ধর্মীয় চেতনা ও আদর্শের পটভূমিতে প্রতিষ্ঠিত স্বতন্ত্র শিক্ষার ব্যবস্থা ব্যতিরেকে কোন জাতি বিশ্বের দরবারে শির উন্নত করে দাঁড়াতে বা নিজের অস্তিত্ব প্রকাশ করতে পারে না। পক্ষান্তরে নিজস্ব শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নত বৈশিষ্ট্যের কারনেই কোন জাতি অন্যান্য জাতিকে দিক নির্দেশনা ও নেতৃত্ব দিতে পারে। শিক্ষা ব্যবস্থার একটি মেরুদন্ড আছে। তা হলো শিক্ষা ব্যবস্থার মৌল আদর্শ ও লক্ষ্য। আদর্শহীন শিক্ষা ব্যবস্থা বিশ্ববাসীকে পথ দেখানোর দূরে থাক আপন জাতিকেই পর নির্ভরশীল করে তুলে। যেহেতু ধর্মীয় চেতনা মূল্যবোধের অনূসৃতি ব্যতিত ব্যক্তিও সমাজ জীবনে নীতি-নৈতিকতা সুনিশ্চিত করা অসম্ভব।
যেহেতু বাংলাদেশের ৮৭ শতাংশ মানুষ ইসলাম ধর্মেরই অনুসারী সেহেতু সকল পর্যায়ে সাধারণ শিক্ষা ও লালিত শিক্ষার ক্ষেত্রে সকল মুসলমান শিক্ষার্থীর জন্য বিষয় হিসাবে আবশ্যিক হিসাবে গণ্য করা ইসলামি চেতনাও মূল্যবোধ জাগ্রত করণের উপর সার্বিক গুরুত্ব আরোপ করা অতীব প্রয়োজন। সমগ্র শিক্ষা ব্যবস্থার উদ্দেশ্যে হতে হবে সৎ, নীতিবান, যুগোপযোগি ও দক্ষতা সৃষ্টি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে তৌফিক দান করুন। আমীন
লেখক : কলামিস্ট ও ভাইস প্রিন্সিপাল (অব:), বানিয়াচং সিনিয়র ফাজিল মাদরাসা, বানিয়াচং।