মুসা আল হাফিজ :
তোমার জন্য লিখছি ঢাকায় বসে। ঢাকা বড় এক শহর, বাংলাদেশের রাজধানী।
যখন লিখছি,তখন এর আয়তন ৩০৬ বর্গকিলোমিটার। শহরটি অনেক বড়, কিন্তু এটি আয়তনে বাংলাদেশের ক্ষুদ্র এক অংশ। কেননা বাংলাদেশের আয়তন ১, ৪৭,৫৭০ বর্গকিলোমিটার। তাহলে তো বাংলাদেশ বিরাট ব্যাপার!
কিন্তু বাংলাদেশ হচ্ছে এশিয়া মহাদেশের সামান্য এক অংশ, যার আয়তন ৪,৪৫,৭৯,০০০ বর্গকিলোমিটার। কিন্তু এশিয়া মহাদেশ পৃথিবীর একটি অংশ মাত্র। যে পৃথিবীর আয়তন ৫১,০১,০০,৫০০ বর্গকিলোমিটার!
তাহলে পৃথিবী এতো বড়ো!
হ্যাঁ, পৃথিবী বড়। কিন্তু সে সৌরজগতের নগণ্যতম এক সদস্য। সৌরজগত এতো বিশাল, যাকে কোনো কিলোমিটার এর হিসাবে ব্যক্ত করা কঠিন।
এখানে দূরত্ব মাপার জন্য যে একক ব্যবহার করা হয়,তার নাম এইউ বা এস্ট্রোনোমিকাল ইউনিট। এক এইউ মানে হচ্ছে প্রায় পনেরো কোটি কিলোমিটার!
সৌরজগতের বিশালতা বুঝাতে গ্রহসমূহের দূরত্বের কথা বলা যেতে পারে। ঘন্টায় ১১৫ কিলোমিটার গতির গাড়ি দিয়ে সূর্য থেকে নেপচুনে যেতে প্রায় ৪৬ হাজার বছর লেগে যাবে! আর এই গাড়ী দিয়ে সৌরজগতের দূরবর্তী অংশ ওর্টক্লাউড পাড়ি দিতে লেগে যাবে প্রায় দুই কোটি বছর!
কিন্তু এই সৌরজগত মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির ক্ষুদ্র এক অংশ। কারণ মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতে রয়েছে এক হাজার কোটি সৌরজগত! এতে আছে সূর্যের মতো প্রায় চল্লিশ হাজার কোটি নক্ষত্র।
মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির পরিসর প্রায় ৫.৭ট্রিলিয়ন বা ৫৭০,০০,০০,০০,০০,০০,০০,০০০ মাইল।
কিন্তু মিল্কিওয়ে হচ্ছে গ্যালাক্সিক্লাস্টারের সামান্য এক অংশ। গ্যালাক্সিদের সংখ্যা জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের হিসাবে প্রায় দুই লাখ কোটি!
একটি গ্যালাক্সি ক্লাস্টারে থাকে এক থেকে ১২ হাজার গ্যালাক্সি।
গ্যালাক্সি ক্লাস্টার ছড়িয়ে আছে ৪বিলিয়ন ট্রিলিয়ন মাইল বা ৪০০,০০,০০,০০,০০,০০,০০,০০,০০,০০০মাইল ব্যাপী।
গ্যালাক্সি ক্লাস্টার সমূহ সোপার গ্যালাক্সি ক্লাস্টারের নগণ্য অংশ। মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি যে সোপার ক্লাস্টারের সদস্য, তার নাম ভার্গো। এর আয়তন প্রায় ৫০০ মিলিয়ন আলোকবর্ষ!
কিন্তু এ রকম সোপার ক্লাস্টারের সংখ্যা অগণিত। আমাদের পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্বে এমন সোপার ক্লাস্টার আছে প্রায় ১০.২ মিলিয়ন!
কিন্তু এ সব সোপার ক্লাস্টার সোপার সোপার ক্লাস্টার সমূহের নগণ্য অংশ। সেগুলোর উপরে রয়েছে ট্রিপল সোপার ক্লাস্টার!
কিন্তু এগুলো সবই হচ্ছে সেই জগতের বিবরণ, যাকে পর্যবেক্ষণ করা গেছে! কিন্তু পর্যবেক্ষণীয় মহাবিশ্বের চেয়ে প্রকৃত মহাবিশ্ব অন্তত ২৫০ গুণ বিশাল!
কিন্তু যা বলা হলো, তা আসলে না বলারই সমান। কারণ মহাবিশ্ব সম্পর্কে ১০০ ভাগের একভাগেরও কম জ্ঞান লাভ করতে পেরেছে মানবজাতি। কেউ কেউ বলেছেন,সেটা দুই ভাগ হতে পারে। কিন্তু বাকি ৯৮ ভাগ সম্পর্কে কিছুই জানা হলো না, বলা গেলো না!
এ হচ্ছে মহাকাশের মধ্যকার জগত। যে মহাকাশের তুলনায় এই সৌরজগত একটি বালির ১০০০০০ ভাগের এক ভাগও নয়।
কিন্তু সেই মহাকাশের উপরে কী আছে? আরো আছে ছয় মহাকাশ! সেগুলো আরো আরো বড়। সেখানে কতকিছু আছে? কল্পনা করা যায়?
কেবলই অনুভব করা যায়, কত বিশাল এই সৃষ্টিজগত
এবং প্রিয় মুসান্না, তুমি এ থেকে ভেবে নাও, কত বিশাল এর স্রষ্টা! মহান আল্লাহ, যিনি হচ্ছেন রাব্বুল আলামীন। অর্থাৎ যত জগত আছে, সকল জগতের প্রতিপালক!
লেখক : কবি, চিন্তক, দার্শনিক ও বহুগ্রন্থ প্রেণেতা, ঢাকা।