মুসা আল হাফিজ : ডক্টর রাগিব সারজানীকে পেলে হাতে চুমু দিতাম। এতো লিখেছেন বলে। এরপর প্রশ্ন করতাম, আপনার রচনা যা পড়েছি,তাতে ধাক্কা খাই কেন?
আমি তাঁর রচনা তেমন পড়েছি, তা নয়। সেদিন একজন হাদিয়া দিলেন তাঁর একটি বই, আন্দালুসের ইতিহাস। দুই খণ্ড। মাকতাবাতুল হাসান প্রকাশ করেছে বাংলা অনুবাদ। সুন্দর গেটাপ,মেকাপ। যত্নের ছাপ আছে তাদের কাজটিতে। প্রকাশনীটি প্রতিশ্রুতির স্বাক্ষর রাখছে।
বইটি পড়লাম অনেকটা। মনে হলো, সারজানীর ইতিহাস বর্ণনা কি পূর্বস্থিরিকৃত? তার বিবেচনার ক্ষেত্র কি বিশেষ জায়গায় সীমায়িত? এটা হতে পারে, অস্বাভাবিক নয়।
তবে সারজানী ধাক্কা দেন নানা জায়গায়। একটি উদাহরণ দিই। ইবনে হাযম আন্দালুসিকে ( রহ.) তিনি বর্ণনা করলেন। তার ভাষায় ” তিনি ছিলেন একাধারে মুফাসসির, মুহাদ্দিস, ফকীহ,ঐতিহাসিক,কবি ও দীক্ষক। তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব ও মাযহাবতত্ত্ব সম্পর্কেও তার যথেষ্ট জ্ঞান ছিল।”
নাহ, সারজানী! ‘ তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব সম্পর্কে তার যথেষ্ট জ্ঞান ছিলো’, কথাটা পশ্চিমা কোনো ইতিহাসকার বলতে পারতেন এবং আমরা তার সাথে তর্ক করতাম। তাকে বলতাম, আপনি ইবনে হাযমের বিষয়ে হীনমন্যতার শিকার। কারণ, ইবনে হাযম ছিলেন তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বের প্রতিষ্ঠাতা। এর বৈজ্ঞানিক ভিত্তি তৈরী করেন তিনি ও শাহরাস্তানী।
পশ্চিমা ঐতিহাসিকরা স্বীকার করেছেন তিনি ছিলেন মানবজাতি ও বিশেষত পশ্চিমা সভ্যতার থিয়োলোজির প্রধান শিক্ষক।
তারা যেটা স্বীকার করতে পারলেন, সারজানী কেন সেটাকে এতো আদনা উপস্থাপনে নগণ্য করতে গেলেন!
আমি সারজানীর কাছে জানতে চাইতাম, প্রায় ক্ষেত্রে আপনি এমন করে কেন হতাশ করেন?
প্রশ্ন করতাম,কারণ তিনি গুরুত্বপূর্ণ। এতো কাজ তিনি করছেন, যা আমাদেরকে ঋণী।
লেখক : কবি, সাহিত্যিক, চিন্তক ও দার্শনিক, ঢাকা।