মাওলানা কামাল উদ্দীন খান আল-হুসাইনী :
কওমী মাদরাসা সমূহের কোরবানীর পশুর চামড়া সংগ্রহ করে লাভ কি ? কওমী মাদরাসা সমূহ প্রত্যেক বৎসরই অনেক ভোগান্তি পোহানোর পর কোরবানীর পশুর চামড়া সংগ্রহ করে সিন্ডিকেটের শিকার হয়ে, কেউবা সামান্য লাভে, কেউবা কেনা-মূল্যে আবার কেউবা কম-বেশী লোকসান দিয়ে চামড়া বিক্রি করে থাকেন। কিন্তু আমরা এতটাই অদূরদর্শী যে, আমাদের চিন্তায় বিকল্প কোন ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্রেকই হয় না। কারণ আমরা শুধু একা একা বড়লোক হতে চাই। অন্যের কোনই চিন্তা করি না। তাই একা একা বিচ্ছিন্ন ভাবে দৌঁড়ঝাপ করছি। এদিক-সেদিক ছোটাছুটি করছি দিশেহারার মত বছরের পর বছর যাবত! কারো সাথে কারোর কোনই যোগসূত্র নেই। নেই কোন শলা-পরামর্শ। কিন্তু ছোট না থাকলে বড় হওয়া যায় না। যার সন্তানই মাত্র একটা, তার বড় সন্তান কোনটি আর ছোট সন্তান কোনটি ? আর ঐ সন্তানের বড় ভাই কোনটি আর ছোট ভাই কোনটি ? অতএব প্রমাণিত হয়ে গেল যে, ছোট না থাকলে বড় হতে পারে না। ছোটদের দ্বারাই তো তাঁরা বড়! ছোটদের দিয়েই তো তাঁরা বড়লোক! আমরা ছোটরা আছি বলেই তো তাঁরা বড়! ছোটরা আছি বলেই তো তাঁরা সেরেতাজ! ছোটরা আছি বলেই তো তাঁরা কর্ণধার! কার ? বলুন তো! তাঁরা কার বড় ? কার সেরেতাজ ? কার কর্ণধার ? সমাজ থাকলে তো সমাজপতি ? বুঝলেন তো ? ছোটরা না থাকলে বড় হওয়া যায় না। আমাদের বড়রা তো বড়লোক হয়ে আত্মতৃপ্তি ও পরিতৃপ্তি লাভ করছেন! একটিবারের জন্যও তাঁরা আমাদের কথা চিন্তাই করেন না! আমাদের বড়দের তো হয়ে গেছে! এসি বাড়ি আর পাজেরো গাড়ি! আর আমাদের ছোটদের অবস্থা ? হায় আফসোস! ছোটরা রিক্সায় উঠার আগে ৩ বার পকেটে হাত দিয়ে দেখে ৫/১০ টাকা পকেটে রিক্সা ভাড়া আছে তো ? আরো কত কিছুই মন বলতে চায়!থাক সে সব কথা!!! বাংলাদেশে কওমী আলেমই তো বেশী ? কিন্তু, এদেশের ইসলামি ব্যাংক, হাসপাতাল ও শিল্পকারখানা কি কওমী আলেমদেরই ? নাকি অন্যদের ? এটা কি আমাদের চরম ব্যর্থতা নয় ? আমরা এতটাই পেছনে পড়ে আছি কেন ? সুখ-শান্তি কি শুধু আপনাদের জন্যই ? নাকি ছোটদের জন্যও সুখ-শান্তির ব্যবস্থা করা বড়দের উপরই বর্তায় ? নাকি এটা আপনাদের দায়িত্ব-কর্তব্যে পড়ে না ? বোর্ড কি শুধু পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ? বোর্ডে পরীক্ষা দিয়ে আমাদের লাভ কি ? ইসলামের খেদমতের জন্য ? কোন একটি মাদরাসায় পরীক্ষা দিয়েও তো ইসলামের খেদমত করা যায় ? তাহলে বোর্ডের প্রয়োজনীয়তা কি ? ইসলামের খেদমত তো একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্যই করব। কিন্তু মানবিক প্রয়োজন বলেও তো একটা কথা আছে ? এর জন্য আপনারা কি কি মাঠ তৈরী করেছেন ? আপনারা তো আমাদের বড় হওয়া, সেরেতাজ হওয়া ও কর্ণধার হওয়ার সুবাদে বড়লোক হওয়ার সুবিধা পেয়েছেন ! সহজেই বড়লোক হতে পেরেছেন (আংশিক) ? সাহাবায়ে-কেরাম (রা.) ও আকাবিরগণের অবস্থার সাথে আমাদের অবস্থার মিল আছে তো ? নাকি পুরোই উল্টো ? আহ! আমরা তাঁদের জীবনী বিক্রি করে খাই! মানুষের কাছে গাই! কোনই আমল নাই! আফসোস! আসুন! একা বড়লোক হওয়ার চিন্তা বাদ দিয়ে নিজের সুখ-শান্তির বেড়াজালে বন্দি না হয়ে ছোট-বড় সকলের সুখ-শান্তির ব্যবস্থা করি! সবার জন্য মাঠ গড়ি! বিভিন্নভাবে বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিই! আর কোরবানীর পশুর চামড়া শিল্প তো বহুকাল যাবৎ কওমী মাদরাসা সমূহের হাতেই আছে। অভাব শুধু সু-ব্যবস্থাপনার! কওমী মাদরাসাসমূহ কোরবানীর পশুর চামড়া সংগ্রহ করে থাকে। কিন্তু উপকৃত হয় সিন্ডিকেটকারীরা। এ বৎসর তো চামড়ার রেটের আরো বেহাল দশা! তাই কওমী মাদরাসা সমূহকে সিন্ডিকেট মুক্ত করে মারাত্মক ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা কল্পে, বেফাক বোর্ড অথবা আল-হাইয়্যাতুল উলইয়া-এর উদ্যোগে একটি সুবিশাল ও স্থায়ী টেনারীর ব্যবস্থা করা সময়ের অপরিহার্য দাবি। তাতে সারা দেশ থেকে সকল কওমী মাদরাসা কোরবানীর পশুর চামড়া সংগ্রহ করে সংরক্ষণ করতে পারবে। তাহলে এখন যারা সিন্ডিকেটকারী তখন তারা আমাদের দ্বারে দ্বারে ধর্ণা দিবে। সারা দেশের কওমী মাদরাসা সমূহ মারাত্মক ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাবে ইনশা আল্লাহ্। আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে সকল ক্ষেত্রে শুভ বুদ্ধি দান করুন। আমীন।
লেখক : মাওলানা কামাল উদ্দীন খান আল-হুসাইনী শিক্ষা-সচীব: মাদরাসাতুল হারামাইন,
খতীব: ৩নং রাজবাড়ী জামে মসজিদ,বানিয়াচং, হবিগঞ্জ।