ঢাকা ০৩:০০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo গ্যানিংগঞ্জ বাজারের উদ্যোগে ৩দিন ব্যাপি তাফসিরুল কোরআন মহা সম্মেলন আগামী ৯,১০ ও ১১ ডিসেম্বর Logo সম্মিলিত প্রয়াসের মাধ্যমে নৌকাকে বিজয়ী করুন : এমপি আবুজাহির Logo বানিয়াচংয়ে হবিগঞ্জ শিক্ষা-সংস্কৃতি উন্নয়ন পরিষদের উদ্যোগে মেধাবৃত্তি পরীক্ষা-২০২৩ অনুষ্ঠিত Logo বানিয়াচং ইসলাহুল উম্মাহ পরিষদের উদ্যোগে মেধাবী ও কৃতি শিক্ষার্থীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ Logo হবিগঞ্জ-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার ঘোষণা দিলেন এমপি মজিদ খান Logo বানিয়াচং উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভা Logo নৌকা মার্কার সমর্থনে বানিয়াচং দক্ষিণ যাত্রাপাশা বনমুথুরা ভূমিহীন নারী-পুরুষের মিছিল Logo বানিয়াচংয়ে সরকারি প্রণোদনার ৭ হাজার ১শ’ কৃষককে সার-বীজ প্রদান Logo বানিয়াচংয়ে ফারুক চৌধুরী মিতুর মৃত্যুতে আলহাজ্ব রেজাউল মোহিত খানের শোক Logo বর্ণাঢ্য আয়োজনে আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া দারুল কোরআন মাদ্রাসার বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত

হবিগঞ্জে বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে দুই সাংসদের টানাটানি

  • তরঙ্গ ২৪ ডেস্ক :
  • আপডেট সময় ০৩:৪০:১১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০
  • ১২০ বার পড়া হয়েছে

শোয়েব চৌধুরী, হবিগঞ্জ : জাতীয় সংসদে ‘হবিগঞ্জ কৃষি বিদ্যালয়’ আইন পাস হওয়ার পর জেলার দুটি সংসদীয় আসনে দুই ধরনের পরিবেশ বিরাজ করছে। আইনে একটি সুনির্দিষ্ট উপজেলায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের কথা উল্লেখ করায় একটি আসনে আনন্দের জোয়ার বইছে, অন্য আসনে বহু কাক্সিক্ষত স্বপ্ন হাতছাড়া হওয়ার বেদনায় বিরাজ করছে হতাশা। এছাড়া একজন সাংসদ জনতার ফুলেল শুভেচ্ছায় ভাসছেন, আর অপর সাংসদ হচ্ছেন নানা প্রশ্নের মুখোমুখি সদর আসনের এমপি আবু জহির অ্যাডভোকেট ও হবিগজ্ঞ-২ আসনের এমপি আব্দুল মজিদ খান। এ পরিস্থিতিতে দেশের ৭ম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়টি নিজ এলাকায় রাখার তদবিরে দুই সাংসদ হবিগঞ্জ ও ঢাকায় দৌড়ঝাঁপ করছেন।

২০১৪ সালের ২৯ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হবিগঞ্জের স্থানীয় নিউফিল্ডে এক জনসভায় জেলায় মেডিকেল কলেজ, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বাল্লাস্থল বন্দর নির্মাণ, শায়েস্তাগঞ্জকে উপজেলায় উন্নীত এবং হবিগঞ্জ-সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক করার প্রতিশ্রতি দেন। ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া এসব প্রতিশ্রুতির সবকটি বাস্তবায়নের পথে। হবিগঞ্জ আধুনিক হাসপাতাল ভবনে মেডিকেল কলেজের অস্থায়ী ক্যাম্পাস চালু হয়েছে। কলেজের নিজস্ব ক্যাম্পাস নির্ধারণের জন্য একটি পরিদর্শক দল সম্প্রতি একটি স্থান দেখে গেছেন। শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। হবিগঞ্জ-সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের কাজও চলছে। এছাড়া বাল্লা স্থলবন্দরের ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়াধীন। আর প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির প্রায় ৬ বছর পর হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাস হয় গত ১০ সেপ্টেম্বর। আইনটি পাস হওয়ায় হবিগঞ্জ সদরের জনগণ খুশি হলেও বানিয়াচং ও আজমিরিগঞ্জ উপজেলার মানুষের আশাভঙ্গ হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৩৪ সালে হবিগঞ্জ জেলা সদরের লাগোয়া বানিয়াচং উপজেলার নাগুড়ায় ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয়। নাইজারশাইলসহ বেশকিছু ধানের জাত উদ্ভাবনের মাধ্যমে এই গবেষণা ইনস্টিটিউটটি কৃষিক্ষেত্রে একটি বড় ভূমিকা পালন করে আসছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই এই ইনস্টিটিউটের পাশে একটি কৃষি কলেজ প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে আসছিলেন জেলাবাসী। কালপরিক্রমায় তা বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার দাবিতে রূপ নেয়।

হবিগঞ্জে প্রধানমন্ত্রীর ওই জনসভায় প্রয়াত এমপি সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত তার বক্তব্যে নাগুড়া কৃষি ফার্মের পাশে বিপুল পরিমাণ সরকারি জমি রয়েছে উল্লেখ করে সেখানে একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার যৌক্তিকতা তুলে ধরেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী হবিগঞ্জে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘোষণা দেওয়ার পর থেকে জেলাবাসী ধরে নিয়েছিলেন যে, নাগুড়াতেই হবে ‘হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়’।

গত ২৩ জুন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপুমনি সংসদে হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিল উত্থাপন করেন। বিলের ৩ দফার ১ উপদফায় বলা হয় ‘এই আইনের বিধান অনুযায়ী হবিগঞ্জ জেলায় হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় নামে একটি কৃষি বিশ^বিদ্যালয় স্থাপিত হইবে।’ এরপর বিলটি পরীক্ষাপূর্বক সংসদে প্রতিবেদন প্রদানের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। গত ২৫ আগস্ট স্থায়ী কমিটির সভায় বিলটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষার পর কয়েকটি সংশোধনী সুপারিশ করে সংসদে পাঠানো হয়। সুপারিশের ৫ নম্বর ক্রমিকে বলা হয়, বিলের দফা ৩ এর উপদফা (১) এর প্রথম লাইনে উল্লিখিত ‘হবিগঞ্জ জেলায়’ শব্দগুলির পরিবর্তে ‘হবিগঞ্জ জেলার সদর উপজেলায়’ শব্দগুলি প্রতিস্থাপিত হইবে। গত ১০ সেপ্টেম্বর বিলটি সংশোধিত আকারে সংসদে উপস্থাপন করা হলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। ইতিমধ্যে আইনটি কার্যকর হয়েছে।

আইনে ‘হবিগঞ্জ সদর উপজেলায় বিশ্ববিদ্যালয়’ স্থাপনের বিষয়টি সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করায় হবিগঞ্জ সদর আসনের এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু জাহির অ্যাডভোকেট তার এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের পক্ষ থেকে প্রশংসিত হচ্ছেন। প্রতিদিন তিনি ফুলেল শুভেচ্ছা গ্রহণ করছেন। ১৭ সেপ্টেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, তিনিই ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ ৪টি দাবি উত্থাপন করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী হবিগঞ্জবাসীকে দেওয়া তার সব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করছেন। তিনি বলেন, ‘আমার নির্বাচনী এলাকায় উন্নয়নকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছেন। যে কোনো বিভ্রান্তি ও অপপ্রচারের জবাব দেবে জনগণই। হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় দেশের ৭ম কৃষি বিশ^বিদ্যালয়। খুব শিগগিরই ভিসি নিয়োগসহ অন্যান্য কাজ শুরু হবে।’

এদিকে হবিগঞ্জ-২ (বানিয়াচং-আজমিরিগঞ্জ) আসনের সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ খান সোমবার তার বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তার নির্বাচনী এলাকায় কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের যৌক্তিকতা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, হবিগঞ্জে প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের দাবিটি উত্থাপন হয়েছিল একটি ভিন্ন প্রেক্ষাপটে। এর মূল কারণটি ছিল, ব্রিটিশ আমলে হবিগঞ্জ জেলা সদরের সন্নিকটে নাগুড়া কৃষি ফার্ম ও গবেষণাগারটি ৮৬ দশমিক ৬০ একর জায়গা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়। কৃষি উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় ঐতিহাসিক এ প্রতিষ্ঠানটিকে স্মরণীয় করে রাখতে মূলত হবিগঞ্জে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের চিন্তাভাবনা করা হয়েছিল। এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ২৫ দশমিক ৩০ একর খাসজমি রয়েছে। ফলে এখানে বিশ্ববিদ্যালয় গড়লে প্রায় ১শ একর জমি সরকারের কেনার দরকার হবে না। সরকারের মোটা অংকের অর্থ সাশ্রয় হবে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য জমি আরও প্রয়োজন হলে অন্যান্য এলাকার চেয়ে কম মূল্যে পাওয়া যাবে। নাগুড়ায় কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠলে হবিগঞ্জ ও বানিয়াচং দুটি উপজেলাতে একসঙ্গে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগবে।

সাংসদ আব্দুল মজিদ খান অভিযোগ করে আরও বলেন, ‘সংসদীয় কমিটি আইনটি পরীক্ষাকালে দফা ৩ এর উপধারা ১ এ হবিগঞ্জ জেলায় শব্দের পরিবর্তে হবিগঞ্জ জেলার হবিগঞ্জ সদর উপজেলায় শব্দগুলো প্রতিস্থাপনের সুপারিশ করায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের বিষয়টি সীমাবদ্ধ করে ফেলেছে। শিক্ষামন্ত্রীর উপস্থাপিত বিলের অনুরূপ হবিগঞ্জ জেলায় শব্দগুলো পরিবর্তন করা না হলে জেলার অভ্যন্তরে উপযুক্তস্থানে বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থাপন করা যেত।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) হবিগঞ্জ শাখার সভাপতি ত্রিলোক কান্তি চৌধুরী বিজন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘হবিগঞ্জ শহরের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিচার করলে হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়টি শহর থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে স্থাপন করা উচিত। যেভাবে শহর সম্প্রসারিত হচ্ছে সেটি বিবেচনা করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য উপযুক্ত স্থান হচ্ছে নাগুড়া ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট এলাকা। পর্যাপ্ত ভূমি, শিক্ষার পরিবেশ, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা সবকিছুই সেখানে অনুকূলে রয়েছে।
সূত্র : জাতীয় দৈনিক দেশ রূপান্তর

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

গ্যানিংগঞ্জ বাজারের উদ্যোগে ৩দিন ব্যাপি তাফসিরুল কোরআন মহা সম্মেলন আগামী ৯,১০ ও ১১ ডিসেম্বর

হবিগঞ্জে বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে দুই সাংসদের টানাটানি

আপডেট সময় ০৩:৪০:১১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০

শোয়েব চৌধুরী, হবিগঞ্জ : জাতীয় সংসদে ‘হবিগঞ্জ কৃষি বিদ্যালয়’ আইন পাস হওয়ার পর জেলার দুটি সংসদীয় আসনে দুই ধরনের পরিবেশ বিরাজ করছে। আইনে একটি সুনির্দিষ্ট উপজেলায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের কথা উল্লেখ করায় একটি আসনে আনন্দের জোয়ার বইছে, অন্য আসনে বহু কাক্সিক্ষত স্বপ্ন হাতছাড়া হওয়ার বেদনায় বিরাজ করছে হতাশা। এছাড়া একজন সাংসদ জনতার ফুলেল শুভেচ্ছায় ভাসছেন, আর অপর সাংসদ হচ্ছেন নানা প্রশ্নের মুখোমুখি সদর আসনের এমপি আবু জহির অ্যাডভোকেট ও হবিগজ্ঞ-২ আসনের এমপি আব্দুল মজিদ খান। এ পরিস্থিতিতে দেশের ৭ম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়টি নিজ এলাকায় রাখার তদবিরে দুই সাংসদ হবিগঞ্জ ও ঢাকায় দৌড়ঝাঁপ করছেন।

২০১৪ সালের ২৯ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হবিগঞ্জের স্থানীয় নিউফিল্ডে এক জনসভায় জেলায় মেডিকেল কলেজ, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বাল্লাস্থল বন্দর নির্মাণ, শায়েস্তাগঞ্জকে উপজেলায় উন্নীত এবং হবিগঞ্জ-সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক করার প্রতিশ্রতি দেন। ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া এসব প্রতিশ্রুতির সবকটি বাস্তবায়নের পথে। হবিগঞ্জ আধুনিক হাসপাতাল ভবনে মেডিকেল কলেজের অস্থায়ী ক্যাম্পাস চালু হয়েছে। কলেজের নিজস্ব ক্যাম্পাস নির্ধারণের জন্য একটি পরিদর্শক দল সম্প্রতি একটি স্থান দেখে গেছেন। শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। হবিগঞ্জ-সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের কাজও চলছে। এছাড়া বাল্লা স্থলবন্দরের ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়াধীন। আর প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির প্রায় ৬ বছর পর হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাস হয় গত ১০ সেপ্টেম্বর। আইনটি পাস হওয়ায় হবিগঞ্জ সদরের জনগণ খুশি হলেও বানিয়াচং ও আজমিরিগঞ্জ উপজেলার মানুষের আশাভঙ্গ হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৩৪ সালে হবিগঞ্জ জেলা সদরের লাগোয়া বানিয়াচং উপজেলার নাগুড়ায় ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয়। নাইজারশাইলসহ বেশকিছু ধানের জাত উদ্ভাবনের মাধ্যমে এই গবেষণা ইনস্টিটিউটটি কৃষিক্ষেত্রে একটি বড় ভূমিকা পালন করে আসছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই এই ইনস্টিটিউটের পাশে একটি কৃষি কলেজ প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে আসছিলেন জেলাবাসী। কালপরিক্রমায় তা বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার দাবিতে রূপ নেয়।

হবিগঞ্জে প্রধানমন্ত্রীর ওই জনসভায় প্রয়াত এমপি সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত তার বক্তব্যে নাগুড়া কৃষি ফার্মের পাশে বিপুল পরিমাণ সরকারি জমি রয়েছে উল্লেখ করে সেখানে একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার যৌক্তিকতা তুলে ধরেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী হবিগঞ্জে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘোষণা দেওয়ার পর থেকে জেলাবাসী ধরে নিয়েছিলেন যে, নাগুড়াতেই হবে ‘হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়’।

গত ২৩ জুন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপুমনি সংসদে হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিল উত্থাপন করেন। বিলের ৩ দফার ১ উপদফায় বলা হয় ‘এই আইনের বিধান অনুযায়ী হবিগঞ্জ জেলায় হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় নামে একটি কৃষি বিশ^বিদ্যালয় স্থাপিত হইবে।’ এরপর বিলটি পরীক্ষাপূর্বক সংসদে প্রতিবেদন প্রদানের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। গত ২৫ আগস্ট স্থায়ী কমিটির সভায় বিলটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষার পর কয়েকটি সংশোধনী সুপারিশ করে সংসদে পাঠানো হয়। সুপারিশের ৫ নম্বর ক্রমিকে বলা হয়, বিলের দফা ৩ এর উপদফা (১) এর প্রথম লাইনে উল্লিখিত ‘হবিগঞ্জ জেলায়’ শব্দগুলির পরিবর্তে ‘হবিগঞ্জ জেলার সদর উপজেলায়’ শব্দগুলি প্রতিস্থাপিত হইবে। গত ১০ সেপ্টেম্বর বিলটি সংশোধিত আকারে সংসদে উপস্থাপন করা হলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। ইতিমধ্যে আইনটি কার্যকর হয়েছে।

আইনে ‘হবিগঞ্জ সদর উপজেলায় বিশ্ববিদ্যালয়’ স্থাপনের বিষয়টি সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করায় হবিগঞ্জ সদর আসনের এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু জাহির অ্যাডভোকেট তার এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের পক্ষ থেকে প্রশংসিত হচ্ছেন। প্রতিদিন তিনি ফুলেল শুভেচ্ছা গ্রহণ করছেন। ১৭ সেপ্টেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, তিনিই ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ ৪টি দাবি উত্থাপন করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী হবিগঞ্জবাসীকে দেওয়া তার সব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করছেন। তিনি বলেন, ‘আমার নির্বাচনী এলাকায় উন্নয়নকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছেন। যে কোনো বিভ্রান্তি ও অপপ্রচারের জবাব দেবে জনগণই। হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় দেশের ৭ম কৃষি বিশ^বিদ্যালয়। খুব শিগগিরই ভিসি নিয়োগসহ অন্যান্য কাজ শুরু হবে।’

এদিকে হবিগঞ্জ-২ (বানিয়াচং-আজমিরিগঞ্জ) আসনের সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ খান সোমবার তার বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তার নির্বাচনী এলাকায় কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের যৌক্তিকতা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, হবিগঞ্জে প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের দাবিটি উত্থাপন হয়েছিল একটি ভিন্ন প্রেক্ষাপটে। এর মূল কারণটি ছিল, ব্রিটিশ আমলে হবিগঞ্জ জেলা সদরের সন্নিকটে নাগুড়া কৃষি ফার্ম ও গবেষণাগারটি ৮৬ দশমিক ৬০ একর জায়গা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়। কৃষি উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় ঐতিহাসিক এ প্রতিষ্ঠানটিকে স্মরণীয় করে রাখতে মূলত হবিগঞ্জে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের চিন্তাভাবনা করা হয়েছিল। এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ২৫ দশমিক ৩০ একর খাসজমি রয়েছে। ফলে এখানে বিশ্ববিদ্যালয় গড়লে প্রায় ১শ একর জমি সরকারের কেনার দরকার হবে না। সরকারের মোটা অংকের অর্থ সাশ্রয় হবে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য জমি আরও প্রয়োজন হলে অন্যান্য এলাকার চেয়ে কম মূল্যে পাওয়া যাবে। নাগুড়ায় কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠলে হবিগঞ্জ ও বানিয়াচং দুটি উপজেলাতে একসঙ্গে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগবে।

সাংসদ আব্দুল মজিদ খান অভিযোগ করে আরও বলেন, ‘সংসদীয় কমিটি আইনটি পরীক্ষাকালে দফা ৩ এর উপধারা ১ এ হবিগঞ্জ জেলায় শব্দের পরিবর্তে হবিগঞ্জ জেলার হবিগঞ্জ সদর উপজেলায় শব্দগুলো প্রতিস্থাপনের সুপারিশ করায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের বিষয়টি সীমাবদ্ধ করে ফেলেছে। শিক্ষামন্ত্রীর উপস্থাপিত বিলের অনুরূপ হবিগঞ্জ জেলায় শব্দগুলো পরিবর্তন করা না হলে জেলার অভ্যন্তরে উপযুক্তস্থানে বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থাপন করা যেত।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) হবিগঞ্জ শাখার সভাপতি ত্রিলোক কান্তি চৌধুরী বিজন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘হবিগঞ্জ শহরের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিচার করলে হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়টি শহর থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে স্থাপন করা উচিত। যেভাবে শহর সম্প্রসারিত হচ্ছে সেটি বিবেচনা করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য উপযুক্ত স্থান হচ্ছে নাগুড়া ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট এলাকা। পর্যাপ্ত ভূমি, শিক্ষার পরিবেশ, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা সবকিছুই সেখানে অনুকূলে রয়েছে।
সূত্র : জাতীয় দৈনিক দেশ রূপান্তর