ঢাকা ০১:৫৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১১ আশ্বিন ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo বানিয়াচংয়ে মোবাইল কোর্টে ৩ ব্যবসায়ীকে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা Logo বানিয়াচংয়ে স্কুল ছাত্রীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার Logo এমপি মজিদ খানের মধ্যস্থতায় বানিয়াচং সৈদারটুলা ছান্দের ২ গ্রুপের দ্বন্দ্ব নিরসন Logo মিশর আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থান পাওয়ায় মুফতি হাফিজুল হককে সংবর্ধনা প্রদান Logo আজমিরীগঞ্জে নিত্যপণ্যের মূল্য চড়া: ক্রেতাদের নাভিশ্বাস Logo একজন কর্মবীর সফল এমপি আব্দুল মজিদ খান Logo বানিয়াচংয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পদ্মাসন সিংহ’কে বিদায় সংবর্ধনা Logo জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী মনজুর চৌধুরী Logo বানিয়াচংয়ে ইফা শিক্ষকদের নিয়ে ক্লাস্টার ট্রেনিং অনুষ্ঠিত Logo আজমিরীগঞ্জে পুলিশের অভিযানে ২০লিটার চোলাই মদ জব্দ : আটক-১

স্মৃতিচারণ : মিজানুর রহমান খান যে কারণে প্রাসঙ্গিক হয়ে থাকবেন

  • তরঙ্গ ২৪ ডেস্ক :
  • আপডেট সময় ০৯:৩৭:০৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২১
  • ১০৪ বার পড়া হয়েছে

আজহার উদ্দিন শিমুল :

আমার কাছে সব সময়ই প্রথম আলোকে একটা বিশ্ববিদ্যালয় মনে হয়। এর পেছনে আমার যথেষ্ট যুক্তি রয়েছে। একজন শিক্ষার্থী যদি উচ্চ মাধ্যমিকের পরে টানা চার বছর প্রথম আলো নিয়মিত পড়েন, তাহলে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন গ্র্যাজুয়েটের মতো যোগ্যতা অর্জন করতে সক্ষম। আমি ২০০৭ সাল থেকে প্রথম আলো পড়ি। ভেতরের পৃষ্ঠার প্রতি আমার টান ছোটবেলা থেকেই। ভেতরের পৃষ্ঠা বলতে ‘মতামত ও সম্পাদকীয়’ পাতার কথা বুঝিয়েছি।

সদ্য প্রয়াত প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর রহমান খানের ক্ষুরধার কলাম পড়ার জন্য আমি অপেক্ষা করতাম। আইন ও সংবিধান নিয়ে আগ্রহ থেকেই আমি স্নাতকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে একাডেমিক বিষয় হিসেবে বাছাই করেছি। মিজানুর রহমান খান আমার জীবনে খুবই প্রভাবিত। ছোট্ট একটা উদাহরণ দিই! মিজানুর রহমান খান তাঁর ই-মেইলের শেষ অংশে ‘bd’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন। আমিও ২০১২ সালে ‘bd’ যুক্ত করে ই-মেইল খুলেছি। মিজানুর রহমান খানের এমন কোনো লেখা নেই যে আমি পড়িনি। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সব লেখা পড়েছি, নোট করেছি। সমমনাদের সঙ্গে আলোচনা করেছি, আরও গভীরভাবে তাঁর কঠিন লেখা সহজভাবে বোঝার চেষ্টা করেছি। হিসাববিজ্ঞানের ছাত্র হয়েও আইন ও সংবিধানের প্রতি এত জানাশোনা লোক বাংলাদেশে বিরল! মিজানুর রহমান খান সে কারণেই বাংলাদেশের আইন সাংবাদিকতায় প্রাসঙ্গিক হয়ে থাকবেন।

ছবি- লেখক : আজহার উ দ্দিন শিমুল।

উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত আমি বিভিন্ন পত্রিকার কলাম কাটিং করে রেখেছি। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংগ্রহ আছে মিজানুর রহমান খানের। গত বছর অক্টোবরে দেশব্যাপী আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল পুলিশি নির্যাতনে রায়হান হত্যা কাণ্ডটি। তখন মিজানুর রহমান খান একটি যুগোপযোগী কলাম লেখেন। সেখানে তিনি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন ‘সিলেটের যুবক রায়হানকে ছিনতাইকারী এবং গণপিটুনিতে মারা যাওয়ার গল্প প্রচারে ব্যর্থ আকবর ও তাঁর সহযোগীদের (ফাঁড়ির কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা) শাস্তি পাওয়ার বিষয়টি এখন পর্যন্ত পুরোপুরি পুলিশের কর্তৃত্বে রয়েছে।’

মিজানুর রহমান খানের এই কলামের মাধ্যমে উঠে আসে ২০১৩ সালের নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইনটির প্রেক্ষাপট। রায়হান হত্যার সুষ্ঠু বিচার পেতে এই কলামটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে পাঠক হিসেবে মনে করি।

আমি সাংবাদিকতায় নাম লিখিয়ে সাক্ষাৎকার নেওয়ায় আগ্রহী হয়ে উঠছি। বাংলাদেশের যে কজন মানুষের সাক্ষাৎকার নেওয়ার স্বপ্ন দেখতাম, তাঁদের অগ্রভাগে মিজানুর রহমান খানের নামটি ছিল। সাক্ষাৎকার নিতে না পারা দুঃখবোধটি সম্ভবত জীবনভর বয়ে বেড়াব।

প্রথম আলো পড়ার সুবাদে দেখেছি, মিজানুর রহমান খান শুধু কলামে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেননি, রিপোর্টিং, মোবাইল জার্নালিজমেও কাজ করেছেন। করোনার সময় হাসপাতাল ঘুরে রিপোর্ট তৈরি করেছেন। রিপোর্টগুলো মানবিকতায় ভরপুর ছিল!

শিক্ষার্থী রাজীব যখন দুই বাসের পৃষ্টে হাত হারান, সেই দুর্লভ ছবিটিও প্রথম আলোয় আসে। সেই ঘটনাবহুল ছবিটিও তিনি তুলেছিলেন। ফেসবুকজুড়ে সাংবাদিক থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের হাহাকার দেখে প্রমাণিত হয়, একজন আপাদমস্তক সাংবাদিক ছিলেন তিনি। তাঁর মৃত্যু শুধু দেশের সাংবাদিকতার জন্য শুধু নয়, বরং বাংলাদেশের জন্যই অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে থাকল। সৃষ্টিকর্তা তাঁকে শান্তিতে রাখুন, সেই দোয়াই করি!

লেখক : আজহার উদ্দিন শিমুল, সভাপতি, এমসি কলেজ রিপোর্টার্স ইউনিটি, সিলেট।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

বানিয়াচংয়ে মোবাইল কোর্টে ৩ ব্যবসায়ীকে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা

স্মৃতিচারণ : মিজানুর রহমান খান যে কারণে প্রাসঙ্গিক হয়ে থাকবেন

আপডেট সময় ০৯:৩৭:০৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২১

আজহার উদ্দিন শিমুল :

আমার কাছে সব সময়ই প্রথম আলোকে একটা বিশ্ববিদ্যালয় মনে হয়। এর পেছনে আমার যথেষ্ট যুক্তি রয়েছে। একজন শিক্ষার্থী যদি উচ্চ মাধ্যমিকের পরে টানা চার বছর প্রথম আলো নিয়মিত পড়েন, তাহলে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন গ্র্যাজুয়েটের মতো যোগ্যতা অর্জন করতে সক্ষম। আমি ২০০৭ সাল থেকে প্রথম আলো পড়ি। ভেতরের পৃষ্ঠার প্রতি আমার টান ছোটবেলা থেকেই। ভেতরের পৃষ্ঠা বলতে ‘মতামত ও সম্পাদকীয়’ পাতার কথা বুঝিয়েছি।

সদ্য প্রয়াত প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর রহমান খানের ক্ষুরধার কলাম পড়ার জন্য আমি অপেক্ষা করতাম। আইন ও সংবিধান নিয়ে আগ্রহ থেকেই আমি স্নাতকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে একাডেমিক বিষয় হিসেবে বাছাই করেছি। মিজানুর রহমান খান আমার জীবনে খুবই প্রভাবিত। ছোট্ট একটা উদাহরণ দিই! মিজানুর রহমান খান তাঁর ই-মেইলের শেষ অংশে ‘bd’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন। আমিও ২০১২ সালে ‘bd’ যুক্ত করে ই-মেইল খুলেছি। মিজানুর রহমান খানের এমন কোনো লেখা নেই যে আমি পড়িনি। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সব লেখা পড়েছি, নোট করেছি। সমমনাদের সঙ্গে আলোচনা করেছি, আরও গভীরভাবে তাঁর কঠিন লেখা সহজভাবে বোঝার চেষ্টা করেছি। হিসাববিজ্ঞানের ছাত্র হয়েও আইন ও সংবিধানের প্রতি এত জানাশোনা লোক বাংলাদেশে বিরল! মিজানুর রহমান খান সে কারণেই বাংলাদেশের আইন সাংবাদিকতায় প্রাসঙ্গিক হয়ে থাকবেন।

ছবি- লেখক : আজহার উ দ্দিন শিমুল।

উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত আমি বিভিন্ন পত্রিকার কলাম কাটিং করে রেখেছি। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংগ্রহ আছে মিজানুর রহমান খানের। গত বছর অক্টোবরে দেশব্যাপী আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল পুলিশি নির্যাতনে রায়হান হত্যা কাণ্ডটি। তখন মিজানুর রহমান খান একটি যুগোপযোগী কলাম লেখেন। সেখানে তিনি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন ‘সিলেটের যুবক রায়হানকে ছিনতাইকারী এবং গণপিটুনিতে মারা যাওয়ার গল্প প্রচারে ব্যর্থ আকবর ও তাঁর সহযোগীদের (ফাঁড়ির কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা) শাস্তি পাওয়ার বিষয়টি এখন পর্যন্ত পুরোপুরি পুলিশের কর্তৃত্বে রয়েছে।’

মিজানুর রহমান খানের এই কলামের মাধ্যমে উঠে আসে ২০১৩ সালের নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইনটির প্রেক্ষাপট। রায়হান হত্যার সুষ্ঠু বিচার পেতে এই কলামটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে পাঠক হিসেবে মনে করি।

আমি সাংবাদিকতায় নাম লিখিয়ে সাক্ষাৎকার নেওয়ায় আগ্রহী হয়ে উঠছি। বাংলাদেশের যে কজন মানুষের সাক্ষাৎকার নেওয়ার স্বপ্ন দেখতাম, তাঁদের অগ্রভাগে মিজানুর রহমান খানের নামটি ছিল। সাক্ষাৎকার নিতে না পারা দুঃখবোধটি সম্ভবত জীবনভর বয়ে বেড়াব।

প্রথম আলো পড়ার সুবাদে দেখেছি, মিজানুর রহমান খান শুধু কলামে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেননি, রিপোর্টিং, মোবাইল জার্নালিজমেও কাজ করেছেন। করোনার সময় হাসপাতাল ঘুরে রিপোর্ট তৈরি করেছেন। রিপোর্টগুলো মানবিকতায় ভরপুর ছিল!

শিক্ষার্থী রাজীব যখন দুই বাসের পৃষ্টে হাত হারান, সেই দুর্লভ ছবিটিও প্রথম আলোয় আসে। সেই ঘটনাবহুল ছবিটিও তিনি তুলেছিলেন। ফেসবুকজুড়ে সাংবাদিক থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের হাহাকার দেখে প্রমাণিত হয়, একজন আপাদমস্তক সাংবাদিক ছিলেন তিনি। তাঁর মৃত্যু শুধু দেশের সাংবাদিকতার জন্য শুধু নয়, বরং বাংলাদেশের জন্যই অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে থাকল। সৃষ্টিকর্তা তাঁকে শান্তিতে রাখুন, সেই দোয়াই করি!

লেখক : আজহার উদ্দিন শিমুল, সভাপতি, এমসি কলেজ রিপোর্টার্স ইউনিটি, সিলেট।