শিব্বির আহমদ আরজু : হবিগঞ্জ-২ (বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য, জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও বীরমুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট মরহুম শরীফ উদ্দিন আহমেদ এর ২৪তম মৃত্যু বার্ষিকী আজ (বৃহস্পতিবার)। ১৯৯৬ সালে এ দিনে সংসদ চলাকালিন সময়ে আকস্মিক মারা যান তিনি। মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে নানান কর্মসূচী হাতে নিয়েছে বানিয়াচং উপজেলা আওয়ামীলীগ। কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে পবিত্র কোরআন খতম, উপজেলা সদরের যাত্রাপাশা আসকর উল্লাহ জামে মসজিদে বাদ জোহর মিলাদ মাহফিল, কবর যিয়ারত ও তবারক বিতরণ।
জীবনী : মরহুম শরীফ উদ্দিন আহমেদ ১৯৪২ সালে ৭ মার্চ যাত্রাপাশা গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৫ম শ্রেণি পাশ করে ৬স্ট শ্রেণিতে ভর্তি হন ঐতিহ্যবাহী এল আর উচ্চ বিদ্যালয়ে। এ বিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সাথে মেট্টিক পাশ করে ১৯৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব এডুকেশন এন্ড রিসার্স থেকে এম এ ডিগ্রি লাভ করেন। একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭১ সালে এল এল বি পাশ করেন।
এল এল বি পাশ করার আগে তিনি বানিয়াচংয়ের সুনামধন্য বিদ্যাপীট এল আর উচ্চ বিদ্যালয়ে কয়েক বছর খুব সুনামের সাথে শিক্ষকতা করেন। সে সময় তিনি শিক্ষকতা করে অনেক কৃতি ছাত্র তৈরি এবং অনেক সম্মান ও শ্রদ্ধা অর্জন করেন। মহান পেশা শিক্ষকতার সুবাধেই মরহুম শরীফ উদ্দিন আহমেদকে আবাল বৃদ্ধাবণিতা শ্রদ্ধা ও ভালোবেসে স্যার বলেই সম্বোধন করতেন। এ সম্মান তিনি আমৃত্যু পেয়ে গেছেন। তিনি ( বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জ) আসন থেকে ২ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তখন আওয়ামীলীগের আজকের এ অবস্থান ছিল না। একদিকে স্বৈরাচারি সরকার, অন্যদিকে নিজ দল আওয়ামীলীগ বিরোধী দলে।
হামলা-মামলা উপেক্ষা করে হবিগঞ্জ জেলায় আওয়ামীলীগও ছাত্রলীগসহ এর অঙ্গ সংগঠন সমূহকে শক্তিশালী সংগঠন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন তিনি। তিনি ছিলেন হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সভাপতি। এটি সম্ভব হয়েছিল বঙ্গবন্ধু ও দলের প্রতি শতভাগ অগাধ আস্থা ও শ্রদ্ধা, বিশ্বাস, নিখাদ দেশপ্রেম এবং নির্মোহ মানুষ হিসেবে। দেশ এবং দলের জন্য জীবনবাজি রেখে সারাজীবন রাজনীতি করে গেছেন তিনি। ১৯৯৬ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন এবং তাঁর দলও সরকার গঠন করেছে, দল সরকার গঠনের ২ মাস যেতে না যেতেই আজকের দিনে ( ৬ আগস্ট ১৯৯৬ খ্রি.) আকস্মিক মারা যান জনতার নেতা অ্যাডভোকেট শরীফ উদ্দিন আহমেদ (স্যার)।
মারা যাওয়ার সাথে সাথে একটি সংগ্রামি রাজনৈতিক অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটলো। মরহুম শরীফ উদ্দিন আহমেদ (স্যার) আজ নেই, রয়ে গেছে তাঁর জীবনাদর্শ। মৃত্যুর ২৪ বছর পরও এ মানুষটির জন্য সাধারণ মানুষ কাঁদেন, প্রাণভরে দোয়া করেন। আর সেটাই তো একজন রাজনৈতিক নেতা এবং জনপ্রতিনিধির জন্য চাওয়া এবং পাওয়া। আর সেটি তিনি পেয়েছেন। তিনি ছিলেন কর্মী বান্ধব। সীসাঢালা প্রাচীরের ন্যায় ছিলেন আপোসহীন। দলের কর্মীদের তিনি সন্তানের ন্যায় ভালোবাসতেন। কর্মীদের নেতা বানাতেন। যা আজ অনেক নেতাই চান না তার অধীনস্থ কর্মীরা নেতা হন। এর ব্যতিক্রম ছিলেন তিনি। সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট মরহুম শরীফ উদ্দিন আহমেদ স্যারের মৃত্যু বার্ষিকী প্রতিবছর আনুষ্ঠানিকভাবে পালন করে থাকে বানিয়াচং উপজেলা আওয়ামীলীগ ও জেলা যুবলীগসহ বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠন। আজকের এ দিনে স্যারের আত্মার মাগফিরাত কামনা করি। আমীন