মাহমুদ হাসান :
হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক থাকাকালিন একদিনের কথা। প্রটোকল এবং সার্কিট হাউসের দায়িত্বপ্রাপ্ত নাজির সাহেব এসে বললেন, “একজন অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব স্যার সার্কিট হাউজে একটি রুম বরাদ্দ চান৷ উনাকে কোন রুমটি দেবো”? আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম ” কয়টি রুম ফাঁকা আছে”। উনি জানালেন যে সবগুলো রুমই ফাঁকা আছে৷ আমি জিজ্ঞেস করলাম, কোনও গুরুত্বপূর্ণ উর্ধতন কর্মকর্তার সফরসূচি আছে কি? তিনি বললেন, না স্যার, জানামতে নেই। আমি বললাম, তাহলে তো তাকে এক নম্বর রুমই দেয়া যায়৷ নাজির সাহেব বললেন,” স্যার, উনি তো অবসর প্রাপ্ত জয়েন্ট সেক্রেটারি”।
আমি বললাম, “উনি তো এক সময় জেল প্রশাসক ছিলেন, জয়েন্ট সেক্রেটারি ছিলেন, তখন তো উনি এসব সুযোগ সুবিধা পেয়েছেন৷ তাকে তো মানসিকভাবে আঘাত করা ঠিক না। আমিও তো এক সময় রিটায়ার করবো, তখন কি আমার সাথেও এই আচরন করবেন”?নাজির সাহেব বিব্রত হয়ে বললেন ” না স্যার, ১৮ বছর এ পদে কাজ করে এমন পরিস্থিতি দেখিনি তো”?
আমি তাকে ১ নম্বর ভিআইপি রুমটি বরাদ্দ দিলাম এবং আমি রাতে উনার সাথে দেখা করলাম। আমার সাক্ষাতের উদ্দেশ্য জেনে আবেগে তিনি অশ্রুসিক্ত হয়ে বললেন ” আমরা রিটায়ার্ড মানুষ, সার্কিট হাউসে সাধারন একটি কক্ষ পেলেই খুশি। আমাকে ভি আই পি কক্ষ দিয়ে আাবার দেখা করে খোঁজ নিচ্ছেন এ তো অবিঃশ্বাস্য প্রাপ্তি”।
আমাদের ইতিবাচক আচরন মানুষকে অনাবিল আনন্দে উদ্ভাসিত করতে পারে।
সম্মান কখনো শর্তযুক্ত নয়, সম্মান করতে হবে নিরঙ্কুশ, আন্তরিক ও নিঃশর্তভাবে।
লেখক : হবিগঞ্জের সাবেক জেলা প্রশাসক ও যুগ্ম সচিব, বাংলাদেশ সচিবালয়, ঢাকা।