টিপু চৌধুরী ::
সায়ীদুল হাসান। একজন বামপন্থী ও প্রগতিশীল আন্দোলনের নেতা,একজন অসাম্প্রদায়িক চেতনার লোক, একজন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এবং একজন শহীদ বুদ্ধিজীবী। ১৯১২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং থানার উপজেলা সদরের কামালখানী মহল্লায় জন্ম গ্রহন করেন। তাঁর পিতা হলেন খান বাহাদুর রফিকুল হাসান। সায়ীদুল হাসান সিলেট থেকে মেট্রিক, কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ থেকে আই এ, কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ থেকে বিএ ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে ডিগ্রি অর্জন করেন।ছাত্রজীবন থেকেই তিনি বামপন্থী রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন।
১৯৪৬ সালের ১৬ আগস্ট কলকাতার ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষকে বাঁচিয়েছেন। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর বিশেষ অনুরোধে সায়ীদুল হাসান লন্ডন ও শ্রীলংকার হাইকমিশনে ট্রেড কমিশনার পদে চাকুরী করেন। শ্রীলংকায় থাকাকালীন পুর্ব পাকিস্তানের দুর্ভিক্ষের খবর সংবাদে দেখে চাকুরী ছেড়ে দেন। ১৯৫৮ সালে ভাসানী ন্যাপে যোগদান করেন। ন্যাপের রাজনীতিতে মওলানা ভাসানীর একনিষ্ট সহচর হিসেবে কাজ করেন। ১৯৬৪ সালে ঢাকায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় তিনি বলিষ্ট ভুমিকা পালন করেন। ১৯৬৬ সালে ন্যাপ ভাসানীর কেন্দ্রীয় কমিটির কোষাধ্যক্ষ নির্বাচিত হন। তিনি ছিলেন একজন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব।
তাঁর স্ত্রী ফরিদা হাসানও ছিলেন একজন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। ফরিদা হাসান ছায়ানটের সাথে জড়িত ছিলেন। সায়ীদুল হাসানের বন্ধু ছিলেন সিলেটের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নির্মল চৌধুরী। নির্মল চৌধুরী সিলেটে একটি চা বাগানের মালিক ছিলেন। জামাল উদ্দিন নামে এক বিহারী লোক নির্মল চৌধুরীর ঘোর শত্রু ছিল। ১৯৭১ সালে ২৬ মার্চ যুদ্ধ শুরু হলে নির্মল চৌধুরী দু’টি নাবালিকা কন্যাসহ ঢাকায় সায়ীদুল হাসান এর বাসায় আশ্রয় নেন। চা বাগানের অবাঙ্গালী কর্মচারীরা নির্মল চৌধুরীকে অনুসরণ করতে থাকেন। নির্মল চৌধুরীকে বিহারীরা ধরে নিয়ে যায়। ১৯৭১ সালের ১৮ মে একটি মিথ্যা আশ্বাসের প্রেক্ষিতে সায়ীদুল হাসান তাঁর বন্ধু নির্মল চৌধুরীকে উদ্ধারের জন্য ঢাকায় হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালে ( শেরাটন হোটেল) যান। এই যে গেলেন সায়ীদুল হাসান আর বাসায় ফিরলেন না।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হলে ভারতীয় এক জেনারেলের সহযোগিতায় সায়ীদুল হাসানের স্ত্রী ফরিদা হাসান পাকিস্তানের লেঃ জেনারেল নিয়াজীর সাথে ঢাকা সেনানিবাসে দেখা করেন। জেনারেল নিয়াজী ফরিদা হাসানকে বললেন, পাকিস্তানের আই এস আই এর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্নেল মাকসুদ ঢাকা লালমাটিয়া ফিজিক্যাল ট্রেনিং কলেজে নির্মল চৌধুরী ও আর পি সাহার সাথে সায়ীদুল হাসানকে হত্যা করা হয়েছে। সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, মানবহিতৈষী, রাজনৈতিক ব্যক্তি,একজন বুদ্ধিজীবী পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর হাতে শহীদ হয়ে গেলেন। বাংলাদেশ হারালো একজন বুদ্ধিজীবীকে ।
লেখক : সাংবাদিক।