গোলাম রাজ্জাক কাসেমী :
নিজের সৃজনশীলতাকে অমর করে রাখার শ্রেষ্ঠ মাধ্যম হলো লেখালেখি ৷ কালের আবর্তে একদিন সবাই বিলীন হয়ে যাবো, কিন্তু আমাদের লেখাগুলো থেকে যাবে আমাদের অস্তিত্বের সাক্ষী হয়ে চিরকাল৷ আমাদের অনুপস্থিতিতে আমাদের লেখাজোখাই আমাদেরকে স্মরণীয় করে রাখবে অনন্তকাল ৷ তাই বলি, একজন লেখকের মৃত্যু নেই ৷ সে বেঁচে থাকে তার লিখনীর মাঝে ৷
লিখিত বর্ণনা আমাদেরকে সংযোগ করিয়ে দেয় অতীতের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের সঙ্গে ৷ লেখার সেতুবন্ধনে আমরা হারিয়ে যাই হাজার বছর পূর্বে ৷ খোঁজে পাই আমাদের শেকড়ের সন্ধান ৷ মূর্ত হয়ে উঠে চৌদ্দশত বছর পূর্বের সেই সোনালি যুগের মধুর চিত্র ৷ কলমের আঁচড়ে জীবন্ত হয়ে উঠে হাজার বছরের ইতিহাস, ঐতিহ্য ৷ যা পাঠের মধ্যদিয়ে এগিয়ে যায় দেশ ও সমাজ ৷
আমিও আলোকিত হতে চাই এবং আলোকিত করতে চাই— তাই লিখতে ভালোবাসি, কেননা একজন লেখকের পথ অনেক দীর্ঘ ও সমৃদ্ধ ৷
তাকে প্রচুর পড়েতে হয় এবং চারপাশটাকে জানতে হয়, তাই ভালো লেখক হওয়ার জন্য প্রথমে তাকে নিবিষ্ট পাঠক হতে হয় এবং জ্ঞান ও গুণে সমৃদ্ধ হতে হয় ৷ তাই লেখক হবার স্বপ্ন পূরণে— ভালো পাঠক হওয়াও অপরিহার্য হয় বটে ৷
লিখতে ভালোবাসি কারণ, এটি জ্ঞান আহরণ ও বিতরণের একটি টেকসই মাধ্যম, যা কালের ঘর্ষণে কখনো হারিয়ে যায় না, বরং কাল থেকে কাল হয়ে মহাকালের সীমানা ছুঁয়ে নির্মিত হয় লেখালেখির পথ ৷ যেখান থেকে বর্তমান ও ভবিষ্যতে উপকৃত হয় সভ্য পৃথিবীর বিপুল জনগোষ্ঠী ৷
যে সমাজে আমি দাঁড়িয়ে আছি এর প্রতি আমার একটি দায়বদ্ধতা আছে ৷ সমাজ বিনির্মাণের দায়িত্ববোধ থেকে আমার হৃদয়ে আলোড়িত হয় চেতনা ও বিশ্বাসের বাণী ৷ আমারও লিখতে ইচ্ছে করে এক-পৃথিবী ৷ হৃদয়ের কথা বলতে হই ব্যাকুল ৷ আত্মার শব্দমালা জেগে উঠে প্রকাশ করতে চায় শত কথা, শত ব্যথা ৷ আর এই প্রকাশভঙ্গি ব্যক্ত করার যতগুলো মাধ্যম আছে তারমধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালি মাধ্যম হচ্ছে লেখালেখি ৷ এর মধ্যদিয়ে নিজেকে বলিষ্ঠভাবে প্রকাশ করতে পারি এবং বিশ্বাসের জায়গাটিকে পূর্ণ শক্তিমত্তার সঙ্গে নির্মাণ করতে পারি ৷
তাইতো লিখতে ভালোবাসি, যেন এই পৃথিবীর পাতায় পাতায় ছড়িয়ে দিতে পারি বিশুদ্ধতার বাণী ৷
লেখক : গোলাম রাজ্জাক কাসেমী,
বন্দর, নারায়ণগঞ্জ ৷