ঢাকা ০৩:২৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo বানিয়াচং ইসলাহুল উম্মাহ পরিষদের উদ্যোগে মেধাবী ও কৃতি শিক্ষার্থীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ Logo হবিগঞ্জ-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার ঘোষণা দিলেন এমপি মজিদ খান Logo বানিয়াচং উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভা Logo নৌকা মার্কার সমর্থনে বানিয়াচং দক্ষিণ যাত্রাপাশা বনমুথুরা ভূমিহীন নারী-পুরুষের মিছিল Logo বানিয়াচংয়ে সরকারি প্রণোদনার ৭ হাজার ১শ’ কৃষককে সার-বীজ প্রদান Logo বানিয়াচংয়ে ফারুক চৌধুরী মিতুর মৃত্যুতে আলহাজ্ব রেজাউল মোহিত খানের শোক Logo বর্ণাঢ্য আয়োজনে আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া দারুল কোরআন মাদ্রাসার বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত Logo এমপি আব্দুল মজিদ খানকে দলীয় নমিনেশন দেওয়ার দাবীতে বানিয়াচং ২নং ইউনিয়ন আ’লীগের সভা Logo বানিয়াচং ৫/৬নং ভূমি অফিসের তহশিলদার রেজাউল করিম স্ট্যান্ড রিলিজ Logo রাত পোহালেই বানিয়াচং আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া দারুল কোরআন মাদ্রাসার বার্ষিক মহাসম্মেলন-২০২৩

লাইফ সাপোর্টে জাকারিয়া খান চৌধুরী, দোয়া প্রার্থনা

  • তরঙ্গ ২৪ ডেস্ক :
  • আপডেট সময় ০২:৫০:২১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১০ মার্চ ২০২১
  • ৯০ বার পড়া হয়েছে

তরঙ্গ ডেস্ক : দৈনিক মানবকণ্ঠের প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশক, ভাষা সৈনিক, মুক্তিযুদ্ধের প্রবাসী সংগঠক, বাংলাদেশ সরকারের সাবেক উপদেষ্টা জাকারিয়া খান চৌধুরী গুরুতর অসুস্থ। তিনি বর্তমানে রাজধানীর খিলক্ষেতের আশিয়ান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে মুমুর্ষ অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, এখনো তার অবস্থা স্থিতিশীল নয়। জাকারিয়া খান চৌধুরীর সুস্থতা কামনায় পরিবার ও মানবকণ্ঠ পরিবার সবার কাছে দোয়া প্রার্থনা করা হয়েছে।

বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের অধিকারী জাকারিয়া খান চৌধুরীর গ্রামের বাড়ি হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলার সুজাতপুর ইউনিয়নের সৎমূখা চৌধুরী বাড়ি। তার বাবা ইয়াইয়া খান চৌধুরী ছিলেন পাকিস্তান সরকারের ডেপুটি ম্যাজিট্রেট। দেশ স্বাধীনের পর তিনি কুষ্টিয়া মহাকুমার প্রশাসক ছিলেন। বাবার চাকরির সুবাদে ১৯৩৩ সালের ১৮ নভেম্বর জাকারিয়া খান চৌধুরী ভারতের আসাম প্রদেশের শিবসাগরে জন্মগ্রহণ করেন। শিক্ষাজীবন শুরু মেঘালয়ের রাজধানী শিলং ও করিমগঞ্জে, তারপর সিলেটে।

করিমগঞ্জের স্কুলে অধ্যায়নকালে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে ১৯৫৫ সালে অর্থনীতিতে সম্মান ডিগ্রী অর্জন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্তায় ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের মিছিল করতে গিয়ে কারারুদ্ধ হোন তিনি। এরপর ১৯৫৭ সালে লন্ডনে লিঙ্কনস্ ইন এ ‘বার-এট-ল’ পড়ার জন্য ভর্তি হন। ছাত্রাবস্থায় লন্ডনে ১৯৫৮ সালে পাকিস্তানের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেন এবং পরবর্তীতে ১৯৬০ সালে সংগ্রামের মাধ্যমে পূর্ব বাংলা স্বাধীন করার পরিকল্পনায় ‘পূর্বসূরী’ নামে গোপন রাজনৈতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন।

১৯৬৩ সনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান যখন লন্ডনে এক সংক্ষিপ্ত সফরে গেলে জাকারিয়া চৌধুরী তাদের রাজনৈতিক লক্ষ্য স্বাধীনতার কথাটা বঙ্গবন্ধুর কাছে উত্থাপন করেন। বঙ্গবন্ধু তার সঙ্গে এক মত পোষণ করেন। সেই অবধি বঙ্গবন্ধুর সাথে তার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ অব্যাহত থাকে। ১৯৬৮ সালে ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার’ প্রতিবাদে লন্ডনস্থ পাকিস্তান হাই কমিশন জবরদখলের নেতৃত্ব দেন। আইয়ুব শাহী পতনের পর ১৯৭০ সালে দেশে ফিরে আসেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে পুনরায় লন্ডন যান এবং মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সংগঠক হিসেবে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন।

১৯৭১ সালের ৭ই মার্চে অসহযোগ আন্দোলনের শুরুতে বঙ্গবন্ধু ওনাকে ব্যক্তিগত দূত হিসাবে লন্ডনে অবস্থান নিতে বলেন। তখন এয়ারপোর্টের কর্তৃত্ব পাকিস্তান বিমান বাহিনী নিয়ে নেয় এবং আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি নিরাপত্তা আরোপ করে। যেহেতু তিনি বিচ্ছিন্নতাবাদী রাজনীতিক হিসাবে পাকিস্তান সরকারের কাছে চিহ্নিত ছিলেন সেহেতু এয়ারপোর্ট দিয়ে লন্ডন যাওয়া সমীচীন মনে করেননি। তবে ২৫শে মার্চের পৈচাশিক ঘটনার পর তিনি আত্মগোপনে থেকে ৩রা এপ্রিল মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত করতে ঢাকা ছেড়ে হবিগঞ্জের তেলিয়াপাড়া চা-বাগানে যান। অনেক বিদ্রোহী বাঙ্গালী সেনারা তখন মেজর খালেদ মোশাররফের (পরবর্তীতে মেজর জেনারেল) নেতৃত্বে ঐ চা-বাগানে অবস্থানরত ছিল। বিদ্রোহী বাঙ্গালী সেনা কর্মকর্তারা বৈঠক করে ওনাকে লন্ডনে চলে গিয়ে ‘অর্থ’ ও ‘অস্ত্র’ সংগ্রহের দায়িত্ব অর্পন করেন। পরে নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে লন্ডনে গিয়ে তিনি বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত দূত পরিচয়েই সাংগঠনিক কার্য্যক্রম শুরু করেন।

মুক্তিযুদ্ধে সহায়তার জন্য তখন বিলেতে মরহুম আজিজুল হক ভূঁইয়াকে আহ্বায়ক ও মরহুম বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীকে উপদেষ্টা করে যে সাংগঠনিক কমিটি গঠন করা হয়। তিনি সেই সাথে সংশ্লিষ্ট হয়ে কার্য্যক্রম শুরু করেন এবং ‘বাংলাদেশ ফান্ড’ নামে অর্থ সংগ্রহের জন্য হেমব্রোজ ব্যাংকে একাউন্ট খোলেন। পরবর্তীতে সেই একাউন্ট ন্যাশনাল ওয়েস্ট মিনিস্টার ব্যাংকে স্থানান্তর করা হয়।

১৯৭১ সনের ২৫ শে মার্চে সেই নৃশংস পাকিস্তানী সামরিক হামলার প্রতিবাদে লন্ডনসহ বিলেতের বিভিন্ন শহরে প্রবাসী দেশবাসী কর্তৃক প্রতিবাদের ঝড় উঠে, গঠিত হয় একশন কমিটি। লক্ষ লক্ষ পাউন্ডের চাঁদা জমা হতে থাকে এই ফান্ডে। সংগৃহীত এই ফান্ডের টাকায় পৃথিবীব্যাপী প্রচার কার্য্য চালানো হয়, যুদ্ধের জন্য কেনা হয় রসদ ও সাজ-সরঞ্জাম এবং পরবর্তীতে যুদ্ধের পর উদ্বৃত্ত টাকা দান করা হয় স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারকে। সব একশন কমিটিকে সমম্বয় ও ক‚টনৈতিক লবিংয়ের জন্য ‘বাংলাদেশ মিশন’ নাম দিয়ে ২৪ পেমব্রিজ গার্ডেন, লন্ডন ডব্লিউ-২ তে অফিস স্থাপন করা হয়। মিশনের প্রধান হিসাবে মরহুম বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী দায়িত্বরত ছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালের ৯ মাস লন্ডন ছিল প্রতিবাদ ও প্রচারে মুখরিত। বিলেতের দেশপ্রেমিক জনগোষ্ঠীর তৎপরতা ও ত্যাগের কারনেই আর্ন্তজাতিক প্রচার মাধ্যম আমাদের প্রতি বরাবর সহানুভূতিশীল ও সোচ্চার ছিল যা যুদ্ধ জয়ের জন্য অপরিহার্য্য।

১৯৭২ সালে তিনি ফের দেশে ফিরে আসেন। ১৯৭৭ সালে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সরকারের উপদেষ্টা পদে যোগ দেন। তিনি শ্রম মন্ত্রণালয়, জনশক্তি মন্ত্রণালয় ও সমাজকল্যান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন।

জাকারিয়া চৌধুরীর নিজ দেশের বাড়ী হাওর এলাকায় হওয়ায় সেই সকল এলাকার আর্থ-সামাজিক সমস্যার সম্ভাবনা সম্পর্কে তিনি খুব সচেতন ছিলেন। জিয়াউর রহমানের শাসনামলের এক পর্যায়ে তিনি প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে হাওর উন্নয়ন বোর্ড গঠন করে সেখানকার সম্পদ এবং সম্ভাবনাকে সু-সংগঠিত করে এলাকার উন্নয়ন সু-সম্পন্ন করার পরামর্শ দেন। যার ফলশ্রুতিতে ১৯৭৭ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি এক অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে জিয়াউর রহমান হাওর উন্নয়ন বোর্ড প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে যার নামকরণ করা হয় বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন বোর্ড।

জাকারিয়া খান চৌধুরী ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে হবিগঞ্জ-২ আসন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এছাড়াও ১৯৯১ ও ১২ জুন ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে অংশ নিয়ে পরাজিত হন।

সূত্র : সিলেট ভয়েস

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

বানিয়াচং ইসলাহুল উম্মাহ পরিষদের উদ্যোগে মেধাবী ও কৃতি শিক্ষার্থীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ

লাইফ সাপোর্টে জাকারিয়া খান চৌধুরী, দোয়া প্রার্থনা

আপডেট সময় ০২:৫০:২১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১০ মার্চ ২০২১

তরঙ্গ ডেস্ক : দৈনিক মানবকণ্ঠের প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশক, ভাষা সৈনিক, মুক্তিযুদ্ধের প্রবাসী সংগঠক, বাংলাদেশ সরকারের সাবেক উপদেষ্টা জাকারিয়া খান চৌধুরী গুরুতর অসুস্থ। তিনি বর্তমানে রাজধানীর খিলক্ষেতের আশিয়ান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে মুমুর্ষ অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, এখনো তার অবস্থা স্থিতিশীল নয়। জাকারিয়া খান চৌধুরীর সুস্থতা কামনায় পরিবার ও মানবকণ্ঠ পরিবার সবার কাছে দোয়া প্রার্থনা করা হয়েছে।

বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের অধিকারী জাকারিয়া খান চৌধুরীর গ্রামের বাড়ি হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলার সুজাতপুর ইউনিয়নের সৎমূখা চৌধুরী বাড়ি। তার বাবা ইয়াইয়া খান চৌধুরী ছিলেন পাকিস্তান সরকারের ডেপুটি ম্যাজিট্রেট। দেশ স্বাধীনের পর তিনি কুষ্টিয়া মহাকুমার প্রশাসক ছিলেন। বাবার চাকরির সুবাদে ১৯৩৩ সালের ১৮ নভেম্বর জাকারিয়া খান চৌধুরী ভারতের আসাম প্রদেশের শিবসাগরে জন্মগ্রহণ করেন। শিক্ষাজীবন শুরু মেঘালয়ের রাজধানী শিলং ও করিমগঞ্জে, তারপর সিলেটে।

করিমগঞ্জের স্কুলে অধ্যায়নকালে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে ১৯৫৫ সালে অর্থনীতিতে সম্মান ডিগ্রী অর্জন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্তায় ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের মিছিল করতে গিয়ে কারারুদ্ধ হোন তিনি। এরপর ১৯৫৭ সালে লন্ডনে লিঙ্কনস্ ইন এ ‘বার-এট-ল’ পড়ার জন্য ভর্তি হন। ছাত্রাবস্থায় লন্ডনে ১৯৫৮ সালে পাকিস্তানের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেন এবং পরবর্তীতে ১৯৬০ সালে সংগ্রামের মাধ্যমে পূর্ব বাংলা স্বাধীন করার পরিকল্পনায় ‘পূর্বসূরী’ নামে গোপন রাজনৈতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন।

১৯৬৩ সনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান যখন লন্ডনে এক সংক্ষিপ্ত সফরে গেলে জাকারিয়া চৌধুরী তাদের রাজনৈতিক লক্ষ্য স্বাধীনতার কথাটা বঙ্গবন্ধুর কাছে উত্থাপন করেন। বঙ্গবন্ধু তার সঙ্গে এক মত পোষণ করেন। সেই অবধি বঙ্গবন্ধুর সাথে তার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ অব্যাহত থাকে। ১৯৬৮ সালে ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার’ প্রতিবাদে লন্ডনস্থ পাকিস্তান হাই কমিশন জবরদখলের নেতৃত্ব দেন। আইয়ুব শাহী পতনের পর ১৯৭০ সালে দেশে ফিরে আসেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে পুনরায় লন্ডন যান এবং মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সংগঠক হিসেবে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন।

১৯৭১ সালের ৭ই মার্চে অসহযোগ আন্দোলনের শুরুতে বঙ্গবন্ধু ওনাকে ব্যক্তিগত দূত হিসাবে লন্ডনে অবস্থান নিতে বলেন। তখন এয়ারপোর্টের কর্তৃত্ব পাকিস্তান বিমান বাহিনী নিয়ে নেয় এবং আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি নিরাপত্তা আরোপ করে। যেহেতু তিনি বিচ্ছিন্নতাবাদী রাজনীতিক হিসাবে পাকিস্তান সরকারের কাছে চিহ্নিত ছিলেন সেহেতু এয়ারপোর্ট দিয়ে লন্ডন যাওয়া সমীচীন মনে করেননি। তবে ২৫শে মার্চের পৈচাশিক ঘটনার পর তিনি আত্মগোপনে থেকে ৩রা এপ্রিল মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত করতে ঢাকা ছেড়ে হবিগঞ্জের তেলিয়াপাড়া চা-বাগানে যান। অনেক বিদ্রোহী বাঙ্গালী সেনারা তখন মেজর খালেদ মোশাররফের (পরবর্তীতে মেজর জেনারেল) নেতৃত্বে ঐ চা-বাগানে অবস্থানরত ছিল। বিদ্রোহী বাঙ্গালী সেনা কর্মকর্তারা বৈঠক করে ওনাকে লন্ডনে চলে গিয়ে ‘অর্থ’ ও ‘অস্ত্র’ সংগ্রহের দায়িত্ব অর্পন করেন। পরে নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে লন্ডনে গিয়ে তিনি বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত দূত পরিচয়েই সাংগঠনিক কার্য্যক্রম শুরু করেন।

মুক্তিযুদ্ধে সহায়তার জন্য তখন বিলেতে মরহুম আজিজুল হক ভূঁইয়াকে আহ্বায়ক ও মরহুম বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীকে উপদেষ্টা করে যে সাংগঠনিক কমিটি গঠন করা হয়। তিনি সেই সাথে সংশ্লিষ্ট হয়ে কার্য্যক্রম শুরু করেন এবং ‘বাংলাদেশ ফান্ড’ নামে অর্থ সংগ্রহের জন্য হেমব্রোজ ব্যাংকে একাউন্ট খোলেন। পরবর্তীতে সেই একাউন্ট ন্যাশনাল ওয়েস্ট মিনিস্টার ব্যাংকে স্থানান্তর করা হয়।

১৯৭১ সনের ২৫ শে মার্চে সেই নৃশংস পাকিস্তানী সামরিক হামলার প্রতিবাদে লন্ডনসহ বিলেতের বিভিন্ন শহরে প্রবাসী দেশবাসী কর্তৃক প্রতিবাদের ঝড় উঠে, গঠিত হয় একশন কমিটি। লক্ষ লক্ষ পাউন্ডের চাঁদা জমা হতে থাকে এই ফান্ডে। সংগৃহীত এই ফান্ডের টাকায় পৃথিবীব্যাপী প্রচার কার্য্য চালানো হয়, যুদ্ধের জন্য কেনা হয় রসদ ও সাজ-সরঞ্জাম এবং পরবর্তীতে যুদ্ধের পর উদ্বৃত্ত টাকা দান করা হয় স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারকে। সব একশন কমিটিকে সমম্বয় ও ক‚টনৈতিক লবিংয়ের জন্য ‘বাংলাদেশ মিশন’ নাম দিয়ে ২৪ পেমব্রিজ গার্ডেন, লন্ডন ডব্লিউ-২ তে অফিস স্থাপন করা হয়। মিশনের প্রধান হিসাবে মরহুম বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী দায়িত্বরত ছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালের ৯ মাস লন্ডন ছিল প্রতিবাদ ও প্রচারে মুখরিত। বিলেতের দেশপ্রেমিক জনগোষ্ঠীর তৎপরতা ও ত্যাগের কারনেই আর্ন্তজাতিক প্রচার মাধ্যম আমাদের প্রতি বরাবর সহানুভূতিশীল ও সোচ্চার ছিল যা যুদ্ধ জয়ের জন্য অপরিহার্য্য।

১৯৭২ সালে তিনি ফের দেশে ফিরে আসেন। ১৯৭৭ সালে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সরকারের উপদেষ্টা পদে যোগ দেন। তিনি শ্রম মন্ত্রণালয়, জনশক্তি মন্ত্রণালয় ও সমাজকল্যান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন।

জাকারিয়া চৌধুরীর নিজ দেশের বাড়ী হাওর এলাকায় হওয়ায় সেই সকল এলাকার আর্থ-সামাজিক সমস্যার সম্ভাবনা সম্পর্কে তিনি খুব সচেতন ছিলেন। জিয়াউর রহমানের শাসনামলের এক পর্যায়ে তিনি প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে হাওর উন্নয়ন বোর্ড গঠন করে সেখানকার সম্পদ এবং সম্ভাবনাকে সু-সংগঠিত করে এলাকার উন্নয়ন সু-সম্পন্ন করার পরামর্শ দেন। যার ফলশ্রুতিতে ১৯৭৭ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি এক অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে জিয়াউর রহমান হাওর উন্নয়ন বোর্ড প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে যার নামকরণ করা হয় বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন বোর্ড।

জাকারিয়া খান চৌধুরী ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে হবিগঞ্জ-২ আসন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এছাড়াও ১৯৯১ ও ১২ জুন ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে অংশ নিয়ে পরাজিত হন।

সূত্র : সিলেট ভয়েস