মো: আশিকুর রহমান, আজমিরীগঞ্জ থেকে : দেশের গ্রামাঞ্চল থেকে হারিয়ে যাচ্ছে খেলাধূলা। এসব খেলাধূলার মধ্যে রয়েছে কানামাছি, দাঁড়িয়াবান্ধা, ডাংগুটি, ঘোড়া দৌঁড়, ফুটবল, নৌকা বাইচ, গোল্লাছুট, চারগুটি, লাঠি খেলা, লং জাম্প, সাত পাতা, ফুল টোক্কা, মোরগ যুদ্ধ ও হাডুডু। গ্রামে আগের মতো চোখে পড়ে না ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা। গ্রামের মুরুব্বীদের সাথে আলাপচারিতায় তারা বলেন, আধুনিক সভ্যতার ছোঁয়ায় ও প্রযুক্তির বিকাশে ইতিহাস থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে জনপ্রিয় গ্রামীণ সব খেলা।
সময়ের বিবর্তনে মাঠ, বিল-ঝিল ভড়াট হয়ে প্রতিনিয়ত হারিয়ে যাচ্ছে দেশের ঐতিহ্যবাহী এসব খেলা । একটা সময় ছিল গ্রাম থেকে শুরু করে শহর পর্যন্ত শিশু ও যুবকরা পড়ালেখার পাশাপাশি বিভিন্ন খেলাধূলায় অভ্যস্থ ছিল। অবসরে দলবেঁধে খেলতো নানা প্রকারের খেলা। বাড়ির উঠান থেকে শুরু করে রাস্তার আনাচে-কানাচে, খোলা মাঠে কম পরিসরেই খেলা যেত। তারা বলেন, এখন ছেলে-মেয়েরা সবাই মোবাইলে আসক্ত। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমান সময়ে শহরের শিশুরা ঘরের এক কোণে বসে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইস ভিডিও গেম,কার্টুন নিয়ে সময় পার করে থাকে।
ফলে তাদের মেধার বিকাশও বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। এক সময় গ্রামবাংলার ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা ও বয়স্ক ব্যক্তিরা তাদের নানান কর্মব্যস্ততার ফাঁকে বিভিন্ন ধরনের খেলা করে সময় কাটাতেন। এর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য কানামাছি, দাঁড়িয়াবান্ধা, ডাংগুটি, ঘোড়া দৌড়, ফুটবল, নৌকা বাইচ, কানামাছি, গোল্লাছুট, চারগুটি, লাঠি খেলা, দীর্ঘ লাফ, সাত পাতা, ফুল টোক্কা, মোরগ যুদ্ধ, হাডুডু খেলা ছিল অন্যতম বিনোদনমূলক, স্বাস্থ্য সচেতনমূলক ও প্রতিভা বিকাশের অন্যতম মাধ্যম।
এ সকল খেলা দৈনন্দিন কর্মব্যস্ততা ও এবং আধুনিকতার ছোঁয়ায় প্রযুক্তির দাপটে গ্রামীণ এসব খেলাধূলার দিনদিন বিলুপ্ত হতে হতে অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়াই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রযুক্তির কল্যাণে এগিয়ে যাচ্ছে গোটা বিশ্ব। কিন্তু হারিয়ে গিয়েছে আমাদের দেশের গ্রামীণ বাংলার ইতিহাস ঐতিহ্য ও বিনোদনমূলক এসব খেলা। জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে দিন দিন খেলার মাঠের সংখ্যা কমে যাচ্ছে, গ্রামের মানুষ বেকারত্বের ফলে প্রতিনিয়ত শহরমুখী হতে বাধ্য হচ্ছে। শহরে খেলার মাঠ গ্রামের তুলনায় অনেকংশেই কম।
শিশুদের মোবাইল ব্যবহারে প্রবণতা বাড়ছে। স্কুল-কলেজে বছরে কয়েকদিনের জন্য ক্রীড়া অনুষ্ঠান পরিচালনা করে। পরে আর কোন খেলার আয়োজন চোখে পড়ে না। বর্তমান প্রজন্মের শিশুদের মোবাইল আসক্তি কমাতে হলে, গ্রামীণ এ সব খেলাধূলার প্রতি তাদের আগ্রহ বাড়াতে হবে। শিক্ষক থেকে শুরু করে পরিবার, সবারই উচিৎ গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী এসব খেলাধূলার প্রতি তাদের উৎসাহিত করা।
শিশুদের অতিরিক্ত মোবাইল আসক্তির ফলে তারা একটা সময় গিয়ে একগুয়েমি স্বভাবের হয়ে ওঠে। মোবাইলে বিভিন্ন ধরণের গেম খেলে তারা আরও বেশি খারাপ দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কিশোর গ্যাং, শিশু অপরাধ সবই এই মোবাইল আসক্তির ফল। যদি তাদের মোবাইল আসক্তি দূর করতে হয় তাহলে গ্রামীণ এ সব খেলাধূলার কোন বিকল্প নেই।