মখলিছ মিয়া : আমাদের সমাজে কারো করোনা হলে তাকে সামাজিকভাবে হেনস্থার শিকার হতে হয়। আক্রান্ত ব্যক্তি তথা পরিবারের লোকজনের সাথে বন্ধ করে দেয়া হয় কথা বলা। মিডিয়ার কল্যাণে এ ধরণের সংবাদ প্রতিনিয়তই শুনতে হচ্ছে। এ সবের মাঝেও যখন শোনা যায় করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিকে সুস্থ করে তুলতে পরিবারের লোকজন সাধ্যনুযায়ি সকল প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন, তখন সত্যিই খুব ভালো লাগে। এমনি এক ভালো লাগা পাওয়া গেল হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলায়। মায়ের ভালোবাসার কাছে হেরে গেল করোনা। আক্রান্ত শিশু সন্তান করোনা আক্রান্ত হলেও তার সেবা করার একমাত্র অবলম্বন মা সুরিনা আক্তার আখঞ্জী করোনা আক্রান্ত হননি। জানা যায়, গত ৭ মে বানিয়াচংয়ের সহকারি উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মোঃ মহিউদ্দিন আগা খান করোনা আক্রান্ত হন।
পর দিন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরকিল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আবুল হাদী মোহাম্মদ শাহ পরান এর নির্দেশে আক্রান্ত ব্যক্তির বাড়ির সকল লোকজনের করোনা পরীক্ষা করা হয়। কিছু দিনের মধ্যেই রিপোর্ট আসে মহিউদ্দিন আগা খান এর শিশুপুত্র মেহেদী হাসান(৭) করোনা আক্রান্ত হয়েছে। সাথে সাথে ডাক্তারসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা তাদের বাড়িতে ছুটে যান আক্রান্ত শিশুপুত্রকে হাসপাতালের আইশোলেশনে নিয়ে যাওয়ার জন্য। এত ছোট বাচ্চার কেইবা পাশে থেকে তাকে সেবা দিতে পারবে। এ নিয়ে যখন কথা হচ্ছিল ঠিক এই মুহুর্তেই সাহস করে এগিয়ে আসেন আক্রান্ত শিশু মেহেদীর মা। নিজ জিম্মায় রেখে চলে শিশু মেহেদীর চিকিৎসা সেবা। মায়ের সাথে দিন রাত অবস্থান করলেও করোনা ছুতে পারেনি গর্ভধারিণী মাকে।
পরপর দুইবার নেগেটিভ আসায় গত ৫ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে শিশু মেহেদীকে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আবুল হাদী মোহাম্মদ শাহ পরান সুস্থ ঘোষণা করেন। এদিকে শিশু পুত্র মেহেদী তার মায়ের সাথে থাকার কারণে দুইবার তার মায়ের করোনা পরীক্ষা করা হলে দুইবারই করোনা নেগেটিভ এসেছে। যেখানে করোনা রোগীর সাথে ভয়ে অনেকেই কথা বলেনি, সেখানে শিশু মেহেদীর মা নিজে সেবা করে আক্রান্ত শিশু সন্তানকে সুস্থ করে তুলেছেন। অথচ তিনি নিজে আক্রান্ত হননি। সতিই মায়ের ভালোবাসার কাছে হেরে গেল করোনা।