ঢাকা ০৪:৪০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৯ জুন ২০২৩, ২৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo নবীগঞ্জে ইফা কর্তৃক জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস প্রতিরোধে করণীয় শীর্ষক আলোচনা সভা Logo সু-শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হলে জনসাধারণকে তথ্য জানাতে হবে : ড. আব্দুল হাকিম Logo বানিয়াচং মডেল প্রেসক্লাবের দ্বি-বার্ষিক কাউন্সিল সম্পন্ন : সভাপতি লিটন, সম্পাদক আব্দাল মিয়া Logo নবীগঞ্জে মোটরসাইকেল চাপায় স্কুল ছাত্র নিহত : মহাসড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ Logo আজ হবিগঞ্জ আসছেন কবির বিন আনোয়ার : জেলা আ’লীগ অফিসে উদ্বোধন করবেন স্মার্ট কর্নার Logo উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে বঙ্গবন্ধু কন্যাকে আবারও নির্বাচিত করুন : এমপি মজিদ খান Logo ইকরাম বাজারে অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে যাওয়া ঘর পরিদর্শন করেছেন এমপি মজিদ খান Logo উন্নত স্বাস্থ্য সেবার ব্রত নিয়ে বানিয়াচং গ্যানিংগঞ্জ বাজারে সততা ডায়াগস্টিক সেন্টার উদ্বোধন Logo বানিয়াচংয়ে গ্রাম্য দাঙ্গা রোধে দেশীয় অস্ত্রবাজদের ভ্রাম্যমাণ আদালতের আওতায় আনা হবে Logo বানিয়াচংয়ে ইকরাম বাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৯টি দোকান পুড়ে ছাঁই : ব্যাপক ক্ষতি

মফস্বল সাংবাদিকদের এক আদর্শের নাম দেবব্রত চক্রবর্তী বিষ্ণু

  • তরঙ্গ ২৪ ডেস্ক :
  • আপডেট সময় ১২:৪০:০১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ অগাস্ট ২০২০
  • ৪৮ বার পড়া হয়েছে

শিব্বির আহমদ আরজু : নব্বই এর দশকের কথা। তখন বাংলা বাজার পত্রিকার জয় জয়কার অবস্থা। সম্পাদক ছিলেন মতিউর রহমান চৌধুরী। এ পত্রিকার বানিয়াচং প্রতিনিধি ছিলেন দেবব্রত চক্রবর্তী বিষ্ণু।

আশি/নব্বই এর দশকে বানিয়াচং তথা গ্যানিংগঞ্জ বাজারে খুব কম মানুষই পত্রিকা রাখতেন। যে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পত্রিকা রাখা হতো,সেখানে শিক্ষিত মানুষরা পত্রিকা পড়ার জন্য সিরিয়াল ধরতেন। সে সময় গ্যানিংগঞ্জ বাজারে মুদিমালের বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছিল বিষ্ণু কাকাদের। তখন তিনি একাই ৪/৫টি জাতীয় পত্রিকা রাখতেন। এলাকার মুরুব্বীসহ শিক্ষিত মানুষরা এসে সেখানে পত্রিকা পড়তেন। তাতে কোন বাধা বিপত্তি ছিল না। তখন ১/২টি স্থানীয় পত্রিকা ছিল। আর সেটি দৈনিক নয় সাপ্তাহিক।

তখন আমি খুব ছোট। বলে রাখা ভালো আমরা মুদিমালের বাজার করতাম বিষ্ণু কাকাদের দোকানে। এ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিষ্ণু কাকার পিতা পরিচালনা করতেন। ১/২ জন সরকার ছিল। প্রচুর জমজমাট ছিল ব্যবসা। তাঁর পিতা প্রয়ানের পর দায়িত্ব অর্পণ হয় বিষ্ণু কাকার উপর। এত বড় ব্যবসার মধ্যে কোন মন নেই। যে সময়-ই দোকানে যাই, দেখি শুধু পত্রিকা পড়েন। কোন সময় বই। সেটা চলতো সকাল থেকে রাত অবধি। প্রচুর স্টাডি করতেন তিনি। সেটি এখনো করেন। বাংলা শব্দ এবং ব্যাকরণে দখল ছিল প্রচুর। পাশাপাশি ইংরেজিও।

বাংলা বাজার পত্রিকার পাশাপাশি তখন থেকেই বিভিন্ন পত্রিকায় ছোট ছোট কলাম লিখতে শুরু করেন তিনি। প্রায় পত্রিকায়-ই সে লেখাগুলো প্রকাশ করতো। ব্যবসায় মন-প্রাণ নেই। ধ্যান-জ্ঞান সব পত্রিকা নিয়েই। সেখানে উচ্চ শিক্ষিত সব মানুষদের পদচারণা ছিল বেশি।

নব্বই এর দশকে ব্যবসা বাদ দিয়ে চলে গেলেন ঢাকায়। শুরু করলেন বড় বড় পত্রিকায় কলাম লেখা। যুগান্তর, সমকাল, মানব কণ্ঠ ও কালের কণ্ঠের মতো বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকার সহ-সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন খুব দক্ষভাবে।

বর্তমানে তিনি সমকাল পত্রিকার সিনিয়র সহকারি সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। সমসাময়িক বিষয় নিয়ে সপ্তাহে কলাম লিখেন। করেন বিটিভিসহ বেসরকারি টেলিভিশনে নিয়মিত টকশো। খুব স্বল্পভাসি মানুষ তিনি। বাক্যের ধরণ খুব তীক্ষ্ণ। তাঁর স্ত্রীও একজন সাংবাদিক এবং কলামিস্ট। বন্ধু বৎসল ও নিরহংকার মানুষ। পিতা ছিলেন জমিদার। বংশগতভাবে বনেদি পরিবারের সন্তান। কিন্তু চলনে-বলনে কোন অহমিকা নেই। আত্মীয়-স্বজনসহ এলাকার মানুষদের সাথে চমৎকার সম্পর্ক তাঁর। তা ছাড়া জাতীয়ভাবে প্রখ্যাত কলামিস্ট প্রয়াত এবিএম মূসা, নির্মল সেন, আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী, গোলাম সারওয়ার, আবেদ খানসহ সমসাময়িক সব খ্যাতিমান সাংবাদিকদের সান্নিধ্য পেয়েছেন তিনি। তা ছাড়া সাবেক তত্ত্ববধায়ক সরকারের প্রধান উপদেস্টা ও প্রধান বিচারপতি রবীন্দ্র সংগিত বিশেষজ্ঞ প্রয়াত হাবিবুর রহমান সাহেব এর মতো দেশবরেণ্য ব্যক্তিরা দেবব্রত চক্রকর্তী বিষ্ণুকে স্নেহ করতেন। সান্নিধ্য পেয়েছেন কবি নির্মলেন্দু গুণেরও। ইতিমধ্যে তিনি বেশ কয়েকটি বই রচনা করেছেন। যা সবটাই পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে।

আশি/ নব্বই এর দশকে এত সাংবাদিক ছিল না। যারা ছিলেন তারা অত্যন্ত শিক্ষিত, ভদ্র ও স্বজ্জন মানুষ। তাঁরা মানুষ হিসেবে ছিলেন অসাধারণ। পড়োশোনা করতেন প্রচুর। আজ সাংবাদিক সংখ্যায় বেশি হলেও গুণে-মানে খুব-ই কম। দেবব্রত চক্রবর্তী বিষ্ণু কাকার বাড়ি আমাদের বাড়ির পার্শ্বেই। যাত্রাপাশা গ্রাম ও ৪নং দক্ষিণ-পশ্চিম ইউনিয়ন। তাঁকে নিয়ে এ লেখার সারমর্ম হলো অদম্য ইচ্ছা এবং প্রচুর পড়াশোনার মাধ্যমে যে কোন জায়গায় যে কোন মানুষ পৌঁছা সম্ভব। আর এর বাস্তব উদাহরণ হচ্ছেন দেবব্রত চক্রবর্তী বিষ্ণু। তিনি একজন উচ্চ শিক্ষিত মানুষ এবং খ্যাতিমান কলামিস্ট। তিনি আমাদের বানিয়াচং তথা সিলেট এর গর্ব এবং নতুন প্রজন্মের জন্য এক আদর্শ। প্রচুর পড়াশোনা, নিয়মাবর্তিতা ও অদম্য ইচ্ছা থাকলে শুধু সাংবাদিকতায় নয় যে কোন পেশায়ই সে লক্ষে পৌঁছতে পারবে। চাই দৃঢ় মনোবল এবং প্রচুর পড়াশোনা।

লেখক : সম্পাদক ও প্রকাশক, তরঙ্গ টুয়েন্টিফোর ডট কম।

 

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

নবীগঞ্জে ইফা কর্তৃক জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস প্রতিরোধে করণীয় শীর্ষক আলোচনা সভা

মফস্বল সাংবাদিকদের এক আদর্শের নাম দেবব্রত চক্রবর্তী বিষ্ণু

আপডেট সময় ১২:৪০:০১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ অগাস্ট ২০২০

শিব্বির আহমদ আরজু : নব্বই এর দশকের কথা। তখন বাংলা বাজার পত্রিকার জয় জয়কার অবস্থা। সম্পাদক ছিলেন মতিউর রহমান চৌধুরী। এ পত্রিকার বানিয়াচং প্রতিনিধি ছিলেন দেবব্রত চক্রবর্তী বিষ্ণু।

আশি/নব্বই এর দশকে বানিয়াচং তথা গ্যানিংগঞ্জ বাজারে খুব কম মানুষই পত্রিকা রাখতেন। যে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পত্রিকা রাখা হতো,সেখানে শিক্ষিত মানুষরা পত্রিকা পড়ার জন্য সিরিয়াল ধরতেন। সে সময় গ্যানিংগঞ্জ বাজারে মুদিমালের বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছিল বিষ্ণু কাকাদের। তখন তিনি একাই ৪/৫টি জাতীয় পত্রিকা রাখতেন। এলাকার মুরুব্বীসহ শিক্ষিত মানুষরা এসে সেখানে পত্রিকা পড়তেন। তাতে কোন বাধা বিপত্তি ছিল না। তখন ১/২টি স্থানীয় পত্রিকা ছিল। আর সেটি দৈনিক নয় সাপ্তাহিক।

তখন আমি খুব ছোট। বলে রাখা ভালো আমরা মুদিমালের বাজার করতাম বিষ্ণু কাকাদের দোকানে। এ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিষ্ণু কাকার পিতা পরিচালনা করতেন। ১/২ জন সরকার ছিল। প্রচুর জমজমাট ছিল ব্যবসা। তাঁর পিতা প্রয়ানের পর দায়িত্ব অর্পণ হয় বিষ্ণু কাকার উপর। এত বড় ব্যবসার মধ্যে কোন মন নেই। যে সময়-ই দোকানে যাই, দেখি শুধু পত্রিকা পড়েন। কোন সময় বই। সেটা চলতো সকাল থেকে রাত অবধি। প্রচুর স্টাডি করতেন তিনি। সেটি এখনো করেন। বাংলা শব্দ এবং ব্যাকরণে দখল ছিল প্রচুর। পাশাপাশি ইংরেজিও।

বাংলা বাজার পত্রিকার পাশাপাশি তখন থেকেই বিভিন্ন পত্রিকায় ছোট ছোট কলাম লিখতে শুরু করেন তিনি। প্রায় পত্রিকায়-ই সে লেখাগুলো প্রকাশ করতো। ব্যবসায় মন-প্রাণ নেই। ধ্যান-জ্ঞান সব পত্রিকা নিয়েই। সেখানে উচ্চ শিক্ষিত সব মানুষদের পদচারণা ছিল বেশি।

নব্বই এর দশকে ব্যবসা বাদ দিয়ে চলে গেলেন ঢাকায়। শুরু করলেন বড় বড় পত্রিকায় কলাম লেখা। যুগান্তর, সমকাল, মানব কণ্ঠ ও কালের কণ্ঠের মতো বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকার সহ-সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন খুব দক্ষভাবে।

বর্তমানে তিনি সমকাল পত্রিকার সিনিয়র সহকারি সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। সমসাময়িক বিষয় নিয়ে সপ্তাহে কলাম লিখেন। করেন বিটিভিসহ বেসরকারি টেলিভিশনে নিয়মিত টকশো। খুব স্বল্পভাসি মানুষ তিনি। বাক্যের ধরণ খুব তীক্ষ্ণ। তাঁর স্ত্রীও একজন সাংবাদিক এবং কলামিস্ট। বন্ধু বৎসল ও নিরহংকার মানুষ। পিতা ছিলেন জমিদার। বংশগতভাবে বনেদি পরিবারের সন্তান। কিন্তু চলনে-বলনে কোন অহমিকা নেই। আত্মীয়-স্বজনসহ এলাকার মানুষদের সাথে চমৎকার সম্পর্ক তাঁর। তা ছাড়া জাতীয়ভাবে প্রখ্যাত কলামিস্ট প্রয়াত এবিএম মূসা, নির্মল সেন, আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী, গোলাম সারওয়ার, আবেদ খানসহ সমসাময়িক সব খ্যাতিমান সাংবাদিকদের সান্নিধ্য পেয়েছেন তিনি। তা ছাড়া সাবেক তত্ত্ববধায়ক সরকারের প্রধান উপদেস্টা ও প্রধান বিচারপতি রবীন্দ্র সংগিত বিশেষজ্ঞ প্রয়াত হাবিবুর রহমান সাহেব এর মতো দেশবরেণ্য ব্যক্তিরা দেবব্রত চক্রকর্তী বিষ্ণুকে স্নেহ করতেন। সান্নিধ্য পেয়েছেন কবি নির্মলেন্দু গুণেরও। ইতিমধ্যে তিনি বেশ কয়েকটি বই রচনা করেছেন। যা সবটাই পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে।

আশি/ নব্বই এর দশকে এত সাংবাদিক ছিল না। যারা ছিলেন তারা অত্যন্ত শিক্ষিত, ভদ্র ও স্বজ্জন মানুষ। তাঁরা মানুষ হিসেবে ছিলেন অসাধারণ। পড়োশোনা করতেন প্রচুর। আজ সাংবাদিক সংখ্যায় বেশি হলেও গুণে-মানে খুব-ই কম। দেবব্রত চক্রবর্তী বিষ্ণু কাকার বাড়ি আমাদের বাড়ির পার্শ্বেই। যাত্রাপাশা গ্রাম ও ৪নং দক্ষিণ-পশ্চিম ইউনিয়ন। তাঁকে নিয়ে এ লেখার সারমর্ম হলো অদম্য ইচ্ছা এবং প্রচুর পড়াশোনার মাধ্যমে যে কোন জায়গায় যে কোন মানুষ পৌঁছা সম্ভব। আর এর বাস্তব উদাহরণ হচ্ছেন দেবব্রত চক্রবর্তী বিষ্ণু। তিনি একজন উচ্চ শিক্ষিত মানুষ এবং খ্যাতিমান কলামিস্ট। তিনি আমাদের বানিয়াচং তথা সিলেট এর গর্ব এবং নতুন প্রজন্মের জন্য এক আদর্শ। প্রচুর পড়াশোনা, নিয়মাবর্তিতা ও অদম্য ইচ্ছা থাকলে শুধু সাংবাদিকতায় নয় যে কোন পেশায়ই সে লক্ষে পৌঁছতে পারবে। চাই দৃঢ় মনোবল এবং প্রচুর পড়াশোনা।

লেখক : সম্পাদক ও প্রকাশক, তরঙ্গ টুয়েন্টিফোর ডট কম।