ঢাকা ০৪:০৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১০ আশ্বিন ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo বানিয়াচংয়ে স্কুল ছাত্রীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার Logo এমপি মজিদ খানের মধ্যস্থতায় বানিয়াচং সৈদারটুলা ছান্দের ২ গ্রুপের দ্বন্দ্ব নিরসন Logo মিশর আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থান পাওয়ায় মুফতি হাফিজুল হককে সংবর্ধনা প্রদান Logo আজমিরীগঞ্জে নিত্যপণ্যের মূল্য চড়া: ক্রেতাদের নাভিশ্বাস Logo একজন কর্মবীর সফল এমপি আব্দুল মজিদ খান Logo বানিয়াচংয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পদ্মাসন সিংহ’কে বিদায় সংবর্ধনা Logo জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী মনজুর চৌধুরী Logo বানিয়াচংয়ে ইফা শিক্ষকদের নিয়ে ক্লাস্টার ট্রেনিং অনুষ্ঠিত Logo আজমিরীগঞ্জে পুলিশের অভিযানে ২০লিটার চোলাই মদ জব্দ : আটক-১ Logo প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.) হলেন গোটা জাতির জন্য উত্তম আদর্শ

মননে ১৫ই আগস্ট ১৯৭৫

  • তরঙ্গ ২৪ ডেস্ক :
  • আপডেট সময় ০৮:৪৮:৫৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৫ অগাস্ট ২০২০
  • ১০৮ বার পড়া হয়েছে

তাহমিনা বেগম গিনি : দিনটি ছিল ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট।তখন আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১৩ নং রুমের আবাসিক ছাত্রী।ঐ দিনটি ছিল আমাদের এম,এ ফাইনাল পরীক্ষার শেষ পরীক্ষা ভাইবা। ১৪ ই আগস্ট সারারাত আমার গুলি পটকার আওয়াজ শুনেছি।হলের ছাত্রলীগের মেয়েরা বলাবলি করছিল ১৫ তারিখ শেখ সাহেব বিশ্ববিদ্যালয়ে আসবেন, তাই আনন্দে ছেলেরা এসব করছে।আমাদের হলটিকেও খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছিল ।কারণ আমাদের হলের ৫ম তলা উদ্বোধন করতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আসার কথা ১৫ই আাগস্ট।সকালে হৈ চৈ এ ঘুম ভেঙ্গে গেল।আমার রুমমেট রুনা,নাজু জানালো গেটে নিরাপত্তা প্রহরী থাকা সত্ত্বেও কে বা কারা একটি পাকিস্তানী পতাকা লাগিয়েছে। সবাই বড় অবাক হোলাম ! রাতের অন্ধকারে ৩২নংসহ ঢাকা শহরে কিনারকীয় হত্যাযজ্ঞ ঘটে গিয়েছে আমরা এর কিছুই জানি না।সকাল ৮ টয় দেখলাম সবাই কমন রুমে রেডিও শুনতে দৌঁড়াচ্ছে।আমিও গেলাম। মেজর ডালিমের নিজর কন্ঠে শুনলাম সেই মর্মন্ত্তু সংবাদ।

 

ছবি- লেখক ।

শেখ সাহেব ইজ নো মোর।কমনরুম কান্নায় ভারাক্রান্ত হয়ে পড়লো । বিশেষ করে ছাত্রলীগের নেত্রীদের ক্রন্দনে।আমার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো যখন বঙ্গবন্ধুর বড় ছবিটি হল স্টাফ রাজা ভাই ভেজা চোখে নামিয়ে নিয়ে গেলো।আমরা হল বারান্দায় বসে রইলাম কয়েকজন।সবাই হল ছাড়তে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।মনে কত কথা আকুলি- বিকুলি করছে তখন।শেখ কামালের স্ত্রীর  চেহারাটা চোখের সামনে ভাসছে।বিয়ের পরও এসেছে হলে।আমাদের সাথে পরীক্ষার্থী ছিল সে । শেখ কামালও। তারা সবাই কেমন আছেন। হঠাৎ দুটো আর্মি জীপ হলে ঢুকে আমাদের সামনে থামলো। দুজন অফিসার বললেন আমরা এম্এর ছাত্রীদের সাথে কথা বলতে চাই। আমরা পরিচয় দিতেই বললেন, এখন মুজিব নেই তাকে হত্যা করা হয়েছে। আমাদের মাঝে কেউ একজন সাহস করে প্রশ্ন করেছিল,অন্যদের কথা।অফিসারদ্বয় জানালেন সবাই মৃত।আপনারা ভয় পাবেন না। আর এক ফোটা রক্ত বাংলাদেশে পড়বে না। ফাইনাল ইয়ার বাদে সবাই হল ত্যাগ করবেন। এত কষ্ট কোনদিন পাইনি।এত আতঙ্কও বোধ করিনি কোনদিন। সবাই হল ত্যাগ করলো। আমরা গুটি কয়েক মেয়ে রয়ে গেলাম।আশ্চর্য হলাম,একটি মিছিল হয়নি,একটি শ্লোগান শুনিনি।তখন মনে হচ্ছিল সব স্বাভাবিক। কোথাও কিছু হয়নি।কিছুূদিন পর ভাইবা পরীক্ষা দিয়ে অনেক ভালো লাগার ১১৩নং রুম কলাভবন ছেড়ে চলে আসি।কিন্তু আমার আজও মনে হয়—–
“যদি রাত পোহালে শোনা যেত
বঙ্গবন্ধু মরে নাই—।
তাহলে আমাদের বেঁচে থাকাটা অন্যরকম হতো।

এই মহানেতার প্রতি আমার বিনম্র শ্রদ্ধা।
সেদিনের সব শহীদানদের প্রতি আমার চোখের জল।

লেখক : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক মেধাবী ছাত্রী, কবি ও সাহিত্যিক, হবিগঞ্জ।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

বানিয়াচংয়ে স্কুল ছাত্রীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

মননে ১৫ই আগস্ট ১৯৭৫

আপডেট সময় ০৮:৪৮:৫৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৫ অগাস্ট ২০২০

তাহমিনা বেগম গিনি : দিনটি ছিল ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট।তখন আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১৩ নং রুমের আবাসিক ছাত্রী।ঐ দিনটি ছিল আমাদের এম,এ ফাইনাল পরীক্ষার শেষ পরীক্ষা ভাইবা। ১৪ ই আগস্ট সারারাত আমার গুলি পটকার আওয়াজ শুনেছি।হলের ছাত্রলীগের মেয়েরা বলাবলি করছিল ১৫ তারিখ শেখ সাহেব বিশ্ববিদ্যালয়ে আসবেন, তাই আনন্দে ছেলেরা এসব করছে।আমাদের হলটিকেও খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছিল ।কারণ আমাদের হলের ৫ম তলা উদ্বোধন করতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আসার কথা ১৫ই আাগস্ট।সকালে হৈ চৈ এ ঘুম ভেঙ্গে গেল।আমার রুমমেট রুনা,নাজু জানালো গেটে নিরাপত্তা প্রহরী থাকা সত্ত্বেও কে বা কারা একটি পাকিস্তানী পতাকা লাগিয়েছে। সবাই বড় অবাক হোলাম ! রাতের অন্ধকারে ৩২নংসহ ঢাকা শহরে কিনারকীয় হত্যাযজ্ঞ ঘটে গিয়েছে আমরা এর কিছুই জানি না।সকাল ৮ টয় দেখলাম সবাই কমন রুমে রেডিও শুনতে দৌঁড়াচ্ছে।আমিও গেলাম। মেজর ডালিমের নিজর কন্ঠে শুনলাম সেই মর্মন্ত্তু সংবাদ।

 

ছবি- লেখক ।

শেখ সাহেব ইজ নো মোর।কমনরুম কান্নায় ভারাক্রান্ত হয়ে পড়লো । বিশেষ করে ছাত্রলীগের নেত্রীদের ক্রন্দনে।আমার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো যখন বঙ্গবন্ধুর বড় ছবিটি হল স্টাফ রাজা ভাই ভেজা চোখে নামিয়ে নিয়ে গেলো।আমরা হল বারান্দায় বসে রইলাম কয়েকজন।সবাই হল ছাড়তে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।মনে কত কথা আকুলি- বিকুলি করছে তখন।শেখ কামালের স্ত্রীর  চেহারাটা চোখের সামনে ভাসছে।বিয়ের পরও এসেছে হলে।আমাদের সাথে পরীক্ষার্থী ছিল সে । শেখ কামালও। তারা সবাই কেমন আছেন। হঠাৎ দুটো আর্মি জীপ হলে ঢুকে আমাদের সামনে থামলো। দুজন অফিসার বললেন আমরা এম্এর ছাত্রীদের সাথে কথা বলতে চাই। আমরা পরিচয় দিতেই বললেন, এখন মুজিব নেই তাকে হত্যা করা হয়েছে। আমাদের মাঝে কেউ একজন সাহস করে প্রশ্ন করেছিল,অন্যদের কথা।অফিসারদ্বয় জানালেন সবাই মৃত।আপনারা ভয় পাবেন না। আর এক ফোটা রক্ত বাংলাদেশে পড়বে না। ফাইনাল ইয়ার বাদে সবাই হল ত্যাগ করবেন। এত কষ্ট কোনদিন পাইনি।এত আতঙ্কও বোধ করিনি কোনদিন। সবাই হল ত্যাগ করলো। আমরা গুটি কয়েক মেয়ে রয়ে গেলাম।আশ্চর্য হলাম,একটি মিছিল হয়নি,একটি শ্লোগান শুনিনি।তখন মনে হচ্ছিল সব স্বাভাবিক। কোথাও কিছু হয়নি।কিছুূদিন পর ভাইবা পরীক্ষা দিয়ে অনেক ভালো লাগার ১১৩নং রুম কলাভবন ছেড়ে চলে আসি।কিন্তু আমার আজও মনে হয়—–
“যদি রাত পোহালে শোনা যেত
বঙ্গবন্ধু মরে নাই—।
তাহলে আমাদের বেঁচে থাকাটা অন্যরকম হতো।

এই মহানেতার প্রতি আমার বিনম্র শ্রদ্ধা।
সেদিনের সব শহীদানদের প্রতি আমার চোখের জল।

লেখক : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক মেধাবী ছাত্রী, কবি ও সাহিত্যিক, হবিগঞ্জ।