এম এ মজিদ : আমরা খাই, পেট ভরে, মন ভরে না। ভুরি বাড়ে, শক্তি বাড়ে না। কিন্তু কেন? চলুন আমরা দেখে নেই, আমরা কি খাই, কিভাবে খাই। শিশু সাহিত্যিক ফরিদা আক্তার শিশুদেরকে কিভাবে মজা করে খাওয়াতে হবে এ নিয়ে সিরিজ বই লিখেছেন। বাচ্চার মা রা বইগুলো কিনে নিতে পারেন। আমরা খাবারের আগে এক হাত ধৌত করি, অথচ সুস্পষ্ট হাদিস হচ্ছে খাবারের আগে দুই হাতের কব্জী পর্যন্ত ধৌত করতে হবে। অনেক আমলদার মানুষ খাবারের আগে হাত মুখ এমনভাবে ধৌত করেন, যেন তিনি ওজু করছেন। রাসুল সাঃ এমন আমল করেছেন। রাসুল সাঃ যে কোনো খাবার মজা করে খেতেন। অবশ্যই অল্প অল্প করে খেতেন, অল্প খেতেন। আমরা পাগলের মতো খাই, কিন্তু মজা করে খাই না। আনাস রাঃ বলেন- রাসুল সাঃ এর সামনে কোনো দিন ৪/৫টি বাটিতে করে খাবার সামগ্রী দেয়া হয়নি। অর্থাৎ বহু আইটেম এর খাবার তিনি একসাথে খেতেন না। আমরা ঠিক এর বিপরীত। দস্তারখানায় বসে খাবারের বিষয়ে এখন স্বাস্থ্য বিজ্ঞানীরা পরামর্শ দিয়ে থাকেন। ইসলাম ১৪শ বছর আগেই সেটিকে স্ন্নুত হিসাবে গ্রহণ করেছে। খাবারের নিন্দা করা আমাদের অভ্যাসে পরিনত হয়েছে। কয়েকজন মিলে বিশেষ করে মহিলারা একসাথে হলেই কার ঘরের খাবার কেমন, কার রান্না কেমন, এনিয়ে আলোচনা হয়। আলোচনা তো নয় পুরোপুরি সমালোচনা। নিজে ভাল রাধুনি, নিজের তৈরী খাবার খুবই সুস্বাদু সেটা প্রমাণ করতে মহিলারা যে কত সময় ব্যয় করে তার হিসাব নেই। মাঝে মাঝে মনে হয় তারা এতো সময় পায় কই। খাবার বিষয়ে রাসুল সাঃ কি বলতেন? হযরত আবু হুরায়রা রাঃ বলেন- রাসুল সাঃ কোনোদিন খাবারের নিন্দা করেননি। পছন্দ হলে খেতেন, না হলে উঠে যেতেন। তবে প্লেটে যে খাবার দেয়া হতো তা খেয়েই উঠতেন। কেউ কি কাউকে দাওয়াত দেয় খারাপ খাবার খাওয়ানোর জন্য? মোটেই না। খাবার তৈরীতে কারো হাতের যশ ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। খাবারে নিন্দা করা আমাদের মনের সাথে একদম মিশে গেছে। খাবার প্লেট থেকে কিছু পড়ে গেলে তা উঠিয়ে খাওয়াকে চরম অপমানজনক হিসাবে আমরা মনে করি। বাচ্চাদের প্লেট থেকে কিছু পড়ে গেলে বাচ্চা যদি তা উঠিয়ে খেতে চায়, মারা তো ছি ছি বলে বাজার গরম করে ফেলেন। আমরা যে সমাজে বসবাস করি তা তো আধুনিক সমাজ। ডাইনিং চেয়ার টেবিল আছেই। তাও ডাইনিং রুমটা সর্বোচ্চ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকে। প্লেট থেকে একটা কিছু পড়ে গেলে ডাইনিং টেবিল থেকে তুলে খেলে কি সমস্যা? ১৪শ বছর আগে নিশ্চিত এতো পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার সুযোগ ছিল না। তখনও তো মানুষ প্লেট থেকে পড়ে যাওয়া খাবার তুলে খেতেন। আমরা যখন ছোট ছিলাম, প্লেট থেকে ভাত পড়ে গেলে এবং তা তুলে না খেলে আমাদের মা দাদীরা বলতেন, প্লেট থেকে পড়ে যাওয়া একেকটি ভাতের দানা কিয়ামতের দিন একেকটি কুমড়া হয়ে গলায় ডুকবে। কি ভয়ংকর। এতো পরিচ্ছন্ন বাড়িঘর ছিল না, আমরা কিন্তু মাটিতে পড়ে যাওয়া খাবারও তুলে খেতাম। এখন ডাইনিং টেবিলে পড়ে যাওয়া ভাত নয় বিস্কুটটা পর্যন্ত আমাদের সন্তানদেরকে খেতে দেইনা। নিজেরাও খাই না। বলি, অসুখ হবে, অথচ পড়ে যাওয়া খাবারে অসুখ নিরাময়ের বড় ঔষধ থাকতে পারে। এব্যাপারে রাসুল সাঃ কী করতেন? হযরত যাবের রাঃ বলেন- খাবার খেতে গিয়ে প্লেট থেকে যদি কিছু পড়ে যেত, রাসুল সাঃ সেগুলো তুলে পরিস্কার করে খাবারের নির্দেশ দিয়ে বলেছেন ওই পড়ে যাওয়া খাবারটি যেন শয়তানের জন্য ছেড়ে দেয়া না হয়। বিছমিল্লাহ বলে খাবার গ্রহণ অন্যতম সুন্নত। অথচ সেটা আমরা ভুলতে বসেছি। সহিহ হাদিস হচ্ছে- বিছমিল্লাহ বলে খাবার খাওয়া শুরু করলে খাবারের ভেতরে শয়তান প্রবেশ করতে পারে না। বিছমিল্লাহ বলে খাবার না খেলে তাতে শয়তান ঢুকে পড়ে এবং খাবার যে একটা আল্লাহর নেয়ামত তা ভুলিয়ে দেয়। ডান হাতে খাবারকে ওয়াজিব বলা হয়েছে। বিনা ওজরে বাম হাত দিয়ে খাওয়াই যাবে না। সাধারণত আমরা ডান হাত দিয়েই খাই। একবার চিন্তা করুন, আমরা যখন চাইনিজ খেতে যাই, সবসময় কি ডান হাত দিয়ে খাই, চামচ দিয়ে বাম হাতেও খাই। আমার নিজেরও এমন বদঅভ্যাস ছিল। বিষয়টা খেয়াল করলে আপনিও এর মধ্যে পড়বেন। একদা রাসুল সাঃ সামনে এক ব্যক্তি বাম হাত দিয়ে খাবার গ্রহণ করছিলেন। রাসুল সাঃ বললেন, তুমি ডান হাত দিয়ে খাবার খাও না কেন? ওই ব্যক্তি অহংকারের সাথে বলছিল, আমি ডান হাতে খাই না, আমি ডান হাতে খেতে পারি না। কিছুক্ষন পর ওই ব্যক্তি আর ডান হাত উঠাতেই পারছিল না। রাসুল সাঃ বিতৃষ্ণা কাজ করছিল ওই ব্যক্তির আচরনে। অনেকে বলেন- খাবারের সময় কোনো কথা বলা যাবে না। এটা কিন্তু ঠিক না। একসাথে খাবার খাওয়া, খাবারের সময় হালকা কথাবার্তা বলাও কিন্তু সুন্নত। প্লেট ও আঙ্গুল মুছে খাওয়া বড় ধরনের স্ন্নুত। রাসুল সাঃ এরশাদ করেন- খাবারের কোন জায়গায় তোমাদের জন্য বরকত লুকিয়ে রয়েছে তা তোমরা জান না। খাবারের পরে ভাল করে হাত ধৌত করা, কুলি করা সুন্নত। আমরা জেনেই হউক আর না জেনেই হউক সেই সুন্নতটা পালন করে থাকি। আপনি যদি রাসুল সাঃ এর সুন্নত জেনে একটা কিছু পালন করেন, সওয়াবও হবে, ভালও হবে। আর যদি রাসুল সাঃ এর সুন্নত না জেনে একই কাজ করেন, আপনার ভাল হবে কিন্তু সওয়াব হবে না। চলুন আমরা জেনে পালন করি, সওয়াব ও ভাল দুইটিই অর্জন করি।
লেখকঃ আইনজীবী ও সংবাদকর্মী
হবিগঞ্জ ৩ জুন ২০২০
০১৭১১-৭৮২২৩২