ঢাকা ০২:১১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৬ জুন ২০২৩, ২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo বানিয়াচং মডেল প্রেসক্লাবের দ্বি-বার্ষিক কাউন্সিল সম্পন্ন : সভাপতি লিটন, সম্পাদক আব্দাল মিয়া Logo নবীগঞ্জে মোটরসাইকেল চাপায় স্কুল ছাত্র নিহত : মহাসড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ Logo আজ হবিগঞ্জ আসছেন কবির বিন আনোয়ার : জেলা আ’লীগ অফিসে উদ্বোধন করবেন স্মার্ট কর্নার Logo উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে বঙ্গবন্ধু কন্যাকে আবারও নির্বাচিত করুন : এমপি মজিদ খান Logo ইকরাম বাজারে অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে যাওয়া ঘর পরিদর্শন করেছেন এমপি মজিদ খান Logo উন্নত স্বাস্থ্য সেবার ব্রত নিয়ে বানিয়াচং গ্যানিংগঞ্জ বাজারে সততা ডায়াগস্টিক সেন্টার উদ্বোধন Logo বানিয়াচংয়ে গ্রাম্য দাঙ্গা রোধে দেশীয় অস্ত্রবাজদের ভ্রাম্যমাণ আদালতের আওতায় আনা হবে Logo বানিয়াচংয়ে ইকরাম বাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৯টি দোকান পুড়ে ছাঁই : ব্যাপক ক্ষতি Logo হবিগঞ্জ বৃন্দাবন সরকারি কলেজে বার্ষিক মিলাদ মাহফিল Logo পাহাড়পুরবাসীর ভালোবাসায় সিক্ত জনতার এমপি আব্দুল মজিদ খান

ভয়ঙ্কর ভিডিও গেমস, ইন্টারনেটে আসক্তি! কোন পথে শিশু-কিশোর ?

  • তরঙ্গ ২৪ ডেস্ক :
  • আপডেট সময় ০৫:৩৮:৪২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৬ নভেম্বর ২০২০
  • ৩৮ বার পড়া হয়েছে
আবদাল মিয়া : আধুনিক প্রযুক্তি বিদ্যার ৯ম আবিষ্কার হলো ইন্টারনেট, ই-মেল ও মােবাইল ফোন। যােগাযােগ ব্যবস্থার অন্যতম অস্ত্র হলো মােবাইল ফোন। আজকের দিনে কোনাে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব বা অন্য কাউকে চিঠি লিখে তার উত্তরের প্রতীক্ষায় ডাক-পিয়নের পথ চেয়ে বসে থাকতে হয় না। তারবিহীন এ ক্ষুদ্র মােবাইল যন্ত্রটির মাধ্যমে আমরা মুহূর্তে দেশ-বিদেশে থাকা মানুষের সঙ্গে সহজে যােগাযােগ ও সবধরণের খবরা-খবর আদান- প্রদান করতে পারি। গত কয়েক বছরের মধ্যে এ ছােট্ট যন্ত্রটি আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দেখা দিয়েছে। মােবাইল ফোন ছাড়া আমাদের এক মুহূর্তও চলে না। মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর যেমন সুফল রয়েছে তেমনি কুফলও রয়েছে ! আমি মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর কিছু কুফল নিয়ে সংক্ষিপ্ত বর্ণনা করার চেষ্টা করব।
বর্তমানে যােগাযােগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হচ্ছে মােবাইল ফোন। অথচ এটি ব্যবহারের কারণে নানা স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছে শিশু কিশোরেরা। গবেষণায় বলছে, মােবাইল ফোন ব্যবহার করলে শিশুদের মানসিক বিকাশে বাধাগ্রস্থ হওয়ার পাশাপাশি রয়েছে ক্যান্সারের ঝুঁকি। অতিরিক্ত মােবাইল ব্যবহারের ফলে একাকিত্ব থেকে এক সময় শিশুরা জড়িয়ে পড়তে পারে জঙ্গিবাদসহ নানা অপরাধের সঙ্গে। কিছুদিন আগে সামাজিক যােগাযােগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যায় মােবাইল ফোনের জন্য এক শিশু তার মায়ের কাছে আকুতি করছে। একপর্যায়ে শিশুটি তার মাকে বলছে, ‘প্লিজ একবার দাও, জীবনে একবার দেখবাে। আর বড় হয়ে দেখবাে। আল্লাহ আমার মাকে কিছু বুদ্ধি দাও। আমি জীবনে একবারই তাে দেখতে চাই। এমন আকুতি করে শিশুটি কান্নায় ভেঙে পড়ে। এমন আকুতিই প্রমাণ করে শিশুরা মােবাইলের প্রতি কতটা আসক্ত ? মূলত গেমস বা নানা ধরণের ভিডিও দেখার জন্য মােবাইল ফোনের প্রতি শিশুদের আগ্রহ দিন দিন বেড়েই চলছে। আবদার মেটাতে অনেকটা বাধ্য হয়েই সন্তানের হাতে মােবাইল তুলে দিচ্ছেন অভিভাবকরা। অন্য এক গবেষণায় বলছে, আমেরিকাতে শিশুদের মােবাইল ফোন ব্যবহারে শতকরা ১.৮ জন আক্রান্ত হচ্ছে মস্তিস্ক ক্যান্সারে। এছাড়া লিউকেমিয়া নামক রােগে আক্রান্ত হয়ে শতকরা ১ জন শিশু মারা যাচ্ছে। চোখের জ্যোতি নষ্ট হওয়া, কানে কম শােনাসহ মারাত্মক মানসিক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে থাকে তারা। এছাড়া, যুদ্ধের গেমস এবং নিষিদ্ধ পর্ণ সাইটগুলােতে অবাধ যাতায়াতের কারণে অপ্রাপ্ত বয়সে নানা অপরাধ প্রবণতার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। এ প্রজন্মের শিশু কিশোররা আগের মতো বাইরে খেলাধূলা করে না। পাড়ায় পাড়ায় শিশুরা মাঠে গিয়ে ধুলো-কাদা মেখে খেলাধুলা করে ঘেমে পুকুরে এক সঙ্গে খেলোয়াড় ও সমবয়সীদেরকে নিয়ে গোসলের সময়ও হৈ হুল্লোর করে খেলায় মেতে গোসল সেরে গল্প-স্বল্প করে বাড়ি ফিরত। সেই চিরাচরিত দৃশ্যটা আজকাল যেন হারিয়ে যাচ্ছে। পড়ার চাপ যেমন- তেমন বাইরে গেলে খারাপ হবার ভয় – কতই না অভিযোগ অভিভাবকদের ? তার বদলে অভিভাবকরা বিনোদনের নামে যা তুলে দিচ্ছেন ছেলে-মেয়েদের হাতে, তার ক্ষতির পরিমাণটা তাদের ধারণারও বাইরে।
পশ্চিমা বিশ্বের মতো আমাদের অনেক পরিবারে বাবা-মা দুজনই কর্মব্যস্ত। উভয়েই ছুটছেন ‘ক্যারিয়ার ও সফলতা’ নামক সোনার হরিণের পেছনে। এদিকে সন্তান বড় হচ্ছে প্রায় একা একা। অনেক অপরিণামদর্শী মায়েরাই শিশুকে খাবার খাওয়াতে, তার কান্না থামাতে – টিভি, কম্পিউটার, মোবাইল ফোন ও ভিডিও গেমসের অভ্যাস করাচ্ছেন। সারাদিন দরজা বন্ধ করে কম্পিউটার ও স্মার্টফোন নিয়ে পড়ে থাকে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই নিজের একটা জগত তৈরি করে নেয়। ফলে মা বাবা আত্মীয়-স্বজন থেকে তাদের দূরত্ব সৃষ্টি হচ্ছে এবং ভীষণ একাকীত্বের শিকার হয়ে পড়ছে তারা। দেখা যায়, সবার মাঝে থেকেও সে একা। তার সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না সবই হয়ে যাচ্ছে যন্ত্রকেন্দ্রিক। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইদানিং কমবয়সী অর্থাৎ ১৪ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের মধ্যে ইন্টারনেটে ডুবে থাকার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়।
ছবি- বাসা/বাড়িতে এভাবেই শিশু-কিশোররা দিন ব্যাপি মোবাইলে গেমস খেলে থাকে।

উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী ভিডিও গেমসের আবিষ্কার হয় ১৯৪০-এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রে। তারপর সত্তর-আশির দশকের মধ্যে এটি জনপ্রিয়তায় পোঁছে। সর্বপ্রথম বাণিজ্যিকভাবে নির্মিত আর্কেড টাইপের ভিডিও গেম-এর নাম ছিল কম্পিউটার স্পেস। এরপর আটারি কোম্পানি বাজারে নিয়ে আসে বিখ্যাত গেম পং। তারপর ধীরে ধীরে আটারি, কোলেকো, নিনটেনডো, সেগা ও সনির মতো ব্যবসায়ী কোম্পানিগুলো নানা উদ্ভাবন ও প্রচারণা চালিয়ে কয়েক দশকের মধ্যে পৃথিবীর আনাচে-কানাচে মানুষের ঘরে পোঁছে দেয় পুঁজিবাদী সভ্যতার এ বিনোদনপণ্য। সাম্প্রতিক এক সমীক্ষা অনুযায়ী সারা পৃথিবীতে প্রায় ২২০ কোটি মানুষ নিয়মিত বা অনিয়মিতভাবে ভিডিও গেম খেলে থাকে। যাদের অধিকাংশই হচ্ছে অল্প বয়সী শিশু-কিশোর ও তরুণ-তরুণী। পাবজি! ফ্রি ফায়ার! প্লেয়ার্স আননোন ব্যাটেল গ্রাউন্ড! বর্তমান সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় অনলাইলন গেম। বর্তমানে উপমহাদেশে কয়েকগুণ বেড়েছে এই গেমের জনপ্রিয়তা। মোবাইল ফোন এবং কম্পিউটার দুটোতেই খেলা যায় এই গেম। তবে উপমহাদেশে পাবজির কম্পিউটার ভার্সনের থেকে মোবাইল ভার্সনটিই বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।  রিপোর্ট অনুযায়ী সারা পৃথিবীতে এখন প্রতি মাসে প্রায় ২২৭ মিলিয়ন মানুষ এ গেম খেলে। আর প্রতিদিন খেলে প্রায় ৮৭ মিলিয়ন মানুষ। লাখো গরিবের দেশ বাংলাদেশেও প্রতিদিন এ গেম খেলছেন ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ! সব মিলিয়ে মোবাইল কিংবা কম্পিউটারের পর্দায় শিশু- কিশোরেরা ‘পাবজি’তে এতটাই মগ্ন থাকছে যে, বাস্তব পৃথিবী ভুলে তারা এক বিপজ্জনক নেশায় আক্রান্ত হয়ে পড়ছে। বর্তমানে এই গেমে অত্যধিক আসক্ত হয়ে পড়ছে শিশু থেকে শুরু করে কিশোর এবং তরুণরাও। একটু একটু করে খেলতে খেলতে পুরোপুরি আসক্ত হয়ে যায় শিশু-কিশোররা। যার ফলে পরিবার ও স্বজনদের থেকে নিজেকে অনেকটা আলাদা করে রাখতে শুরু করে। মোবাইল ফোন নিয়ে বাসায়, রাস্তাঘাটে, খেলার মাঠে,পাড়ায় পাড়ায় দলবেঁধে, রাত জেগে একা রুমে বসে এ গেমস খেলে থাকে সারাক্ষণ। শিশু কিশোরেরা পড়াশোনায় অমনোযোগী হয়ে পড়ছে। যে সময়টা পড়ার টেবিলে বসে থাকার কথা সেই সময় কাটে গেমস খেলেই। এতে শিশু কিশোরেরা দিন দিন প্রাতিষ্ঠানিক পাঠ্যক্রম থেকে সরে আস্তে আস্তে অন্ধকারে যে নিমজ্জিত হচ্ছে তা ঠেরই পাচ্ছে না। শিশু কিশোরেরা নির্ধারিত সময়ে পাঠ্যবই থেকে জ্ঞান অর্জন করে নিজের জীবনকে প্রস্ফুটিত করার লক্ষ্যে দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করার কথা থাকলেও তা এখন ভিডিও গেমস ও ইন্টারনেটে আসক্তির কারণে শিশু কিশোরদের জীবন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এসব গেমে আসক্তিতে শিশু কিশোররা পড়াশোনায় ক্ষতির পাশাপাশি পারিবারিক,শারিরীক, সামাজিক, মানসিক রোগের কারণও হতে পারে। অনেক সরলমনা অভিভাবক হয়ত ভাবতে পারছেন না যে, এই তুচ্ছ বিনোদনটি এত মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে! বস্তুত এ হচ্ছে পুঁজিবাদী সভ্যতার বিনোদন। যা শুধু টাকার বিনিময়ে কথিত আনন্দ দিয়েই ছাড়ে না। উপরি পাওনা স্বরূপ কেড়ে নেয় সময়, সম্পদ, মেধা, সুস্থতাসহ অনেক কিছু! এখানে তার সামান্য উল্লেখ করা হচ্ছে।  আজকাল ছোটদের অনেকের চোখেই পাওয়ারি চশমা ঝুলতে দেখা যায়। চশমা ছাড়া শিশুরা চোখে ঝাঁপসা দেখে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এর কারণ হলো ডিজিটাল মাদকাসক্তি। দিনরাতের একটা দীর্ঘ সময় স্মার্টফোন, ট্যাব ও কম্পিউটারের স্ক্রীনে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ক্ষীণ দৃষ্টিতে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। চিকিৎসকদের ভাষায় এ রোগের নাম ‘মায়োপিয়া’। ২-৩ বছরের শিশুরাও এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। চিকিৎসকদের তথ্য অনুযায়ী ৮-১৪ বছরের শিশুদের চোখের সমস্যা বাড়ছে। ডাক্তারের পরীক্ষা, রোগী ও অভিভাবকদের কথায় জানা গেছে, মোবাইল-কম্পিউটারে অতিরিক্ত গেমস খেলা এবং টিভি দেখার কারণে শিশুর চোখের সমস্যার সৃষ্টি হয়। বেশ কয়েকজন অভিভাবক ও শিশুদের দেয়া তথ্য থেকে জানা গেছে, তারা গড়ে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা ডিজিটাল ডিভাইসের পেছনে ব্যয় করে, যার বড় অংশই একাডেমিক বা ব্যবসায়িক প্রয়োজনের বাইরে। এছাড়াও মোবাইল ফোন পকেটে রাখলে ভ্রুণের কোয়ালিটি কমে যাওয়া, বুক পকেটে রাখলে হার্টের সমস্যা দেখা দেয়া, আঙ্গুলে ও ঘাড়ে ব্যথা, কানে কম শোনা এবং ডিসপ্লে থেকে জীবাণু ব্যাকটরিয়ার সংক্রমণসহ অসংখ্য শারীরিক ঝুঁকির আশংকা রয়েছে! এ ভয়ঙ্কর ডিভাইস থেকে মুক্তি পেতে সমাজের প্রত্যেক সচেতন সুনাগরিকদের পরিবারের, বিশেষ করে শিশু কিশোরদের প্রতি দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট থাকলে পুরোপুরি না হলেও কিছুটা লাঘব হবে।

লেখক :  দৈনিক প্রতিদিনের বাণী ও দৈনিক ডেসটিনির বানিয়াচং প্রতিনিধি , বিশেষ প্রতিনিধি : তরঙ্গ টুয়েন্টিফোর ডটকম।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

বানিয়াচং মডেল প্রেসক্লাবের দ্বি-বার্ষিক কাউন্সিল সম্পন্ন : সভাপতি লিটন, সম্পাদক আব্দাল মিয়া

ভয়ঙ্কর ভিডিও গেমস, ইন্টারনেটে আসক্তি! কোন পথে শিশু-কিশোর ?

আপডেট সময় ০৫:৩৮:৪২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৬ নভেম্বর ২০২০
আবদাল মিয়া : আধুনিক প্রযুক্তি বিদ্যার ৯ম আবিষ্কার হলো ইন্টারনেট, ই-মেল ও মােবাইল ফোন। যােগাযােগ ব্যবস্থার অন্যতম অস্ত্র হলো মােবাইল ফোন। আজকের দিনে কোনাে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব বা অন্য কাউকে চিঠি লিখে তার উত্তরের প্রতীক্ষায় ডাক-পিয়নের পথ চেয়ে বসে থাকতে হয় না। তারবিহীন এ ক্ষুদ্র মােবাইল যন্ত্রটির মাধ্যমে আমরা মুহূর্তে দেশ-বিদেশে থাকা মানুষের সঙ্গে সহজে যােগাযােগ ও সবধরণের খবরা-খবর আদান- প্রদান করতে পারি। গত কয়েক বছরের মধ্যে এ ছােট্ট যন্ত্রটি আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দেখা দিয়েছে। মােবাইল ফোন ছাড়া আমাদের এক মুহূর্তও চলে না। মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর যেমন সুফল রয়েছে তেমনি কুফলও রয়েছে ! আমি মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর কিছু কুফল নিয়ে সংক্ষিপ্ত বর্ণনা করার চেষ্টা করব।
বর্তমানে যােগাযােগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হচ্ছে মােবাইল ফোন। অথচ এটি ব্যবহারের কারণে নানা স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছে শিশু কিশোরেরা। গবেষণায় বলছে, মােবাইল ফোন ব্যবহার করলে শিশুদের মানসিক বিকাশে বাধাগ্রস্থ হওয়ার পাশাপাশি রয়েছে ক্যান্সারের ঝুঁকি। অতিরিক্ত মােবাইল ব্যবহারের ফলে একাকিত্ব থেকে এক সময় শিশুরা জড়িয়ে পড়তে পারে জঙ্গিবাদসহ নানা অপরাধের সঙ্গে। কিছুদিন আগে সামাজিক যােগাযােগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যায় মােবাইল ফোনের জন্য এক শিশু তার মায়ের কাছে আকুতি করছে। একপর্যায়ে শিশুটি তার মাকে বলছে, ‘প্লিজ একবার দাও, জীবনে একবার দেখবাে। আর বড় হয়ে দেখবাে। আল্লাহ আমার মাকে কিছু বুদ্ধি দাও। আমি জীবনে একবারই তাে দেখতে চাই। এমন আকুতি করে শিশুটি কান্নায় ভেঙে পড়ে। এমন আকুতিই প্রমাণ করে শিশুরা মােবাইলের প্রতি কতটা আসক্ত ? মূলত গেমস বা নানা ধরণের ভিডিও দেখার জন্য মােবাইল ফোনের প্রতি শিশুদের আগ্রহ দিন দিন বেড়েই চলছে। আবদার মেটাতে অনেকটা বাধ্য হয়েই সন্তানের হাতে মােবাইল তুলে দিচ্ছেন অভিভাবকরা। অন্য এক গবেষণায় বলছে, আমেরিকাতে শিশুদের মােবাইল ফোন ব্যবহারে শতকরা ১.৮ জন আক্রান্ত হচ্ছে মস্তিস্ক ক্যান্সারে। এছাড়া লিউকেমিয়া নামক রােগে আক্রান্ত হয়ে শতকরা ১ জন শিশু মারা যাচ্ছে। চোখের জ্যোতি নষ্ট হওয়া, কানে কম শােনাসহ মারাত্মক মানসিক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে থাকে তারা। এছাড়া, যুদ্ধের গেমস এবং নিষিদ্ধ পর্ণ সাইটগুলােতে অবাধ যাতায়াতের কারণে অপ্রাপ্ত বয়সে নানা অপরাধ প্রবণতার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। এ প্রজন্মের শিশু কিশোররা আগের মতো বাইরে খেলাধূলা করে না। পাড়ায় পাড়ায় শিশুরা মাঠে গিয়ে ধুলো-কাদা মেখে খেলাধুলা করে ঘেমে পুকুরে এক সঙ্গে খেলোয়াড় ও সমবয়সীদেরকে নিয়ে গোসলের সময়ও হৈ হুল্লোর করে খেলায় মেতে গোসল সেরে গল্প-স্বল্প করে বাড়ি ফিরত। সেই চিরাচরিত দৃশ্যটা আজকাল যেন হারিয়ে যাচ্ছে। পড়ার চাপ যেমন- তেমন বাইরে গেলে খারাপ হবার ভয় – কতই না অভিযোগ অভিভাবকদের ? তার বদলে অভিভাবকরা বিনোদনের নামে যা তুলে দিচ্ছেন ছেলে-মেয়েদের হাতে, তার ক্ষতির পরিমাণটা তাদের ধারণারও বাইরে।
পশ্চিমা বিশ্বের মতো আমাদের অনেক পরিবারে বাবা-মা দুজনই কর্মব্যস্ত। উভয়েই ছুটছেন ‘ক্যারিয়ার ও সফলতা’ নামক সোনার হরিণের পেছনে। এদিকে সন্তান বড় হচ্ছে প্রায় একা একা। অনেক অপরিণামদর্শী মায়েরাই শিশুকে খাবার খাওয়াতে, তার কান্না থামাতে – টিভি, কম্পিউটার, মোবাইল ফোন ও ভিডিও গেমসের অভ্যাস করাচ্ছেন। সারাদিন দরজা বন্ধ করে কম্পিউটার ও স্মার্টফোন নিয়ে পড়ে থাকে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই নিজের একটা জগত তৈরি করে নেয়। ফলে মা বাবা আত্মীয়-স্বজন থেকে তাদের দূরত্ব সৃষ্টি হচ্ছে এবং ভীষণ একাকীত্বের শিকার হয়ে পড়ছে তারা। দেখা যায়, সবার মাঝে থেকেও সে একা। তার সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না সবই হয়ে যাচ্ছে যন্ত্রকেন্দ্রিক। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইদানিং কমবয়সী অর্থাৎ ১৪ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের মধ্যে ইন্টারনেটে ডুবে থাকার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়।
ছবি- বাসা/বাড়িতে এভাবেই শিশু-কিশোররা দিন ব্যাপি মোবাইলে গেমস খেলে থাকে।

উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী ভিডিও গেমসের আবিষ্কার হয় ১৯৪০-এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রে। তারপর সত্তর-আশির দশকের মধ্যে এটি জনপ্রিয়তায় পোঁছে। সর্বপ্রথম বাণিজ্যিকভাবে নির্মিত আর্কেড টাইপের ভিডিও গেম-এর নাম ছিল কম্পিউটার স্পেস। এরপর আটারি কোম্পানি বাজারে নিয়ে আসে বিখ্যাত গেম পং। তারপর ধীরে ধীরে আটারি, কোলেকো, নিনটেনডো, সেগা ও সনির মতো ব্যবসায়ী কোম্পানিগুলো নানা উদ্ভাবন ও প্রচারণা চালিয়ে কয়েক দশকের মধ্যে পৃথিবীর আনাচে-কানাচে মানুষের ঘরে পোঁছে দেয় পুঁজিবাদী সভ্যতার এ বিনোদনপণ্য। সাম্প্রতিক এক সমীক্ষা অনুযায়ী সারা পৃথিবীতে প্রায় ২২০ কোটি মানুষ নিয়মিত বা অনিয়মিতভাবে ভিডিও গেম খেলে থাকে। যাদের অধিকাংশই হচ্ছে অল্প বয়সী শিশু-কিশোর ও তরুণ-তরুণী। পাবজি! ফ্রি ফায়ার! প্লেয়ার্স আননোন ব্যাটেল গ্রাউন্ড! বর্তমান সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় অনলাইলন গেম। বর্তমানে উপমহাদেশে কয়েকগুণ বেড়েছে এই গেমের জনপ্রিয়তা। মোবাইল ফোন এবং কম্পিউটার দুটোতেই খেলা যায় এই গেম। তবে উপমহাদেশে পাবজির কম্পিউটার ভার্সনের থেকে মোবাইল ভার্সনটিই বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।  রিপোর্ট অনুযায়ী সারা পৃথিবীতে এখন প্রতি মাসে প্রায় ২২৭ মিলিয়ন মানুষ এ গেম খেলে। আর প্রতিদিন খেলে প্রায় ৮৭ মিলিয়ন মানুষ। লাখো গরিবের দেশ বাংলাদেশেও প্রতিদিন এ গেম খেলছেন ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ! সব মিলিয়ে মোবাইল কিংবা কম্পিউটারের পর্দায় শিশু- কিশোরেরা ‘পাবজি’তে এতটাই মগ্ন থাকছে যে, বাস্তব পৃথিবী ভুলে তারা এক বিপজ্জনক নেশায় আক্রান্ত হয়ে পড়ছে। বর্তমানে এই গেমে অত্যধিক আসক্ত হয়ে পড়ছে শিশু থেকে শুরু করে কিশোর এবং তরুণরাও। একটু একটু করে খেলতে খেলতে পুরোপুরি আসক্ত হয়ে যায় শিশু-কিশোররা। যার ফলে পরিবার ও স্বজনদের থেকে নিজেকে অনেকটা আলাদা করে রাখতে শুরু করে। মোবাইল ফোন নিয়ে বাসায়, রাস্তাঘাটে, খেলার মাঠে,পাড়ায় পাড়ায় দলবেঁধে, রাত জেগে একা রুমে বসে এ গেমস খেলে থাকে সারাক্ষণ। শিশু কিশোরেরা পড়াশোনায় অমনোযোগী হয়ে পড়ছে। যে সময়টা পড়ার টেবিলে বসে থাকার কথা সেই সময় কাটে গেমস খেলেই। এতে শিশু কিশোরেরা দিন দিন প্রাতিষ্ঠানিক পাঠ্যক্রম থেকে সরে আস্তে আস্তে অন্ধকারে যে নিমজ্জিত হচ্ছে তা ঠেরই পাচ্ছে না। শিশু কিশোরেরা নির্ধারিত সময়ে পাঠ্যবই থেকে জ্ঞান অর্জন করে নিজের জীবনকে প্রস্ফুটিত করার লক্ষ্যে দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করার কথা থাকলেও তা এখন ভিডিও গেমস ও ইন্টারনেটে আসক্তির কারণে শিশু কিশোরদের জীবন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এসব গেমে আসক্তিতে শিশু কিশোররা পড়াশোনায় ক্ষতির পাশাপাশি পারিবারিক,শারিরীক, সামাজিক, মানসিক রোগের কারণও হতে পারে। অনেক সরলমনা অভিভাবক হয়ত ভাবতে পারছেন না যে, এই তুচ্ছ বিনোদনটি এত মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে! বস্তুত এ হচ্ছে পুঁজিবাদী সভ্যতার বিনোদন। যা শুধু টাকার বিনিময়ে কথিত আনন্দ দিয়েই ছাড়ে না। উপরি পাওনা স্বরূপ কেড়ে নেয় সময়, সম্পদ, মেধা, সুস্থতাসহ অনেক কিছু! এখানে তার সামান্য উল্লেখ করা হচ্ছে।  আজকাল ছোটদের অনেকের চোখেই পাওয়ারি চশমা ঝুলতে দেখা যায়। চশমা ছাড়া শিশুরা চোখে ঝাঁপসা দেখে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এর কারণ হলো ডিজিটাল মাদকাসক্তি। দিনরাতের একটা দীর্ঘ সময় স্মার্টফোন, ট্যাব ও কম্পিউটারের স্ক্রীনে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ক্ষীণ দৃষ্টিতে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। চিকিৎসকদের ভাষায় এ রোগের নাম ‘মায়োপিয়া’। ২-৩ বছরের শিশুরাও এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। চিকিৎসকদের তথ্য অনুযায়ী ৮-১৪ বছরের শিশুদের চোখের সমস্যা বাড়ছে। ডাক্তারের পরীক্ষা, রোগী ও অভিভাবকদের কথায় জানা গেছে, মোবাইল-কম্পিউটারে অতিরিক্ত গেমস খেলা এবং টিভি দেখার কারণে শিশুর চোখের সমস্যার সৃষ্টি হয়। বেশ কয়েকজন অভিভাবক ও শিশুদের দেয়া তথ্য থেকে জানা গেছে, তারা গড়ে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা ডিজিটাল ডিভাইসের পেছনে ব্যয় করে, যার বড় অংশই একাডেমিক বা ব্যবসায়িক প্রয়োজনের বাইরে। এছাড়াও মোবাইল ফোন পকেটে রাখলে ভ্রুণের কোয়ালিটি কমে যাওয়া, বুক পকেটে রাখলে হার্টের সমস্যা দেখা দেয়া, আঙ্গুলে ও ঘাড়ে ব্যথা, কানে কম শোনা এবং ডিসপ্লে থেকে জীবাণু ব্যাকটরিয়ার সংক্রমণসহ অসংখ্য শারীরিক ঝুঁকির আশংকা রয়েছে! এ ভয়ঙ্কর ডিভাইস থেকে মুক্তি পেতে সমাজের প্রত্যেক সচেতন সুনাগরিকদের পরিবারের, বিশেষ করে শিশু কিশোরদের প্রতি দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট থাকলে পুরোপুরি না হলেও কিছুটা লাঘব হবে।

লেখক :  দৈনিক প্রতিদিনের বাণী ও দৈনিক ডেসটিনির বানিয়াচং প্রতিনিধি , বিশেষ প্রতিনিধি : তরঙ্গ টুয়েন্টিফোর ডটকম।