আবু তালহা মিহরাব : বাড়ির ছাদে লিলির একটা বাগান আছে। মাঝারি ধরণের। কাজের মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে বাগান করেছে। ফুল এবং সবজির চারা এনে দিয়েছেন লিলির বাবা। বাগানের এক পাশে কিছু সবজি গাছও আছে। টমেটো, বেগুন, মরিচ, পুঁই শাক ইত্যাদি। ফুলের মধ্যে আছে গোলাব, জুঁই, হাসনাহেনা, জবা সহ আরো অনেক।
গাছগুলো ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে। আকাশ ছোঁয়ার প্রতিজ্ঞায় লাফিয়ে বাড়ছে বেগুনগুলো। একপাশে দুয়েকটা মরিচ চারায় ফুল ফুঠেছে। সাদা সাদা ফুল। নাকফুলের মতো। টমেটোগুলো লজ্জায় লাল হওয়া ফরসা মানুষের মতো ঈষৎ লাল হয়ে ওঠেছে। একটা আবহের মধ্যে বেড়ে উঠছে বাগানের সমস্ত গাছ।
রোজ ঘুম থেকে উঠে লিলি বাগান দেখতে যায়। গাছদের সঙ্গে কথা বলে। যদিও গাছেরা কোনো শব্দ করে না। নীরব দর্শক। লিলির মন খারাপ হলে বৃক্ষের সঙ্গে আড্ডা দেয়। সুখ-দুঃখের গল্প বলে। হাসাহাসি করে। মজার গল্প জমায়। বন্ধুত্বের মতো আচরণ করে। খুঁটিনাটি সবকিছু খুঁজে ও। কোন গাছটা হেলিয়ে পড়েছে, কোনটা দুর্বল, কে কার উপর বল খাটাচ্ছে ইত্যাদি। দুর্বল গাছগুলোর শরীরে আলতু করে হাত বুলায় লিলি। মিনতি করে বলে- কাঁদিস না….. আমি এর বিচার করব। আমার বাগানের সবাই সমান। লিলি তার বাবার মুখে শুনা নজরুলের ‘সাম্যের’ কবিতা আবৃত্তি করে শুনায় ছাদের বৃক্ষরাজিকে। মজলুম গাছগুলো তখন হয়তো বিত্তবানদের দিকে বাঁকা চোখে তাকায় আর বিদ্রুপের হাসি ছড়ায়।

লিলির দৃঢ় বিশ্বাস, গাছেরা অতদিনে কবিতাটা মুখস্ত করে ফেলেছে। ওরা বোবা না হলে প্রতিদিন লিলিকে আবৃত্তি করে শুনাত। হয়তো ঝগড়া বেঁধে যেত, কার আগে কে শুনাবে কবিতা। আচ্ছা গাছ কিংবা ফুলেরা কি কবিতা জানে? ওদের নিয়ে যে অত কবি কবিতা লিখে গেছেন সেটা কি তারা জানে? বইয়ের হাজারটা পাতা লেখা কেবল উদ্ভিদ কবিতা। বৃক্ষ সমাজে বোধ হয় এটা নিয়ে তুমুল ঝগড়া হয়। কার নামে বেশি কবিতা লেখা হয়েছে।
তালিকায় সবার উপরে থাকবে গোলাব। গাছেরা বোধ হয় গোলাবের প্রতি হিংসা করে। এত কবিতা, এত ছন্দ, এত শান তার নামে! গোলাবকে লোকে আদর করে, ভালোবাসে। দোকানীরা বাজারে তুলে বিক্রি করে। বৃক্ষের মধ্যে কতেক বৃক্ষ মুখ গোমড়া করে বসে আছে; শহর দেখে না বলে। সবাই মিলে হয়তো ষড়যন্ত্র করে, গোলাবের গোষ্ঠী মুছে ফেলবে দুনিয়া থেকে। কেউ কি পারে? পারে না। গোলাবের শরীরে যে কাঁটা! ভয়ে কেউ কাছে আসে না। সব ষড়যন্ত্র ধুলিস্যাৎ হয়ে যায়।
বাগানে ফুল ফুঠেছে। অনেক ফুল। সাদা, লাল, গোলাপী রঙের ফুল। ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না। বিকেলে লিলি তার মাকে নিয়ে বাগানে গিয়ে বসে। মা চুল আঁচড়িয়ে দেন, গল্প করেন। গ্রামের গল্প, মেয়েবেলার গল্প। রূপকথার গল্প।
লেখক : শিশু সাংবাদিক, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম