তরঙ্গ ডেস্ক : বিভিন্নভাবে যাচাই-বাছাইয়ের পরও বিতর্কমুক্ত জেলা কমিটি দিতে পারছে না ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। এ পরিস্থিতিতে সারা দেশ থেকে পাওয়া বিভিন্ন অভিযোগ সংগঠনের বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের হাতে তুলে দিয়ে গত দুই বছরে হওয়া ৩১ জেলার কমিটি থেকে বিতর্কিতদের বাদ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বুধবার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে অনুষ্ঠিত দলের স্থানীয় সরকার নির্বাচন মনোনয়ন বোর্ডের সভায় অভিযোগের তালিকা তুলে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, অভিযোগগুলো যাচাই করে সত্যতা পাওয়া গেলে ওইসব নেতাকে বাদ দিতে হবে। সভায় উপস্থিত একাধিক বোর্ড সদস্য দেশ রূপান্তরকে এ তথ্য জানিয়েছেন। মনোনয়ন বোর্ডের গতকালের সভায় চতুর্থ ধাপের ৫৬ পৌরসভার নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
শেখ হাসিনার নির্দেশনার উদ্ধৃতি দিয়ে মনোনয়ন বোর্ডের সভায় উপস্থিত একাধিক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, প্রস্তাবিত জেলা কমিটিগুলো যাচাই করে বিতর্কিত কেউ থেকে থাকলে তাদের বাদ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। এমনকি চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়া কমিটিতেও এমন কেউ থেকে থাকলে তাদেরও বাদ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। যত প্রভাবশালী নেতাই হোক, কিন্তু সাংগঠনিক পদ পাওয়ার উপযুক্ত নন, দুর্নীতির অভিযোগ আছে, দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে সখ্য নেইএমন নেতাদের বাদ দিতে হবে।
২০১৯ সাল থেকে গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত আওয়ামী লীগের ৩১ জেলার কমিটি করা হয়েছে। বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত, ত্যাগী, দুর্দিনে দলের জন্য কাজ করাদের এসব কমিটিতে অন্তর্ভুক্তির জন্য আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা থাকলেও নতুন কমিটিগুলোর অনেক নেতার বিরুদ্ধেই বিভিন্ন অভিযোগ উঠছে। যুদ্ধাপরাধীদের আত্মীয়স্বজনের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামির স্বজনরা পর্যন্ত এখন আওয়ামী লীগ নেতা। ছাত্রশিবির করে এসে এখন আওয়ামী লীগ নেতাএমন বিস্তর অভিযোগও পাওয়া যাচ্ছে সদ্য ঘোষিত জেলা কমিটিগুলোর নেতাদের বিরুদ্ধে। এছাড়া বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে ভিড়ে পদ পেয়ে নেতা হওয়ার নজিরও কম নয়। এর বাইরে জেলা কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে আছে কমিটি গঠনে পরিবারতন্ত্রের অভিযোগ। এমনকি একই কমিটিতে একই পরিবারের ছয়জনকে অন্তর্ভুক্ত করার ঘটনাও ঘটেছে। ত্যাগীদের বিষয়ে সুদৃষ্টি রাখতে শেখ হাসিনার নির্দেশনা থাকলেও এভাবে বিতর্কিতদের কমিটিতে আনায় দলটির পোড় খাওয়া নেতারা বিস্মিত ও হতাশ।
৫৬ পৌরসভার নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী চূড়ান্ত : মনোনয়ন বোর্ডের গতকালের সভায় চতুর্থ ধাপের ৫৬ পৌরসভার নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ ও স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এসব প্রার্থী ঠিক করে দলটি।
আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি ভোটের তারিখ নির্ধারণ করে এসব পৌরসভার নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। ইসি ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমার শেষ সময় ১৭ জানুয়ারি, বাছাই ১৯ জানুয়ারি এবং প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৬ জানুয়ারি। এর মধ্যে ৩১টি নির্বাচন হবে ইভিএমে, বাকিগুলো হবে ব্যালটে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ছাড়াও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বোর্ডের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, ওবায়দুল কাদের, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কাজী জাফরউল্যাহ, আবদুর রজ্জাক, ফারুক খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান ও আবদুস সোবহান গোলাপ। পরে দলটির দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মনোনীত প্রার্থীদের তালিকা পাঠানো হয়।
৫৬ পৌরসভার প্রার্থীরা হলেন : ঠাকুরগাঁও সদরে আঞ্জুমান আরা বেগম, রানীশংকৈলে মোস্তাফিজুর রহমান; লালমনিরহাট সদর পৌরসভায় মোফাজ্জল হোসেন, পাটগ্রামে রাশেদুল ইসলাম সুইট; জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে শহীদুল আলম চৌধুরী, কালাইয়ে রাবেয়া সুলতানা; চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে সৈয়দ মনিরুল ইসলাম; রাজশাহীর নওহাটায় হাফিজুর রহমান হাফিজ, গোদাগাড়ীতে অয়েজ উদ্দিন বিশ্বাস, তানোরে ইমরুল হক, তাহেরপুরে আবুল কালাম আজাদ; নাটোরের বড়াইগ্রামে মাজেদুল বারী নয়ন, নাটোরে উমা চৌধুরী; চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে রফিকুল ইসলাম, আলমডাঙ্গায় হাসান কাদির গনু; যশোরের চৌগাছায় নুর উদ্দীন আল-মামুন, বাঘারপাড়ায় কামরুজ্জামান; বাগেরহাট সদরে খাঁন হাবিবুর রহমান; সাতক্ষীরা সদরে শেখ নাসেরুল হক।
পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় বিপুল চন্দ্র হাওলাদার; বরিশালের মুলাদীতে শফিকউজ্জামান, বানারীপাড়ায় সুভাস চন্দ্র শীল; টাঙ্গাইলের গোপালপুরে রকিবুল হক ছানা, কালিহাতীতে মোহাম্মদ নুরুন্নবী; কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরে আনোয়ার হোসেন, হোসেনপুরে আ. কাইয়ুম (খোকন), করিমগঞ্জে মুসলেহ উদ্দিন; মুন্সীগঞ্জের মিরকাদিমে আবদুস ছালাম; নরসিংদীতে আশরাফ হোসেন সরকার, মাধবদীতে মোশাররফ হোসেন; রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নজরুল ইসলাম, রাজবাড়ীতে আলী চৌধুরী; ফরিদপুরের নগরকান্দায় নিমাই চন্দ্র সরকার; মাদারীপুরের কালকিনিতে এসএম হানিফ; শরীয়তপুরের ডামুড্যায় কামাল উদ্দিন আহমদ।
জামালপুরে মেলান্দহে শফিক জাহেদী রবিন; শেরপুরে গোলাম মোহাম্মদ কিবরিয়া, শ্রীবরদীতে মোহাম্মদ আলী লাল মিয়া; ময়মনসিংহের ফুলপুরে শশধর সেন; নেত্রকোনায় নজরুল ইসলাম খান; সিলেটের কানাইঘাটে লুৎফুর রহমান; হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে মোহাম্মদ সাইফুল আলম; ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় তাকজিল খলিফা; কুমিল্লার হোমনায় নজরুল ইসলাম, দাউদকান্দিতে নাইম ইউসুফ; চাঁদপুরের কচুয়ায় নাজমুল আলম, ফরিদগঞ্জে আবুল খায়ের পাটওয়ারী; ফেনীর পরশুরামে নিজাম উদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী; নোয়াখালীর চাটখিলে নিজাম উদ্দিন, সোনাইমুড়িতে নুরুল হক চৌধুরী; লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে এম মেজবাহ উদ্দিন; চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় মোহাম্মদ জোবায়ের, পটিয়ায় আইয়ুব বাবুল, চন্দনাইশে মাহবুবুল আলম; খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় শামছুল হক; রাঙ্গামাটিতে আকবর হোসেন চৌধুরী এবং বান্দরবানে মোহাম্মদ ইসলাম বেবী।
সূত্র : দৈনিক দেশ রূপান্তর