আব্দাল মিয়া, বানিয়াচং: হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে বিভিন্ন হাট-বাজারে চলছে নানান জাতের মৌসুমী ফলের রমরমা ব্যবসা। এ ফল কি আদৌ ফরমালিন মুক্ত এ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন ভোক্তারা। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় অনেকে বাজারের আম, কাঠাল, লিচুসহ বিভিন্ন ফল খেয়ে পেটের পীড়াসহ নানান রোগে ভুগছেন। এমনকি এসব ফরমালিনযুক্ত ফল খেলে মরণব্যাধি ক্যান্সারসহ নানান জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার মারাত্মক ঝুঁকিও রয়েছে ! সরজমিনে উপজেলা সদরের বিভিন্ন হাট-বাজার পরিদর্শন করে দেখা যায়, ব্যবসায়ীরা নানানজাতের বাহারি ফল সাজিয়ে রাখছেন সামনে। এগুলো সাদা চোখে দেখলেই বুঝা যায় কৃত্রিমভাবে পাকানো হচ্ছে। অনেক আম দেখা যায় বাহিরে হলদে রং এবং ভিতরে বড়া বাধেনি। এগুলো বাণিজ্যিকভাবে কলাসহ সব ধরনের ফল পাকানোর জন্য বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য ও রং ব্যবহার করা হয়। স্বাভাবিক তাপমাত্রায় আনারস ১২-১৫ দিনের বেশি সংরক্ষণ করা যায় না। কিন্তু ৫০০ পিপিএম, এনএনএ বা ১০০ পিপিএম জিএ-৩ দ্বারা শোধন করে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় ৪১ দিন পর্যন্ত আনারসকে সংরক্ষণ করে রাখা যায়। এভাবে রাসায়নিক উপাদান প্রয়োগ করে সব ধরণের ফলই স্বাভাবিক সময়ের পূর্বেই পাকানো হয়। মূলতঃ ইথাইলিন জাতীয় গ্যাস ও ইথরিল স্প্রে করে এবং ক্যালসিয়াম কার্বাইড ব্যবহার করে ফলমূল পাকানো হয়। মধু মাস নামে খ্যাত জৈষ্ঠ্য মাসের শুরুতে উপজেলার সব ক’টি বাজারে বিভিন্ন স্পটে প্রকাশ্যে দিবালোকে মৌসুমী ফলের জমজমাট বানিজ্য শুরু হয়েছে। ফরমালিনযুক্ত মৌসুমী ফল আম, কাঁঠাল, আনারস, লিচু, পেঁপে, মাল্টা, আপেল, আঙ্গুরসহ লাখ লাখ টাকার ফল অবাধে বিক্রি । স্থানীয় সচেতন মহলের অভিযোগ, বর্তমানে প্রতিটি বাজারে যেসব মৌসুমী ফল বিক্রি হচ্ছে তার বেশিরভাগ ফলই ফরমালিনযুক্ত। এ ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে ভ্রাম্যমান আদালত কিংবা স্বাস্থ্য পরির্দশকের কোন ধরণের তদারকি নেই বলে অভিযোগ উঠেছে। এ সুযোগে অর্থলোভী ব্যবসায়ী চক্র অধিক মুনাফার জন্য কৌশলে বাজার গুলোতে বিক্রি করছে ফরমালিনযুক্ত মৌসুমী ফল। এ অবস্থায় অনেকটা নিরুপায় হয়ে ভোক্তা সাধারণ টাকা দিয়ে এখন ক্রয় করে খাচ্ছে বিষযুক্ত এসব ফল।বাজারের কয়েকজন ফল ব্যবসায়ী দাবি করেন, ফলে কোনো ধরনের ফরমালিন নেই। তারা সিলেট, শ্রীমঙ্গলসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আমসহ বিভিন্ন প্রকারের মৌসমী ফল ক্রয় করে বাজারে বিক্রি করেন। তারা জানান, আড়তদাররা যদি ফলে ফরমালিন দিয়ে থাকেন তাহলে আমরা তা জানি না। শুধুমাত্র কিনে এনে বিক্রি করেন বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। ফল ব্যবসায়ী আলী মিয়া বলেন, আমরা ফলে কোন রকম ফরমালিন বা মেডিসিন দেই না। আড়তদাররা আমাদেরকে বলে ১০০% গ্যারান্টি দিয়ে ফল বিক্রি করবা। বলবা ফলে কোন রকমের মেডিসিন নেই। বিভিন্ন জাতের মৌসুমী ফল দেশের বিভিন্নস্থান থেকে ক্রয় করে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করি। আড়তদাররা যদি ফলে ফরমালিন মেশায় তাহলে আমাদের জানা নেই। গ্যানিংগঞ্জ বাজার ব্যবসায়ী মো. লুৎফুর রহমান সাধারণ ক্রেতা হিসেবে জানান, বাজার থেকে নিজের পকেটের টাকা দিয়ে ফরমালিনযুক্ত মৌসুমী ফল ক্রয় করে নিজের পরিবারে মরণব্যাধি ক্রয় করার সমান। একজন অসুস্থ রোগীর জন্য ফলের খোসা চাকচিক্য দেখে আফসোস করে ফল নিলে দেখা যায় ভিতরে তার ব্যতিক্রম। এজন্য আমি বাজার থেকে কোন ধরণের ফল ক্রয় করিনি। এসব ফল খেয়ে সাধারণ মানুষ তাৎক্ষণিক অসুস্থ না হলেও পরে অবশ্যই অসুস্থ হবে। এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচও) ডা. আবুল হাদি মোহাম্মদ শাহপরান তরঙ্গ টুয়েন্টি ফোর ডট কমকে জানান, বাজারে বিক্রি করা ফরমালিনযুক্ত মৌসুমী ফল মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। পরীক্ষা ছাড়া এসব ফল খেলে পেটের পীড়াসহ বিভিন্ন ধরণের জটিল রোগের সৃষ্টি হতে পারে! তাই জনস্বার্থে স্বাস্থ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ক্রেতা সাধারণকে ফল ক্রয়ে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
বানিয়াচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানা জানান, বানিয়াচংয়ে মৌসুমি ফলে যদি কেউ ফরমালিন নামক কোন দ্রব্য মিশিয়ে বাজারে বিক্রি করে আর সেটা যদি প্রমাণিত হয় তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এ ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসন সর্বক্ষণ তৎপর থাকবে। নতুন ইউএনও হিসেবে আমি বানিয়াচংয়ের সর্বস্থরের জনগণের সহযোগিতা কামনা করছি।