ঢাকা ০৭:০৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ৯ আশ্বিন ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo বানিয়াচংয়ে স্কুল ছাত্রীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার Logo এমপি মজিদ খানের মধ্যস্থতায় বানিয়াচং সৈদারটুলা ছান্দের ২ গ্রুপের দ্বন্দ্ব নিরসন Logo মিশর আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থান পাওয়ায় মুফতি হাফিজুল হককে সংবর্ধনা প্রদান Logo আজমিরীগঞ্জে নিত্যপণ্যের মূল্য চড়া: ক্রেতাদের নাভিশ্বাস Logo একজন কর্মবীর সফল এমপি আব্দুল মজিদ খান Logo বানিয়াচংয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পদ্মাসন সিংহ’কে বিদায় সংবর্ধনা Logo জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী মনজুর চৌধুরী Logo বানিয়াচংয়ে ইফা শিক্ষকদের নিয়ে ক্লাস্টার ট্রেনিং অনুষ্ঠিত Logo আজমিরীগঞ্জে পুলিশের অভিযানে ২০লিটার চোলাই মদ জব্দ : আটক-১ Logo প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.) হলেন গোটা জাতির জন্য উত্তম আদর্শ

বাইসাইকেলে বিশ্ব ভ্রমণকারী রামনাথ বিশ্বাস এর জন্মদিন আজ

  • তরঙ্গ ২৪ ডেস্ক :
  • আপডেট সময় ০৩:০৭:০৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২১
  • ৮২ বার পড়া হয়েছে

তরঙ্গ ডেস্ক : হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলার বিদ্যাভূষণপাড়ায় ১৮৯৪ সালের ১৩ জানুয়ারি রামনাথ বিশ্বাসের জন্ম। পিতার নাম বিরজানাথ বিশ্বাস আর মাতার নাম গুণময়ী দেবী। তাদের দুই সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়। রামনাথের বড় ভাই কৃপানাথ বিশ্বাস এলাকায় চিকিৎসক হিসেবে খ্যাতনামা ছিলেন। শৈশবেই মা-বাবাকে হারিয়ে এই ভাইয়ের সংসারেই বেড়ে ওঠেন রামনাথ। স্থানীয় স্কুলেই পাঠজীবন শুরু আট বছর বয়সে। বয়স যখন ১৩ বছর রামনাথ তখন বানিয়াচংয়ের হরিশ্চন্দ্র উচ্চবিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। সেই সময়ই বিদ্যালয় ছেড়ে হাতেখড়ি নেন রাজনীতিতে। যোগ দেন বিপ্লবী দল অনুশীলন সমিতির অন্তর্গত সুশীল সেনের শাখায়। অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপসহীন কর্মী হিসেবে তাঁর নাম ছড়িয়ে পড়ল। ঠিক তার কয়েক বছর পরই শুরু হলো প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। ১৯১৪ সাল। তিনি যোগ দেন বাঙালি পল্টনে। ছোটখাটো চেহারা ছিল তাঁর। উচ্চতা ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি। শরীর রোগা-পাতলা। কিন্তু মনে অসীম তেজ আর দুর্জয় সাহস। বাঙালি পল্টনে অফিসের বড় বাবু হিসেবে যোগ দিয়ে বেশি দিন কাজ করা হয়নি। অসুস্থতার কারণে বাড়ি ফিরতে হয়। এরপর আবারও যোগ দেন সৈন্য বিভাগে। ১৯১৮ সাল থেকে চাকরির সুবাদে ঘুরে বেড়ালেন। পেলেন ভ্রমণের অনুপ্রেরণা। সেই অনুপ্রেরণা একদিন তাঁকে সাইকেলসমেত পথে নামাল। তখন তিনি সিঙ্গাপুরে চাকরি করেন, যে দেশে এসেছিলেন ১৯২৪ সালের শেষের দিকে। ১৯৩১ সালের ৭ জুলাই। সিঙ্গাপুরের কুইন স্ট্রিটের বাঙালি মসজিদের সামনে তখন বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষের উপচে পড়া ভিড়, যাদের অনেকের বাড়িই সিলেট অঞ্চলে। সবার চোখে-মুখে বিস্ময়। সেই বিস্ময়ের কিছুটা ছুঁয়েছিল ৩৫ বছর বয়সী রামনাথকেও। কিন্তু সব সংশয়, সব বাধা উপেক্ষা করে প্যাডেল মারলেন রামনাথ বিশ্বাস। শুভেচ্ছা জানাতে আসা জনতা ‘বন্দে মাতরম’-এর পাশাপাশি ‘আল্লাহু আকবর’ ধ্বনিতে কুইন স্ট্রিট মুখরিত করে তুলল। সমবেত জনতার উল্লাস দেখে পৃথিবীর পথে বেরিয়ে পড়া যুবক রামনাথের সাহসের পারদ যেন বেড়ে গেল বহুগুণ। রামনাথের যাত্রায় সম্বল বলতে দুটো চাদর, এক জোড়া চটি আর সাইকেল মেরামতের এক বাক্স সরঞ্জাম। এই নিয়েই সাইকেলে ঘুরে বেড়াতে থাকলেন দেশের পর দেশ। প্রথমে সিঙ্গাপুর থেকে গেলেন মালয়েশিয়া। সেখান থেকে থাইল্যান্ড হয়ে পা রাখলেন চীনে। দীর্ঘদিন কাটালেন তাঁর প্রিয় এই দেশে। এরপর কোরিয়া হয়ে জাপানের ‘কোবে’ বন্দরে যখন পা রাখলেন, ক্যালেন্ডারের পাতায় দিনটি ১৯৩২ সালের ৫ সেপ্টেম্বর। জাপান থেকে পা বাড়িয়েছিলেন আমেরিকার পথে। কিন্তু বাদ সাধে কানাডা সরকার। নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে তাঁকে জাপান হয়ে ফিরে আসতে হয় চীনে। সেখান থেকে পাড়ি জমান ফিলিপাইন। ঘুরে দেখেন ইন্দোনেশিয়ার দ্বীপপুঞ্জ। এরপর ফের ফিরে আসেন সিঙ্গাপুর। মাস দুই বিশ্রাম নিয়ে নবতর উৎসাহ-উদ্দীপনায় বেরিয়ে পড়লেন দ্বিতীয়বার। ১৯৩৩ সালের জানুয়ারি। সিঙ্গাপুর থেকে রেলগাড়িতে পেনাং। পেনাং হয়ে জাহাজে মিয়ানমারের মারগুহ বন্দর। ছয় মাস মিয়ানমার ঘুরে উত্তর-পূর্ব ভারতের মণিপুর, শিলং ঘুরে সিলেট যেতে গিয়ে ঢালু রাস্তায় আছাড় খেয়ে পা ভাঙেন। একটু সুস্থ হয়ে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, জামালপুর, রাজশাহী, মুর্শিদাবাদ, কৃষ্ণনগর, কোচবিহার, শিলিগুড়ি, দার্জিলিং হয়ে কলকাতায় মাস ছয়েক বিশ্রাম। ১৯৩৪ সালের জুলাইয়ে কলকাতা ছেড়ে সমগ্র উত্তর ভারত হয়ে আফগানিস্তান, ইরান, ইরাক, সিরিয়া, লেবানন হয়ে তুরস্ক। তুরস্ক থেকে ইউরোপ ঢুকে বুলগেরিয়া, যুগোস্লাভিয়া, হাঙ্গেরি, অস্ট্রিয়া, জার্মানি, ইংল্যান্ড, বেলজিয়াম, ফ্রান্স হয়ে ইংল্যান্ড স্কটল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড হয়ে জাহাজে কলকাতা ফেরেন। তখন ঘাঁটি গাড়েন ৩৭ নম্বর হ্যারিসন রোডের মেসবাড়িতে। ১৯৩৪ সালেই তিনি বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় তাঁর লেখা প্রকাশ করার চেষ্টা করেন। প্রথম রাধারমন চৌধুরী তাঁর প্রবর্তক পত্রিকায় সুযোগ করে দেন। পরে অবশ্য আনন্দবাজার, অমৃতবাজার, অ্যাডভান্সড প্রভৃতি সংবাদপত্র আর দেশ, বসুমতী, সঞ্জীবনী প্রভৃতি সাময়িকীতে তাঁর লেখা প্রকাশিত হয়। ১৯৩৭ সালে যখন রামনাথ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আশীর্বাদ নিতে শান্তিনিকেতনে যান, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জানান, তিনিও দেশ পত্রিকায় রামনাথের লেখা পড়েছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রামনাথ বিশ্বাসের অটোগ্রাফের খাতায় লিখলেন আশীর্বাদবার্তা। এর পরের বছরই ছিল রামনাথের তৃতীয় ও শেষ বিশ্বভ্রমণ। ১৯৩৮-৪০ সাল পর্যন্ত ভ্রমণ করেন তিনি। প্রথমে কলকাতা থেকে মুম্বাই গিয়ে জাহাজে মোম্বাসো (কেনিয়া) দিয়ে যাত্রা শুরু করেন। আফ্রিকার কেনিয়া। উগান্ডা, তানজানিয়া, জানজিবার, মালাউই, মোজাম্বিক, জিম্বাবুয়ে হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা; সেখান থেকে জাহাজে আবার যুক্তরাষ্ট্রে; আবার বন্দী থাকার পর শেষে অনুমতি পেয়ে পশ্চিম থেকে পূর্ব সমগ্র দেশ চষে ফেলে শেষ পর্যন্ত দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের কালো ছায়ার মধ্যে জাহাজে দেশে ফেরেন। তাঁর দীর্ঘ সাইকেলভ্রমণে দেখা দেশ, মানুষ, সমাজ, সংস্কৃতির কথা অভিজ্ঞতার বয়ানে বিভিন্ন বইয়ে লিপিবদ্ধ করেন। ভ্রমণকাহিনি, গল্প–উপন্যাস মিলিয়ে রামনাথ বিশ্বাসের প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৪০। শেষ জীবনটা তাঁর ভারতের কলকাতেই কেটেছে। ১৯৫৫ সালের ১৯ নভেম্বর সেখানেই শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন বিশ্বজয়ী ভূপর্যটক রামনাথ বিশ্বাস।

তথ্যসূত্র: রামনাথের পৃথিবী, অন্ধকারের আফ্রিকা, ভ্রমণের নেশা।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

বানিয়াচংয়ে স্কুল ছাত্রীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

বাইসাইকেলে বিশ্ব ভ্রমণকারী রামনাথ বিশ্বাস এর জন্মদিন আজ

আপডেট সময় ০৩:০৭:০৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২১

তরঙ্গ ডেস্ক : হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলার বিদ্যাভূষণপাড়ায় ১৮৯৪ সালের ১৩ জানুয়ারি রামনাথ বিশ্বাসের জন্ম। পিতার নাম বিরজানাথ বিশ্বাস আর মাতার নাম গুণময়ী দেবী। তাদের দুই সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়। রামনাথের বড় ভাই কৃপানাথ বিশ্বাস এলাকায় চিকিৎসক হিসেবে খ্যাতনামা ছিলেন। শৈশবেই মা-বাবাকে হারিয়ে এই ভাইয়ের সংসারেই বেড়ে ওঠেন রামনাথ। স্থানীয় স্কুলেই পাঠজীবন শুরু আট বছর বয়সে। বয়স যখন ১৩ বছর রামনাথ তখন বানিয়াচংয়ের হরিশ্চন্দ্র উচ্চবিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। সেই সময়ই বিদ্যালয় ছেড়ে হাতেখড়ি নেন রাজনীতিতে। যোগ দেন বিপ্লবী দল অনুশীলন সমিতির অন্তর্গত সুশীল সেনের শাখায়। অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপসহীন কর্মী হিসেবে তাঁর নাম ছড়িয়ে পড়ল। ঠিক তার কয়েক বছর পরই শুরু হলো প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। ১৯১৪ সাল। তিনি যোগ দেন বাঙালি পল্টনে। ছোটখাটো চেহারা ছিল তাঁর। উচ্চতা ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি। শরীর রোগা-পাতলা। কিন্তু মনে অসীম তেজ আর দুর্জয় সাহস। বাঙালি পল্টনে অফিসের বড় বাবু হিসেবে যোগ দিয়ে বেশি দিন কাজ করা হয়নি। অসুস্থতার কারণে বাড়ি ফিরতে হয়। এরপর আবারও যোগ দেন সৈন্য বিভাগে। ১৯১৮ সাল থেকে চাকরির সুবাদে ঘুরে বেড়ালেন। পেলেন ভ্রমণের অনুপ্রেরণা। সেই অনুপ্রেরণা একদিন তাঁকে সাইকেলসমেত পথে নামাল। তখন তিনি সিঙ্গাপুরে চাকরি করেন, যে দেশে এসেছিলেন ১৯২৪ সালের শেষের দিকে। ১৯৩১ সালের ৭ জুলাই। সিঙ্গাপুরের কুইন স্ট্রিটের বাঙালি মসজিদের সামনে তখন বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষের উপচে পড়া ভিড়, যাদের অনেকের বাড়িই সিলেট অঞ্চলে। সবার চোখে-মুখে বিস্ময়। সেই বিস্ময়ের কিছুটা ছুঁয়েছিল ৩৫ বছর বয়সী রামনাথকেও। কিন্তু সব সংশয়, সব বাধা উপেক্ষা করে প্যাডেল মারলেন রামনাথ বিশ্বাস। শুভেচ্ছা জানাতে আসা জনতা ‘বন্দে মাতরম’-এর পাশাপাশি ‘আল্লাহু আকবর’ ধ্বনিতে কুইন স্ট্রিট মুখরিত করে তুলল। সমবেত জনতার উল্লাস দেখে পৃথিবীর পথে বেরিয়ে পড়া যুবক রামনাথের সাহসের পারদ যেন বেড়ে গেল বহুগুণ। রামনাথের যাত্রায় সম্বল বলতে দুটো চাদর, এক জোড়া চটি আর সাইকেল মেরামতের এক বাক্স সরঞ্জাম। এই নিয়েই সাইকেলে ঘুরে বেড়াতে থাকলেন দেশের পর দেশ। প্রথমে সিঙ্গাপুর থেকে গেলেন মালয়েশিয়া। সেখান থেকে থাইল্যান্ড হয়ে পা রাখলেন চীনে। দীর্ঘদিন কাটালেন তাঁর প্রিয় এই দেশে। এরপর কোরিয়া হয়ে জাপানের ‘কোবে’ বন্দরে যখন পা রাখলেন, ক্যালেন্ডারের পাতায় দিনটি ১৯৩২ সালের ৫ সেপ্টেম্বর। জাপান থেকে পা বাড়িয়েছিলেন আমেরিকার পথে। কিন্তু বাদ সাধে কানাডা সরকার। নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে তাঁকে জাপান হয়ে ফিরে আসতে হয় চীনে। সেখান থেকে পাড়ি জমান ফিলিপাইন। ঘুরে দেখেন ইন্দোনেশিয়ার দ্বীপপুঞ্জ। এরপর ফের ফিরে আসেন সিঙ্গাপুর। মাস দুই বিশ্রাম নিয়ে নবতর উৎসাহ-উদ্দীপনায় বেরিয়ে পড়লেন দ্বিতীয়বার। ১৯৩৩ সালের জানুয়ারি। সিঙ্গাপুর থেকে রেলগাড়িতে পেনাং। পেনাং হয়ে জাহাজে মিয়ানমারের মারগুহ বন্দর। ছয় মাস মিয়ানমার ঘুরে উত্তর-পূর্ব ভারতের মণিপুর, শিলং ঘুরে সিলেট যেতে গিয়ে ঢালু রাস্তায় আছাড় খেয়ে পা ভাঙেন। একটু সুস্থ হয়ে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, জামালপুর, রাজশাহী, মুর্শিদাবাদ, কৃষ্ণনগর, কোচবিহার, শিলিগুড়ি, দার্জিলিং হয়ে কলকাতায় মাস ছয়েক বিশ্রাম। ১৯৩৪ সালের জুলাইয়ে কলকাতা ছেড়ে সমগ্র উত্তর ভারত হয়ে আফগানিস্তান, ইরান, ইরাক, সিরিয়া, লেবানন হয়ে তুরস্ক। তুরস্ক থেকে ইউরোপ ঢুকে বুলগেরিয়া, যুগোস্লাভিয়া, হাঙ্গেরি, অস্ট্রিয়া, জার্মানি, ইংল্যান্ড, বেলজিয়াম, ফ্রান্স হয়ে ইংল্যান্ড স্কটল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড হয়ে জাহাজে কলকাতা ফেরেন। তখন ঘাঁটি গাড়েন ৩৭ নম্বর হ্যারিসন রোডের মেসবাড়িতে। ১৯৩৪ সালেই তিনি বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় তাঁর লেখা প্রকাশ করার চেষ্টা করেন। প্রথম রাধারমন চৌধুরী তাঁর প্রবর্তক পত্রিকায় সুযোগ করে দেন। পরে অবশ্য আনন্দবাজার, অমৃতবাজার, অ্যাডভান্সড প্রভৃতি সংবাদপত্র আর দেশ, বসুমতী, সঞ্জীবনী প্রভৃতি সাময়িকীতে তাঁর লেখা প্রকাশিত হয়। ১৯৩৭ সালে যখন রামনাথ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আশীর্বাদ নিতে শান্তিনিকেতনে যান, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জানান, তিনিও দেশ পত্রিকায় রামনাথের লেখা পড়েছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রামনাথ বিশ্বাসের অটোগ্রাফের খাতায় লিখলেন আশীর্বাদবার্তা। এর পরের বছরই ছিল রামনাথের তৃতীয় ও শেষ বিশ্বভ্রমণ। ১৯৩৮-৪০ সাল পর্যন্ত ভ্রমণ করেন তিনি। প্রথমে কলকাতা থেকে মুম্বাই গিয়ে জাহাজে মোম্বাসো (কেনিয়া) দিয়ে যাত্রা শুরু করেন। আফ্রিকার কেনিয়া। উগান্ডা, তানজানিয়া, জানজিবার, মালাউই, মোজাম্বিক, জিম্বাবুয়ে হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা; সেখান থেকে জাহাজে আবার যুক্তরাষ্ট্রে; আবার বন্দী থাকার পর শেষে অনুমতি পেয়ে পশ্চিম থেকে পূর্ব সমগ্র দেশ চষে ফেলে শেষ পর্যন্ত দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের কালো ছায়ার মধ্যে জাহাজে দেশে ফেরেন। তাঁর দীর্ঘ সাইকেলভ্রমণে দেখা দেশ, মানুষ, সমাজ, সংস্কৃতির কথা অভিজ্ঞতার বয়ানে বিভিন্ন বইয়ে লিপিবদ্ধ করেন। ভ্রমণকাহিনি, গল্প–উপন্যাস মিলিয়ে রামনাথ বিশ্বাসের প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৪০। শেষ জীবনটা তাঁর ভারতের কলকাতেই কেটেছে। ১৯৫৫ সালের ১৯ নভেম্বর সেখানেই শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন বিশ্বজয়ী ভূপর্যটক রামনাথ বিশ্বাস।

তথ্যসূত্র: রামনাথের পৃথিবী, অন্ধকারের আফ্রিকা, ভ্রমণের নেশা।