শায়খ মাওলানা কামাল উদ্দীন খান আল-হুসাইনী :
প্রত্যেক শাস্ত্র বা বিষয়েই জগতের চিরাচরিত নিয়ম হল, অনভিজ্ঞ ব্যক্তিরা বিজ্ঞজনদের হাত ধরে চলবে, তাদের কথা মতো চলবে ও তাদের অনুসরণ করবে। ইসলামের রীতিও হলো, ইসলামি জ্ঞান লাভ ও ইসলাম পালনের ক্ষেত্রে সাধারণ মুসলমানরা বিজ্ঞ আলেমগণের অনুসরণ করবে।
আচ্ছা! বলুন তো ? কোন ব্যক্তি যদি সার্টিফিকেটধারি বিজ্ঞ ডাক্তার না হয়ে চিকিৎসা করে এবং তার চিকিৎসা সঠিকও হয়ে যায় ; তবে সরকারি আইনে কি তার চিকিৎসা করা সঠিক ও সে ব্যক্তি নিরপরাধ সাব্যস্ত হবে ? নাকি তার চিকিৎসা ভুল ও সে অপরাধি সাব্যস্ত হবে ?
চিকিৎসা সঠিক হওয়া সত্ত্বেও তা ভুল ও সে অপরাধি হিসেবে সাব্যস্ত হবে কেন ?
এমনিভাবে কোন ব্যক্তি যদি সার্টিফিকেটধারি বিজ্ঞ প্রকৌশলী না হয়ে বহুতল ভবন বা বিল্ডিং নির্মাণ করে এবং তা নির্মাণও সঠিক হয় ; তবে সরকারিআইনে কি তার নির্মাণ করা সঠিক ও সে ব্যক্তি নিরপরাধ সাব্যস্ত হবে ?
বিল্ডিং নির্মাণ সঠিকভাবে হওয়া সত্ত্বেও তার নির্মাণ করা ভুল ও সে ব্যক্তি অপরাধি সাব্যস্ত হবে কেন ?
জবাবে বলবেন: “এ ব্যক্তি ডাক্তার নয়, এ ব্যক্তি প্রকৌশলী নয়।”
এমনিভাবে যদি কোন ব্যক্তি মুজতাহিদ তথা ইসলামি আইন বিশেষজ্ঞ না হয়ে কোরআন-হাদীস থেকে ইসলামের বিধিবিধান উদ্ঘাটন করে এবং তার উদ্ঘাটিত বিধান সঠিকও হয় ; তবুও তা ভুল এবং সে ব্যক্তি অপরাধী সাব্যস্ত হবে।
দলিল হলো: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন ” যে ব্যক্তি কোরআনের মনগড়া ব্যাখ্যা করল সে শুদ্ধ করলেও নিশ্চয় ভুল করল।”-(তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ পৃ: ৩৫) অন্য হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন:”যে ব্যক্তি কোরআনের মনগড়া ব্যাখ্যা করল সে যেন তার ঠিকানা জাহান্নামে বানিয়ে নেয়।”-(তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ পৃ: ৩৫)।
আশাকরি বিষয়টা দিবালোকের ন্যায় সবার কাছে প্রস্ফুটিত হয়েছে বা সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে যে, যেমনিভাবে ডাক্তার না হয়ে চিকিৎসা করা সঠিক হলেও ভুল এবং সে অপরাধি সাব্যস্ত হয়, প্রকৌশলী না হয়ে বহুতল ভবন বা বিল্ডিং নির্মাণ করা সঠিক হলেও ভুল এবং সে অপরাধি সাব্যস্ত হয় ; তেমনিভাবে মুজতাহিদ তথা ইসলামি আইন গবেষক না হয়ে ইসলামের বিধিবিধান উদ্ঘাটন করাও ভুল এবং সে ব্যক্তি অপরাধি সাব্যস্ত হবে।
লা-মাযহাবীরা মুজাহিদ তথা ইসলামি আইন গবেষক না হয়ে কোরআন-হাদীস থেকে ইসলামের বিধিবিধান উদ্ঘাটন করে থাকে! তাই এদের উদ্ঘাটিত বিষয় সঠিক হলেও ভুল এবং এরা অপরাধি সাব্যস্ত হবে। কারণ, যোগ্যতাশূন্য ব্যক্তি কোরআন-হাদীসের ব্যাখ্যা করলে, তাও মনগড়া ব্যাখ্যা সাব্যস্ত হবে।
আর যদি লা-মাযহাবীরা নিজেদেরকে যোগ্যতাসম্পন্ন বলে দাবি করে ; তবে তাদের প্রতি যোগ্যতা প্রমাণ করার চ্যালেঞ্জ দীর্ঘ দিনের। কিন্তু, আজও পর্যন্ত ওরা আমার ঐ চ্যালেঞ্জটির মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়নি।
বিস্তারিত জানতে অপেক্ষায় থাকুন!
লেখক: শিক্ষাসচিব, মাদরাসাতুল হারামাইন ও
খতিব: ৩নং রাজবাড়ি জামে মসজিদ,
বানিয়াচং, হবিগঞ্জ।