ঢাকা ০২:৫১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১০ আশ্বিন ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo বানিয়াচংয়ে স্কুল ছাত্রীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার Logo এমপি মজিদ খানের মধ্যস্থতায় বানিয়াচং সৈদারটুলা ছান্দের ২ গ্রুপের দ্বন্দ্ব নিরসন Logo মিশর আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থান পাওয়ায় মুফতি হাফিজুল হককে সংবর্ধনা প্রদান Logo আজমিরীগঞ্জে নিত্যপণ্যের মূল্য চড়া: ক্রেতাদের নাভিশ্বাস Logo একজন কর্মবীর সফল এমপি আব্দুল মজিদ খান Logo বানিয়াচংয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পদ্মাসন সিংহ’কে বিদায় সংবর্ধনা Logo জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী মনজুর চৌধুরী Logo বানিয়াচংয়ে ইফা শিক্ষকদের নিয়ে ক্লাস্টার ট্রেনিং অনুষ্ঠিত Logo আজমিরীগঞ্জে পুলিশের অভিযানে ২০লিটার চোলাই মদ জব্দ : আটক-১ Logo প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.) হলেন গোটা জাতির জন্য উত্তম আদর্শ

প্রবন্ধ : নারীদের শিক্ষার গুরুত্ব

  • তরঙ্গ ২৪ ডেস্ক :
  • আপডেট সময় ০৫:২৫:০৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৬ অক্টোবর ২০২০
  • ৯৪ বার পড়া হয়েছে
মাওলানা শমশীর আহমদ : আল্লাহ তা’য়ালা পৃথিবীতে দুই ধরণের মানব সৃষ্টি করেছেন, (১) পুরুষ (২) মহিলা। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তা’য়ালা বলেন, আমি মানুষ ও জ্বিনকে একমাত্র আমার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছি( সুরা জারিয়াত ৫৬)। ঐ আয়াতে লক্ষ করলে দেখা যায়, আল্লাহ তা’য়ালা ইবাদতের ক্ষেত্রে পুরুষ ও মহিলাকে সমানভাবে অংশীদার করেছেন, আর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন প্রত্যেক মুসলমানের উপর জ্ঞান শিক্ষা করা ফরজ (ইবনে মাজাহ হাদিস ২২৪)। এখানে ও রাসুল্লাহ (সাঃ) জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্রে পুরুষ ও মহিলাকে সমান গুরুত্ব দিয়েছেন। এক্ষেত্রে অবশ্যই প্রাথমিক পর্যায়ে ধর্মীয় শিক্ষা দিয়ে পড়ে আধুনিক জ্ঞান – বিজ্ঞানের শিক্ষা অর্জন শ্রেয়। আর একটি সুন্দর পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনে নারীদের অবদান অতুলনীয়। যে পরিবারের মা’ শিক্ষিত থাকে, সেই পরিবারে সাধারণত সন্তানরা শিক্ষিত ও ভদ্র হয়ে থাকে। সেই পরিবার থেকে মদখোর, গাজাখোর বের হয় না। আজকাল আধুনিক যুগে শিক্ষার ব্যাপক প্রসারের ফলে পুরুষের পাশাপাশি শিক্ষা ক্ষেত্রে নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে, যা অত্যন্ত প্রশংসার দাবিদার। আমরা আরেকটু গভীরে গেলে দেখতে পাই, আজকাল শিক্ষার ব্যাপক প্রসারের ফলে পুরুষের পাশাপাশি নারীরা ডাক্তার হয়ে, নারীদের বিভিন্ন ধরণের জটিল-কঠিন রোগের সমাধান করছে, এমনকি কোন কোন জায়গায় নারী ডাক্তাররা সিজার মতো কঠিন কাজ সম্পাদন করছেন। যদিও এ ক্ষেত্রে নারীদের সংখ্যা কম। আশা করি ভবিষ্যতে মেধাবী মেয়েরা এগিয়ে আসলে এ সমস্যা  আর থাকবে না। একটি সমাজ সংশোধনে নারীদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। কেননা কিছু কিছু ক্ষেত্রে নারীরা এমন এমন কাজ করে, যা কোন পুরুষের পক্ষে করা সম্ভব নয়। কেননা পুরুষেররা সাধারণত যেহেতু সারাদিন কর্ম স্থলে থাকেন বিধায় হাতে সময় থাকে কম । আর মেয়েদেরকে যদি শিক্ষার সুযোগ না দেওয়া হয়, তাহলে তারা হারাম ও অন্যায় কাজে সহজেই জড়িয়ে পড়বে। ফলে সমাজে অশান্তি বিরাজ করবে। জাহিলিয়্যতের যুগে মেয়েদের কোন সম্মান ছিল না।
ছবি- বিদ্যালয়ের আঙ্গিণায় নারী শিক্ষার্থীরা। ( রূপক অর্থে এ ছবিটি ব্যবহৃত হয়েছে)

তাদেরকে জীবিত কবর দেওয়া হতো এবং তাদেরকে দাসী হিসাবে ব্যবহার করা হতো। মেয়েদেরকে ঐ অবস্থা থেকে উদ্ধার করার জন্য রাসুল (সাঃ) বলছেন, যে দাসীকে স্বাধীন করে বিয়ে করবে তার জন্য রয়েছে দ্বীগুণ সওয়াব। ইসলাম ধর্ম মেয়েদের দিয়েছে সর্বোচ্চ সম্মান, আরো দিয়েছে মায়ের মর্যাদা। রাসুল (সাঃ) বলেছেন, পায়ের পদতলে সন্তানের বেহেস্ত। বাবা, স্বামী ও সন্তানের সম্পদে দিয়েছে মেয়েদের অধিকার। আর রাসুল (সাঃ) নারীদের শিক্ষার প্রতি গুরুত্বারূপ করেছেন এবং তাদের শিক্ষার জন্য আলাদা সময় নির্ধারণ করেছেন। আবু সাঈদ খুদরী ( রা.) থেকে বর্ণিত নারীরা একবার রাসুলুল্লাহ কাছে গিয়ে বললেন, আপনার কাছে সব সময় পুরুষের ভীর থাকে, তাই আমাদের তালিম- তরবিয়তের জন্য আলাদা সময় নির্ধারণ করুন! নবীজি (সাঃ) তাদের জন্য একটি দিন নির্ধারণ করলেন, তাদের কাছে গিয়ে ওয়াজ নসিহত করলেন ও নেক আমল করার আদেশ করলেন (বুখারী হাদিসঃ ১০১)। আর নারী সাহাবীরা ও জ্ঞান অর্জনে গুরত্বারূপ করতেন। বিশেষ করে আনসারী সাহাবীরা জ্ঞান অর্জনে আগ্রহী ছিলেন। হযরত আয়শা (রাঃ) বলছেন, আনসারী নারীরা কত ভালো! দ্বীনি জ্ঞান অর্জনে লজ্জা তাদের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে না (মুসলিম, হাদিসঃ ৩৬২)। আর হযরত আয়শা (রাঃ) এত পরিমান জ্ঞান অর্জন করেছিলেন যে, বড় বড় সাহাবীরা পর্যন্ত সময়ে সময়ে বিভিন্ন বিষয় জানতেন। নারীদের শিক্ষা- দীক্ষা দেওয়ার জন্য মেয়ের মা’ বাবাকে সু-সংবাদ দিয়ে বলছেনঃ যে তিনটি কন্যা সন্তান ও তিন বোন প্রতিপালন করলো এবং তাদেরকে শিষ্টাচার শিক্ষা দিল, এবং তাদের প্রতি দয়া করলো, অবশেষে আল্লাহ তা’য়লা তাদের মুখাপেক্ষীহীন করে দিলেন। তাহলে তার জন্য আল্লাহ তা’য়লা কার জন্য জান্নাত অবধারিত করে দিবেন। তখন এক সাহাবী জিজ্ঞাসা করলেন, আল্লাহর রাসুল দুইটি কন্যাসন্তান প্রতিপালন করলে? তিনি উত্তরে বললেন দুটি করলেও ( শারহুস সুন্নাহ, সুত্রে মিশকাত, পৃষ্টাঃ ৪২৩) আর আমরা যৌক্তিক দৃষ্টিতে ও দেখতে পাই একজন পুরুষের জন্য যতটুকু জ্ঞান প্রয়োজন এবং মহিলার জন্য ততটুকু জ্ঞান প্রয়োজন, আর একটি সুন্দর সমাজ ও আদর্শ রাষ্ট্র গঠনে মেয়েদের শিক্ষার বিকল্প নেই।

লেখক : আলেম ও প্রাবন্ধিক।

 

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

বানিয়াচংয়ে স্কুল ছাত্রীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

প্রবন্ধ : নারীদের শিক্ষার গুরুত্ব

আপডেট সময় ০৫:২৫:০৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৬ অক্টোবর ২০২০
মাওলানা শমশীর আহমদ : আল্লাহ তা’য়ালা পৃথিবীতে দুই ধরণের মানব সৃষ্টি করেছেন, (১) পুরুষ (২) মহিলা। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তা’য়ালা বলেন, আমি মানুষ ও জ্বিনকে একমাত্র আমার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছি( সুরা জারিয়াত ৫৬)। ঐ আয়াতে লক্ষ করলে দেখা যায়, আল্লাহ তা’য়ালা ইবাদতের ক্ষেত্রে পুরুষ ও মহিলাকে সমানভাবে অংশীদার করেছেন, আর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন প্রত্যেক মুসলমানের উপর জ্ঞান শিক্ষা করা ফরজ (ইবনে মাজাহ হাদিস ২২৪)। এখানে ও রাসুল্লাহ (সাঃ) জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্রে পুরুষ ও মহিলাকে সমান গুরুত্ব দিয়েছেন। এক্ষেত্রে অবশ্যই প্রাথমিক পর্যায়ে ধর্মীয় শিক্ষা দিয়ে পড়ে আধুনিক জ্ঞান – বিজ্ঞানের শিক্ষা অর্জন শ্রেয়। আর একটি সুন্দর পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনে নারীদের অবদান অতুলনীয়। যে পরিবারের মা’ শিক্ষিত থাকে, সেই পরিবারে সাধারণত সন্তানরা শিক্ষিত ও ভদ্র হয়ে থাকে। সেই পরিবার থেকে মদখোর, গাজাখোর বের হয় না। আজকাল আধুনিক যুগে শিক্ষার ব্যাপক প্রসারের ফলে পুরুষের পাশাপাশি শিক্ষা ক্ষেত্রে নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে, যা অত্যন্ত প্রশংসার দাবিদার। আমরা আরেকটু গভীরে গেলে দেখতে পাই, আজকাল শিক্ষার ব্যাপক প্রসারের ফলে পুরুষের পাশাপাশি নারীরা ডাক্তার হয়ে, নারীদের বিভিন্ন ধরণের জটিল-কঠিন রোগের সমাধান করছে, এমনকি কোন কোন জায়গায় নারী ডাক্তাররা সিজার মতো কঠিন কাজ সম্পাদন করছেন। যদিও এ ক্ষেত্রে নারীদের সংখ্যা কম। আশা করি ভবিষ্যতে মেধাবী মেয়েরা এগিয়ে আসলে এ সমস্যা  আর থাকবে না। একটি সমাজ সংশোধনে নারীদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। কেননা কিছু কিছু ক্ষেত্রে নারীরা এমন এমন কাজ করে, যা কোন পুরুষের পক্ষে করা সম্ভব নয়। কেননা পুরুষেররা সাধারণত যেহেতু সারাদিন কর্ম স্থলে থাকেন বিধায় হাতে সময় থাকে কম । আর মেয়েদেরকে যদি শিক্ষার সুযোগ না দেওয়া হয়, তাহলে তারা হারাম ও অন্যায় কাজে সহজেই জড়িয়ে পড়বে। ফলে সমাজে অশান্তি বিরাজ করবে। জাহিলিয়্যতের যুগে মেয়েদের কোন সম্মান ছিল না।
ছবি- বিদ্যালয়ের আঙ্গিণায় নারী শিক্ষার্থীরা। ( রূপক অর্থে এ ছবিটি ব্যবহৃত হয়েছে)

তাদেরকে জীবিত কবর দেওয়া হতো এবং তাদেরকে দাসী হিসাবে ব্যবহার করা হতো। মেয়েদেরকে ঐ অবস্থা থেকে উদ্ধার করার জন্য রাসুল (সাঃ) বলছেন, যে দাসীকে স্বাধীন করে বিয়ে করবে তার জন্য রয়েছে দ্বীগুণ সওয়াব। ইসলাম ধর্ম মেয়েদের দিয়েছে সর্বোচ্চ সম্মান, আরো দিয়েছে মায়ের মর্যাদা। রাসুল (সাঃ) বলেছেন, পায়ের পদতলে সন্তানের বেহেস্ত। বাবা, স্বামী ও সন্তানের সম্পদে দিয়েছে মেয়েদের অধিকার। আর রাসুল (সাঃ) নারীদের শিক্ষার প্রতি গুরুত্বারূপ করেছেন এবং তাদের শিক্ষার জন্য আলাদা সময় নির্ধারণ করেছেন। আবু সাঈদ খুদরী ( রা.) থেকে বর্ণিত নারীরা একবার রাসুলুল্লাহ কাছে গিয়ে বললেন, আপনার কাছে সব সময় পুরুষের ভীর থাকে, তাই আমাদের তালিম- তরবিয়তের জন্য আলাদা সময় নির্ধারণ করুন! নবীজি (সাঃ) তাদের জন্য একটি দিন নির্ধারণ করলেন, তাদের কাছে গিয়ে ওয়াজ নসিহত করলেন ও নেক আমল করার আদেশ করলেন (বুখারী হাদিসঃ ১০১)। আর নারী সাহাবীরা ও জ্ঞান অর্জনে গুরত্বারূপ করতেন। বিশেষ করে আনসারী সাহাবীরা জ্ঞান অর্জনে আগ্রহী ছিলেন। হযরত আয়শা (রাঃ) বলছেন, আনসারী নারীরা কত ভালো! দ্বীনি জ্ঞান অর্জনে লজ্জা তাদের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে না (মুসলিম, হাদিসঃ ৩৬২)। আর হযরত আয়শা (রাঃ) এত পরিমান জ্ঞান অর্জন করেছিলেন যে, বড় বড় সাহাবীরা পর্যন্ত সময়ে সময়ে বিভিন্ন বিষয় জানতেন। নারীদের শিক্ষা- দীক্ষা দেওয়ার জন্য মেয়ের মা’ বাবাকে সু-সংবাদ দিয়ে বলছেনঃ যে তিনটি কন্যা সন্তান ও তিন বোন প্রতিপালন করলো এবং তাদেরকে শিষ্টাচার শিক্ষা দিল, এবং তাদের প্রতি দয়া করলো, অবশেষে আল্লাহ তা’য়লা তাদের মুখাপেক্ষীহীন করে দিলেন। তাহলে তার জন্য আল্লাহ তা’য়লা কার জন্য জান্নাত অবধারিত করে দিবেন। তখন এক সাহাবী জিজ্ঞাসা করলেন, আল্লাহর রাসুল দুইটি কন্যাসন্তান প্রতিপালন করলে? তিনি উত্তরে বললেন দুটি করলেও ( শারহুস সুন্নাহ, সুত্রে মিশকাত, পৃষ্টাঃ ৪২৩) আর আমরা যৌক্তিক দৃষ্টিতে ও দেখতে পাই একজন পুরুষের জন্য যতটুকু জ্ঞান প্রয়োজন এবং মহিলার জন্য ততটুকু জ্ঞান প্রয়োজন, আর একটি সুন্দর সমাজ ও আদর্শ রাষ্ট্র গঠনে মেয়েদের শিক্ষার বিকল্প নেই।

লেখক : আলেম ও প্রাবন্ধিক।