মুফতী মুহাম্মাদ আবিদুর রহমান :
পুরো কায়েনাত আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালার নেযামের অধীন। নেযাম মানে নীতি, ফায়সালা বা সিদ্ধান্ত। বিশ্বময় পরিচালিত আল্লাহর নেযাম দুই কিসিমের। একটি নেযামে মুশাহাদ। অন্যটি নেযামে গায়েবা। নেযামে মুশাহাদা বাহ্যনীতি। দৃশ্যমান কানুন। নেযামে গায়েবা অপ্রকাশ্য নীতি। অদৃশ্য নিয়ম। নৌযানে চড়ে নদী পারহওয়া নেযামে মুশহাদা আর জায়নামাজে দাড়িয়ে নদী পারহওয়া হলো নেযামে গায়েবা। মানুষ কেবল নেযামে মুশাদাই দেখ পারে। নেযামে গায়েবা তার অজানা। মানুষ কেবল ভালো কোম্পানির গাড়ি আর বেশি বেতনের চাকুরিটাই দেখে। ফলে চাকুরির খুঁজে বাড়ি থেকে বের হয়ে কেউ কেউ লাশ হয়ে ফিরে আসে। রোড এক্সিডেন্টের ব্যাপারটি মানুষের জানা থাকে না। যেখানে সিদ্ধান্ত হয়ে আছে তার আর বাড়ি ফেরা হবে না। শুধু শুধু নেযামে মুশাহাদায় বিশ্বাসীদেরে কেতাবী ভাষায় বলা হয় ‘বস্তুবাদী মানুষ’। কিন্তু নবী রাসুল ও বিশ্বাসী মুমিনেরা নেযামে গায়েবায়ও ঈমান রাখে। ফলত নেযামে গায়েবায় যে মানুষ যত বেশি মজবুত বিশ্বাস রাখে সে মানুষ নেযামে মুশাহাদা আর নেযামে মুশাহাদার ধারকদের থেকে ততটা আলাদা হয়ে ওঠে। এক সময় তার বিশ্বাসে যখন পূূূর্ণতা পায় তখন সে আরদশজন থেকে আলবত পৃথক হয়ে যায়। তাঁরা পরিচিত হয় দরবেশ বা অলি নামে। সঙ্গত কারনেই ওলি আউলিয়াগণ নেযামে মুশাহাদাকে খুব বেশি কেয়ার করেন না। ফলে আমরা দেখতে পাই একজন আল্লাহর ওলি একাই ছড়ি হাতে দাড়িয়ে যান গোটা যাত্রাপালা গায়ক দলের বিরোদ্ধে। এবং শেষতক তিনি জয়ীও হন। দেখতে পাই একজন শাহজালাল মুজাররাদে ইয়ামেনী সুরমা নদী পাড়ি দেয়ার জন্য নৌকার ইন্তেজার করেন না। মুসল্লায় পা রেখেই চলে যান অপারে। ঐযে একজন আল্লামা নুরুদ্দীন গহরপুরী রাহ. এর লাঠির আঘাতে ভালো হয়ে যেতো বদ্ধপাগল, এসবই নেযামে গায়েবা অদৃশ্য ফায়সালার কারিশমা। যুগে যুগে তামাম খাটি মুমিনেরা এভাবেই বৃদ্ধাঙ্গলি দেখিয়েছেন নেযামে মুশাহাদার শক্তির ধ্বাজাধারীদের। নেযামে মুশাহাদার শক্তবিশ্বাসী নমরুদ মারা গেলো জুতাপেঠা খেয়ে, এও তো নেযামে গায়েবারই নতিজা। ইরাকের সংবাদ সম্মেলেনে জর্জডব্লিউ বুশের কপালে জুতা ছুড়ে দিলো সাংবাদিক মুনতাজির আল জাইদী। অথচ সম্মেলনটিতে বিদায়ী ডব্লিউবুশ তখন সবোর্চ্ছ সম্মাননা পাওয়ার। এটিও নেযামে গায়েবার বহিঃপ্রকাশ। ফেরাউন। রাব্বে আকবরের দাববীদার ফেরাউন ছিলো নেযামে মুশাহাদায় অসম্ভব বিশ্বাসী। এর বাইরের কিছুতেই আস্থা ছিলো না তার। বৃহত শক্তিনিয়ে ধাওয়া করলো নেযামে গায়েবায় মজবুত বিশ্বাসী মুসাকে। ফলাফল? শান্তিতে লোহিত সাগর পাড়ি দিলো নবী মুসা। আলাইহি ওয়াসাল্লাম। সলিল সমাধী হলো ফেরাউনের। এখানেই তফাত দুই নেযামের। নেযামে মুশাহাদা কাজ করে না যদি সেটি নেযামে গায়েবার খেলাপ হয়। নেযামে মুশাদা নেযামে গায়েবার মুওয়াফিক হয়নি বলেই আমরা দেখতে পাই নমরুদের প্রজ্জলিত অগ্নিকুন্ডে বসে বসে আঙ্গুর খাচ্ছেন খলিলুল্লাহ ইবরাহীম। আলাইহি ওয়াসাল্লাম। মাছের পেঠে সাগরজলে দীর্ঘদিন বিচরণ করেও জীবন হারাননি নবী ইউনুস। আলাইহি ওয়াসাল্লাম। এই নেযামে গায়েবা অদৃশ্য ফায়সার ইলম ইয়াপ্তা হয়েই রহমতে আলম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যোদ্ধশুরুর আগেই বলে দিতে পেরেছিলেন বদর প্রান্তরের কোনস্থানে পড়বে আবু জাহালের লাশ। কোথায় কোথায় মুখ তোবরে পড়ে থাকবে উতবা শাইবার নীতর দেহগুলো। নেযামে মুশাহাদা যেহেতু নেযামে গায়েবার অধীন। মানুষ তাই মোমিন হতে হলে প্রয়োজন তাকে নেযামে গায়েবায় মজবুত বিশ্বাসী হওয়া। কুরআনের ভাষায় তাওয়াক্কুল আলাল্লাহ। সুরায়ে আনফালে ঠিক এই গুণটাকেই প্রকৃত মোমিনের সিফাত হিসেবে দেখানো হয়েছে। এভাবে وعلى ربهم يتوكلون আর প্রকৃত মোমিনেরা আস্থা রাখে তাদের রবের (ফায়সালার) উপর। আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা আমাদেরে যাপিত জীবনের সার্বিক কর্মকান্ডে তাঁর উপর তাওয়াক্কুল বা অবিচল আস্থা রাখার তাওফিক দান করুন। আমিন। .
লেখক : ইমাম ও খতীব, বায়তুল আমান জামে মসজিদ, পশ্চিম আলাবদিরটেক ঢাকা ক্যান ঢাকা ১২০৬।