ঢাকা ০৪:৫৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১০ আশ্বিন ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo বানিয়াচংয়ে স্কুল ছাত্রীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার Logo এমপি মজিদ খানের মধ্যস্থতায় বানিয়াচং সৈদারটুলা ছান্দের ২ গ্রুপের দ্বন্দ্ব নিরসন Logo মিশর আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থান পাওয়ায় মুফতি হাফিজুল হককে সংবর্ধনা প্রদান Logo আজমিরীগঞ্জে নিত্যপণ্যের মূল্য চড়া: ক্রেতাদের নাভিশ্বাস Logo একজন কর্মবীর সফল এমপি আব্দুল মজিদ খান Logo বানিয়াচংয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পদ্মাসন সিংহ’কে বিদায় সংবর্ধনা Logo জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী মনজুর চৌধুরী Logo বানিয়াচংয়ে ইফা শিক্ষকদের নিয়ে ক্লাস্টার ট্রেনিং অনুষ্ঠিত Logo আজমিরীগঞ্জে পুলিশের অভিযানে ২০লিটার চোলাই মদ জব্দ : আটক-১ Logo প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.) হলেন গোটা জাতির জন্য উত্তম আদর্শ

প্রবন্ধ : গুজবের ইতিহাস

  • তরঙ্গ ২৪ ডেস্ক :
  • আপডেট সময় ০৯:৩৩:০৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩০ অক্টোবর ২০২০
  • ৮৬ বার পড়া হয়েছে

শিব্বির আহমদ আরজু  : গুজব মানে রটনা/ মিথ্যা / কোন ভিত্তি নেই এমন সংবাদ ! সমাজ বিজ্ঞানের ভাষায় গুজব হলো এমন কোন বিবৃতি যার সত্যতা অল্প সময়ের মধ্যে অথবা কখনই নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না! এতে সহজেই অনুমেয় করা যায় গুজব কত বড় ভয়ঙ্কর একটি বিষয়। যুগে যুগে গুজবে পতিত হয়ে কত যে রক্তপাত হয়েছে, কত যে প্রাণহানি ঘটেছে তার কোন ইয়ত্তা নেই। সেই সাথে নি:শেষ হয়েছে অনেক জাতি বা গোষ্ঠিও! গুজব সম্পর্কে দীর্ঘকাল গবেষণা করেছেন মনোবিজ্ঞানী অনপোর্ট ও পোস্টম্যান। তারা বলেছেন, গুজব হচ্ছে মানুষের আশা-আকাঙ্খার প্রকাশ। অর্থাৎ- যে বা যারা গুজব ছড়ায় তারা চায় সমাজে ভিন্ন কিছু ঘটুক!
গুজবে এমনি একটি ঘটনা ঘটেছে ১৬০০ সালে। ৮ম পোপ ক্লেমেন্ট গাছের সাথে বেঁধে পুড়িয়ে হত্যা করেছিলেন ব্রুনো নামে এক দার্শনিককে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, এই মহাবিশ্বের মতো আরো মহাবিশ্ব আছে। পৃথিবী গোল। সূর্য এই মহাবিশ্বের কেন্দ্র নয় এবং এটি একটি নক্ষত্র ছাড়া আর কিছু নয় এ ধারণা পোষণ করা। ব্রুনোকে ধর্মদ্রোহি উপাধি দেওয়া হলো। আদালতের মাধ্যমে মৃত্যুদন্ডের রায় হলো। সেই রায় কার্যকর করতে গিয়ে ব্রুনোকে নির্মমভাবে পুড়িয়ে মারা হলো। যে দেশ বা সমাজ ব্রুনোকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল, সেই তারাই জ্ঞানের আলোতে এসে ব্রুনোকে হত্যা করা ভুল ছিলো বলে স্বীকার করল। এঘটনাকে পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম গুজব হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।সূত্র : ইন্টারনেট

 

 

ছবি- গুজব ছড়ানো মহা অন্যায়।

ইসলামে গুজবকে সাংঘাতিক অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে! পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, “হে মুমিনগণ, যদি কোন সত্য ত্যাগকারী তোমাদের কাছে কোন সংবাদ নিয়ে আসে তবে তোমরা তা যাচাই করে দেখবে যেন অজ্ঞাতবশত কোন সম্প্রদায়কে ক্ষতিগ্রস্থ না কর এবং পরে তোমাদের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত না হও”। (সূরা হুজুরাত-৬)
অন্য জায়গায় ইরশাদ হয়েছে,“ যে বিষয়ে তোমার জ্ঞান নেই, সেই বিষয়ে অনুমান দ্বারা পরিচালিত হয়ো না। নিশ্চয় কান, চোখ, হৃদয় এদের প্রত্যেকটিকে জিজ্ঞাসা করা হবে”। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৩৬) এ দু’ আয়াতের আলোকে আমরা অবশ্য হৃদয়ঙ্গম করতে পেরেছি যে পবিত্র কোরআনুল কারিমে গুজবকে নিষেধ করা হয়েছে। শুধু তাই নয় যারা এহেন কাজ করবে তার জন্য মহান আল্লাহর কাছে অবশ্য জবাবদিহি করতে হবে এবং প্রাশ্চিত্যও পেতে হবে। রাসূল (সা.) বলেছেন, “ একজন মানুষ মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট যে, সে যা শুনবে তাই বলে বেড়াবে”।(সহীহ মুসলিম শরীফ)
রাসূল (সা.) আরো বলেছেন, “ মানুষের মধ্যে গুজব প্রচারই হলো ভয়ঙ্কররতম মিথ্যা”।(সহীহ মুসলিম শরীফ) মিথ্যা বা গুজব ছড়ানো হচ্ছে মুনাফিকির লক্ষণ। গুজব এক ভয়ঙ্কর বিষয়! আগেকার দুষ্ট লোকদের একটি মিথ্যা বা কল্পকাহিনীকে প্রচার করতে খুব বেগ পেতে হতো। কারণ এখনকার মতো তখন কোন ইন্টারনেট বা তথ্য প্রযুক্তির সুযোগ ছিল না। এখন বলতে গেলে একেবারে হাতের মুঠোই। ইচ্ছা করলে ফেইসবুক, ভাইভার, টুইট প্রভৃতির মাধ্যমে গুজব ছড়ানোটা সহজতর হয়েছে। গুজবকে ইসলামে যেমন কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে তেমনি রাষ্ট্রীয় আইনেও অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। যে বা যারা সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্ঠির লক্ষে পরিকল্পিতভাবে গুজব ছড়ায় তাদেরকে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে গ্রেফতার করে যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
সব শেষে আমীরুল মো’মিনিন হযরত আলী (রা.) এর একটি বাণী দিয়ে লেখাটির ইতি টানতে চাই। তিনি বলেছেন, যা সত্য নয় তা কখনো মুখে এনো না। যদি আনো, তাহলে তোমার সত্য কথাকেও লোকে অসত্য বলে মনে করবে।

লেখক : সম্পাদক ও প্রকাশক, তরঙ্গ টুয়েন্টিফোর ডটকম।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

বানিয়াচংয়ে স্কুল ছাত্রীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

প্রবন্ধ : গুজবের ইতিহাস

আপডেট সময় ০৯:৩৩:০৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩০ অক্টোবর ২০২০

শিব্বির আহমদ আরজু  : গুজব মানে রটনা/ মিথ্যা / কোন ভিত্তি নেই এমন সংবাদ ! সমাজ বিজ্ঞানের ভাষায় গুজব হলো এমন কোন বিবৃতি যার সত্যতা অল্প সময়ের মধ্যে অথবা কখনই নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না! এতে সহজেই অনুমেয় করা যায় গুজব কত বড় ভয়ঙ্কর একটি বিষয়। যুগে যুগে গুজবে পতিত হয়ে কত যে রক্তপাত হয়েছে, কত যে প্রাণহানি ঘটেছে তার কোন ইয়ত্তা নেই। সেই সাথে নি:শেষ হয়েছে অনেক জাতি বা গোষ্ঠিও! গুজব সম্পর্কে দীর্ঘকাল গবেষণা করেছেন মনোবিজ্ঞানী অনপোর্ট ও পোস্টম্যান। তারা বলেছেন, গুজব হচ্ছে মানুষের আশা-আকাঙ্খার প্রকাশ। অর্থাৎ- যে বা যারা গুজব ছড়ায় তারা চায় সমাজে ভিন্ন কিছু ঘটুক!
গুজবে এমনি একটি ঘটনা ঘটেছে ১৬০০ সালে। ৮ম পোপ ক্লেমেন্ট গাছের সাথে বেঁধে পুড়িয়ে হত্যা করেছিলেন ব্রুনো নামে এক দার্শনিককে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, এই মহাবিশ্বের মতো আরো মহাবিশ্ব আছে। পৃথিবী গোল। সূর্য এই মহাবিশ্বের কেন্দ্র নয় এবং এটি একটি নক্ষত্র ছাড়া আর কিছু নয় এ ধারণা পোষণ করা। ব্রুনোকে ধর্মদ্রোহি উপাধি দেওয়া হলো। আদালতের মাধ্যমে মৃত্যুদন্ডের রায় হলো। সেই রায় কার্যকর করতে গিয়ে ব্রুনোকে নির্মমভাবে পুড়িয়ে মারা হলো। যে দেশ বা সমাজ ব্রুনোকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল, সেই তারাই জ্ঞানের আলোতে এসে ব্রুনোকে হত্যা করা ভুল ছিলো বলে স্বীকার করল। এঘটনাকে পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম গুজব হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।সূত্র : ইন্টারনেট

 

 

ছবি- গুজব ছড়ানো মহা অন্যায়।

ইসলামে গুজবকে সাংঘাতিক অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে! পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, “হে মুমিনগণ, যদি কোন সত্য ত্যাগকারী তোমাদের কাছে কোন সংবাদ নিয়ে আসে তবে তোমরা তা যাচাই করে দেখবে যেন অজ্ঞাতবশত কোন সম্প্রদায়কে ক্ষতিগ্রস্থ না কর এবং পরে তোমাদের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত না হও”। (সূরা হুজুরাত-৬)
অন্য জায়গায় ইরশাদ হয়েছে,“ যে বিষয়ে তোমার জ্ঞান নেই, সেই বিষয়ে অনুমান দ্বারা পরিচালিত হয়ো না। নিশ্চয় কান, চোখ, হৃদয় এদের প্রত্যেকটিকে জিজ্ঞাসা করা হবে”। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৩৬) এ দু’ আয়াতের আলোকে আমরা অবশ্য হৃদয়ঙ্গম করতে পেরেছি যে পবিত্র কোরআনুল কারিমে গুজবকে নিষেধ করা হয়েছে। শুধু তাই নয় যারা এহেন কাজ করবে তার জন্য মহান আল্লাহর কাছে অবশ্য জবাবদিহি করতে হবে এবং প্রাশ্চিত্যও পেতে হবে। রাসূল (সা.) বলেছেন, “ একজন মানুষ মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট যে, সে যা শুনবে তাই বলে বেড়াবে”।(সহীহ মুসলিম শরীফ)
রাসূল (সা.) আরো বলেছেন, “ মানুষের মধ্যে গুজব প্রচারই হলো ভয়ঙ্কররতম মিথ্যা”।(সহীহ মুসলিম শরীফ) মিথ্যা বা গুজব ছড়ানো হচ্ছে মুনাফিকির লক্ষণ। গুজব এক ভয়ঙ্কর বিষয়! আগেকার দুষ্ট লোকদের একটি মিথ্যা বা কল্পকাহিনীকে প্রচার করতে খুব বেগ পেতে হতো। কারণ এখনকার মতো তখন কোন ইন্টারনেট বা তথ্য প্রযুক্তির সুযোগ ছিল না। এখন বলতে গেলে একেবারে হাতের মুঠোই। ইচ্ছা করলে ফেইসবুক, ভাইভার, টুইট প্রভৃতির মাধ্যমে গুজব ছড়ানোটা সহজতর হয়েছে। গুজবকে ইসলামে যেমন কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে তেমনি রাষ্ট্রীয় আইনেও অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। যে বা যারা সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্ঠির লক্ষে পরিকল্পিতভাবে গুজব ছড়ায় তাদেরকে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে গ্রেফতার করে যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
সব শেষে আমীরুল মো’মিনিন হযরত আলী (রা.) এর একটি বাণী দিয়ে লেখাটির ইতি টানতে চাই। তিনি বলেছেন, যা সত্য নয় তা কখনো মুখে এনো না। যদি আনো, তাহলে তোমার সত্য কথাকেও লোকে অসত্য বলে মনে করবে।

লেখক : সম্পাদক ও প্রকাশক, তরঙ্গ টুয়েন্টিফোর ডটকম।