ঢাকা ০৩:১৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo গ্যানিংগঞ্জ বাজারের উদ্যোগে ৩দিন ব্যাপি তাফসিরুল কোরআন মহা সম্মেলন আগামী ৯,১০ ও ১১ ডিসেম্বর Logo সম্মিলিত প্রয়াসের মাধ্যমে নৌকাকে বিজয়ী করুন : এমপি আবুজাহির Logo বানিয়াচংয়ে হবিগঞ্জ শিক্ষা-সংস্কৃতি উন্নয়ন পরিষদের উদ্যোগে মেধাবৃত্তি পরীক্ষা-২০২৩ অনুষ্ঠিত Logo বানিয়াচং ইসলাহুল উম্মাহ পরিষদের উদ্যোগে মেধাবী ও কৃতি শিক্ষার্থীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ Logo হবিগঞ্জ-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার ঘোষণা দিলেন এমপি মজিদ খান Logo বানিয়াচং উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভা Logo নৌকা মার্কার সমর্থনে বানিয়াচং দক্ষিণ যাত্রাপাশা বনমুথুরা ভূমিহীন নারী-পুরুষের মিছিল Logo বানিয়াচংয়ে সরকারি প্রণোদনার ৭ হাজার ১শ’ কৃষককে সার-বীজ প্রদান Logo বানিয়াচংয়ে ফারুক চৌধুরী মিতুর মৃত্যুতে আলহাজ্ব রেজাউল মোহিত খানের শোক Logo বর্ণাঢ্য আয়োজনে আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া দারুল কোরআন মাদ্রাসার বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত

পবিত্র কুরআন : মানুষকে পরিশুদ্ধ জীবনের পথ দেখায়

  • তরঙ্গ ২৪ ডেস্ক :
  • আপডেট সময় ১০:৪৯:১৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২০ জানুয়ারী ২০২১
  • ১২৯ বার পড়া হয়েছে
মুফতী মুহাম্মাদ আবিদুর রহমান :
.
পবিত্র কুরআনুল কারিম আল্লাহ সুবহানাহু তা’য়ালার তরফ থেকে আখেরী নবি মুহাম্মাদুর রাসুল্লাহ (সা.)এর উপর অবতীর্ণ মানবজাতির জন্য হেদায়াতগ্রন্থ। হেদায়াত মানে সুপথ প্রদর্শক। পবিত্র কুরআনের বহু সংখ্যক আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা কুরআনের এই বৈশিষ্টের কথা পরিস্কারভাবে আলোচনা করেছেন। কিন্তু আমরা কি কখনও কুরআনুল কারিমের এই বৈশিষ্ট নিয়ে ভেবেছি? কখনও কি পরখ করার চেষ্টা করেছি যে, কুরআনুল কারিম কিভাবে মানুষকে হেদায়ত বা সুপথ দেখায়? দেখে থাকলে ভালো, না দেখে থাকলে চলুন কুরআনুল কারিমে একবার নজর বুলিয়ে আসুন।
.اِنَّ اللّٰہَ یَاۡمُرُ بِالۡعَدۡلِ وَالۡاِحۡسَانِ وَاِیۡتَآیِٔ ذِی الۡقُرۡبٰی وَیَنۡہٰی عَنِ الۡفَحۡشَآءِ وَالۡمُنۡکَرِ وَالۡبَغۡیِ ۚ یَعِظُکُمۡ لَعَلَّکُمۡ تَذَکَّرُوۡنَ
.
 উদ্ধৃত অংশটুকু সুরা নাহলের একটি আয়াত। এটি নাহলের ৯০তম আয়াত। উপর্যুক্ত আয়াতে কারিমার আলোকেই আমরা শিরোনামের বিষয়টি নিয়ে আলচনা করবো। প্রথমেই জানবো আয়াতটির তরজমা। আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা ইরশাদ করছেন__ নিশ্চয় আল্লাহ ইনসাফ, দয়া এবং আত্মীয়-স্বজনকে (তাদের যাথাযথ হক) প্রদানের আদেশ করেন। আর নিষেধ করেন অশ্লীলতা, মন্দকাজ ও জুলুম করা থেকে। আল্লাহ তোমাদেরকে উপদেশ দেন, যেন তোমরা উপদেশ গ্রহণ করো। সুরা নাহল আয়াত ৯০।
প্রিয় পাঠক! একটু থামুন, তরজমাসহ আয়াতটি আবার পড়ুন। অনুভব করতে চেষ্টা করুন। ভাবুন আয়াতের বক্তব্যটুকু নিয়ে। দেখুন আয়াতটিতে দু’টি ধারার আয়োচনা সমানভাবে বিবৃত হয়েছে। আদেশ ও নিষেধ এই দুটি ধারায়। আরো দেখুন আদেশ অংশে তিনটি বিষয়ে বলা হয়েছে, যথা -ইনসাফ, দয়া, ও স্বজনদের হক। নিষেধ অংশেও তিনটি বিষয়ে কথা হচ্ছে, যথা -অশ্লীলতা, মন্দকাজ ও জুলুম না করা।
আলোচ্য আয়াতের আদেশ ও নিষেধসহ মোট ছয়টি বিষয় মানুষের জীবনকে কিভাবে পরিশুদ্ধ করে গড়ে তোলে তা নিয়েই বক্ষমান প্রবন্ধে আলোচনা করবো।
প্রথমেই কথা বলি আদেশ অংশের ইনসাফ নিয়ে।
ক) ইনসাফ মানে কি? ইনসাফ মানে হলো সুবিচার বা ন্যায়নিষ্টতা। এই ইনসাফ কোথায় প্রয়োগ করবো? জায়টা অবারিত। এর কোন দায়েরা উল্লেখ নেই। এর মানে জীবনের সর্বক্ষেত্রে আপনি আমাকে ইনসাফের পাবন্দ হতে হবে। জীবনের বিস্তৃত অঙ্গনের সকল ক্ষেত্রে ইনসাফকে অপরিহার্য করে তুলতে হবে। ইনসাফ করতে হবে __আমলে আখলাকে, চিন্তায় চেতনায়, আবেগে অনুভূতিতে, লেনদেনে, চাওয়া ও পাওয়ায়। ন্যায়নিষ্ট হতে হবে; ব্যবসায় বাণিজ্যে, সমাজে রাষ্ট্র, পরিবার ও আপন সত্বার সর্বত্র। সবখানে। আর ইনসাফের প্রথম পদক্ষেপ হলো পক্ষপাত পরিহার করা। আমাদের মনে রাখতে হবে ইনসাফ এমন এক সম্পদ যার উপর জিগরী দোস্তের আর আজন্ম শত্রুর উভয়ই সমানভাবে হকদার। কেউ ন্যায়নীতিবাদ হওয়া মানে ইনসাফের হকে শক্র মিত্রের মাঝে কোন তফাত রাখা চলবে না।
.
আদেশ অংশের দ্বিতীয় বিষয়টি ইহসান।
২.ইহসান কি? ইহসান মানে যাপিত জীবনের কর্মযজ্ঞে কেবল উচিত অনুচিত বা ন্যায়নীতির উপর থমতে না থেকে আরো একটু উপরে উঠা। নিজের কাজে কর্মে মানুষ ও মাখলুকাতের উপর মহানুভবতার প্রকাশ ঘটানো। ইবাদত প্রশ্নে ইহসান মানে কেবল  ফরজ ওয়াজীবে সীমাবদ্ধ না থেকে নফল ও মুস্তাহাব্বাত বিষয়গুলোও পরম যত্ন ও মমতার সহিত পালন করা। ইনসাফের আত্মীক/আধ্যাতিক ধারণা পেশ করে নবিয়ে কারিম (সা.) বলেন, _ইহসান হলো তুমি আল্লাহর ইবাদত এমনভাবে করবে যেনো তুমি তাঁকে দেখতে পাচ্ছো। তুমি যদি তাঁকে দেখতে নাও পাও, তবে তিনি তো তোমাকে দেখছেন (এই অনুভূতি অন্তরে জাগ্রত রেখে ইবাদত করা)। হলফ করে বলতে পারি; মানুষ যদি তার জীবনের প্রতিটি কাজে কর্মের বেলায় অন্তরে এই অনুভূতি জাগ্রত রাখতে পারে তাহলে তার জীবন সর্বাঙ্গিণ সুন্দর হতে বাধ্য।
.
আদেশ অংশের তৃতীয় বিষয়টি হলো স্বজনদের হকের প্রতি যত্নবান হওয়া।
৩.আত্মীয় স্বজনের হক বিষয়টি আল্লাহ সুবহানাহু তা’য়ালা আলাদাভাবে আলোচনা করলেন কেনো?  উপরের দু’টি আদেশের সাথে তো এটি অনিবার্যভাবেই শামিল আছে। করেছেন একারনে যে সমাজের আর দশজন মানুষ হতে আত্মীয় স্বজনের ব্যপারটি একটু আলাদা রকম গুরুত্ব রাখে। জীবন চলার পথে সুখে-দু:খে আত্মীয়স্বজন বেশি ঘণিষ্ট হয়ে থাকেন। সুতরাং তাদেরকে আলাদাভাবে কেয়ার করা, তার প্রতি বারতি কিছু স্নেহমমতা ও হৃদ্যতা প্রকাশ করা, এবং দান খয়রাতের হাত তাদের প্রতি একটু বেশি প্রসারিত করা জরুরী যেন বুঝতে পারা যায় যে সে/তারা আত্মীয়।
পাঠক এবার আরেকটু থামুন। উপরের আলোচনাটুকু একবার আত্মস্ত করার চেষ্টা করুন। ভেবে দেখুন, মানবিক বা পরিশুদ্ধ জীবন লাভ করার জন্য উপর্যুক্ত বিষয়াবলী ছাড়া আর কোন কিছু বাকি আছে কি? ভেবে দেখুন; মানুষের জীবনের ইতিবাচক দিকের সব কিছু সংক্ষেপে অথচ প্রবলদৃঢ়তার সাথে এখানে ওঠে এসেছে।
বাকি থাকলো নেতিবাচক দিক। মানুষের জীবন শুধু ইতিবাচক বিষয়াদির উপস্থিতির দ্বারা পরিশুদ্ধ হয়ে ওঠে না বরং সফল ও স্বার্থক জীবনের জন্য নেতিবাচক বিষয়াবলিকেও স্বেচ্ছায় স্বজ্ঞানে পরিহার করে চলতে হয়। পরিশুদ্ধ জীবনের রাহবার কুরআনুল কারিমও তাই শুধু শুধু করণীয় বিষয়াবলি বা ইতিবাচক গুণের আদেশ দিয়েই ক্ষান্ত হয়ে যায়নি বরং সমানভাবে নেতিবাচক বা বর্জণীয় বিষয়েও সুস্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা শুনিয়ে দিয়েছেন। এমনকি গুণের সংখ্যাটি পর্যন্ত সমান সমান রেখে পরিশুদ্ধ জীবন বিনির্মাণের উপর আলোকপাত করা হয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে “আর নিষেধ করা হচ্ছে অশ্লীল, মন্দকাজ ও জুলুম করা থেকে।
১. অশ্লীল মানে কি? অশ্লীল বলতে পাশবিক যত আচরণ আছে, কর্মযজ্ঞ আছে সবই অশ্লীল। মানুষ ও মানবতার পক্ষে যা যায় না তাই অশ্লীল। সমাজের খাটি সুশীল মানুষ (খাটি বল্লাম কারন, বর্তমানকার একেকজন সুশীল আস্তো একেকটা পশু, তাদের কর্মে ও কথায় খোলাখুলি পশু আর পাশবিকতাকে প্রমোট করা হয়) যেসব কার্যকলাপকে ঘৃণার চোখে দেখে তাই অশ্লীল। চিরায়ত উল্লেখযোগ্য কিছু অশ্লীলতা হলো _পরকিয়া, যিনা ব্যবিচার, গালামন্দ করা, অশ্রাব্য কথা বলা, নেশা করা, মদপান,  জুয়া খেলা ও গীবত করা ইত্যাদি।
.
নিষিদ্ধের দ্বিতীয় বিষয়টি হলো মন্দ বা খারাপ কাজ।
২. খারাপ কাজ কি? খারাপ মানে যা ভালো নয়। এটি বলতে সহজ হলেও আদতে খারাপ কাজ বিষয়ে বহুমানুষ বে-খবর। মানুষ সাধারণত নিজের বিচার বুদ্ধি দিয়ে খারাপ ভালো নির্ণয় করতে চায়। মূলত ব্যাপারটি মানুষের বুঝের উপর নির্ভরশীল নয়। তাহলে খারাপ কি? খারাপ হলো কুরআন সুন্নাহ বা ইসলাম যা নিষেধ করে তাই খারাপ। মানুষ তার সীমিত জ্ঞান দিয়ে এর খারাপি অনুভব করতে পারুক বা নাপারুক, এতে কিছু যায় আসে না। খারাপ কাজের ছোট্ট একটা উদাহরণ হলো রক্তসম্পর্কে বিয়ে হারাম নয় এমন দু’জন নারি পুরুষ/যুবক যুবতীর মধ্যে সম্পর্ক গড়া। চাই সেটি বন্ধুত্বের নামে হোক বা প্রতিবেশি বা যে কোন ভাবেই হোক। এই দুই জন, ‘মানুষের বিবেচনায়’ কোন খারাপ কাজে জড়িয়ে পড়ুক বা না পড়ুক। কারন ইসলাম এমন সম্পর্ককে খারাপ বলে ঘোষণা করেছে।
.
নিষিদ্ধ আলোচনার তৃতীয় বিষয়টি হলো জুলুম না করা।
৩. জুলুম কি? জুলুমের সাধারণ অর্থ হলো অন্যায় কাজ ও আচরণ, যার দ্বারা ব্যক্তির, সমাজের বা দেশের শান্তি শৃংখলা বিঘ্নিত হয়। মানুষের জান- মাল ইজ্জত আবরু নিরাপত্তহীনতায় ভোগে। এক কথায় সকল প্রকার অন্যায় অবিচার খারাপ ও নিষিদ্ধ কাজই জুলুমের মধ্যে শামিল।
.
আমাদের আলোচনা হচ্ছিল ‘কুরআন : পরিশুদ্ধ জীবনের পথ দেখায়’ শিরোনামে। উপরোক্ত আলোচনায় ইতিবাচক ও নেতিবাচকের অধিনে বিবৃত ছয়টি বিষয় মানুষের জীবনের বিস্তৃত পরিমন্ড নিয়ে পরিব্যপ্ত। মানুষের জীবনের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনের সকল অংশেই এর উপস্থিতি বিরাজমান। কোন মানুষ যদি ব্যক্তি জীবনে আলোচ্য বিষয়াবলী পরিপূর্ণভাবে মেনে চলে তাহলে সে অনিবার্যভাবেই একজন আদর্শ হয়ে ওঠবে। আবার কোন সমাজও যদি উপরোক্ত বিষয়ালী যথাযথ অনুসরণ করে তাহলে সমাজ হিসেবে সেটিও আদর্শ সমাজ হয়েই আত্মপ্রকাশ করবে।
আল্লাহ সুবহানাহু তা’য়ালা আমাদের সকলকে কুরআনিক আদর্শে উজ্জিবীত হয়ে পরিশুদ্ধ জীবন লাভ করার তাওফিক দান করুন। আমীন।
.
লেখক : ইমাম ও খতীব, বায়তুল আমান জামে মসজিদ পশ্চিম আলাব্দিরটেক ঢাকা ক্যান্ট ঢাকা ১২০৬।
ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

গ্যানিংগঞ্জ বাজারের উদ্যোগে ৩দিন ব্যাপি তাফসিরুল কোরআন মহা সম্মেলন আগামী ৯,১০ ও ১১ ডিসেম্বর

পবিত্র কুরআন : মানুষকে পরিশুদ্ধ জীবনের পথ দেখায়

আপডেট সময় ১০:৪৯:১৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২০ জানুয়ারী ২০২১
মুফতী মুহাম্মাদ আবিদুর রহমান :
.
পবিত্র কুরআনুল কারিম আল্লাহ সুবহানাহু তা’য়ালার তরফ থেকে আখেরী নবি মুহাম্মাদুর রাসুল্লাহ (সা.)এর উপর অবতীর্ণ মানবজাতির জন্য হেদায়াতগ্রন্থ। হেদায়াত মানে সুপথ প্রদর্শক। পবিত্র কুরআনের বহু সংখ্যক আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা কুরআনের এই বৈশিষ্টের কথা পরিস্কারভাবে আলোচনা করেছেন। কিন্তু আমরা কি কখনও কুরআনুল কারিমের এই বৈশিষ্ট নিয়ে ভেবেছি? কখনও কি পরখ করার চেষ্টা করেছি যে, কুরআনুল কারিম কিভাবে মানুষকে হেদায়ত বা সুপথ দেখায়? দেখে থাকলে ভালো, না দেখে থাকলে চলুন কুরআনুল কারিমে একবার নজর বুলিয়ে আসুন।
.اِنَّ اللّٰہَ یَاۡمُرُ بِالۡعَدۡلِ وَالۡاِحۡسَانِ وَاِیۡتَآیِٔ ذِی الۡقُرۡبٰی وَیَنۡہٰی عَنِ الۡفَحۡشَآءِ وَالۡمُنۡکَرِ وَالۡبَغۡیِ ۚ یَعِظُکُمۡ لَعَلَّکُمۡ تَذَکَّرُوۡنَ
.
 উদ্ধৃত অংশটুকু সুরা নাহলের একটি আয়াত। এটি নাহলের ৯০তম আয়াত। উপর্যুক্ত আয়াতে কারিমার আলোকেই আমরা শিরোনামের বিষয়টি নিয়ে আলচনা করবো। প্রথমেই জানবো আয়াতটির তরজমা। আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা ইরশাদ করছেন__ নিশ্চয় আল্লাহ ইনসাফ, দয়া এবং আত্মীয়-স্বজনকে (তাদের যাথাযথ হক) প্রদানের আদেশ করেন। আর নিষেধ করেন অশ্লীলতা, মন্দকাজ ও জুলুম করা থেকে। আল্লাহ তোমাদেরকে উপদেশ দেন, যেন তোমরা উপদেশ গ্রহণ করো। সুরা নাহল আয়াত ৯০।
প্রিয় পাঠক! একটু থামুন, তরজমাসহ আয়াতটি আবার পড়ুন। অনুভব করতে চেষ্টা করুন। ভাবুন আয়াতের বক্তব্যটুকু নিয়ে। দেখুন আয়াতটিতে দু’টি ধারার আয়োচনা সমানভাবে বিবৃত হয়েছে। আদেশ ও নিষেধ এই দুটি ধারায়। আরো দেখুন আদেশ অংশে তিনটি বিষয়ে বলা হয়েছে, যথা -ইনসাফ, দয়া, ও স্বজনদের হক। নিষেধ অংশেও তিনটি বিষয়ে কথা হচ্ছে, যথা -অশ্লীলতা, মন্দকাজ ও জুলুম না করা।
আলোচ্য আয়াতের আদেশ ও নিষেধসহ মোট ছয়টি বিষয় মানুষের জীবনকে কিভাবে পরিশুদ্ধ করে গড়ে তোলে তা নিয়েই বক্ষমান প্রবন্ধে আলোচনা করবো।
প্রথমেই কথা বলি আদেশ অংশের ইনসাফ নিয়ে।
ক) ইনসাফ মানে কি? ইনসাফ মানে হলো সুবিচার বা ন্যায়নিষ্টতা। এই ইনসাফ কোথায় প্রয়োগ করবো? জায়টা অবারিত। এর কোন দায়েরা উল্লেখ নেই। এর মানে জীবনের সর্বক্ষেত্রে আপনি আমাকে ইনসাফের পাবন্দ হতে হবে। জীবনের বিস্তৃত অঙ্গনের সকল ক্ষেত্রে ইনসাফকে অপরিহার্য করে তুলতে হবে। ইনসাফ করতে হবে __আমলে আখলাকে, চিন্তায় চেতনায়, আবেগে অনুভূতিতে, লেনদেনে, চাওয়া ও পাওয়ায়। ন্যায়নিষ্ট হতে হবে; ব্যবসায় বাণিজ্যে, সমাজে রাষ্ট্র, পরিবার ও আপন সত্বার সর্বত্র। সবখানে। আর ইনসাফের প্রথম পদক্ষেপ হলো পক্ষপাত পরিহার করা। আমাদের মনে রাখতে হবে ইনসাফ এমন এক সম্পদ যার উপর জিগরী দোস্তের আর আজন্ম শত্রুর উভয়ই সমানভাবে হকদার। কেউ ন্যায়নীতিবাদ হওয়া মানে ইনসাফের হকে শক্র মিত্রের মাঝে কোন তফাত রাখা চলবে না।
.
আদেশ অংশের দ্বিতীয় বিষয়টি ইহসান।
২.ইহসান কি? ইহসান মানে যাপিত জীবনের কর্মযজ্ঞে কেবল উচিত অনুচিত বা ন্যায়নীতির উপর থমতে না থেকে আরো একটু উপরে উঠা। নিজের কাজে কর্মে মানুষ ও মাখলুকাতের উপর মহানুভবতার প্রকাশ ঘটানো। ইবাদত প্রশ্নে ইহসান মানে কেবল  ফরজ ওয়াজীবে সীমাবদ্ধ না থেকে নফল ও মুস্তাহাব্বাত বিষয়গুলোও পরম যত্ন ও মমতার সহিত পালন করা। ইনসাফের আত্মীক/আধ্যাতিক ধারণা পেশ করে নবিয়ে কারিম (সা.) বলেন, _ইহসান হলো তুমি আল্লাহর ইবাদত এমনভাবে করবে যেনো তুমি তাঁকে দেখতে পাচ্ছো। তুমি যদি তাঁকে দেখতে নাও পাও, তবে তিনি তো তোমাকে দেখছেন (এই অনুভূতি অন্তরে জাগ্রত রেখে ইবাদত করা)। হলফ করে বলতে পারি; মানুষ যদি তার জীবনের প্রতিটি কাজে কর্মের বেলায় অন্তরে এই অনুভূতি জাগ্রত রাখতে পারে তাহলে তার জীবন সর্বাঙ্গিণ সুন্দর হতে বাধ্য।
.
আদেশ অংশের তৃতীয় বিষয়টি হলো স্বজনদের হকের প্রতি যত্নবান হওয়া।
৩.আত্মীয় স্বজনের হক বিষয়টি আল্লাহ সুবহানাহু তা’য়ালা আলাদাভাবে আলোচনা করলেন কেনো?  উপরের দু’টি আদেশের সাথে তো এটি অনিবার্যভাবেই শামিল আছে। করেছেন একারনে যে সমাজের আর দশজন মানুষ হতে আত্মীয় স্বজনের ব্যপারটি একটু আলাদা রকম গুরুত্ব রাখে। জীবন চলার পথে সুখে-দু:খে আত্মীয়স্বজন বেশি ঘণিষ্ট হয়ে থাকেন। সুতরাং তাদেরকে আলাদাভাবে কেয়ার করা, তার প্রতি বারতি কিছু স্নেহমমতা ও হৃদ্যতা প্রকাশ করা, এবং দান খয়রাতের হাত তাদের প্রতি একটু বেশি প্রসারিত করা জরুরী যেন বুঝতে পারা যায় যে সে/তারা আত্মীয়।
পাঠক এবার আরেকটু থামুন। উপরের আলোচনাটুকু একবার আত্মস্ত করার চেষ্টা করুন। ভেবে দেখুন, মানবিক বা পরিশুদ্ধ জীবন লাভ করার জন্য উপর্যুক্ত বিষয়াবলী ছাড়া আর কোন কিছু বাকি আছে কি? ভেবে দেখুন; মানুষের জীবনের ইতিবাচক দিকের সব কিছু সংক্ষেপে অথচ প্রবলদৃঢ়তার সাথে এখানে ওঠে এসেছে।
বাকি থাকলো নেতিবাচক দিক। মানুষের জীবন শুধু ইতিবাচক বিষয়াদির উপস্থিতির দ্বারা পরিশুদ্ধ হয়ে ওঠে না বরং সফল ও স্বার্থক জীবনের জন্য নেতিবাচক বিষয়াবলিকেও স্বেচ্ছায় স্বজ্ঞানে পরিহার করে চলতে হয়। পরিশুদ্ধ জীবনের রাহবার কুরআনুল কারিমও তাই শুধু শুধু করণীয় বিষয়াবলি বা ইতিবাচক গুণের আদেশ দিয়েই ক্ষান্ত হয়ে যায়নি বরং সমানভাবে নেতিবাচক বা বর্জণীয় বিষয়েও সুস্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা শুনিয়ে দিয়েছেন। এমনকি গুণের সংখ্যাটি পর্যন্ত সমান সমান রেখে পরিশুদ্ধ জীবন বিনির্মাণের উপর আলোকপাত করা হয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে “আর নিষেধ করা হচ্ছে অশ্লীল, মন্দকাজ ও জুলুম করা থেকে।
১. অশ্লীল মানে কি? অশ্লীল বলতে পাশবিক যত আচরণ আছে, কর্মযজ্ঞ আছে সবই অশ্লীল। মানুষ ও মানবতার পক্ষে যা যায় না তাই অশ্লীল। সমাজের খাটি সুশীল মানুষ (খাটি বল্লাম কারন, বর্তমানকার একেকজন সুশীল আস্তো একেকটা পশু, তাদের কর্মে ও কথায় খোলাখুলি পশু আর পাশবিকতাকে প্রমোট করা হয়) যেসব কার্যকলাপকে ঘৃণার চোখে দেখে তাই অশ্লীল। চিরায়ত উল্লেখযোগ্য কিছু অশ্লীলতা হলো _পরকিয়া, যিনা ব্যবিচার, গালামন্দ করা, অশ্রাব্য কথা বলা, নেশা করা, মদপান,  জুয়া খেলা ও গীবত করা ইত্যাদি।
.
নিষিদ্ধের দ্বিতীয় বিষয়টি হলো মন্দ বা খারাপ কাজ।
২. খারাপ কাজ কি? খারাপ মানে যা ভালো নয়। এটি বলতে সহজ হলেও আদতে খারাপ কাজ বিষয়ে বহুমানুষ বে-খবর। মানুষ সাধারণত নিজের বিচার বুদ্ধি দিয়ে খারাপ ভালো নির্ণয় করতে চায়। মূলত ব্যাপারটি মানুষের বুঝের উপর নির্ভরশীল নয়। তাহলে খারাপ কি? খারাপ হলো কুরআন সুন্নাহ বা ইসলাম যা নিষেধ করে তাই খারাপ। মানুষ তার সীমিত জ্ঞান দিয়ে এর খারাপি অনুভব করতে পারুক বা নাপারুক, এতে কিছু যায় আসে না। খারাপ কাজের ছোট্ট একটা উদাহরণ হলো রক্তসম্পর্কে বিয়ে হারাম নয় এমন দু’জন নারি পুরুষ/যুবক যুবতীর মধ্যে সম্পর্ক গড়া। চাই সেটি বন্ধুত্বের নামে হোক বা প্রতিবেশি বা যে কোন ভাবেই হোক। এই দুই জন, ‘মানুষের বিবেচনায়’ কোন খারাপ কাজে জড়িয়ে পড়ুক বা না পড়ুক। কারন ইসলাম এমন সম্পর্ককে খারাপ বলে ঘোষণা করেছে।
.
নিষিদ্ধ আলোচনার তৃতীয় বিষয়টি হলো জুলুম না করা।
৩. জুলুম কি? জুলুমের সাধারণ অর্থ হলো অন্যায় কাজ ও আচরণ, যার দ্বারা ব্যক্তির, সমাজের বা দেশের শান্তি শৃংখলা বিঘ্নিত হয়। মানুষের জান- মাল ইজ্জত আবরু নিরাপত্তহীনতায় ভোগে। এক কথায় সকল প্রকার অন্যায় অবিচার খারাপ ও নিষিদ্ধ কাজই জুলুমের মধ্যে শামিল।
.
আমাদের আলোচনা হচ্ছিল ‘কুরআন : পরিশুদ্ধ জীবনের পথ দেখায়’ শিরোনামে। উপরোক্ত আলোচনায় ইতিবাচক ও নেতিবাচকের অধিনে বিবৃত ছয়টি বিষয় মানুষের জীবনের বিস্তৃত পরিমন্ড নিয়ে পরিব্যপ্ত। মানুষের জীবনের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনের সকল অংশেই এর উপস্থিতি বিরাজমান। কোন মানুষ যদি ব্যক্তি জীবনে আলোচ্য বিষয়াবলী পরিপূর্ণভাবে মেনে চলে তাহলে সে অনিবার্যভাবেই একজন আদর্শ হয়ে ওঠবে। আবার কোন সমাজও যদি উপরোক্ত বিষয়ালী যথাযথ অনুসরণ করে তাহলে সমাজ হিসেবে সেটিও আদর্শ সমাজ হয়েই আত্মপ্রকাশ করবে।
আল্লাহ সুবহানাহু তা’য়ালা আমাদের সকলকে কুরআনিক আদর্শে উজ্জিবীত হয়ে পরিশুদ্ধ জীবন লাভ করার তাওফিক দান করুন। আমীন।
.
লেখক : ইমাম ও খতীব, বায়তুল আমান জামে মসজিদ পশ্চিম আলাব্দিরটেক ঢাকা ক্যান্ট ঢাকা ১২০৬।