॥ শিব্বির আহমদ আরজু ॥
করোনা ভাইরাস দাপিয়ে বেড়াচ্ছে দেশ থেকে দেশান্তরে। মাঝে-মধ্যে ধরণও পরিবর্তন করছে। লাখে-লাখে মরছে মানুষ। ধ্বংস হচ্ছে পরিবার। ভঙ্গুর হচ্ছে দেশের অর্থনীতি। এর সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দ্রব্যমূল্য। সকল শ্রেণিপেশার মানুষের মাঝে এক অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে।
কে কোন সময় লাশের তালিকায় পড়ে যান কেউ বলতে পারছেন না। হাসপাতালে বেড নেই। করোনায় আক্রান্তদের চিকিৎসা যখন ব্যয় বহুল তখন একরাশ হতাশা ছাড়া আর কিছুই করার নেই নিম্ন আয়ের মানুষের।
অনেক সময় বিপুল পরিমাণ টাকা দিয়েও মিলছে না প্রয়োজনীয় চিকিৎসা। সবদিক মিলিয়ে ধনী-গরীব, আবালবৃদ্ধবণিতা কেউ-ই স্বস্তিতে নেই। ২০২০ এর ৮ মার্চ চীনের উহান শহরে প্রথমে করোনা রোগী সনাক্ত হয়। পরে পর্যায়ক্রমে সারা পৃথিবীতে এর বিস্তৃতি লাভ করে। এর বাইরে নয় মাতৃভূমিও।
ইতিমধ্যে বাংলাদেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৯০১৫ জন মারা গেছেন। নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছেন পরিমাণে বেশি। সরকার যখন জনসাধারণকে চলাচল সীমিত করতে লকডাউন দেন, তখন কিন্তু আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ন্যায় সাংবাদিকরাও এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে ঘুরে বেড়াচ্ছেন সংবাদ সংগ্রহের জন্য।
সারাদিনের জমানো সংবাদ পরদিন প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রকাশ হচ্ছে। অন্যদিকে ইলেক্ট্রনিক এবং অনলাইন পোর্টালগুলো মুহূর্তের সংবাদ মুহূর্তেই প্রকাশ করছে। এসব সংবাদ যখন প্রকাশ হচ্ছে তখন জানমাল রক্ষায় বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন সরকার। সতর্ক হচ্ছেন জনগণ। এর পেছনের কারিগর হচ্ছেন সংবাদকর্মী বা সাংবাদিকগণ।
মনে রাখতে হবে, সাংবাদিকরাও মানুষ। তাদেরর পরিবার-পরিজন আছে। তারাও দিন শেষে সন্তান-সন্ততির কাছে যেতে হয়। আছে পরিবারের প্রয়োজনীয়তা। লকডাউনে যখন যানবাহন বন্ধ, তখন পত্রিকা পরিবেশন করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। তখন এক প্রকার বাধ্য হয়েই অনেক জাতীয়, বিভাগীয় ও স্থানীয় পত্রিকা প্রকাশ করা বন্ধ হয়ে যায়।
বেকার হয়ে পড়েন অনেক সাংবাদিক। পাঠকরাও সংবাদপত্র না পেয়ে অস্তস্তিতে পড়েন যান। তখন একমাত্র ভরসা ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া এবং অনলাইন পোর্টালগুলো। এমনিভাবে হবিগঞ্জ থেকে প্রকাশিত সুশান্ত দাশ গুপ্তের ‘আমার হবিকগঞ্জ’ প্রিন্ট ভার্সন প্রকাশ হয়েছে শতপ্রতিকূলতা অতিক্রম করে। এতে কর্তৃপক্ষ অনেক দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছেন। অন্যান্য প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকরাও বেকার। এর মধ্যে দৈনিক খোয়াই পত্রিকা বন্ধ হয়ে যাওয়াতে যথারীতি আমিও বেকার হয়ে পড়ি।
লকডাউনের কারণে ব্যবসা বন্ধ থাকায় আমার মালিকানাধীন শাহজাহাল লাইব্রেরিও বন্ধ। পত্রিকা বন্ধ হওয়াতে বিজ্ঞাপনও বন্ধ। চোখের সামনে অসহায় মানুষের করুণ দৃশ্য ভাসছে।
অন্যদিকে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানসহ নানান নিউজ ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও প্রকাশ করতে পারছি না। পরে সিদ্ধান্ত নিলাম হবিগঞ্জের তরুণ মেধাবী সাংবাদিক কাজল সরকারের সম্পাদনায় ‘দিনরাত’ মাল্টিমিডিয়া অনলাইন পোর্টালে এসব সংবাদ প্রকাশ করব। কম্পিউটার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে থাকায় সেখান থেকে সংবাদের কাজ শেষে বাড়ি ফিরতে অনেক রাত হয়ে যায়। মাগরিবের পরই রাস্তা-ঘাটে কোন মানুষ নেই।
যেন এক পিনপতন নীরবতা বিরাজ করছে। ঝিঁঝি পোকা ডাকছে। সেখানে রাত ১১টা থেকে ১২ এমনকি ১টায় বাজার থেকে বাড়ি ফেরা অনেক ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাই। পরে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে থাকার জন্য বাড়ি থেকে বিছানা এবং খাট আনলাম।
সংবাদ বেশি থাকায় কোন কোন দিন রাত ১টা পর্যন্ত লিখেছি। সারাদিন মাঠে গিয়ে সংবাদ সংগ্রহ করতাম, পরে গভীর রাত অবধি সেটা প্রকাশ করতাম। এতে করে মাঝে-মধ্যে বিদ্যুৎ চলে গেলে মশার কামড়ে আর ঘুম নেই। সজাগ থেকেই কাটিয়ে দিয়েছি অনেক রাত।
(চলবে)
সম্পাদক ও প্রকাশক : তরঙ্গ টোয়েন্টিফোর ডটকম।