ঢাকা ০৬:৩৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৮ মে ২০২৩, ১৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo শিক্ষা খাতকে সর্বোচ্ছ গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার : এমপি মজিদ খান Logo ভূমি ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ যেন হয়রানির শিকার না হন সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে: এমপি মজিদ খান Logo আরাকান রাজ্যের ইতিহাস Logo বানিয়াচংয়ে ব্যবসায়ী নেতা মতিউর রহমান মতির উপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন Logo বানিয়াচংয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান: ৬ হাজার টাকা জরিমানা Logo মিরপুর ইসলামী একাডেমীর নতুন ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের উদ্বোধন Logo বানিয়াচংয়ের তাহমিদুল শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক নিযুক্ত Logo বানিয়াচংয়ে ফের সংঘর্ষ : ১জন নিহত Logo বানিয়াচংয়ে আইডিয়েল কলেজের নবনির্মিত ভবন উদ্বোধন Logo বানিয়াচংয়ে ভূমি সেবা সপ্তাহ উদ্বোধন

জীবনের শেষ সময়ে চলে গেছি..!

  • তরঙ্গ ২৪ ডেস্ক :
  • আপডেট সময় ০৮:৪৯:৫০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৯ জুলাই ২০২০
  • ২৭ বার পড়া হয়েছে
আজহার উদ্দিন শিমুল : করোনার কারণে চার মাস ধরে বাড়িতে আসছি। সিলেট থেকে ফেরার পর আর যাওয়া হয়নি। এই করোনাকালীন সময়ে ভাবলাম গীতিকার বাউল আবদুর রহমানের সাথে দেখা করবো। এক মাস ধরে প্রস্তুতি নিলাম। সঙ্গী আমার কলেজ শিক্ষক মো. জসিম উদ্দিন। গত শনিবার (২৫ জুলাই) সকালে পৌঁছে গেলাম বাউল আবদুর রহমান ভাইয়ের বাড়িতে। বাউল আবদুর রহমানের বাড়ি আমার বাড়ি থেকে কয়েকমাইল দূরে। আমি হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলায় আর তিনি আজমিরীগঞ্জ উপজেলায়। বসবাস করেন জলসুখা গ্রামে। আগ থেকেই কথা হওয়ায় তিনি গানের আসরের সকল যন্ত্রপাতি ঠিকটাক করে রেখেছেন। যাওয়া মাত্রই বাউলের বউ আমাদের চা দিলেন সাথে পান সুপারি। জলসুখা প্রত্যন্ত অঞ্চল হলেও বিদ্যুৎ আছে। ফ্যানের নিচে বসে কিছুক্ষণ রেস্ট নিলাম। আবদুর রহমান ভাই আমাদের উনার গানের ঘরে নিয়ে গেলেন। বাউল আমাদের পরম যত্নে অনেকগুলো গান শুনালেন। বাউল সম্রাট শাহ্ আবদুল করিমের তিনটা ও নিজের একটা গান তিনি পরিবেশন করলেন। গানের সাথে সাথে গ্রামের মানুষও জড়ো হলো। দরজার পাশে দাঁড়িয়ে বৃদ্ধ, যুবক, শিশু ও নারীরা গান শুনেছেন। কন্ঠে কি জাদু, আহা। গান শেষ করে বাউলকে জিজ্ঞেস করলাম কেমন আছেন? প্রশ্ন শেষ করতেই একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললেন, ‘জীবনের শেষ সময়ে চলে গেছি! বয়স এখন ৬৫। গুরুজি শাহ্ আবদুল করিমের সাথেই জীবনের অর্ধেক সময় কাটিয়ে আসছি। হাতে কলমে তিন যুগ। করোনার এই সময়ে ভালো নেই আমাদের বাউল সম্প্রদায়। আমাদের গান নেই, বাজনা নেই। গানের মধ্যেই তো আমাদের জীবন।’ পাঁচ মাস ধরে ঘরবন্দি বাউল আবদুর রহমান। সারা বছর এখানে সেখানে গান গেয়েই উপার্জন করেন টাকা। কিন্তু করোনায় সব তছনছ করে দিচ্ছে। আক্ষেপ নিয়ে বললেন, ‘যারা আগে নিয়মিত খোঁজ নিতো, সুখে দুঃখে পাশে থাকতো তারাও (হাতে গুনা কয়েকজন ছাড়া) এখন যোগাযোগ করে না। জমানো কিছু টাকা ছিলো তা দিয়ে সংসারের খরচ চালাচ্ছি। পৃথিবীর এই কঠিন সময়ে সবচেয়ে অবহলিত বাউলরাই। মানুষ বাউলের গান শুনে, শুনার পরেই আর দেখা পাওয়া যায় না বলে জানান তিনি। যারা বাউল গান করেন তারা সবাই আটকা পড়েছে। অসহায় বাউলদের সহযোগিতা করার কথা বললেন তিনি। তিনি বলেন, ‘বাউলরাই এদেশের গানের ঐতিহ্য টিকিয়ে রেখেছে। বাউল যদি বেঁচে না থাকে তাহলে গান গাইবে কারা, সুর তুলবে কারা, তবলা বাজাবে কারা, বাঁশিতে মোহনীয় ভাবে আওয়াজ দিবে কারা? আমরাই তো মানুষের মাঝে বাংলার ঐতিহ্য তুলে ধরি, আমরাই এখন হারিয়ে যাচ্ছি। মুক্তিযুদ্ধের সময় বাউলরা গান রচনা করেছে, যুবকদের উৎসাহ দিয়েছে। আমরা আমাদের গানের মাধ্যমেই মানুষের মাঝে বাঁচতে চেয়েছি। সরকার থেকেও তেমন সহযোগিতা পাননি এই করোনাকালীন সময়ে। তিনি বলেন, ‘আমরা বেঁচে আছি না মারা গেছি কেউ খোঁজ নেওয়ার প্রয়োজন বোধই করে না। এই মহামারী দীর্ঘস্থায়ী হলে জীবন অনেকটা কঠিন হয়ে পড়বে। বর্ষা মৌসুমে গানের আসর জমতো অন্যান্য সময়ে। কিন্তু এই শেষ বয়সে এসে যে ঘরে বসে সময় পার করতে হবে তা কখনো ভাবিনি! কথার শেষ পর্যায়ে জানতে চাইলাম এখনো তো রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি মেলেনি ? তিনি বললেন, মিলবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি! মরে যাওয়ার পরে মিলবে। মরে গেলে স্বীকৃতি পেয়ে লাভ কি? গান তো আমার সন্তানের মতোন। এই জীবনে বেঁচে থাকতে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাবো কিনা বিধাতাই জানেন? তবে আফসোস নেই! গানের মাধ্যমেই মানুষের মাঝে বাঁচতে চাই। এক জীবনে আর কোনো চাহিদা নেই। ফেরার সময় তিনি শুনালেন করিমের আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম গানটি। গানের কথাগুলো বাড়ি ফেরার সময় মনের মধ্যে বাজছিলো। বাউলের মায়া ভুলবো কেমনে!
লেখক : আজহার উদ্দিন শিমুল , ফ্রিল্যান্স জার্নালিস্ট
ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

শিক্ষা খাতকে সর্বোচ্ছ গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার : এমপি মজিদ খান

জীবনের শেষ সময়ে চলে গেছি..!

আপডেট সময় ০৮:৪৯:৫০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৯ জুলাই ২০২০
আজহার উদ্দিন শিমুল : করোনার কারণে চার মাস ধরে বাড়িতে আসছি। সিলেট থেকে ফেরার পর আর যাওয়া হয়নি। এই করোনাকালীন সময়ে ভাবলাম গীতিকার বাউল আবদুর রহমানের সাথে দেখা করবো। এক মাস ধরে প্রস্তুতি নিলাম। সঙ্গী আমার কলেজ শিক্ষক মো. জসিম উদ্দিন। গত শনিবার (২৫ জুলাই) সকালে পৌঁছে গেলাম বাউল আবদুর রহমান ভাইয়ের বাড়িতে। বাউল আবদুর রহমানের বাড়ি আমার বাড়ি থেকে কয়েকমাইল দূরে। আমি হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলায় আর তিনি আজমিরীগঞ্জ উপজেলায়। বসবাস করেন জলসুখা গ্রামে। আগ থেকেই কথা হওয়ায় তিনি গানের আসরের সকল যন্ত্রপাতি ঠিকটাক করে রেখেছেন। যাওয়া মাত্রই বাউলের বউ আমাদের চা দিলেন সাথে পান সুপারি। জলসুখা প্রত্যন্ত অঞ্চল হলেও বিদ্যুৎ আছে। ফ্যানের নিচে বসে কিছুক্ষণ রেস্ট নিলাম। আবদুর রহমান ভাই আমাদের উনার গানের ঘরে নিয়ে গেলেন। বাউল আমাদের পরম যত্নে অনেকগুলো গান শুনালেন। বাউল সম্রাট শাহ্ আবদুল করিমের তিনটা ও নিজের একটা গান তিনি পরিবেশন করলেন। গানের সাথে সাথে গ্রামের মানুষও জড়ো হলো। দরজার পাশে দাঁড়িয়ে বৃদ্ধ, যুবক, শিশু ও নারীরা গান শুনেছেন। কন্ঠে কি জাদু, আহা। গান শেষ করে বাউলকে জিজ্ঞেস করলাম কেমন আছেন? প্রশ্ন শেষ করতেই একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললেন, ‘জীবনের শেষ সময়ে চলে গেছি! বয়স এখন ৬৫। গুরুজি শাহ্ আবদুল করিমের সাথেই জীবনের অর্ধেক সময় কাটিয়ে আসছি। হাতে কলমে তিন যুগ। করোনার এই সময়ে ভালো নেই আমাদের বাউল সম্প্রদায়। আমাদের গান নেই, বাজনা নেই। গানের মধ্যেই তো আমাদের জীবন।’ পাঁচ মাস ধরে ঘরবন্দি বাউল আবদুর রহমান। সারা বছর এখানে সেখানে গান গেয়েই উপার্জন করেন টাকা। কিন্তু করোনায় সব তছনছ করে দিচ্ছে। আক্ষেপ নিয়ে বললেন, ‘যারা আগে নিয়মিত খোঁজ নিতো, সুখে দুঃখে পাশে থাকতো তারাও (হাতে গুনা কয়েকজন ছাড়া) এখন যোগাযোগ করে না। জমানো কিছু টাকা ছিলো তা দিয়ে সংসারের খরচ চালাচ্ছি। পৃথিবীর এই কঠিন সময়ে সবচেয়ে অবহলিত বাউলরাই। মানুষ বাউলের গান শুনে, শুনার পরেই আর দেখা পাওয়া যায় না বলে জানান তিনি। যারা বাউল গান করেন তারা সবাই আটকা পড়েছে। অসহায় বাউলদের সহযোগিতা করার কথা বললেন তিনি। তিনি বলেন, ‘বাউলরাই এদেশের গানের ঐতিহ্য টিকিয়ে রেখেছে। বাউল যদি বেঁচে না থাকে তাহলে গান গাইবে কারা, সুর তুলবে কারা, তবলা বাজাবে কারা, বাঁশিতে মোহনীয় ভাবে আওয়াজ দিবে কারা? আমরাই তো মানুষের মাঝে বাংলার ঐতিহ্য তুলে ধরি, আমরাই এখন হারিয়ে যাচ্ছি। মুক্তিযুদ্ধের সময় বাউলরা গান রচনা করেছে, যুবকদের উৎসাহ দিয়েছে। আমরা আমাদের গানের মাধ্যমেই মানুষের মাঝে বাঁচতে চেয়েছি। সরকার থেকেও তেমন সহযোগিতা পাননি এই করোনাকালীন সময়ে। তিনি বলেন, ‘আমরা বেঁচে আছি না মারা গেছি কেউ খোঁজ নেওয়ার প্রয়োজন বোধই করে না। এই মহামারী দীর্ঘস্থায়ী হলে জীবন অনেকটা কঠিন হয়ে পড়বে। বর্ষা মৌসুমে গানের আসর জমতো অন্যান্য সময়ে। কিন্তু এই শেষ বয়সে এসে যে ঘরে বসে সময় পার করতে হবে তা কখনো ভাবিনি! কথার শেষ পর্যায়ে জানতে চাইলাম এখনো তো রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি মেলেনি ? তিনি বললেন, মিলবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি! মরে যাওয়ার পরে মিলবে। মরে গেলে স্বীকৃতি পেয়ে লাভ কি? গান তো আমার সন্তানের মতোন। এই জীবনে বেঁচে থাকতে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাবো কিনা বিধাতাই জানেন? তবে আফসোস নেই! গানের মাধ্যমেই মানুষের মাঝে বাঁচতে চাই। এক জীবনে আর কোনো চাহিদা নেই। ফেরার সময় তিনি শুনালেন করিমের আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম গানটি। গানের কথাগুলো বাড়ি ফেরার সময় মনের মধ্যে বাজছিলো। বাউলের মায়া ভুলবো কেমনে!
লেখক : আজহার উদ্দিন শিমুল , ফ্রিল্যান্স জার্নালিস্ট