তরঙ্গ ডেস্ক : সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের অভ্যুদয় হলেও তখনও পাকিস্তানে বন্দি ছিলেন স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান; উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় ছিলেন সদ্য স্বাধীন দেশের মানুষ।
চাপের মুখে পাকিস্তান সরকার মুক্তি দিলে যুদ্ধে বিজয়ের ২৪ দিন পর ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি নিজের স্বপ্নের স্বাধীন দেশে পা রাখেন জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান।
পাকিস্তানের ২৪ বছরের দুঃশাসনের নাগপাশ ছিঁড়ে বাঙালিকে মুক্তির বন্দরে পৌঁছে দেওয়া সেই মহান নেতার বাংলার মাটিতে পা রাখার মধ্য দিয়েই সেদিন বাংলাদেশের স্বাধীনতা পূর্ণতা পেয়েছিল।
তখন থেকে দিনটি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। এবার তার ৪৯তম বার্ষিকী উদযাপিত হবে এক ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে।
গতবছর জাতির জনকের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে নেওয়া মুজিববর্ষের ক্ষণগণনা শুরু হয়েছিল এই স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসেই। ২০২০ সালের ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে সূচনা হয়েছিল মুজিববর্ষের অনুষ্ঠানমালার, যা চলবে এ বছর ১৬ ডিসেম্বর, বিজয় দিবস পর্যন্ত। এরই মাঝে ২৬ মার্চ বাংলাদেশ উদযাপন করবে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী।

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধুকে তার ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর সড়কের বাড়ি থেকে পাকিস্তানি সেনারা আটক করে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যায়। ওই রাতেই বাংলাদেশের নিরস্ত্র মানুষের উপর শুরু হয় বর্বর হামলা।
পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যান বঙ্গবন্ধু। তার ডাকে বাঙালি ঝাঁপিয়ে পড়ে মুক্তি সংগ্রামে।
নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে বিশ্ব মানচিত্রে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে।
স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের এক বছর পূর্তিতে এক সমাবেশে আবেগঘন মুহুর্তে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১০ জানুয়ারি, ১৯৭৩। ছবি: নাসির আলী মামুন/ফটোজিয়াম
স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের এক বছর পূর্তিতে এক সমাবেশে আবেগঘন মুহুর্তে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১০ জানুয়ারি, ১৯৭৩। ছবি: নাসির আলী মামুন/ফটোজিয়াম
মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পর বিশ্ব জনমতের চাপে ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি ভোরে বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় পাকিস্তান সরকার। মুক্তির পর তিনি লন্ডন যান। সেখান থেকে ব্রিটিশ বিমান বাহিনীর একটি বিমানে করে ১০ জানুয়ারি দিল্লি পৌঁছান।
সেখানে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভি ভি গিরি, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীসহ ভারতের মন্ত্রিসভার সদস্যরা সংবর্ধনা দেন বঙ্গবন্ধুকে। পরে সেদিন দুপুরে ঢাকা এসে পৌঁছান জাতির জনক।
চূড়ান্ত বিজয়ের পর বঙ্গবন্ধুকে প্রাণঢালা সংবর্ধনা জানানোর জন্য প্রাণবন্ত অপেক্ষায় ছিল জাতি। আনন্দে আত্মহারা লাখ লাখ মানুষ ঢাকা বিমানবন্দর থেকে রেসকোর্স ময়দান পর্যন্ত তাকে স্বতঃস্ফূর্ত সংবর্ধনা জানায়।
প্রিয় নেতাকে ফিরে পেয়ে বাঙালি সেদিন জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু ধ্বনিতে প্রকম্পিত করে তোলে বাংলার আকাশ বাতাস। তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে খোলা ট্রাকে করে বঙ্গবন্ধু পৌঁছান তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ।
সেখানে দাঁড়িয়ে সদ্য স্বাধীন জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন বঙ্গবন্ধু। প্রায় কুড়ি মিনিটের সেই আবেগঘন বক্তৃতায় তিনি বলেন, পশ্চিম পাকিস্তানে বন্দিদশায় তিনি ফাঁসিকাষ্ঠে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলেন। কিন্তু তিনি জানতেন, বাঙালিকে কেউ ‘দাবায়ে রাখতে’ পারবে না।
“যে মাটিকে আমি এত ভালবাসি, যে মানুষকে আমি এত ভালবাসি, যে জাতিকে আমি এত ভালবাসি, আমি জানতাম না সে বাংলায় আমি যেতে পারবো কি-না। আজ আমি বাংলায় ফিরে এসেছি বাংলার ভাইয়েদের কাছে, মায়েদের কাছে, বোনদের কাছে। বাংলা আমার স্বাধীন, বাংলাদেশ আজ স্বাধীন।”
সূত্র : বিডিনিউজ২৪.কম।