মাওলানা মুশাহিদ আহমদ :
কোরবানি আরবি শব্দ “কুরবুন” থেকে এসেছে। এর অর্থ নৈকট্য লাভ করা। মুসলমানরা কোরবানির মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য লাভ করে থাকেন। কোরবানি করা মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ একটি সুবর্ণ সুযোগ। পবিত্র কোরআন-হাদিসের আলোকে কোরবানি করা শরীয়তসম্মত সামর্থ্যবানদের উপর ওয়াজিব। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘অতএব আপনার পালনকর্তার উদ্দেশ্যে নামাজ পড়ুন এবং কোরবানি করুন।’- সুরা কাউসার, আয়াত- ২। এ আয়াতে মহান আল্লাহ কোরবানি করার নির্দেশ দিচ্ছেন। নির্দেশসূচক বাক্য সাধারণত ওয়াজিব বোঝানোর জন্য ব্যবহার হয়। হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যার কোরবানির সামর্থ্য আছে তবু ও সে কোরবানি করল না, সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে।– মুসনাদে আহমদ ২/৩২১। বস্তুত রাসূলের এমন কঠোর ধমক কোরবানি ওয়াজিব হওয়ার প্রতিই ইঙ্গিত বহন করে। কোরবানি হযরত আদম (আঃ) থেকে সকল যুগেই ছিল। তবে তা আদায়ের পন্থা এক ছিল না। মুসলিম জাতির কোরবানি হলো হযরত ইবরাহিম (আঃ)-এর সুন্নাত (আদর্শ)। কোরবানির মাধ্যমে মানুষ মহান আল্লাহ তায়ালার জন্য তার সবচেয়ে প্রিয় জিনিস ত্যাগ করতে রাজি আছে কি না সেটা পরীক্ষা করা হয়। হযরত ইবরাহিম (আঃ)-এর পরীক্ষা ও ছিল তাই। তিঁনি আল্লাহর আদেশে স্বীয় প্রাণাধিক পুত্র হযরত ইসমাঈল (আঃ) কে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কোরবানি করতে উদ্যত হন। তাঁর সেই ইচ্ছা ও ত্যাগের কারণে বিশ্বের মুসলমানরা আল্লাহর সান্নিধ্য ও সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে ঈদুল আজহার দিন কোরবানি করে থাকেন।
কোরবানি কার উপর ওয়াজিবঃ প্রাপ্ত বয়স্ক, সুস্থ মস্তিষ্ক সম্পন্ন প্রত্যেক মুসলিম নর-নারী, যে ১০ যিলহজ্জ ফজর থেকে ১২ যিলহজ্জ সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রয়োজন অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে তার উপর কোরবানি ওয়াজিব। আর নেসাব হলো স্বর্ণের ক্ষেত্রে সাড়ে সাত(৭.৫) ভরি, রুপার ক্ষেত্রে সাড়ে বায়ান্ন (৫২.৫) ভরি। টাকা-পঁয়সা ও অন্যান্য বস্তুর ক্ষেত্রে নেসাব হলো সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার মূল্যের সমপরিমাণ হওয়া।
কোরবানির ফজিলতঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, বনি আদমের কোরবানির দিনের আমলসমূহের মধ্য থেকে পশু কোরবানি করার চেয়ে কোনো আমল আল্লাহ তায়ালার নিকট অধিক প্রিয় নয়। কেয়ামতের দিন এই কোরবানিকে তার শিং,পশম ও ক্ষুরসহ উপস্থিত করা হবে। আর কোরবানির রক্ত জমিনে পড়ার আগেই আল্লাহ তায়ালার নিকট কবুল হয়ে যায়। সুতরাং তোমরা নিষ্ঠার সঙ্গে আগ্রহ চিত্তে কোরবানি কর। – (তিরমিজি-১৪৯৩)
পরিশেষে বলতে চাই, কোরবানির পশুর গলায় ছুরি দেওয়ার আগে নিজেদের মধ্যে লুক্কায়িত পশুর গলায় ছুরি দিতে হবে। নিজেদের ভেতরের আমিত্ব ও অহংকার, স্বার্থপরতা, হিংসা এবং সকল প্রকার অনাচারের উপসর্গগুলো উপড়ে ফেলতে হবে।
লেখক : বিশিষ্ট আলেম ও প্রাবন্ধিক।