মাওঃকামাল উদ্দীন খান আল-হুসাইনী : শুটকির দোকানে বিড়ালকে পাহারাদার দিয়ে মালিক ঘুমালে দোকানের যে অবস্থা হবে, কোন প্রতিষ্ঠানে চোর-স্বভাবের কোন লোককে নিয়োগ দিয়ে পরিচালকরা নাকের ডগায় তেল দিয়ে ঘুমালে সে প্রতিষ্ঠানের সেই দশা হবে। তখন সৎ-স্বভাবের কোন ব্যক্তি এ প্রতিষ্ঠানে চাকুরীরত থাকলে ঐ চোর-স্বভাবের লোকটির সাথে তাঁর ঝামেলা বাঁধবেই। সে স্বীয় সততার কারণে চোর-স্বভাবের লোকটির উপর চড়াও হবে। রুখে দাঁড়াবে ঐ চোর-স্বভাবের অসৎ লোকটিকে। বন্ধ করে দেবে ওর সব অসৎ কর্মকাণ্ড। ভালো করল, নাকি খারাপ করল ? কিন্তু, পরিনামে সমাজের চোখে ঐ সৎ-স্বভাবের লোকটিই খারাপ প্রতিপন্ন হবে। হায়রে আমাদের বর্তমান সমাজ! আহ ! আফসোস! শত ধিক এই বর্বর সমাজকে! কেউ ভেবে দেখে না মূলে অপরাধী কে ? কার কারণে এ অপরাধ সংঘটিত হল ? বিড়াল শুটকি খেয়ে যতটা অপরাধী ? মালিক ঘুমিয়ে কতটা অপরাধী ? নিয়োগ প্রাপ্ত চোর-স্বভাবের অসৎ লোকটি টাকা চুরি,সময় চুরি, কাজ চুরি, দায়িত্ব চুরি ও ফাঁকিবাজি ইত্যাদি সর্ব প্রকার অন্যায়-অবিচার, জুলুম-নির্যাতন, আত্মসাৎ ও অসৎ কর্মকাণ্ড করে যতটা অপরাধী ? নিয়োগ দাতা ঐ চোর-স্বভাবের অসৎ লোকটিকে নিয়োগ দিয়ে কতটা অপরাধী ? হে সমাজ! ভেবেছো কোন দিন ঐ চোর-স্বভাবের অসৎ লোকটি নিয়োগ না পেলেও কি ওসব চুরি-ডাকাতি, ফাঁকিবাজি, অন্যায়-অবিচার, জুলুম-নির্যাতন ও অসৎ কর্মকাণ্ড করতে পারতো ? যারা কোন প্রতিষ্ঠান পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে, তারা যদি নিজ নিজ পরিচালনা ও দেখা শুনার দায়িত্ব-কর্তব্য যথাযথভাবে পালন করতো, তবুও কি ঐসব অপরাধ সংঘটিত করতে পারতো ? দর্জা খোলে ঘুমাবেন ? আর আশা করবেন চুরি হবে না ? এবার বিবেক-বুদ্ধি থাকলে বলুন তো ঐসব অপরাধ সংঘটিত হওয়ার-করার মূলে কারা ? দর্জা খোলে ঘুমানোটা ঘর মালিকের অপরাধ নয় ? তাহলে কর্ণধাররা অধীনস্থদের কান ছেড়ে নিজেদের নাকের ডগায় তেল দিয়ে ঘুমালে অপরাধ হয় ? কিরে সমাজ ? বুঝিসনে ? তোর বিবেক এতটাই নষ্ট হয়ে গেল ? বুঝিস ? তবে বল! কোথায় কার কি অপরাধ ? এবং কেন ওসব অপরাধ ? আর ওসব অপরাধের পরিনাম ? কেনইবা প্রতিবাদীরা সমাজের চোখে অপরাধী সাব্যস্থ হয় ? আর কেনইবা প্রতিষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয় ? এদের কাকে কি করা উচিত ? আমি বলব আসলে বর্তমান সমাজের ৯০% লোক অপরাধ প্রবন,অসাধু ও অসৎ স্বভাবের। আর১০% লোক সাধু, সৎ স্বভাবের ও ভালো মানুষ। তাই যখনই ভালো ও সাধু মানুষরা খারাপ ও অসাধু মানুষদের অন্যায়,অপরাধ ও দুর্নীতির প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ করে, তখনই খারাপ ও অসাধু মানুষরা ক্ষীপ্ত হয়ে উঠে সাধু ও ভাল মানুষদের বিরুদ্ধে। আর সমাজ ১০ জনে নয়, ৯০ জনে হয়। তাই তখন ১০ জন সাধু মানুষই সমাজের চোখে অসাধু ও খারাপ সাব্যস্থ হয় । আর অসাধু ও খারাপ ৯০ জন সাব্যস্থ হয় সাধু ও ভালো মানুষ। যেহেতু সমাজই ওদের। এটাই বর্তমান সমাজের বাস্তব চিত্র। ঐসব অপরাধ সংঘটিত হওয়ার-করার পেছনে বহু কারণের অন্যতম ক’টি হল: দুনিয়া, পদ, নেতৃত্ব ও নারীর লোভ এবং অলসতা, কাপুরুষতা, অযোগ্যতা, অসচেতনতা, অমনোযোগিতা ও সাহসহীনতাও অপরাধ সংঘটিত হওয়ার-করার অন্যতম কারণ । ভুল বললাম ? তবে এখন থেকে লক্ষ্য করে দেখবেন! কোন্ অপরাধটি কোন্ কোন্ কারণে সংঘটিত হয়। ওসব অপরাধ সংঘটিত হওয়ার কারণে সমাজে অশান্তি, অরাজকতা, বিশৃঙ্খলা ও হাহাকার বিরাজ করে থাকে। এটা অপরাধ ও পাপের ইহলৌকিক পরিনাম ও নগদ শাস্তি। আর পারলৌকিক জীবনে তো অপরাধ ও পাপের কঠিন শাস্তি অবধারিত রয়েছে জাহান্নাম। যদি এসব অশান্তি ও শাস্তি থেকে পরিত্রাণ পেয়ে ইহ-পরকালে সুখ-শান্তি পেতে হয়; তবে আমাদেরকে হতে হবে সৎ ও ভালো এবং অপরাধ ও পাপ মুক্ত । রাজি আছি তো ? যে ভালো হতে চায়, আল্লাহ্ তাকে ভালো হওয়ার তাওফিক দান করেন। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, অপরাধীরা ভালো ও সংশোধন হওয়ার ইচ্ছা পোষণ তো দূরে থাক; উল্টো আরো সৎ, ভালো, সাধু, অন্যায়ের মোকাবেলাকারি ও প্রতিবাদী মানুষদেরকে ডর-ভয় দেখায় প্রকাশ্যে ও ইশারা ইঙ্গিতে, তাঁদের মান-সম্মান নষ্টের এবং তাঁদেরকে চাকুরীচ্যুৎ করার। উপদেশ দানের নামে অন্যায়াদেশ করে তাঁদেরকে চুপ করে দিয়ে সমাজে অন্যায়-অবিচার অপরাধ ও পাপাচার চালু রাখতে চায়। ধরে রাখতে চায় নিজেদের মসনদ,পদ ও গদি। কিন্তু, ওরা জানে না যে, সৎ,সাধু ,ভালো ও প্রতিবাদী মানুষেরা ওসব ভয়-ভীতির মোটেও তোয়াক্কা বা পরওয়াই করে না। কেননা, তাঁরা জানে ইজ্জত-সম্মান, চাকুরীসহ সব কিছুৃর দাতা একমাত্র আল্লাহ্ই। আরো জানে যে, সৎ লোকদের সাথেই থাকে আল্লাহর সাহায্য। ফলে বিজয় তাঁদেরই হয়। পক্ষান্তরে অপরাধী,পাপাচারি, পদধারি অসৎ লোকদেরকে আল্লাহ্ ঢিল দিলেও একদিন কিন্তু এমন শক্ত ধরা ধরেন যে, কোথায় তাদের পদ-পদবি আর ক্ষমতা আর কোথায় তারা ? তাদেরকে একেবারেই নিশ্চিহ্ন ও অস্তিত্বহারা করে চরম লাঞ্ছিত ও অপমানিত করে ছাড়েন বিশ্বের দুয়ারে। তাকিয়ে দেখুন না ? একটু পিছন ফিরে ? ইতিহাস কি বলে ?
লেখক : বিশিষ্ট আলেম ও প্রাবন্ধিক।