মহান আল্লাহর অশেষ কৃপায় করোনাজনিত দীর্ঘ ৪৫ দিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার পর আজ বিকেলে বাসায় ফিরলাম।
২৩ মে, যখন আমাকে এম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিলো, তখনও আমি নিশ্চিত ছিলাম না, আমার চিরচেনা বাসার কক্ষে আবার কখনও ফেরা হবে কি না। করোনা এবং অন্যান্য শারীরীক জটিলতাসহ আই সিই উ তে কাটানো ২২ দিন এখনোও আমার কাছে দুই-তিন দিনের বেশি মনে হয় না। পরবর্তিতে কেবিনের ২৩ দিনে একটু একটু করে অনুভূতিগুলো জেগে উঠেছে। আমার এই দুঃসময়ে যারা যারা আমার এবং আমার পরিবারের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন, আমার চিরচেনা কক্ষে শায়িত হয়ে তাদেরকে গভীর কৃতজ্ঞতায় স্মরণ করছি।
মাননীয় পরিবেশ মন্ত্রী মহোদয় জনাব মোঃ শাহাব উদ্দিন, রাষ্ট্রীয় ব্যস্ততার মাঝে থেকেও নিয়মিত খোঁজ নিয়েছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর SDG বিষয়ক সাবেক মুখ্য সমন্বয়ক জনাব আবুল কালাম আজাদ স্যার এবং মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর সাবেক সচিব জনাব
Sajjadul Hassan
স্যার প্রতিনিয়ত সাহস যুগিয়েছেন। আমার ব্যাচমেট শিল্প সচিব জনাব কে এম আলী আজমের কারণে সব সময় মনে হয়েছে গোটা ৮৬ ব্যাচ আমার সাথে আছে। জনপ্রশাসন সচিব, বন্ধুবর
Shaikh Yusuf Harun
আমাকে নিয়ে ইত্তেফাকে স্মৃতিচারণমূলক নিবন্ধ লিখেছেন – যা ছিলো আমার বেঁচে থাকার প্রেরণা। নব যোগদানকৃত স্বাস্থ্য সচিব, জনাব
Md Abdul Mannan
তাঁর পারিবারিক বিপর্যয় সত্বেও প্রতিনিয়ত আমার খোঁজ নিয়েছে। সহকর্মী, বর্তমান পাট সচিব জনাব মোহাম্মদ লোকমান হোসেন মিয়া আন্তরিকতা ভোলবার নয়৷ পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবির্তন মন্ত্রনালয়ের মাননীয় সচিব মহোদয়,
Ziaul Hasan
স্যারের আন্তরিকতা প্রতি মুহুর্তে শক্তি যুগিয়েছে।
আমার বন্ধু ও অগ্রজ সহকর্মী
Dr-Billal Hossain
প্রতিদিনই আমার ছেলে সীমান্তের কাছ থেকে আমার খবর নিতো। ড
Kazi Anowarul Hoque
তাঁর সর্বোচ্চ আন্তরিকতা দিয়ে আমাকে সাপোর্ট দিয়ে গেছে।Dr.
Nurul Quadir
অবস্থান থেকে, আমি সর্বদা অনুপ্রেরণা পেয়ে এসেছি। ঢাকার জেলা প্রশাসক, বর্তমানে যুগ্মসচিব
Ferdous Khan
সহযোগিতা চির স্মরনীয় হয়ে থাকবে।
দেশের এই ক্রান্তিকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন মহোদয়ের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় দুঃসময়ে উপকৃত হয়েছি। আমার বাল্যবন্ধু ডাক্তার মুজিবুর রহমান আমাকে প্রতি মুহুর্তে নির্ভার বোধ করিয়েছে। একই সাথে ডাক্তার বন্ধু
Alamgir Kabir
ছিলো আরেক আস্থার জায়গা। আমার শৈশবের অগ্রজপ্রতিম, বর্তমানে বেক্সিমকো গ্রুপের কর্ণধার
Rafiqul Islam
রফিকুল ইসলাম আমার এই অনিশ্চিত যাত্রায় সর্বদা আমাকে এবং আমার পরিবারকে সুপরামর্শ ও সহযোগিতা দিয়ে এসেছেন। এছাড়া, আমার ভাতৃসম DIG আব্দুল্লাহেল বাকী, অনুজপ্রতিম AIG
Mahfuz Mamun
, SP Abdul Mannan স্নেহভাজন
Selim Reza
, Fahad Momtazi সার্বক্ষণিক পাশে ছিলো।
জীবনের কিছু কিছু পর্যায়ে এসে একজন মানুষকে সম্পূর্ণ নির্ভর করতে হয় অন্যের উপর। অনেকটা চোখ বন্ধ করে অন্যের কাঁধে হাত রেখে অচেনা রাস্তায় চলার মত। পুরো ৪৫ দিন, যে মানুষটা এক দিনের জন্যও আমাকে হাসপাতালে রেখে বাসায় ঘুমাতে যায়নি তিনি আমার স্ত্রী
Shaheena Hassan
। সামান্য একটু পিপাসাতেও মুখ ফুটে পানি চাইবার মতো শক্তি যখন থাকে না, তখন চোখের ভাষা বুঝে নিয়ে সেবা দিয়ে একটু একটু করে আমাকে ফিরিয়ে এনেছে। আমাকে সেবার করার জন্য আমার সংস্পর্শে এসে আমার ছোট ছেলে
Mashaekh Hassan
সমুদ্রও এই করোনা পরীক্ষার মধ্য দিয়ে গেছে। আমাদের সুস্থতার জন্য আমার বড় ছেলে
Mashahed Hassan Simanta
কখনও আমাকে নিয়ে আই সি ইউ-তে, কখনও আমার ছোট ছেলেকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেলের ওয়ার্ডে থেকেছে।
টানা ৪৫ দিনই আল্লাহর ইচ্ছায় আমার রিজিকের উসিলা ছিলেন মন্ত্রনালয়ে আমার সহকর্মী জনাম ফয়জুর রহমান। প্রতিদিনের অসংখ্য টেস্ট, ঔষধ থেকে শুরু করে আমাকে মুখে তুলে খাইয়ে দেয়ার কাজে সহযোগিতা করেছেন আমার অফিস স্টাফ রেজা সাহেব। ড্রাইভার সেলিম এবং আশরাফের সহযোগিতাও ভুলবার নয়।
আমার গ্রাম থেকে ছুটে এসেছেন
Imtiaz Uddin
কাকা। আই সি ইউ তে থাকাকালীন সবচেয়ে নাজুক সময়ে আমার সেবা করতে গিয়ে নিজেও অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। আমার সুস্থতার জন্য ভগ্নিসম
Eti Ankur
আপার আন্তরিকতা আমাকে সারা জীবন ঋণী রাখবে।
অগ্রজপ্রতিম সোনা ভাই(Sarwar-E-
Sarwar E Kainat
) অামার হাসপাতালে গমনের দিন থেকে প্রতিদিন নামাজান্তে দোয়া করেছেন।
আমার অসুস্থ মা,উদ্বেগাকুল ভাই-বোন( বকুল, বিউটি, ডেইজি, মুক্তি, রুবেল,ঝুমুর), আত্মীয় স্বজন, সহকর্মী, বন্ধু এবং দেশ-বিদেশের শুভানুধ্যায়ী, সকলেই প্রতিনিয়ত শুভকামনা জানিয়ে এসেছেন। আপনাদের এই শুভকামনা আর অবদানের কোনও প্রতিদান হয়তো আমি সরাসরি দিতে পারবো না। তবে আমি নিশ্চিত, আল্লাহ অবশ্যই এর প্রতিদান দেবেন।আমি গভীরভাবে কৃতজ্ঞ সকলের প্রতি। আমার এই নতুন জীবন, আপনাদের নিরন্তর দোয়ার ফসল। এই নতুন জীবনে চেষ্টা করবো, নতুন করে দেশের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করতে।
(শ্রুতি লিখনঃ মাশাহেদ হাসান সীমান্ত)
লেখক : মাহমুদ হাসান, হবিগঞ্জের সাবেক জেলা প্রশাসক ও অতিরিক্ত সচিব, বাংলাদেশ সচিবালয়, ঢাকা।