ঢাকা ০৪:২০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৯ জুন ২০২৩, ২৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo নবীগঞ্জে ইফা কর্তৃক জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস প্রতিরোধে করণীয় শীর্ষক আলোচনা সভা Logo সু-শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হলে জনসাধারণকে তথ্য জানাতে হবে : ড. আব্দুল হাকিম Logo বানিয়াচং মডেল প্রেসক্লাবের দ্বি-বার্ষিক কাউন্সিল সম্পন্ন : সভাপতি লিটন, সম্পাদক আব্দাল মিয়া Logo নবীগঞ্জে মোটরসাইকেল চাপায় স্কুল ছাত্র নিহত : মহাসড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ Logo আজ হবিগঞ্জ আসছেন কবির বিন আনোয়ার : জেলা আ’লীগ অফিসে উদ্বোধন করবেন স্মার্ট কর্নার Logo উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে বঙ্গবন্ধু কন্যাকে আবারও নির্বাচিত করুন : এমপি মজিদ খান Logo ইকরাম বাজারে অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে যাওয়া ঘর পরিদর্শন করেছেন এমপি মজিদ খান Logo উন্নত স্বাস্থ্য সেবার ব্রত নিয়ে বানিয়াচং গ্যানিংগঞ্জ বাজারে সততা ডায়াগস্টিক সেন্টার উদ্বোধন Logo বানিয়াচংয়ে গ্রাম্য দাঙ্গা রোধে দেশীয় অস্ত্রবাজদের ভ্রাম্যমাণ আদালতের আওতায় আনা হবে Logo বানিয়াচংয়ে ইকরাম বাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৯টি দোকান পুড়ে ছাঁই : ব্যাপক ক্ষতি

কিছু স্মৃতি, কিছু বেদনা!

  • তরঙ্গ ২৪ ডেস্ক :
  • আপডেট সময় ০৭:৩৩:১৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২ অগাস্ট ২০২০
  • ৪০ বার পড়া হয়েছে

মোঃ নুরুল ইসলাম : সালটা মনে নাই। আজ থেকে অনেক অনেক দিন আগের কথা।আমি তখন খুব ছোট – হাফ প্যান্ট পড়ি। বই খাতা তখনও হাতে উঠে নাই। আমার বড় ভাই বানিয়াচং ফুফুর বাড়ি থেকে এল আর হাইস্কুলে পড়াশোনা করেন।
মুলত বেড়ানোই শখ, তবে বড় ভাইকে দেখার জন্য ভরা এক বর্ষায় কাক ডাকা ভোরে নৌকায় আটগাঁও থেকে বানিয়াচংয়ের উদ্দেশ্যে রওয়ানা।সাথী হিসাবে আমার কিছুদিনের বড় এক চাচাত ভাই এবং এমরান চাচা (কিংবদন্তি শিক্ষক শ্রদ্ধেয় মহিবুর রহমান চৌধুরী)। তিনি আমাদের সকলের প্রিয় এমরান চাচা)।আমাকে একা ছাড়তে মা-বাবা প্রথমে রাজী ছিলেন না, পরে এমরান চাচা সাথে আছেন বলে আর দ্বিমত করেন নাই।
আকাশের অবস্থা বেশ ভালোই। আমাদের নৌকা ঘন্টা খানেকের মধ্যেই ঐতিহাসিক ছায়ার হাওরের পাড়ে দাঁড়িয়ে। নৌকার মাঝিরা কি যেন চিন্তা করছেন ? আকাশের অবস্থা না দেখে -শুনে অন্তত ছায়ার হাওর কেউই পাড়ি দিতে সাহস করেন না। যাই হোক, নৌকা ছাড়ল এবং ততক্ষণে আমরা ছায়ার হাওরের প্রায় অর্ধেক রাস্তা অতিক্রম করে ফেলেছি।হঠাৎ আইড়িয়া কোণায় (উত্তর-পশ্চিম দিকে আমাদের এলাকায় আইড়িয়া কোণা বলে এবং এই দিকে সাঁজ করলে নাকি প্রচন্ড তোফান হয়)। একটু সাঁজ সাঁজ ভাব, মাঝিরা বললেন, ভয়ের কোন কারন নাই, আমরা এই ঝড় আসার আগেই নিরাপদ স্হানে পৌঁছে যাব।কিন্তু না! তাদের হিসাবকে ভুল প্রমাণিত করে মুহুর্তের মধ্যে প্রবল বাতাস এবং ছেচ্ছোয়া মেঘ (বাতাসের সাথে অল্প পরিমাণ মেঘকে আমাদের এখানে ছেচ্ছোয়া মেঘ বলে এবং ইহা নাকি বিপদজনক, এই সময় বাতাসের গতি প্রবল থাকে) শুরু হয়ে গেল। ছেচ্ছোয়া মেঘের সাথে বাতাসের গতি ক্রমশ বাড়তে লাগল এবং ছায়ার হাওর তার ঢেউ সমৃদ্ধ রূপ অর্থাৎ সাদা এক ঝাঁক বকের পাল যাকে আমরা চাঁন কপাল্লিয়া ঢেউ বলি, খেলতে শুরু করল। আমাদের নৌকায় আগে পিছনে পানি সমানে উঠতে লাগল, হেমুইত দিয়ে পানি ফেলে আর কুলানো যাচ্ছে না।কি ভয়াবহ দৃশ্য! এখনই বুঝি আমাদের নৌকা ডুবে যাবে এমন ভাব !  আমরা সবাই কিছু সময় সাঁতার কেটে মরে যাব ভেবে আমি হাউমাউ করে কান্না শুরু করছি।এমরান চাচা আমাকে সাহস দিয়ে চলেছেন, তাঁর বুকে আমাকে টেনে নিলেন আর আদর করে বলতে লাগলেন, বাবারে, চাঁনরে, তুমি ঘাবড়াবে না, আমি তোমার সাথে আছি, তোমার কোন ভয় নাই, আমি তোমাকে নিয়ে সাঁতার কেটে ঐ পাশের গ্রামে যেতে পারব।মুখে আল্লাহ্’র নামও জপতে ছিলেন এমরান চাচা।কথাগুলি শুনতে শুনতে আমি অজ্ঞান হয়ে যাই এবং নিথর হয়ে এমরান চাচার গলা ধরে পড়ে থাকি।একবার শুধু এমরান চাচাকে চিৎকার করে বলতে শুনেছি, নাউ বাতাসের বায় ধর, আর কিছু মনে নাই।আমার যখন হুঁশ ফিরে এল, দেখি আকাশ শান্ত এবং কোন এক গ্রামের পাশ দিয়ে ততক্ষণে আমরা বদলপুর এসে গেছি।বদলপুর এবং ঘাগড়াকোণা থেকে রং বেরঙের পাল তোলা ছোট ছোট নৌকার সাথে আমরাও গড়ের খালে ঢুকে গেলাম।গড়ের খাল আমার কাছে এক নিরাপদ জায়গা মনে হলে পুলকিত নয়নে এমরান চাচার দিকে তাকিয়ে মনে হয়েছিল আমার আর কোন ভয় নাই। স্মৃতির পাতায় এমরান চাচা (কিংবদন্তি শিক্ষক সর্বজন শ্রদ্ধেয় মহিবুর রহমান চৌধুরী) ।

লেখক : বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, ঢাকা।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

নবীগঞ্জে ইফা কর্তৃক জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস প্রতিরোধে করণীয় শীর্ষক আলোচনা সভা

কিছু স্মৃতি, কিছু বেদনা!

আপডেট সময় ০৭:৩৩:১৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২ অগাস্ট ২০২০

মোঃ নুরুল ইসলাম : সালটা মনে নাই। আজ থেকে অনেক অনেক দিন আগের কথা।আমি তখন খুব ছোট – হাফ প্যান্ট পড়ি। বই খাতা তখনও হাতে উঠে নাই। আমার বড় ভাই বানিয়াচং ফুফুর বাড়ি থেকে এল আর হাইস্কুলে পড়াশোনা করেন।
মুলত বেড়ানোই শখ, তবে বড় ভাইকে দেখার জন্য ভরা এক বর্ষায় কাক ডাকা ভোরে নৌকায় আটগাঁও থেকে বানিয়াচংয়ের উদ্দেশ্যে রওয়ানা।সাথী হিসাবে আমার কিছুদিনের বড় এক চাচাত ভাই এবং এমরান চাচা (কিংবদন্তি শিক্ষক শ্রদ্ধেয় মহিবুর রহমান চৌধুরী)। তিনি আমাদের সকলের প্রিয় এমরান চাচা)।আমাকে একা ছাড়তে মা-বাবা প্রথমে রাজী ছিলেন না, পরে এমরান চাচা সাথে আছেন বলে আর দ্বিমত করেন নাই।
আকাশের অবস্থা বেশ ভালোই। আমাদের নৌকা ঘন্টা খানেকের মধ্যেই ঐতিহাসিক ছায়ার হাওরের পাড়ে দাঁড়িয়ে। নৌকার মাঝিরা কি যেন চিন্তা করছেন ? আকাশের অবস্থা না দেখে -শুনে অন্তত ছায়ার হাওর কেউই পাড়ি দিতে সাহস করেন না। যাই হোক, নৌকা ছাড়ল এবং ততক্ষণে আমরা ছায়ার হাওরের প্রায় অর্ধেক রাস্তা অতিক্রম করে ফেলেছি।হঠাৎ আইড়িয়া কোণায় (উত্তর-পশ্চিম দিকে আমাদের এলাকায় আইড়িয়া কোণা বলে এবং এই দিকে সাঁজ করলে নাকি প্রচন্ড তোফান হয়)। একটু সাঁজ সাঁজ ভাব, মাঝিরা বললেন, ভয়ের কোন কারন নাই, আমরা এই ঝড় আসার আগেই নিরাপদ স্হানে পৌঁছে যাব।কিন্তু না! তাদের হিসাবকে ভুল প্রমাণিত করে মুহুর্তের মধ্যে প্রবল বাতাস এবং ছেচ্ছোয়া মেঘ (বাতাসের সাথে অল্প পরিমাণ মেঘকে আমাদের এখানে ছেচ্ছোয়া মেঘ বলে এবং ইহা নাকি বিপদজনক, এই সময় বাতাসের গতি প্রবল থাকে) শুরু হয়ে গেল। ছেচ্ছোয়া মেঘের সাথে বাতাসের গতি ক্রমশ বাড়তে লাগল এবং ছায়ার হাওর তার ঢেউ সমৃদ্ধ রূপ অর্থাৎ সাদা এক ঝাঁক বকের পাল যাকে আমরা চাঁন কপাল্লিয়া ঢেউ বলি, খেলতে শুরু করল। আমাদের নৌকায় আগে পিছনে পানি সমানে উঠতে লাগল, হেমুইত দিয়ে পানি ফেলে আর কুলানো যাচ্ছে না।কি ভয়াবহ দৃশ্য! এখনই বুঝি আমাদের নৌকা ডুবে যাবে এমন ভাব !  আমরা সবাই কিছু সময় সাঁতার কেটে মরে যাব ভেবে আমি হাউমাউ করে কান্না শুরু করছি।এমরান চাচা আমাকে সাহস দিয়ে চলেছেন, তাঁর বুকে আমাকে টেনে নিলেন আর আদর করে বলতে লাগলেন, বাবারে, চাঁনরে, তুমি ঘাবড়াবে না, আমি তোমার সাথে আছি, তোমার কোন ভয় নাই, আমি তোমাকে নিয়ে সাঁতার কেটে ঐ পাশের গ্রামে যেতে পারব।মুখে আল্লাহ্’র নামও জপতে ছিলেন এমরান চাচা।কথাগুলি শুনতে শুনতে আমি অজ্ঞান হয়ে যাই এবং নিথর হয়ে এমরান চাচার গলা ধরে পড়ে থাকি।একবার শুধু এমরান চাচাকে চিৎকার করে বলতে শুনেছি, নাউ বাতাসের বায় ধর, আর কিছু মনে নাই।আমার যখন হুঁশ ফিরে এল, দেখি আকাশ শান্ত এবং কোন এক গ্রামের পাশ দিয়ে ততক্ষণে আমরা বদলপুর এসে গেছি।বদলপুর এবং ঘাগড়াকোণা থেকে রং বেরঙের পাল তোলা ছোট ছোট নৌকার সাথে আমরাও গড়ের খালে ঢুকে গেলাম।গড়ের খাল আমার কাছে এক নিরাপদ জায়গা মনে হলে পুলকিত নয়নে এমরান চাচার দিকে তাকিয়ে মনে হয়েছিল আমার আর কোন ভয় নাই। স্মৃতির পাতায় এমরান চাচা (কিংবদন্তি শিক্ষক সর্বজন শ্রদ্ধেয় মহিবুর রহমান চৌধুরী) ।

লেখক : বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, ঢাকা।