ঢাকা ০১:৫২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ৮ আশ্বিন ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo বানিয়াচংয়ে স্কুল ছাত্রীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার Logo এমপি মজিদ খানের মধ্যস্থতায় বানিয়াচং সৈদারটুলা ছান্দের ২ গ্রুপের দ্বন্দ্ব নিরসন Logo মিশর আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থান পাওয়ায় মুফতি হাফিজুল হককে সংবর্ধনা প্রদান Logo আজমিরীগঞ্জে নিত্যপণ্যের মূল্য চড়া: ক্রেতাদের নাভিশ্বাস Logo একজন কর্মবীর সফল এমপি আব্দুল মজিদ খান Logo বানিয়াচংয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পদ্মাসন সিংহ’কে বিদায় সংবর্ধনা Logo জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী মনজুর চৌধুরী Logo বানিয়াচংয়ে ইফা শিক্ষকদের নিয়ে ক্লাস্টার ট্রেনিং অনুষ্ঠিত Logo আজমিরীগঞ্জে পুলিশের অভিযানে ২০লিটার চোলাই মদ জব্দ : আটক-১ Logo প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.) হলেন গোটা জাতির জন্য উত্তম আদর্শ

কিছু স্মৃতি, কিছু বেদনা!

  • তরঙ্গ ২৪ ডেস্ক :
  • আপডেট সময় ০৭:৩৩:১৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২ অগাস্ট ২০২০
  • ৯২ বার পড়া হয়েছে

মোঃ নুরুল ইসলাম : সালটা মনে নাই। আজ থেকে অনেক অনেক দিন আগের কথা।আমি তখন খুব ছোট – হাফ প্যান্ট পড়ি। বই খাতা তখনও হাতে উঠে নাই। আমার বড় ভাই বানিয়াচং ফুফুর বাড়ি থেকে এল আর হাইস্কুলে পড়াশোনা করেন।
মুলত বেড়ানোই শখ, তবে বড় ভাইকে দেখার জন্য ভরা এক বর্ষায় কাক ডাকা ভোরে নৌকায় আটগাঁও থেকে বানিয়াচংয়ের উদ্দেশ্যে রওয়ানা।সাথী হিসাবে আমার কিছুদিনের বড় এক চাচাত ভাই এবং এমরান চাচা (কিংবদন্তি শিক্ষক শ্রদ্ধেয় মহিবুর রহমান চৌধুরী)। তিনি আমাদের সকলের প্রিয় এমরান চাচা)।আমাকে একা ছাড়তে মা-বাবা প্রথমে রাজী ছিলেন না, পরে এমরান চাচা সাথে আছেন বলে আর দ্বিমত করেন নাই।
আকাশের অবস্থা বেশ ভালোই। আমাদের নৌকা ঘন্টা খানেকের মধ্যেই ঐতিহাসিক ছায়ার হাওরের পাড়ে দাঁড়িয়ে। নৌকার মাঝিরা কি যেন চিন্তা করছেন ? আকাশের অবস্থা না দেখে -শুনে অন্তত ছায়ার হাওর কেউই পাড়ি দিতে সাহস করেন না। যাই হোক, নৌকা ছাড়ল এবং ততক্ষণে আমরা ছায়ার হাওরের প্রায় অর্ধেক রাস্তা অতিক্রম করে ফেলেছি।হঠাৎ আইড়িয়া কোণায় (উত্তর-পশ্চিম দিকে আমাদের এলাকায় আইড়িয়া কোণা বলে এবং এই দিকে সাঁজ করলে নাকি প্রচন্ড তোফান হয়)। একটু সাঁজ সাঁজ ভাব, মাঝিরা বললেন, ভয়ের কোন কারন নাই, আমরা এই ঝড় আসার আগেই নিরাপদ স্হানে পৌঁছে যাব।কিন্তু না! তাদের হিসাবকে ভুল প্রমাণিত করে মুহুর্তের মধ্যে প্রবল বাতাস এবং ছেচ্ছোয়া মেঘ (বাতাসের সাথে অল্প পরিমাণ মেঘকে আমাদের এখানে ছেচ্ছোয়া মেঘ বলে এবং ইহা নাকি বিপদজনক, এই সময় বাতাসের গতি প্রবল থাকে) শুরু হয়ে গেল। ছেচ্ছোয়া মেঘের সাথে বাতাসের গতি ক্রমশ বাড়তে লাগল এবং ছায়ার হাওর তার ঢেউ সমৃদ্ধ রূপ অর্থাৎ সাদা এক ঝাঁক বকের পাল যাকে আমরা চাঁন কপাল্লিয়া ঢেউ বলি, খেলতে শুরু করল। আমাদের নৌকায় আগে পিছনে পানি সমানে উঠতে লাগল, হেমুইত দিয়ে পানি ফেলে আর কুলানো যাচ্ছে না।কি ভয়াবহ দৃশ্য! এখনই বুঝি আমাদের নৌকা ডুবে যাবে এমন ভাব !  আমরা সবাই কিছু সময় সাঁতার কেটে মরে যাব ভেবে আমি হাউমাউ করে কান্না শুরু করছি।এমরান চাচা আমাকে সাহস দিয়ে চলেছেন, তাঁর বুকে আমাকে টেনে নিলেন আর আদর করে বলতে লাগলেন, বাবারে, চাঁনরে, তুমি ঘাবড়াবে না, আমি তোমার সাথে আছি, তোমার কোন ভয় নাই, আমি তোমাকে নিয়ে সাঁতার কেটে ঐ পাশের গ্রামে যেতে পারব।মুখে আল্লাহ্’র নামও জপতে ছিলেন এমরান চাচা।কথাগুলি শুনতে শুনতে আমি অজ্ঞান হয়ে যাই এবং নিথর হয়ে এমরান চাচার গলা ধরে পড়ে থাকি।একবার শুধু এমরান চাচাকে চিৎকার করে বলতে শুনেছি, নাউ বাতাসের বায় ধর, আর কিছু মনে নাই।আমার যখন হুঁশ ফিরে এল, দেখি আকাশ শান্ত এবং কোন এক গ্রামের পাশ দিয়ে ততক্ষণে আমরা বদলপুর এসে গেছি।বদলপুর এবং ঘাগড়াকোণা থেকে রং বেরঙের পাল তোলা ছোট ছোট নৌকার সাথে আমরাও গড়ের খালে ঢুকে গেলাম।গড়ের খাল আমার কাছে এক নিরাপদ জায়গা মনে হলে পুলকিত নয়নে এমরান চাচার দিকে তাকিয়ে মনে হয়েছিল আমার আর কোন ভয় নাই। স্মৃতির পাতায় এমরান চাচা (কিংবদন্তি শিক্ষক সর্বজন শ্রদ্ধেয় মহিবুর রহমান চৌধুরী) ।

লেখক : বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, ঢাকা।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

বানিয়াচংয়ে স্কুল ছাত্রীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

কিছু স্মৃতি, কিছু বেদনা!

আপডেট সময় ০৭:৩৩:১৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২ অগাস্ট ২০২০

মোঃ নুরুল ইসলাম : সালটা মনে নাই। আজ থেকে অনেক অনেক দিন আগের কথা।আমি তখন খুব ছোট – হাফ প্যান্ট পড়ি। বই খাতা তখনও হাতে উঠে নাই। আমার বড় ভাই বানিয়াচং ফুফুর বাড়ি থেকে এল আর হাইস্কুলে পড়াশোনা করেন।
মুলত বেড়ানোই শখ, তবে বড় ভাইকে দেখার জন্য ভরা এক বর্ষায় কাক ডাকা ভোরে নৌকায় আটগাঁও থেকে বানিয়াচংয়ের উদ্দেশ্যে রওয়ানা।সাথী হিসাবে আমার কিছুদিনের বড় এক চাচাত ভাই এবং এমরান চাচা (কিংবদন্তি শিক্ষক শ্রদ্ধেয় মহিবুর রহমান চৌধুরী)। তিনি আমাদের সকলের প্রিয় এমরান চাচা)।আমাকে একা ছাড়তে মা-বাবা প্রথমে রাজী ছিলেন না, পরে এমরান চাচা সাথে আছেন বলে আর দ্বিমত করেন নাই।
আকাশের অবস্থা বেশ ভালোই। আমাদের নৌকা ঘন্টা খানেকের মধ্যেই ঐতিহাসিক ছায়ার হাওরের পাড়ে দাঁড়িয়ে। নৌকার মাঝিরা কি যেন চিন্তা করছেন ? আকাশের অবস্থা না দেখে -শুনে অন্তত ছায়ার হাওর কেউই পাড়ি দিতে সাহস করেন না। যাই হোক, নৌকা ছাড়ল এবং ততক্ষণে আমরা ছায়ার হাওরের প্রায় অর্ধেক রাস্তা অতিক্রম করে ফেলেছি।হঠাৎ আইড়িয়া কোণায় (উত্তর-পশ্চিম দিকে আমাদের এলাকায় আইড়িয়া কোণা বলে এবং এই দিকে সাঁজ করলে নাকি প্রচন্ড তোফান হয়)। একটু সাঁজ সাঁজ ভাব, মাঝিরা বললেন, ভয়ের কোন কারন নাই, আমরা এই ঝড় আসার আগেই নিরাপদ স্হানে পৌঁছে যাব।কিন্তু না! তাদের হিসাবকে ভুল প্রমাণিত করে মুহুর্তের মধ্যে প্রবল বাতাস এবং ছেচ্ছোয়া মেঘ (বাতাসের সাথে অল্প পরিমাণ মেঘকে আমাদের এখানে ছেচ্ছোয়া মেঘ বলে এবং ইহা নাকি বিপদজনক, এই সময় বাতাসের গতি প্রবল থাকে) শুরু হয়ে গেল। ছেচ্ছোয়া মেঘের সাথে বাতাসের গতি ক্রমশ বাড়তে লাগল এবং ছায়ার হাওর তার ঢেউ সমৃদ্ধ রূপ অর্থাৎ সাদা এক ঝাঁক বকের পাল যাকে আমরা চাঁন কপাল্লিয়া ঢেউ বলি, খেলতে শুরু করল। আমাদের নৌকায় আগে পিছনে পানি সমানে উঠতে লাগল, হেমুইত দিয়ে পানি ফেলে আর কুলানো যাচ্ছে না।কি ভয়াবহ দৃশ্য! এখনই বুঝি আমাদের নৌকা ডুবে যাবে এমন ভাব !  আমরা সবাই কিছু সময় সাঁতার কেটে মরে যাব ভেবে আমি হাউমাউ করে কান্না শুরু করছি।এমরান চাচা আমাকে সাহস দিয়ে চলেছেন, তাঁর বুকে আমাকে টেনে নিলেন আর আদর করে বলতে লাগলেন, বাবারে, চাঁনরে, তুমি ঘাবড়াবে না, আমি তোমার সাথে আছি, তোমার কোন ভয় নাই, আমি তোমাকে নিয়ে সাঁতার কেটে ঐ পাশের গ্রামে যেতে পারব।মুখে আল্লাহ্’র নামও জপতে ছিলেন এমরান চাচা।কথাগুলি শুনতে শুনতে আমি অজ্ঞান হয়ে যাই এবং নিথর হয়ে এমরান চাচার গলা ধরে পড়ে থাকি।একবার শুধু এমরান চাচাকে চিৎকার করে বলতে শুনেছি, নাউ বাতাসের বায় ধর, আর কিছু মনে নাই।আমার যখন হুঁশ ফিরে এল, দেখি আকাশ শান্ত এবং কোন এক গ্রামের পাশ দিয়ে ততক্ষণে আমরা বদলপুর এসে গেছি।বদলপুর এবং ঘাগড়াকোণা থেকে রং বেরঙের পাল তোলা ছোট ছোট নৌকার সাথে আমরাও গড়ের খালে ঢুকে গেলাম।গড়ের খাল আমার কাছে এক নিরাপদ জায়গা মনে হলে পুলকিত নয়নে এমরান চাচার দিকে তাকিয়ে মনে হয়েছিল আমার আর কোন ভয় নাই। স্মৃতির পাতায় এমরান চাচা (কিংবদন্তি শিক্ষক সর্বজন শ্রদ্ধেয় মহিবুর রহমান চৌধুরী) ।

লেখক : বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, ঢাকা।