শিব্বির আহমদ আরজু : বেত সবুজাভ এক উদ্ভিদ। দেখতে খুব সুন্দর ও চিত্তকর্ষীয়। বেত গাছ বিশেষ করে ঝোঁপঝাড় বা বন-জঙ্গলে দেখা যায়। বেত দিয়ে তৈরী হস্তশিল্প অত্যন্ত জনপ্রিয়। কালের বিবর্তনে সেই বেত গাছ অনেকটা হারিয়ে যাচ্ছে। গ্রাম থেকে গ্রামাঞ্চলে পায়চারি করলে চোখে পড়তো বেত গাছের ঝোঁপঝাড়। সেই ঝোঁপঝাড়ে শিয়াল বা বন্যপ্রাণিরা আবাস্থল হিসেবে গড়ে তুলতো। গ্রামের দুষ্টু ছেলেরা দলবেঁধে হানা দিত ঝোঁপঝাড়ে। বন্যপ্রাণিরা গর্ত থেকে বের হয়ে লোকালয়ে আসতো। এর মধ্যে দুষ্টু ছেলেদের হাতে শিয়াল বা মেছোবাঘ ধরা পড়তো। সেগুলো নিয়ে গ্রামের সড়কে সড়কে হাক দিত দুষ্টু ছেলেরা। এ আনন্দ ছিল মূলত বেত গাছকে কেন্দ্র করে। সময়ের ব্যবধানে আজ বেত গাছ বিলুপ্তির পথে। মাইলের পর মাইল হাঁটলেও কোথাও ঝোঁপঝাড় বা জঙ্গল এখন আর চোখে পড়ে না। আবাসন সঙ্কটের কারণে দেদারছে ভরাট হচ্ছে বিল-ঝিল বা পুকুর। উজাড় হচ্ছে বন-জঙ্গল। বিলুপ্ত হচ্ছে বেত গাছসহ পরিবেশ ভারসাম্যকারি নানান প্রকারের গাছ -গাছালি।

এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে পরিবেশে! বেত গাছ বর্তমানে বৃহত্তর সিলেট, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামে দেখা যায়। বেত গাছে ফুল আসে অক্টোবর মাসে। ফল পাকে মার্চ থেকে এপ্রিলে। একেকটা থোকায় ২০০ পর্যন্ত ফল আসে। বেত গাছের ফলকে অঞ্চল ভেদে একেক নামে অভিহিত করা হয়। বানিয়াচং তথা হবিগঞ্জে বেত ফল বা বেতগুটা হিসেবে বলা হয়। বেতগুটা খেতে টক-মিষ্টি। লবণ দিয়েও খাওয়া যায়। বেত গাছের খোলসে কাটা হয়। কাটা হয় পল্লবেও। শুকনো বেত দিয়ে বিভিন্ন হস্তশিল্প জাতীয় জিনিস তৈরী হয়। ভোক্তাদের কাছে জনপ্রিয় হচ্ছে, চেয়ার, টেবিল, মোড়া, ডালা, কুলা, চাঙ্গারী, হাতপাখা, চালোন, গোলা, ডোলা, টাপা, চাঁচ, সোফা ইত্যাদি। বেতের এসব জিনিস দৃষ্টিনন্দন, টেকসই, নান্দনিক ও প্রাকৃতিক। এ প্রতিনিধির সাথে কথা হয় বেত শিল্পের সাথে জড়িত বানিয়াচং যাত্রাপাশা গ্রামের রাজু মিয়া (৪৮) এর। তিনি জানান, বানিয়াচংয়ে আগের মতো আর বেত গাছ পাওয়া যায় না। বেত গাছ সাধারণত পরিত্যক্ত ভূমিতে গড়ে উঠে। পরিত্যক্ত ভূমিও নেই, বেত গাছও নেই। অনেক দূর দূরান্ত থেকে চড়াদামে বেতগাছ কিনে নিত্য ব্যবহার্যের অনেক জিনিস তৈরী করতে হয়। যে কারণে হস্তশিল্পের দাম একটু বেশি।