কামাল উদ্দীন আল হুসাইনী :
ইসলামের খেদমত করতে এবং বাতিলের মোকাবেলা করতেও পয়সার দরকার। আমরা করি কি? কোন সভা-সমাবেশ হোক আর মিটিং-মিছিলই হোক , আগে-পরে বা উপস্থিতে মোনাজাতের আগে-পরে উপস্থিত লোকজন থেকে চাদা-কালেকশন করি যে, এই সভা-সমাবেশটির খরচ, মাইক- প্যান্ডেল ইত্যাদি বাবত এত টাকা খরচ হয়েছে। এই খরচ তো আমাদেরকেই বহন করতে হবে। তাই যে যত পারেন দান করেন! ৫ টাকা ১০ টাকা ১০০ টাকা যতই পারেন দান করেন! গণনা করে দেখা যায় যা উঠল তা দিয়ে সভার খরচই হয় না। এভাবেই আমরা যুগের পর যুগ কাটাচ্ছি। কিন্তু, বিকল্প কিছু চিন্তায়ও আনি না। আমাদেরকে এতটা চিন্তাহীন হলে চলবে না। আমরা আলেমগণ ১০% অতি সুখী , ৪০% মোটামুটি সুখী হলেও বাকী ৫০% আলেমই অতি দুঃখীই নয় শুধু ; বরং তাঁরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। আফসোস! তাঁদের কথা ভাবারও কেউ নেই! কাকে ভাবতে হবে তাঁদের কথা? অবশ্যই অতি সুখী আলেম-উলামাগণকেই ঐ দুঃখী আলেমদের কথা ভাবতে হবে। কারণ, আপনাদের সুখী হওয়ার পেছনে ঐসব দুঃখীরাই বাহ্যিক কারণ। কেননা, আপনারা তাঁদের সেরেতাজ, কর্ণধার ও মুরব্বি। হাঁ, সুখ দাতা একমাত্র আল্লাহ্ই।
সেদিন লিখে ছিলাম, আমাদেরকে সাবলম্বি হতে হবে। আজ এর একটি রূপরেখা পেশ করতে চাই। আর তা হল, আমাদের কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড যদি পড়া লেখা ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রন করতে পারে; তবে বোর্ড সংশ্লিষ্ট সকলের সাবলম্বি হওয়ারও ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে ইনশা আল্লাহ্। আর এর রূপরেখাটি এরূপ হতে পারেঃ- ১০ হাজার বলব না। ধরেন আমাদের দেশে ৭ হাজার কওমী মাদ্রাসা আছে। ৫ থেকে শুরু করে ১০/১৫/২০/৩০ বা কোনটিতে ৫০ জনেরও বেশি শিক্ষক রয়েছেন। ধরা যাক গড়ে ১০ জনই। তাহলে সর্বমোট শিক্ষক সংখ্যা হয় ৭০ হাজার। যেভাবে ছাত্রদের থেকে ফিস নিয়ে সারা দেশের মাদ্রাসা সমূহের পরীক্ষার ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করতে পারি। একই ভাবে ঐ ৭০ হাজার শিক্ষকের বেতন থেকে প্রতি মাসে ২০০ টাকা নিয়ে সাবলম্বি হওয়ারও ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারব।
২০০ টাকা হারে নিলে মাসে হয় ১,৪০,০০০০০ টাকা। ১২ মাসে হয় প্রায় ১৬,৮০,০০০০০ টাকা। এভাবে টাকা নিলে কারোর গায়েও লাগবে না। এবার এই টাকা বিনিয়োগ করব যেভাবে, প্লট কিনে কওমী ফ্ল্যাট করে ভাড়া দিয়ে এবং কওমী হাসপাতাল ও ইসলামি ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করে ক্রমান্বয়ে সারা দেশে শাখা প্রতিষ্ঠা করে এবং বিভিন্ন পণ্য উৎপাদনের ফ্যাক্টরি গড়ে এবং বিভিন্ন কোম্পানি ও শিল্পকারখা খুলে ইত্যাদি ইত্যাদি করে। যেগুলোতে কওমী বহু আলেমের কর্মসংস্থানও হবে। এবার উপার্জিত টাকা প্রদান করব যেভাবে, শিক্ষকবৃন্দকে চাকুরীরত কালে কোন দুর্যোগ বা দূর্ঘটনাকালে ইত্যাদিতে পতিত হলে প্রয়োজন পরিমাণ অর্থ প্রদান, চাকুরী পরবর্তী এককালিন পেনশন ও আমরণ মাসিক অবসর ভাতা প্রদান করা হবে। কাকে কি পরিমাণ দেওয়া হবে? যিনি যত বৎসর যাবৎ অর্থ বিনিয়োগে অংশ গ্রহণ করেছেন, সেই অনুপাতে দেওয়া হবে। এখন থেকে উদ্যোগ নিলে যাঁদের চাকুরি ৫/১০ বৎসর পরে শেষ হয়ে যাবে। তাঁদেরকে কোন হারে দেওয়া হবে ? চাকুরীর বৎসর অনুপাতে দেওয়া হবে। উদাহরণতঃ যদি চাকুরির মেয়াদ ধার্য করা হয় ৩০ বৎসর ; তবে যিনি ৩০ বৎসর চাকুরি করবেন, তাঁকে দেওয়া হবে পূর্ণ পেনশন ও পূর্ণ ভাতা। যিনি ১৫ বৎসর চাকুরি করেছেন, তিনি পাবেন অর্ধেক পেনশন ও অর্ধেক ভাতা। যিনি চাকুরি করেছেন ১০ বৎসর, তিনি পাবেন এক তৃতীয়াংশ পেনশন ও এক তৃতীয়াংশ ভাতা। এভাবেই সব কিছুতে একটা পরিমাণ নির্ধারণ করা যাবে। এছাড়াও কল্যাণকর আরো অনেক ফাণ্ড গঠন করে সেবা প্রদান করা সম্ভব। আমি শুধু খানিকটা ইশারা করলাম।
ঐরূপ উদ্যোগ গ্রহণ করে ইসলামিরাজনৈতিক দলগুলোকেও সাবলম্বি হওয়া সম্ভব। তাঁরা অর্থ সংগ্রহ করবেন , দলের নেতা-কর্মীদের নিকট থেকে।
ঐ একই পদ্ধতিতে মসজিদের খতিব, ইমাম ও মুয়াজ্জিন সাহেবানগণও সাবলম্বি হওয়া সম্ভব। মাদরাসার তুলনায় মসজিদের সংখ্যা অনেক বেশি। প্রয়োজন আমাদের উদ্যোগের। তবে এক্ষেত্রে থাকতে হবে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা। থাকতে হবে সরকার কতৃক লাইসেন্স।
সম্মানিত পাঠক মহল! বিশেষতঃ আমাদের কওমী অঙ্গন সমূহের সকল শিক্ষক ও ছাত্রদের উদ্দেশ্যে বলছি, যদি আমার এই লিখাটি বাস্তবমুখি ও প্রয়োজনীয় মনে হয় ; (বিশেষতঃ এই করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে পতিত হয়ে) তাহলে যার যার অবস্থান থেকে সরব, সচেষ্ট ও উদ্যোগি হই। উঠাই দাবি। করি বাস্তবায়ন। আর কত কাল ক্ষেপণ ? এবারই উপযুক্ত সময়। একের বোঝা দশের লাঠি। দশের লাঠি একের বোঝা। আল্লাহ্ আমাদের সকলকে সুচিন্তা ও শুভ বুদ্ধি দান করুন। আমীন।
লেখক :শিক্ষা-সচিব, মাদরাসাতুল হারামাইন,
খতিব: ৩নং রাজবাড়ি জামে মসজিদ,
বানিয়াচং , হবিগঞ্জ।