শায়খ মাওলানা কামাল উদ্দীন আল-হুসাইনী :
ওয়াজ-তাফসীর তো মানুষকে কোরআন-হাদীস ও ইসলাম বুঝানোর জন্য। হেদায়াতের পথ দেখানো,চেনানো ও বুঝানোর জন্যই। কিন্তু, আজকাল ওয়াজ-তাফসীরের নামে যা—-হচ্ছে!
এসব দেখে চশম ওয়ালা, লজ্জাবান ও সুস্থ বিবেক সম্পন্ন লোকেরা লজ্জায় মরে!
গত ২ দিন আগে উত্তর বানিয়াচঙ্গের অবস্থাটাই উল্লেখ করি।
সেখানে ওয়াজ-তাফসীরের নামে হৈ হুল্লোড় শুরু হয়েছিল! তৈরী হয়েছিল এক জন্ত্রণাদায়ক ও ঘুম হারাম করা পরিবেশ এলাকার মানুষের জন্য!
তা কী ছিল ? পাশাপাশি অনেকগুলো মাহ্ফিল! একটি মাহ্ফিলের মাইকের আওয়াজ অন্য মাহফিলে গিয়ে পৌঁছে! এক জায়গায় দাঁড়িয়ে ৪/৫ টি মাহফিলের আওয়াজ শুনতে পাওয়া যায়ই নয় শুধু ; বরং একেবারে অসহ্য লাগে! মানুষের মন চায়, এলাকা ছেড়ে পলায়ন করে শান্তি পাই!
আমার বাড়িটি ছিল গতকালের মাহফিল গুলোর দক্ষিণ দিকে মোটামুটি দূরত্বেই! কিন্তু, এতদসত্ত্বেও উত্তর দিককার মাহফিল গুলোর আওয়াজের ঝনঝনানির দরুন রাত ১২/০১ টা পর্যন্ত ঘুম হারাম! আর অসহ্য যন্ত্রণার কথা তো বলার অপেক্ষাই রাখে না! যদি আমার বাড়িটি অপর পার্শ্বে ও দূরত্বে থাকা সত্ত্বেও এতটা দুর্বিষহ অবস্থা পোহাতে হল ; তবে যাদের বাড়ি দু‘টি মাহফিলের মাঝখানে অবস্থিত তাদের অবস্থাটা একটু চিন্তা করুন তো ? হয় তো তারা পারলে কেঁদেছে! ওয়াজের উদ্যেশ্য কি ওসবই ? আমি এক পার্শ্বে থাকা মানুষটিই যদি কোন কথা বুঝতে পারলাম না ? তাহলে দুটি মাহফিলের মাঝখানে থাকা লোকজন কী বুঝতে পেরেছে ? নাকি শুধুই যন্ত্রণা পোহাতে হয়েছে ? আর মাহফিল গুলোর শ্রোতারাইবা কি কোন কথা বুঝতে পেরেছে ? তাহলে, ওয়াজ-তাফসীরের উদ্দেশ্য আর কাজে কি কোনই মিল আছে ? না, নেই! বরং মুসলমানদের ঘুম নষ্ট করা হচ্ছে! দেওয়া হচ্ছে মুসলমানদেরকে সীমাহীন কষ্ট! অথচ, মুসলমানদেরকে কষ্ট দেওয়া হারাম।
আর বক্তাদের অবস্থা কী বলব ?
এক বক্তার অবস্থা হলো, খুৎবা পড়েই অনেক্ষণ যাবৎ কোরআন তেলাওয়াত! আর ক্বারী আব্দুল বাছিত সাজতে গিয়ে কোরআনের বিকৃতি করেছে! অতঃপর অনেক্ষণ যাবৎ গজল গেয়েছে! আর তার গাওয়ার অবস্থা গায়ক-নায়কদেরকেও হার মানিয়েছে! যা আমারই একা একা শুনতেও সীমাহীন লজ্জা বোধ হয়েছে! এমন গাওয়া অশিক্ষিত সমাজ শুনতে পছন্দ করলেও কোন শিক্ষিত ব্যক্তি বা সমাজ ভালো পায় না। করে না পছন্দ। বরং শত ধিক্ আর ছি : ছি: দেয় ওসব গায়কদেরকে!
কিন্তু, ওসব গায়ক নায়ক মার্কা বক্তাদের গাইতে মোটেও লজ্জা হয় না! হয় না, বিন্দুমাত্রও চশম! আসলে ওরা নির্লজ্জ-বেচশম আর বেহায়া ও বেগয়রত! এদের আত্মমর্যাদাবোধের লেশমাত্র নেই! আর ওদের মর্যাদা থাকলে তো আত্মমর্যাদাবোধ থাকতো! আসলে ওরা মর্যাদাহীন ও সমাজের তৃতীয় শ্রেণির কিছু অভদ্র লোক!
আরে অভদ্রের দল! সুন্দর কন্ঠ দিয়ে ওয়াজ করতে কন্ঠেরও তো একটা ভদ্রতা, সভ্যতা, মাধু্র্যতা আর শালীনতা আছে! তোরা এত অভদ্র, অসভ্য ও অশালীন কেন ? জানি তোরা হলে হাটের বলদ! তোরা বলদের মত পঁয়সায় বিক্রি হছ! তাই তোদের আত্মমর্যাদাবোধ আর বলদের আত্মমর্যাদাবোধে কোনই পার্থক্য নেই! তোদের মধ্যে আছে লৌকিকতা! নেই এখলাস! মানুষের হেদায়াত তোদের উদ্দেশ্য নয়! তোদের উদ্দেশ্য হল, গেয়ে আর অভিনয় করে শুধুই পয়সা হাতিয়ে নেওয়া! (এটা তো গায়ক নায়কদের উদ্দেশ্য হয়ে থাকে) তাই তো তোরা দর কষাকষি করে বিক্রি হছ!
এবার আলেমগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলবো যে, উপরোক্ত অকাম্য বিষয়গুলোর দ্বারা মূলতঃ ওয়াজ-তাফসীর, কোরআন-হাদীস, ইসলাম-মুসলমান ও বিশেষতঃ আলেম সমাজকে হেয়, অপমান এবং বেইজ্জত করা হচ্ছে! এসব বন্ধ করা সকলের অপরিহার্য কর্তব্য। মূলধারার ওয়াজ-তাফসীরের দিকে আমাদেরকে ফিরে আসা উচিত। গায়ক-নায়কদেরকে তাড়িয়ে আসল বক্তা ও সত্যিকার খাঁটি আলেমদেরকে মাঠে আনা সময়ের দাবি ও সমাজের অপরিহার্য কর্তব্য। এ কর্তব্য কাজে অবহেলা করা আদৌ ঠিক নয়।
সাধারণ মুসলমানদেরকে বলবো, আপনাদেরও একই কর্তব্য: ওসব গায়ক-নায়ক মার্কা বক্তাদেরকে বর্জন করুন! মূলধারার খাঁটি আলেমদেরকে মাঠে আনুন! খাঁটি ওয়াজ-তাফসীর শুনুন!
যুব সমাজের প্রতিও একই আহবান!
পাশাপাশি একাধিক মাহফিল ঠেকাতে পরামর্শ হলো, প্রত্যেক মাহফিল কর্তৃপক্ষই নিজ মহল্লার চতুর্দিকের পার্শ্ববর্তী মহল্লা গুলোর মাহফিল কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে মাহফিলের তারিখ নির্ধারণ করুন! তবেই আর একাধিক মাহফিল পাশাপাশি সংঘটিত হবে না। আর তখন লোকজন সমালোচনাও করবে না। আর হাসিল হবে ওয়াজের উদ্দেশ্যও তখন। শুনতে ও বুঝতে পারবে তখন মাহফিলের শ্রোতা ও এলাকার ঘরবাড়িতে থাকা সবাই।
আল্লাহ্ সকলকে সঠিক বুঝ দান করুন! আমীন
লেখক: শিক্ষা সচিব, মাদরাসাতুল হারামাইন,
খতীব: ৩নং রাজ বাড়ি জামে মসজিদ,
বানিয়াচং , হবিগঞ্জ।
তাং ২৯/০১/২১ইং