শামিমুল হক : এমন খবরের জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। শুনেই কলিজাটা মোচড় দিয়ে উঠলো। মনের অজান্তেই চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়লো পানি। কেন এমনটা হচ্ছে? উনত্রিশ বছর আগে এক রুমে বসে কাজ করেছি। চার বছর সহকর্মী হিসেবে খুব কাছ থেকে দেখেছি। স্নেহ পেয়েছি। পেয়েছি ভালোবাসা। পরামর্শ পেয়েছি। উপদেশ পেয়েছি। উনত্রিশ বছর ধরেই নানা সময়ে সামনা সামনি, মোবাইল ফোনে কথা হয়েছে। তার অট্টহাসি এখনো কানে বাজে। এমন অমলিন হাসি কি করে ভুলি? ১৯৯২ সালে বাংলাবাজার পত্রিকার পথচলা শুরু হলেও দীর্ঘ সময়ে মিজান ভাই একাধিক পত্রিকায় দায়িত্বশীল পদে কাজ করেছেন। বাংলাবাজার পত্রিকার সম্পাদক, বর্তমানে মানবজমিন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীর হাত ধরে যারা যশ খ্যাতি অর্জন করেছেন তাদের অন্যতম একজন মিজানুর রহমান খান। মিজান ভাইয়ের মতো এমন হাসিমাখা মুখ আমি এতদিনেও আরেকটি দেখিনি। মিজান ভাই দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছেন। আফসোস্ বড্ড অকালে তাকে হারাতে হয়েছে আমাদের। রিপোর্টার থেকে বাংলাবাজার পত্রিকার প্রধান প্রতিবেদক হয়েছিলেন। বাংলাবাজার পত্রিকায় আমার লেখা ধারাবাহিক ‘ঢাকার চালচিত্র’ সিরিজটি ব্যাপক আলোচিত হয়েছিল। এর নেপথ্যে ছিলেন মিজানুর রহমান খান। তিনি সিরিজ রিপোর্টটিকে ঘষেমেজে সুপাঠ্য করেছিলেন। তার এ ঘষামাজায় আমি হৃদ্য হয়েছি। আমার লেখার হাত প্রসারিত হয়েছে। অনেক স্মৃতি মিজান ভাইকে নিয়ে। কোনো স্পেশাল রিপোর্ট ছাপা হলেই ডেকে নিয়ে বলতেন, শামীম আপনি তো ফাটিয়ে দিয়েছেন। খুব ভালো হয়েছে রিপোর্টটি। এক্ষেত্রে তিনি ছিলেন অকৃপণ। উৎসাহ দিতেন সবাইকে। এক সময় বাংলাবাজার পত্রিকা ছেড়ে গেলেও আমৃত্যু সম্পর্ক রেখেছেন মতিউর রহমান চৌধুরীর সঙ্গে। প্রায়ই আসতেন দৈনিক মানবজমিনে। প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীর রুমে আড্ডা দিতেন। ওই রুম থেকে তার হাসি শোনা যেত। তার বিনয়, অন্যকে আপন করে নেয়ার গুণ, নিজের সবটুকু বিলিয়ে দিয়ে অন্যকে পরামর্শ দেয়া ছিল চির অভ্যাস। দেখা হলেই বলতেন, শামীম কেমন আছেন? এগিয়ে যান। মিজান ভাই, আপনার শেখানো পথে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি ঠিকই। কিন্তু আপনি যে থেমে গেলেন। কোন অভিমানে আমাদের ছেড়ে হঠাৎ চলে গেলেন। বিদায়টুকু নেয়ার সময়ও তো দিলেন না। যতদিন বেঁচে থাকি ততদিন হৃদয়ে থাকবেন আপনি। ওপারেও এমন হাসিখুশি থাকুন মিজান ভাই।
লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট ।