দেবব্রত চক্রবর্তী বিষ্ণু :
একত্রিশ মার্চ , দু “হাজার একুশ , অপরাহ্ন | নীলক্ষেত মোড় , ঢাকা | এক যুবক রিক্সা চালক ট্রাফিক সিগন্যাল- এ আটকা | বললাম , ভাই যাবেন ? জি স্যার | তার খুব বিনয়ী প্রশ্ন – কোথায় স্যার ? বলাম , আজিমপুর | উত্তর পেলাম , স্যার আসেন | রিকশায় বসে ওর সাথে যখন কথা বলছিলাম তখন মনে হচ্ছিলো এই যুবক নিশ্চয় শুধুই একজন রিক্সা চালক নয় |
এত চমৎকারভাবে বাংলা – ইংরেজি শব্দের ব্যবহার করে কথা বলছিলো আমি হতবাক ! গন্তব্যে পৌঁছে তার কাছে জনতা চাইলাম প্রকৃতপক্ষে সে কি করে ? খুব বিনয়ী উত্তর – স্যার রিক্সাই চালাই | আমি মানতে নারাজ | পীড়াপিড়ির এক পর্যায়ে সে বললো , স্যার দিনাজপুর – এ আমি পলিটিক্যাল সাইন্সে অনার্স পড়ি দ্বিতীয় বর্ষ – এ | এরপর আরো সব বিস্ময়কর কাহিনী | তাকে জোর করে বাসায় নিয়ে গেলাম | এপার্টমেন্টের দারোয়ান চাচাকে বললাম , ওর রিকশাটা ভেতরে গ্যারাজে রাখুন ও আমার এখানে থাকবে |
তারপর আমাদের পুত্র সহিষ্ণু ও তার মাকে ডেকে ওর সাথে পরিচয় করিয়ে দিলাম , তাকে খাবার দিতে বললাম | ওকে মাথা নুইয়ে স্যালুট করলাম এই জন্য যে , সে কাজকে ঘৃণা না করে জীবিকার জন্য এই পথ অবলম্বন করেছে | মহামারী করোনা তাকে এই পথে নামিয়েছে | কলেজ বন্ধ তাই ঢাকা চলে এসেছে | তখনও ওর নামটাই জানা হয়নি | ও নাস্তা করলো , পরে একসাথে ভাত খেলাম | এর মাঝে তার সাথে কথা বলে আরো অনেক কিছু জানলাম | ও লেখাপড়া চালিয়ে যেতে চায় | রিক্সাও চালাতে চায় ও প্রাইভেট পড়াতে চায় |
ওকে বললাম , আমি তোমার সহযাত্রী হতে চাই | তার বিস্ময়সূচক প্রশ্ন – স্যার আপনি এ – কি বলছেন ? আমি বললাম , হ্যা , সত্যিই বলছি | আর এখন থেকে স্যার নয় , দাদা | ওর জন্য রিক্সা কেনার পাশাপাশি ওকে নিয়ে কিছু পরিকল্পনা করলাম | ওর চোখ দুটি তখন জলে টলটল করছিলো | প্রত্যয়ী এই যুবক জীবনযুদ্ধের উজ্বল প্রতীক | জীবন যুদ্ধের এই অনুসরণীয় যুবকের সহযাত্রী হতে পেরে আমি আনন্দিত | ওর পাশে কোনো মহতী দাঁড়াতে চাইলে তাকে স্বাগত | তাকে স্যালুট , বারবার স্যালুট | বিশ্বাস করি সে জীবনজয়ী হবেই |
লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট।