তাহমিনা বেগম গিনি : বহুল পরিচিত একটি নাম ডাঃ জমীর আলী।হবিগঞ্জ জেলা শুধু নয় সিলেট বিভাগে একটি পরিচিত নাম। শুধু ডাঃ হিসেব নয় একজন পরপোকারী ব্যক্তিত্ব,অসহায়-গরীব রুগীদের সাহায্যকারী,আন্তরিকভাবে সেবাদানকারী হিসেবেও তিনি বহুল পরিচিত।আমার জীবনের সাথে উনার ৫৫ বছরের গাটঁছড়া বাঁধা।সেই কৈশোর থেকে এখন পর্যন্ত এক সাথে চলছি।তাই আমি তাঁকে যতটুকু চিনি জানি, এর চেযে বেশী আর একজনই জানতে পারতেন তিনি তাঁর মা।কিন্তু আজ উনি আমাদের মাঝে নেই।এখনো মার কথা মনে হলে বাচ্চাদের মত কাঁদেন।মার দোয়াই আজ তাঁকে এখানে নিয়ে এসেছে। আল্লাহ উনাকে বেহেশত নসীব করুন।৪৫ টি বছর দেখছি রুগীর সেবা করতে।টাকার পেছনে কখনো দৌঁড়াননি। অহেতুক কোনো রুগীকে টেস্টের ঝামেলায় ফেলেননি। কোনোডায়গনাস্টিক সেন্টার থেকে এক পঁয়সা কমিশন ও নেননি।নিশ্চিত প্রয়োজন ছাড়া কোনো পিতা মাতাকে ঢাকা,সিলেট পাঠাননি।অনেকেই ভাবতে পারেন আমি কেন এসব লিখছি।কারণ এখন করোনাকাল।সেই মার্চ থেকে উনার চেম্বার বন্ধ।ছোট বাচ্চা রুগী সকল যখন বাসা থেকে ফিরে যায় তখন উনার মনোকষ্ট আমি রোজ দেখি।উনি চার মাস আটদিন টেলিফোনে রুগীর চিকিৎসা দিয়ে চলেছেন। কোনো ভিজিট ছাড়াই। বেলা একটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত এ সেবা চলছে।রুগী ও নেহাত কম হয় না।আলহামদুলিল্লাহ।উনার চেম্বার আমাদের বাসার নীচে। চেম্বারে রুগীর ভীড় হয় প্রচুর।এ সব কারণে চেম্বার খুলতে পারছেন না তিনি।সব স্বাভাবিক হয়ে আসলে এবং উনি সুস্থ থাকলে আবার আমার বাসাটা জমে উঠবে ইনশাআল্লাহ।আলহামদুলিল্লাহ এখনো আল্লাহ আমাদের ভালো রেখেছেন।
একজন জমীর আলী মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে ডাঃ হয়েছেন ভাইদের প্রচেস্টায়।স্বপ্নবাজ যুবক ছিলেন।একান্নবর্তী পরিবার নিয়ে স্বপ্ন দেখেছেন। সবকিছু করেছেন কিন্তু সফল হতে পারেননি ক্ষেত্রবিশেষে।নিজের পরিবার নিয়ে স্বপ্ন দেখেছেন।আমি এমন পিতা,ভাই ছেলে খুব কম দেখেছি যে কোনো দায়িত্ব পালন করতে পিছপা হয়েছেন।কিন্তু দুঃখই পেয়েছেন বেশী।।পিতা হিসেবে উনি যেসব দায়িত্ব পালন করেছেন,সব পিতারা করেন না।আমার মতে করা উচিৎ নয়।কিন্তু এখানেও তিনি চরম দুঃখ পেয়েছেন।
উনি একজন আত্মকেন্দ্রিক ব্যক্তি।আদর,সোহাগ,স্নেহ সবই অনুভব করেন, কিন্তু প্রকাশ কম।নিজের মতে,নিজের বুদ্ধিতে চলতে ভালোবাসেন। কিন্তু পরিবারে সবার সাথে মতবিনিময় করা দরকার এ প্রয়োজন উনি বুঝতে চান না।নিজে নেওয়া এমন সিদ্ধান্ত যে সকল ক্ষেত্র সঠিন হয় না এখন বুঝতে পারছেন।কখনো কারো সমালোচনা করেন না।ব্যাংকের সুদও গ্রহণ করেন না। অত্যন্ত ধার্মিক তিনি।শুনেছি চতুর্থ শ্রেণী থেকে নামাজ রোজা শুরু করেছিলেন।জীবনের কোনো অবস্থায় নামাজ কাযা করননি।উনি নীতির ক্ষেত্রে আপোসহীন।সন্মানীত ব্যক্তিকে যথার্থ সন্মান করে থাকেন।
করোনাকালের কবে অবসান হবে জানি না ।কিন্তু উনি ছোট বাচ্চাদের জন্য মনোপীড়ায় ভুগছেন। দোয়া করেন
বাচ্চাদের জন্য তারা যেন ভালো থাকেন।বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডের সাথে তিনি বিশেষভাবে জড়িত।একজন প্রাউড রোটারিয়ান তিনি।এক পরিবার থেকে আমরা দ ‘জনই দূর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সদস্য।উনি সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট হবিগঞ্জ জেলা শাখার।
আমি উনার কথা অনেক লিখতে পারি কিন্তু আজ এ পর্যন্তই।আমার হাত সেই ১৯৭৫ সালে যে ধরেছিল,আজো সুখে- দূঃখে ধরে রেখেছেন।উনি আছেন বলেই আমি মধুমতির পাড়ের মেয়ে খোয়াই পাড়ে সন্মানের সাথে টিকে আছি।একে অপরকে প্রচন্ড ভালোবাসি।যারাই আমার লেখা পড়বেন প্রাণ ভরে আমাদের জন্য দেয়া করবেন।আল্লাহ রহমত বর্ষিত হোক।আমিন।
লেখক : বিশিষ্ট চিকিৎসক ডাঃ জমির আলীর সহধর্মিণী এবং কবিও সাহিত্যিক, হবিগঞ্জ।