শিব্বির আহমদ আরজু : পঞ্চায়েত প্রথার সূত্রপাত মুঘল আমল থেকে। পঞ্চায়েত শব্দটির উৎপত্তি পঞ্চ বা পাঁচ থেকে। তখনকার সময়ে ৫ সদস্য নিয়ে স্ব-নির্ভর গ্রামীণ পরিষদ গঠিত হতো। এটাকেই বলাহত পঞ্চায়েত। প্রধানকে বলাহত সর্দার। ইংরেজ আমলে ছিল পঞ্চায়েতের ভরা যৌবন। প্রথাটি বিশেষভাবে আইনি বৈধতা পায় ১৮৫৭ সালে । ১৮৭০ সালে প্রথম বঙ্গীয় গ্রাম চৌকিদার আইনের মাধ্যমে আধুনিক গ্রাম পঞ্চায়েত ব্যবস্থা গড়ে ওঠে। পঞ্চায়েত ব্যবস্থা হলো শক্তিশালী স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা। জমি-জমার বিরোধ,পারিবারিক কলহ,সংঘর্ষ,আর্থিক লেনদেন,বিয়ে-শাদী,লাশ, ধর্মীয় অনুষ্ঠান ইত্যাদি বিষয়ে ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে পঞ্চায়েত প্রথা। এ প্রথার মাধ্যমে গ্রামের মানুষের মধ্যে ঐক্য অটুট থাকে এবং একে অপরের প্রতি সৃষ্টি হয় মমত্ববোধ। ছোট ছোট সৃষ্ট বিরোধসমূহ বড় আকার ধারণ করার আগেই গ্রামের সর্দারের নেতৃত্বে পঞ্চায়েত বসে নিস্পত্তি করা হয়। বিরোধ সমাধা হওয়ার পর উভয় পক্ষের মধ্যে সেই অগ্নিশর্মা ভাবটি আর থাকে না।
এ ভাবেই উপমহাদেশে শত শত বছর যাবত জনপ্রিয় পঞ্চায়েত ব্যবস্থাটি চলে আসছে। ভারতের পশ্চিম বঙ্গে পঞ্চায়েত প্রথা খুব জনপ্রিয় এবং আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় বেশ কার্যকর একটি পন্থা।এখন আধুনিক ডিজিটাল যুগে বাংলাদেশে সমাজ রক্ষাকবচ জনপ্রিয় মাধ্যম পঞ্চায়েত ব্যবস্থা কিছুটা হ্রাস পেলে ও গ্রামাঞ্চলে এখন ও বেশ জনপ্রিয়।
বানিয়াচং প্রেক্ষাপট ঃ পৃথিবীর মহাগ্রাম এক সময়ের লাওড় রাজ্যের রাজধানী হাওড়-বাওড় বেষ্টিত অনিন্দ্য সৌন্দর্যঘেরা বানিয়াচং । এ গ্রামের ইতিহাস প্রায় ১২ শ’বছরের । আবহমান কাল থেকেই বানিয়াচংয়ে পঞ্চায়েত ব্যবস্থা চালু রয়েছে। যা আজ ও স্ব-মহিমায় বিদ্যমান। বানিয়াচঙ্গের মধ্যেই অসংখ্য পাড়া-মহল্লা রয়েছে। প্রত্যেক এলাকায় শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার লক্ষ্যে ১জনকে সর্দার নিযুক্ত করা হয়। ৩/৪ মিলে ১জনকে ছান্দের সর্দার নিযুক্ত করা হয়। সংঘর্ষ ও জায়গা সংক্রান্ত সমস্যাসমূহ খুব সুন্দরভাবে সমাধান হয়ে আসছে পঞ্চায়েত ব্যবস্থার মাধ্যমে। পঞ্চায়েতের মাধ্যমে বিচার প্রার্থীকে খুব সহজে ব্যয় ছাড়া সুষ্ঠু বিচার পাওয়ার নজির অসংখ্য রয়েছে। যদি ও কালভদ্্ের দু’একটি ব্যতিক্রম ঘটনা ও ঘটে থাকে। গ্রামীণ বিচারককে সবাই শ্রদ্ধা ও সমীহ করেন।সমাজ রক্ষায় পঞ্চায়েত ব্যবস্থা এবং সর্দারদের শ্রম ও ত্যাগ অপরিসীম। বানিয়াচঙ্গে আদিকাল থেকেই পঞ্চায়েত ব্যবস্থা প্রথা রয়েছে এবং প্রয়াত সর্দারদের আজও শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করা হয়।
লেখক : সম্পাদক ও প্রকাশক, ‘তরঙ্গ টুয়েন্টিফোর ডট কম’।