মোঃ সেলিম উদ্দিন : সুখের এ পৃথিবী, সুখেরই অভিনয়, যতোই আড়ালে রাখো, আসলে কেউ সুখী নয়; রুপালী গিটার ফেলে না ফেরার দেশে চলে যাওয়া আইয়ুব বাচ্চুর গাওয়া এ গানটি বোধ করি সবার মনের অপ্রকাশিত কথাকেই প্রকাশ করেছে। এ ভব সংসারে সুখী মানুষের খোঁজ পাওয়া দুস্কর।
কম বেশী সবাই যখন নিজের কাছে নিজে প্রশ্ন করে তখন সে সুখী না দুঃখী তার উত্তর মেলাতে পারে না। যার হাত নেই সে দু’টি হাতের মানুষকে দেখে নিজেকে দুখী ভাববে এটাই স্বাভাবিক। যার যা প্রয়োজন তার কোন একটার অপূর্ণতাই তাকে দুঃখী মানুষের কাতারে নিয়ে যায়। মহান আল্লাহ মানুষকে আশরাফুল মাখলুকাত অর্থাৎ সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে সৃজন করেছেন।
মায়ের গর্ভে জন্ম নিয়ে আমরা রঙিন পৃথিবীর আলো দেখে সুখ নামক দূর্লভ বস্তুটির পানে বিরামহীন ছুটে চলি। ছুটতে ছুটতে যখন ক্লান্তি আসে, তখন চাওয়া পাওয়ার হিসেব মিলাতে বসি। হিসেব কষে প্রাপ্তির খাতা যখন শূন্য দেখি, তখন রাজ্যের হাজারো দুঃখ মনের ভিতরে বাসা বাঁধে।
একটু খেয়াল করলে দেখা যাবে হতাশার কারণে যেমন মাদকসেবী কিংবা অপরাধীর সংখ্যা বেড়েছে তেমনি হৃদরোগীর সংখ্যাও বহুগুণে বেড়েছে।

যারা হতাশার কারণে অপরাধের পথ বেছে না নিয়ে দুঃখকে মনের মাঝে পুষে রাখে তারা হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে অকাল মৃত্যুবরণ করেন।
সুখের সংজ্ঞা একেকজনের কাছে একেক রকম। কেউ অল্পতেই সুখী হওয়ার চেষ্টা করেন, কেউ আবার অনেক পেয়েও সুখী হতে পারেন না। সুখ না থাকলে অসুখ শরীরে বাসা বাঁধে। কোন ঔষধে তা নিরাময় হয়না। এ পৃথিবীতে না পাওয়ার বেদনায় ভোগেননি এমন মানুষ খোঁজে পাওয়া কঠিন হবে। গানের ভাষায় মাঝে মাঝে বলি, সুখ তুমি কি বড় জানতে ইচ্ছে করে। জানার এ ইচ্ছা কখনো পূরন হবে না।
কারণ প্রকৃত অর্থে সুখ কি এটা এখন পর্যন্ত কেউ জানতে পারেনি। কেউ বুকে হাত দিয়ে সৎ সাহস নিয়ে বলতে পারবে না সে পরিপূর্ন সুখী। সমাজ জীবনে, কর্ম জীবনে, সংসার জীবনে কেউ পরিপূর্ণ সুখ ভোগ করেছে বা ভোগ করতে পারছে তা কেউ বলতে পারবে না।
লেখার শুরুতে বলেছিলাম যার একটি হাত নেই সে অন্যের দুটো হাত দেখে নিজেকে দুখী ভাববে এটাই স্বাভাবিক। আসলে আমরা সবাই সুখের পাগল। কেউ কেউ নিজের কষ্ট গুলোকে বুকের মধ্যে চাপা রেখে এ পৃথিবীতে সুখী হওয়ার অভিনয় করে।
আড্ডায় হাসি খুশি থাকা মানুষটিকে দিন শেষে নীরব থাকতে দেখা যায়। যাত্রা মঞ্চে রাজার চরিত্রে তুখোড় অভিনয় করা মানুষটির বাস্তব জীবনে অর্থের অভাবে বিনা চিকিৎসায় মরতে হয়। সুখ পাখিটি খাচায় যত্ন করে পুষে রাখলেও ফাঁক পেলেই সে উড়াল দেয় !!!
লেখক : গল্পকার ও পিএস, হবিগঞ্জ-২ আসনের মাননীয় সাংসদ , হবিগঞ্জ।