শিব্বির আহমদ আরজু : রাখাইন শব্দটি এসেছে পালি শব্দ রাক্ষাপুরা থেকে। যার প্রতি শব্দ হলো রাক্ষসপুরা, অর্থাৎ রাক্ষসদের আবাসভূমি। ৮ম শতাদ্বিতে আরব থেকে এক দল মানুেষর আরাকান রাজ্যে আঘমন ঘটে। ১৪৩০ থেকে ১৭৮৪ সাল অবধি ২২ হাজার বর্গ মাইলের আয়তনের রোহাঙ্গা স্বাধীন রাজ্য ছিল। যার নাম ছিল আরাকান রাজ্য। মধ্য যুগের মহা কবি আলাওল আরাকান রাজসভার কবি ছিলেন। ২৭২ হিজরীতে আরাকান রাজ্য খলিফা হযরত হারুনুর রশীদ (রহ.) এর রাজ্যের অন্তর্ভূক্ত ছিল।
১৭৩১ থেকে ১৭৮৪ সাল অবধি আরাকান রাজ্যটি সম্পূর্ণ মুসলমান সরকার ছিল। এ সময়ের মধ্যে ১৩জন রাজা শাসন করেন। ১৪০৪ সালে বৌদ্ধ রাজা নরমিখলা ২৪ বছর বছর বয়সে পিতার সিংহাসনে আরোহণ করেন। এর আগে ১০৪৪ সালে আরাকান রাজ্য দখলদার কট্রর বৌদ্ধ বর্মী রাজা আনওয়াতা মগদের বার্মা থেকে দক্ষিণাঞ্চলে রোহিঙ্গাদের বিতাড়িত করে বৌদ্ধ বসতি স্থাপন করান। রাখাইনে দু’টি সম্প্রদায়ের বসবাস। ¤্রগরা দুষ্টু প্রকৃতির হওয়ার কারণেই মগের মুল্লুক শব্দটি তাদের সাথে ওতপ্রোত ভাবে মিশে গেছে ।
কোন ব্যক্তি বা সম্প্রদায় ন্যায়-অন্যায়ের তোয়াক্কা না করে বল প্রয়োগ করে কাজ করলে এ ক্ষেত্রে এদেশেও মগের মুল্লুক শব্দটি ব্যবহার হয়।এক সময় ¤্রগদের দৌরাত্ম ছিল ঢাকা পর্যন্ত, পরে মোগলরা তাদের পাহাড়ে পাঠিয়ে দেয়। ১৮২৪ সালে বৃটিশরা দখল করে নেয় বার্মাকে।১২৪ বছর বার্মা বৃটিশরা শাসন করার তুমুল আন্দোলনের মুখে একটি জাতিগত জরিপ করা হয়।তখন ১৩৯ জাতি গোষ্ঠির মধ্যে রোহিঙ্গা মুসলমানরা ছিলনা।মুসলমানদেও কৌশলগত কারণে সে সময় বৃুটিশ কর্তৃক জরিপ থেকে বাদ দেয়া হয়।ঐতিহাসকিদের মতে তখন থেকেই মূলত রোহিঙ্গা মুসলমানদের ললাটে অবর্ণনীয় দুঃখ-দূর্দশার বীজ বপন করা হয়েছে।

পরে ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি বার্মা বৃটিশদের থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। বার্মার স্বাধীনতার সময় সাবেক আরাকানিরা মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তানের সাথে মিশে যাবার ইচ্ছা প্রকাশ করে। এটাই তাদের জন্য কাল হয়েছে। পরে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ আরাকানকে পাকিস্তানের অন্তর্ভূক্ত করতে অস্বীকৃতি জানান। এখানেও কৌশলগত অনক মার খেয়েছে আজকের রোহিঙ্গারা। তারপরও রোহিঙ্গাদের বার্মার সংসদে প্রতিনিধি ছিল, ছিল উচ্চ পদস্থ সরকারি আমলা। ১৯৬২ সালে জেনারেল নে উইন সামরিক অভূত্থান ঘটিয়ে ক্ষমতা দখল করে নেন। সামরিক জান্তা বৃটিশদের সেই জাতিগত জরিপ অনুসরণ করে রোহিঙ্গারা সে দেশের অধিবাসীয় নয় বলে অস্বীকৃতি জানায়।
তখন রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর মৌলিক অধিকার শিক্ষা,স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ বঞ্চিত করা হয়। শুধু তাই নয় বিয়ে করার অনুমতি নেই এমনকি সন্তান হলে নিবন্ধন নেই, সরকারি চাকুরী তো দূরের কথা। রোহিঙ্গারা সেখানের স্কুল/কলেজ থেকে লেখাপড়া করা থেকে বঞ্চিত হয় এবং মাদরাসায় একটু আধটু লেখা পড়া করেছে। এখান থেকে সহজেই অনুমেয় একটি জাতি- জনগোষ্ঠিকে শিক্ষা থেকে অন্ধকারে রাখতেই এসব মারাত্মক অবৈধ আইন আরোপ করা হয়। ১৯৮৯ সালে বার্মা নাম পরিবর্তন করে মিয়ানমার রাখা হয়।
ভাগ্য বিড়ম্বিত সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর ১৯৭৮,১৯৯১-১৯৯২,২০১২,২০১৫,২০১৬-২০১৭ সালে সামরিক জান্তাদের বর্বর হামলায় বহু মানুষ মারা যায় এবং বহু মানুষ মিয়ারমার ছেড়ে পাশর্^বর্তী বাংলাদেশ সহ বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছে। এর মধ্যে ইতিহাসের নৃশংসতম গণ হত্যা চলছে মিয়ানমারে।২০১৩ সালে জাতি সংঘ রোহিঙ্গাদের বিশ্বের অন্যতম নিগৃহীত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠি হিসেবে উল্লেখ করেছে। যতদ্রুত সম্ভব ভাগ্য বিড়ম্বিত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিয়ে পূনর্বাসন করে মৌলিক অধিকার নাগরিকত্ব প্রদান করতে হবে।
লেখক- সম্পাদক ও প্রকাশক, তরঙ্গ টুয়েন্টিফোর ডটকম।