মাওলানা শায়েখ সিরাজুল ইসলাম ।। ইসলামে ৫ম স্তম্ভ হচ্ছে রোজা। রোজাকে আরবিতে বলা হয় সাওম। সাওম বা সিয়াম এর আবিধানিক অর্থ বিরত থাকা। শরীয়তের পরিভাষায় সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার, যৌনাচার হতে বিতরত থাকাকে সাওম বা রোজা বলা হয়। ( ফতওয়ায়ে শামী ২য় খন্ড)।
রোজা রাখার নিয়ম সর্বকালে এবং সর্ব যুগে প্রচলিত ছিল। হযরত আদম (আঃ) থেকে শুরু করে বিশ্বনবী হযরত মুহম্মদ (সা.) পর্যন্ত সকলেই সিয়াম বা রোজা পালন করেছেন বিভিন্ন নিয়মে বা পদ্ধতিতে।
পরবর্তীতে রোজা যখন ফরজ হয়ে যায় তখন পূর্বের সকল নিয়ম বা পদ্ধতি রহিত হয়ে যায়। পূর্বেকার ধর্মে রোজাকে এক আনুষ্ঠানিক অনুষ্ঠান মনে করা হতো। রোজার ক্ষেত্রে কোন কোন ধর্মে এত বাড়াবাড়ি ছিল যে, একটানা ৪০ দিন পর্যন্ত খাদ্য গ্রহণ নিষিদ্ধ ছিল। আবার কোন কোন ধর্মে এত শীতিলতা ছিল যে, কেবল গোস্ত জাতীয় খাবার বর্জন করাকেই রোজার জন্য যথেষ্ট মনে করা হতো।
তাই এহেন অবস্থাতে রোজাকে রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের দিকে ফিরিয়ে আনার লক্ষে এবং একে আত্মিক, নৈতিক ও চারিত্রিক কল্যাণের ধারক বানানোর জন্য মহান রাব্বুল আলামিন বান্দার উপর রোজা ফরজ করেছেন। পবিত্র কোরআনুল কারীমে বলা হয়েছে যে, হে ইমানদারগণ, তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হলো, যেমনিভাবে তোমাদের পূর্বেকার জাতির উপর ফরজ করা হয়েছিল। যাতে তোমরা ত্বাকওয়া অর্জন করতে পার। ( সূরা বাকারা- ১৮৩ নং আয়াত)।
রোজা মূলত ত্বাকওয়ার প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছে। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে যেভাবে কোন কাজ বা কর্ম করতে সহজ হয়, ঠিক তেমনিভাবে ত্বাকওয়ার প্রশিক্ষণ নিলে পরবর্তী আমল করতে সহজ হয়।
এই জন্য রমজানে শয়তানকে জিঞ্জিরে আবদ্ধ করে রাখা হয়। যাতে বান্দা নৈকট্যলাভের সুযোগ পায়।
রোজা হলো ঢাল স্বরূপ। যতক্ষণ না এই ঢালকে ছিদ্র করা হয়। ( আল হাদীস)
রোজা ক্ববুল হওয়ার জন্য কয়েকটি শর্ত।
# রোজাকে প্রাণবন্ত করতে হলে জবানের হেফাজত করতে হবে। কারণ, জবারে মাধ্যমেই অনেক গুনাহ সংঘটিত হয়ে থাকে। যেমন- গালাগালি, গীবত, সমালোচনা করা ,কটুকথা ও মিথ্যা কথা বলা প্রভৃতি।
ইবী করিম (সা.) বলেছেন, যারা মুখ এবং গুপ্তাঙ্গের হেফাজতের দায়িত্ব নিবে আমি তাদেরকে জান্নাতে নিয় যাবার দায়িত্ব নিব। (মেশকাত শরীফ)
# চোখের হেফাজত। যেমন হারাম জিনিস ও অশ্লীল পর্ণ ছবি না দেখা।
# কানের হেফাজত করা। যেমন- গান-বাজনা ও একে অপরের সমালোচনা না শোনা।
# অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যেঙ্গের হেফাজত করা। যেমন- হাত-পা ইত্যাদি।
# ইফতারের সময় অধিক ভোজন না করা। এতে নামাজের সময় চলে যায়।
# আল্লাহর নিকট ভয় রাখা আমি যে রোজা রাখলাম সেটা ক্ববুল হচ্ছে কি না।
# হারাম মাল ভক্ষণ না করা।
মহান রাব্বুল আলামিন মানবজাতিকে ইবাদেতর জন্য সৃষ্টি করেছেন। তার মধ্যে রমজানের রোজা হলো অন্যতম। কাজেই পবিত্র রমজান মাস যেন আমাদের গুনাহ মাফের মাস হয় এবং মহান অল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি। আমীন
(চলবে)
লেখক : সাধারণ সম্পাদক, বানিয়াচং ইমাম সমিতি।