চারণ সাংবাদিক মোনাজাত উদ্দিন। একটি নাম, একটি ইতিহাস। মফস্বলে বসবাস করেও দেশও জাতির কল্যাণে বিশদ অবদান রাখা যায় তা ইতিহাসে স্বাক্ষর হয়ে আছেন তিনি। মোনাজাত উদ্দিন দৈনিক সংবাদে পথ থেকে পথে ধারাবাহিক সংবাদ লিখে খ্যাতি লাভ করেন।
জন্ম : মোনাজাত উদ্দিন ১৮ জানুয়ারি ১৯৪৫ সালে রংপুর জেলার গঙ্গাচড়া উপজেলার মহিপুর গ্রামে এক মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। পিতার নাম আলিম উদ্দিন ও মাতার নাম মতিজান নেছা।
কর্মজীবন : ১৯৬৬ সালে প্রথমে দৈনিক আজাদ পত্রিকার রিপোর্টার হিসেবে সাংবাদিকতায় তাঁর হাতেখড়ি। এরপর নিজের প্রকশনায় ‘দৈনিক রংপুর’ প্রকাশিত হয়। এরপর ১৯৯৫ সালে মোনাজাত উদ্দিন দৈনিক সংবাদ থেকে দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকায় যোগদান করেন।
তিনি যে কোন সংবাদের স্পটে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করতেন। কারও শোনা/আন্দাজের উপর কখনও কোন সংবাদ লিখেননি। ৫ ডব্লিউ এবং ১ সেমি ডব্লিউ এর মাধ্যমে সংবাদ লিখেছেন মোনাজাত উদ্দিন। যে কারণে একের পর এক অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার ফলে রাঘববোয়াল/অপরাধ জগতের দুস্কৃতিকারীদের অন্তরে কম্পন সৃষ্টি হয়েছে। জেনে রাখা আবশ্যক যে, যে কোন সংবাদ যদি তথ্য উপাত্ত্বের ভিত্তিতে প্রকাশ হয় তাহলে সংবাদকর্মীকে পরাজিত করা খুব কঠিন কাজ।
আর যদি সংবাদে তথ্যের ঘাটতি থাকে তাহলে যে কেউ সংবাদকর্মীকে জবাবদিহিতার মধ্যে আনতে পারবে। মোনাজাত উদ্দিন যা সত্য এবং বস্তুনিষ্ট তাই প্রকাশ করেছেন । যে কারণে একেকটা সংবাদে সারা দেশে তখনকার সময়ে ঝড় তুলেছে। তিনি ছিলেন খাঁটি দেশপ্রেমিক ও নির্লোভ।
মৃর্ত্যু : ২৯ ডিসেম্বর ১৯৯৫ সালে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে যমুনা নদীতে ড্রেজিং পয়েন্টের ছবি তুলতে গিয়ে পানিতে পড়ে মারা যান তিনি। এ কিংবদন্তি সাংবাদিক ধরাধামে বেঁচে ছিলেন মাত্র ৫০ বছর। ২ মেয়ে ও ১ ছেলের জনক তিনি।
পুরস্কার : চারণ সাংবাদিক মোনাজাত উদ্দিন ফিলিপস পুরস্কার, সাংবাদিক জহুর উদ্দিন স্মৃতি পদক ও ১৯৯৭ সালে মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত হয়েছেন।
আজকের সাংবাদিকতার প্রেক্ষিত : মফস্বলে তখনকার সাংবাকিতা ও এখনকার সাংবাদিকতার মাঝে বিস্তর ফারাক। আগেকার সাংবাদিকগণ সংখ্যায় কম হলেও অনেক গুণে গুনান্বিত ছিলেন। তারা ছিলেন, সৎ, খাঁটি দেশপ্রেমিক, পেশার প্রতি শতভাগ আন্তরিক, পেশাকে সমুন্নত রাখতে সবসময় ছিলেন সচেতন ও শেখার মানসিকতা ছিল প্রবল।
এখন সংখ্যায় খুব বেশি হলেও এসব গুণ অধিকাংশের মাঝে অনুপস্থিত। একটা সংবাদ কতবার যে কপি হয় তা বলতেও লজ্জা লাগে ! আর সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পড়াশোনা নেই বললেই চলে। সংবাদের একটি লাইন লেখার মুরদ নেই, তিনিও পকেটে কলম নিয়ে অফিস-আদালতে দিব্ব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
কেউ কেউ নিচ্ছেন বৈধ/অবৈধ সুবিধা। অথচ মাঠ পর্যায়ের অনেক সৎ সাংবাদিকরা নৈতিক যে সুবিধা আছে তা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন। অনেকে সক্রিয় সাংবাদিকতা করতে গিয়ে নিজের পকেট থেকে টাকা ব্যয় করছেন মাসের পর মাস/বছরের পর বছর। তাদের দুঃখ কেউ দেখেন না।
সত্যিকারের সাংবাদিকগণ স্বীয় পেশাকে সমুন্নত রাখতে গিয়ে সংগ্রাম করে যাচ্ছেন।
লেখক : সাধারণ সম্পাদক, বানিয়াচং মডেল প্রেসক্লাব, বানিয়াচং, হবিগঞ্জ।