সাইফুল আমিন :
চটকদার হেডলাইন আর সাংবাদিক পরিচয়ে দাপিয়ে বেড়ানোর নামই সাংবাদিকতা না। এজন্যে প্রয়োজন মেধাকে শাণিত করে তোলা। নিয়মিতভাবে সংবাদ গঠন,পর্যবেক্ষণ এবং বিশ্লেষণ করা। শুধু উচ্চতর শিক্ষা থাকলেই সাংবাদিক হওয়া যায় না। সাংবাদিক হতে গেলে শিক্ষার পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন মেধা এবং সততা। সঠিক সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যমে পাঠকের অনুভূতিকে নাড়া দেয়া। মানব জীবনকে ন্যায়-নীতি ও আদর্শের পথে পরিচালনা করার জন্যে মেধা এবং মননকে সঠিকভাবে কাজে লাগানো। সাংবাদিকের সংখ্যা বেড়ে গেলেই বা চটকদার হেডলাইন দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করলেই সামাজিক বিকাশ সাধিত হয়না, প্রয়োজন গুণগত বিকাশ।
ভুল এবং মিথ্যা সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে শুধুমাত্র একজন ব্যক্তিই ক্ষতিগ্রস্থ হন এমন টা নয়,এতে সমাজ,সামাজিক অবস্থা এবং রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে থাকে। যে কোন সাংবাদিকের ভুল হতেই পারে এটাই স্বাভাবিক। যেমন ঐচ্ছিক ভুল বা তথ্যগত ভুল। কিন্তু যখন সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যমে নৈতিকতার ভুল হয় তখন সমাজ এবং সামাজিক অবস্থা বিপর্যয়ের সম্ভাবনা বেশি থাকে। ইদানিং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রবেশ করলেই প্রায়ই দেখা যায়,সাংবাদিক এবং সাংবাদিকতা নিয়ে অনেকেই নানাবিধ রসালো লেখা- লেখি করেন,বিশেষ করে হলুদ সাংবাদিকতা নিয়ে। এতেকরে হলুদ সাংবাদিকের ভীরে অনেক গুণী সাংবাদিকর কদরও কমে যাচ্ছে। তবে অবশ্যই আমাদের আমাদের গুণী সাংবাদিকদের কদর করা শিখতে হবে।পাশাপাশি হলুদ সাংবাদিকদের বয়কট বা এড়িয়ে চলতে হবে। এখন কথা হলো গুণী সাংবাদিকের ভীরে হলুদ সাংবাদিক চিনবে কি করে? হলুদ সাংবাদিক চেনার সহজ উপায় হলো। হলুদ সাংবাদিকতা বলতে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে ভিত্তিহীন রোমাঞ্চকর সংবাদ পরিবেশন বা উপস্থাপনাকে বুঝায়। এ ধরণের সাংবাদিকরা ভালো করে খোঁজ-খবর না করেই দৃষ্টিগ্রাহী,চটকদার শিরোনাম দিয়ে সংবাদ পরিবেশন করে থাকেন। হলুদ সাংবাদিকতার মূল উদ্দেশ্য হলো সাংবাদিকতার রীতি-নীতি না মেনে যেভাবেই হোক পাঠকদের চোখে আসা।
অর্থাৎ- হলুদ সাংবাদিকতা মানেই ভিত্তিহীন সংবাদ পরিবেশন, দৃষ্টি আকৰ্ষণকারী শিরোনাম ব্যবহার করা। সাধারণ ঘটনাকে একটি সাংঘাতিক ঘটনা বলে প্ৰতিষ্ঠা করার চেষ্টা করা। কেলেংকারির খবর গুরুত্ব সহকারে প্ৰচার করা, অহেতুক চমক সৃষ্টি ইত্যাদি। এসব হলুদ সাংবাদিকের দৌরাত্ম্য বেশি দেখা যায় অনলাইন পত্রিকায়। তবে এমনও অনলাইন পত্রিকা আছে,যেখানে নিউজ প্রকাশ করার আগে গুরুত্ব সহকারে নিউজের সত্যতা যাচাই করে থাকেন। তারা ত্রুটিপূর্ণ বা ভুলভাল নিউজ প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকেন। এসব হলুদ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে পাঠকের পাশাপাশি প্রশাসনের একটু নজরদারী বাড়ানো দরকার বলে মনে করেন সমাজের অভিজ্ঞ মহল। তাহলে হয়তো সমাজ এবং সামাজিক অবস্থার আরও উন্নতি হবে।
লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট, স্পেন।