ঢাকা ০৭:১৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo সাংবাদিক মঈন উদ্দিন এঁর পিতার মৃত্যুতে তরঙ্গ২৪.কম পরিবার গভীরভাবে শোকাহত Logo গ্যানিংগঞ্জ বাজার ব্যবসায়ী কল্যাণ পরিষদের উদ্যোগে নানা আয়োজনে মহান বিজয় দিবস উদযাপন Logo মহান বিজয় দিবসে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছে বানিয়াচং মডেল প্রেসক্লাব Logo দেশবাসীকে মহান বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ‘বানিয়াচং ইসলামি নাগরিক ফোরাম’ নেতৃবৃন্দ Logo নূরানী শিক্ষা বোর্ডে মেধা তালিকায় ২য় হয়েছে গ্যানিংগঞ্জ বাজার নূরানী মাদ্রাসার ছাত্রী মুনতাহা আক্তার Logo বানিয়াচংয়ে ১২কেজি গাঁজাসহ কুখ্যাত ৩ মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার Logo বানিয়াচং শাহজালাল কে.জি স্কুল ২০২৩ বৃত্তি পরীক্ষায় ঈর্ষণীয় সাফল্য Logo চেয়ারম্যান মোঃ আনোয়ার হোসেন ডা. ইলিয়াছ একাডেমির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নির্বাচিত Logo ৪০তম তাফসিরুল কোরআন মহা সম্মেলন সফল করায় আলহাজ্ব রেজাউল মোহিত খানের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ Logo ইফার সাবেক ফিল্ড অফিসার আব্দুল ওয়াদুদের মৃত্যুতে জেলা মউশিক কল্যাণ পরিষদ নেতৃবৃন্দের শোক

প্রবন্ধ : নারী নির্যাতন ও কিছু কথা

  • তরঙ্গ ২৪ ডেস্ক :
  • আপডেট সময় ০১:১০:৫৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২১
  • ১৭৯ বার পড়া হয়েছে

শরদিন্দু ভট্টাচার্য্য টুটুল :
আজকাল পত্র-পত্রিকা খুললেই আমারা দেখতে পাই আমাদের চারিদিকে বখাটেদের দৌরাত্ব্য এতোটাই বেড়েছে যে, যা দেখলে মনের মাঝে প্রশ্ন জাগে, কে কিংবা পর্দার আড়ালের কোন অশুভ রাজনৈতিক শক্তি এসব বখাটেদেরকে এতোটা সাহস যোগায়। আবার এমন প্রশ্নও মনে আসে কোথায় বখাটেরা আশ্রয় প্রশ্রয় পেয়ে থাকে। রাষ্ট্র যন্ত্র কেন এসব বখাটের সামনে অসহায় মুখ ও বধির হয়ে থাকে। থানা পুলিশ যেনো অসহায়ের মতো চেয়ে চেয়ে নিজেদের ব্যর্থতার গ্লানি নিয়ে কষ্ট পেয়ে থাকে।
যারা পত্র-পত্রিকা নিয়মিত পড়ে থাকেন তারা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন, প্রতিদিনের পত্র-পত্রিকায় কোন না কোন পৃষ্ঠায় কিশোরী ধর্ষণের খবর কিংবা বখাটেদের জন্য স্কুল-কলেজের ছাত্রীরা স্কুল-কলেজে যেতে পারছে না কিংবা বখাটেদের অপমান সহ্য করতে না পেরে কিশোরী/তরুনীরা আতœহত্যা করছে এমন সংবাদ। আবার এরুপ সংবাদও পড়ে থাকবেন যে, বখাটেদের জ্বালায় স্কুল-কলেজে ছাত্রীরা পড়াশোনা বন্ধ করে ঘরবন্দী হয়ে আছে। বখাটেদের পিতা মাতার কাছে অসহায় মেয়ের পিতা মাতারা কোন বিচার পান না। কেউ যদি একটু বিষয়টা তলিয়ে দেখেন, তাহলে দেখবেন বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই বখাটেদের অভিভাবকরা বয়সকালে এমনি বখাটে ছিল। রাস্তায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে স্কুল-কলেজগামী মেয়েদের উত্যক্ত করত। তা না হলে একজন লোক তার পুত্রের বখাটেপনার শাসন না করে কেন ছেলের বখাটেপনায় উৎসাহ যোগান। পরিবার থেকে যখন একটা ছেলে বখাটেপনা কিংবা দুর্বৃত্তপনায় উৎসাহ পেয়ে থাকে, তখন সেই ছেলের চোখে-মুখে কে মার সমান কিংবা কে ছোট বোনের মত তা নষ্টদের চোখে লাগে না। অবশ্য তা লাগবারও কথা নয়। নষ্টরা সকল সময় নষ্টই হয়ে থাকে।
আমরা যদি দেশে ঘটে যাওয়া নারী নির্যাতনের পরিসংখ্যানের দিকে একটু দৃষ্টি ফেলি, তাহলে দেখতে পাবো দেশের মাঝে নারী কিংবা কিশোরী নির্যাতন কোভিড-১৯ ভাইরাসের মত ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। সংবাদ ভাষ্যমতে শুধুমাত্র আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর শৈথিল্যের জন্য ৮ মাসে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৮৮৯টি এবং যৌতুকের ঘটনা ঘটেছে ১৬৩টি। সংবাদ পত্রে প্রকাশিত এক পরিসংখ্যানে বলা হয় যে, আইন ও শালিস কেন্দ্র হতে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী চলতি বছরের জানুয়ারি হতে আগস্ট মাস পর্যন্ত সময়ে ৮৮৯ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। তার মধ্যে গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১৯২ জন নারী।
শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৬৬ জন নারী। ধর্ষণের পর মৃত্যু হয়েছে ৪১ জনের। ধর্ষণের পর আতœহত্যা করেছেন ৯ জন। ধর্ষণের চেষ্টা করা হয় ১৯২ জন নারীকে। গত ৮ মাসে স্বামীর নির্যাতনে মারা যান ১৬৩ জন নারী। শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়ে ৫৫ জন নারী মারা যান। এসিড হামলার শিকার হন ১৭ জন নারী। শুধুমাত্র নারীদের উপরই যে এমন ভয়াবহ নির্যাতন হয়ে থাকে তা নয়। পরিসংখ্যান বলছে আমাদের কন্যা শিশুরাও যৌন সহিংসতার শিকার হয়ে থাকে। বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামে দেয়া তথ্যমতে গত জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত ৩২৪ জন কন্যা শিশু ধর্ষণের শিকার হয় এবং যৌন নির্যাতনের শিকার হয় ১০৪ জন শিশু।

 

ছবি- নারী নির্যাতনের দৃশ্য (প্রতিকী ছবি)।

আমরা যদি উপরের পরিসংখ্যানের একটা যৌক্তিক ব্যাখ্যা করতে যাই, তাহলে দেখতে পাব দেশের মাঝে নারী নির্যাতন, কিশোরী ও কন্যা শিশু নির্যাতন জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই নির্যাতন বাড়ছে এই জন্য যে, দেশের এক শ্রেণির রাজনৈতিক নেতাদের বখাটেদের দলে টানার জন্য এবং অনেক ক্ষেত্রে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অবহেলা কিংবা কর্তাব্যক্তিদের ইচ্ছাকৃত অবহেলা পরিলক্ষিত হয় বখাটেদের দৌড়াত্বের ক্ষেত্রে। বখাটেদের দ্বারা আক্রান্ত হয়ে দেশের কিশোরী/তরুণীরা আতœঘাতী হয়ে থাকে কিংবা বখাটেদের হামলায় মৃত্যুবরণ করে থাকে। আমরা প্রায়ই পত্র-পত্রিকায় দেখে থাকি, কিন্তু সমাধানের ব্যাপারে যাদের কিছু করার কথা তারা কিছুই করছেন না। আমাদের এক শ্রেণির রাজনীতিবিদরা এতোটাই লাগামহীন হয়েছেন যে, তারা তাদের রাজনৈতিক ভিত্তিকে শক্ত কাঠামোর মধ্যে দাঁড় করাবার জন্য এমন সব লোকদের কিংবা বখাটে সন্ত্রাসীদের দলে টানেন, যা দেখে সত্যিকার অর্থে যারা দেশের জন্য কিছু করতে চান সেইসব হৃদয়বান রাজনীতিবিদরা রাজনীতির পথ আর ধরেন না। কেননা সচেতন ব্যক্তিবর্গরা ভালো করেই জানেন, রাজনীতির মাঠে এখন এমন সব মানুষের আমদানি হয়েছে, যাদের ঠেলায় ভালো মানুষরা মানুষের জন্য কিছু করতে পারবেন না। একটা কথা সবারই মনে রাখা উচিত দেশের রাজনীতির মাঠে যখন একশ্রেণির নষ্ট রাজনীতিকদের প্রভাব প্রতিপত্তি বেড়ে যায়, তখন নীলা রায়ের মতো কিশোরীরা রাস্তার বখাটের দ্বারা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করবেই। তা রাষ্ট্র কিংবা কেউ ঠেকাতে পারবে না। কেননা রাজনীতির মাঠে নষ্ট রাজনৈতিকরা নিজেদের পদ পদবী ঠিক রাখার জন্য আজ যা ইচ্ছা করতে পারেন। এমনকি নিজের আপন বন্ধু কিংবা সন্তানকেও যদি বলি দিতে হয়, তা-ও তারা করতে পারবেন। একটা বখাটে কিভাবে সাহস পায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে আমাদের কন্যাদের উত্যক্ত করার কিংবা গৃহবধূকে ধর্ষণ করার কিংবা ছাত্রীদের জড়িয়ে ধরার কিংবা ভাইয়ের হাত থেকে জোর করে টেনে-হিঁচড়ে তুলে নিয়ে হত্যা করার। বখাটের দল তখনই সাহস পায়, যখন একটা বখাটে কিংবা বখাটের দল বুঝে যে, সে যতই দূর্বৃত্তপনা করুক না কেন, একজন পর্দার আড়াল থেকে তাকে কিংবা তাদেরকে কেউ না কেউ কিংবা একজন রক্ষা করে যাবেই। এমনি এমনি সাভারের মিজানুর কিংবা সিলেট এম.সি. কলেজের কতিপয় ছাত্র নামধারী ধর্ষক কিংবা বরগুনার রিফাত হত্যা মামলার আসামী ক্রসফায়ারে নিহত নয়ন বন্ড সৃষ্টি হয় না। তাদের মত ভয়ঙ্কর মানুষদেরকে এক শ্রেণির ক্ষমতাবানরাই সৃষ্টি করে থাকেন। বখাটেদের জন্য পর্দার আড়ালে থাকা একশ্রেণির ক্ষমতাবনরা সাহস না যোগালে বখাটে কিংবা সন্ত্রাসীরা কি সাহস পাবে তাদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড কিংবা বখাটেপনা চালিয়ে যাওয়ার?
এখন স্বাভাবিকভাবেই একটা প্রশ্ন আসতে পারে এই যে এম.সি কলেজের ছাত্রাবাসে গৃহবধূ ধর্ষিত হলো কিংবা আপন দলের বড় ভাই দ্বারা একজন ছাত্রী ধর্ষিত হলো কিংবা নীলা রায়ের মতো একজন কিশোরী চলার পথে কিংবা ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা করতে গিয়ে রাস্তার বখাটের দ্বারা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে, তার দায় কি রাষ্ট্রের নয়? আমাদের সমাজটা কি এতোটাই পঁচে গেছে যে একজন ভাই তার বোনকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে নির্ভয়ে যেতে পারবে না কিংবা একজন স্বামী তার প্রিয়তমা বধূকে নিয়ে কোথাও বেড়াতে যেতে পারবে না কিংবা একজন ছাত্রী কি তার নিজ দলের বড় ভাইদের কাছে নিরাপদ থাকবে না। সাধারণ মানুষ মনে করে রাষ্টের কর্তা ব্যক্তিরা তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছেন না বলেই আমাদের পথ-ঘাট, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাস সবকিছু ধর্ষক-দুর্বৃত্তদের দখলে চলে যাচ্ছে। তাই দেশবাসী মনে করেন আমার এই দেশমাতৃকাকে ধর্ষক ও বখাটে শূন্য করতে এবং আগামী প্রজন্মের জন্য নিরাপদ বাসযোগ্য করার জন্য রাষ্ট্রের কর্তাব্যক্তিদেরই দায়িত্ব নিতে হবে।

লেখক : শরদিন্দু ভট্টাচার্য্য টুটুল
আইনজীবি, কবি ও গল্পকার
কালীবাড়ী সড়ক, হবিগঞ্জ।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

সাংবাদিক মঈন উদ্দিন এঁর পিতার মৃত্যুতে তরঙ্গ২৪.কম পরিবার গভীরভাবে শোকাহত

প্রবন্ধ : নারী নির্যাতন ও কিছু কথা

আপডেট সময় ০১:১০:৫৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২১

শরদিন্দু ভট্টাচার্য্য টুটুল :
আজকাল পত্র-পত্রিকা খুললেই আমারা দেখতে পাই আমাদের চারিদিকে বখাটেদের দৌরাত্ব্য এতোটাই বেড়েছে যে, যা দেখলে মনের মাঝে প্রশ্ন জাগে, কে কিংবা পর্দার আড়ালের কোন অশুভ রাজনৈতিক শক্তি এসব বখাটেদেরকে এতোটা সাহস যোগায়। আবার এমন প্রশ্নও মনে আসে কোথায় বখাটেরা আশ্রয় প্রশ্রয় পেয়ে থাকে। রাষ্ট্র যন্ত্র কেন এসব বখাটের সামনে অসহায় মুখ ও বধির হয়ে থাকে। থানা পুলিশ যেনো অসহায়ের মতো চেয়ে চেয়ে নিজেদের ব্যর্থতার গ্লানি নিয়ে কষ্ট পেয়ে থাকে।
যারা পত্র-পত্রিকা নিয়মিত পড়ে থাকেন তারা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন, প্রতিদিনের পত্র-পত্রিকায় কোন না কোন পৃষ্ঠায় কিশোরী ধর্ষণের খবর কিংবা বখাটেদের জন্য স্কুল-কলেজের ছাত্রীরা স্কুল-কলেজে যেতে পারছে না কিংবা বখাটেদের অপমান সহ্য করতে না পেরে কিশোরী/তরুনীরা আতœহত্যা করছে এমন সংবাদ। আবার এরুপ সংবাদও পড়ে থাকবেন যে, বখাটেদের জ্বালায় স্কুল-কলেজে ছাত্রীরা পড়াশোনা বন্ধ করে ঘরবন্দী হয়ে আছে। বখাটেদের পিতা মাতার কাছে অসহায় মেয়ের পিতা মাতারা কোন বিচার পান না। কেউ যদি একটু বিষয়টা তলিয়ে দেখেন, তাহলে দেখবেন বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই বখাটেদের অভিভাবকরা বয়সকালে এমনি বখাটে ছিল। রাস্তায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে স্কুল-কলেজগামী মেয়েদের উত্যক্ত করত। তা না হলে একজন লোক তার পুত্রের বখাটেপনার শাসন না করে কেন ছেলের বখাটেপনায় উৎসাহ যোগান। পরিবার থেকে যখন একটা ছেলে বখাটেপনা কিংবা দুর্বৃত্তপনায় উৎসাহ পেয়ে থাকে, তখন সেই ছেলের চোখে-মুখে কে মার সমান কিংবা কে ছোট বোনের মত তা নষ্টদের চোখে লাগে না। অবশ্য তা লাগবারও কথা নয়। নষ্টরা সকল সময় নষ্টই হয়ে থাকে।
আমরা যদি দেশে ঘটে যাওয়া নারী নির্যাতনের পরিসংখ্যানের দিকে একটু দৃষ্টি ফেলি, তাহলে দেখতে পাবো দেশের মাঝে নারী কিংবা কিশোরী নির্যাতন কোভিড-১৯ ভাইরাসের মত ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। সংবাদ ভাষ্যমতে শুধুমাত্র আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর শৈথিল্যের জন্য ৮ মাসে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৮৮৯টি এবং যৌতুকের ঘটনা ঘটেছে ১৬৩টি। সংবাদ পত্রে প্রকাশিত এক পরিসংখ্যানে বলা হয় যে, আইন ও শালিস কেন্দ্র হতে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী চলতি বছরের জানুয়ারি হতে আগস্ট মাস পর্যন্ত সময়ে ৮৮৯ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। তার মধ্যে গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১৯২ জন নারী।
শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৬৬ জন নারী। ধর্ষণের পর মৃত্যু হয়েছে ৪১ জনের। ধর্ষণের পর আতœহত্যা করেছেন ৯ জন। ধর্ষণের চেষ্টা করা হয় ১৯২ জন নারীকে। গত ৮ মাসে স্বামীর নির্যাতনে মারা যান ১৬৩ জন নারী। শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়ে ৫৫ জন নারী মারা যান। এসিড হামলার শিকার হন ১৭ জন নারী। শুধুমাত্র নারীদের উপরই যে এমন ভয়াবহ নির্যাতন হয়ে থাকে তা নয়। পরিসংখ্যান বলছে আমাদের কন্যা শিশুরাও যৌন সহিংসতার শিকার হয়ে থাকে। বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামে দেয়া তথ্যমতে গত জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত ৩২৪ জন কন্যা শিশু ধর্ষণের শিকার হয় এবং যৌন নির্যাতনের শিকার হয় ১০৪ জন শিশু।

 

ছবি- নারী নির্যাতনের দৃশ্য (প্রতিকী ছবি)।

আমরা যদি উপরের পরিসংখ্যানের একটা যৌক্তিক ব্যাখ্যা করতে যাই, তাহলে দেখতে পাব দেশের মাঝে নারী নির্যাতন, কিশোরী ও কন্যা শিশু নির্যাতন জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই নির্যাতন বাড়ছে এই জন্য যে, দেশের এক শ্রেণির রাজনৈতিক নেতাদের বখাটেদের দলে টানার জন্য এবং অনেক ক্ষেত্রে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অবহেলা কিংবা কর্তাব্যক্তিদের ইচ্ছাকৃত অবহেলা পরিলক্ষিত হয় বখাটেদের দৌড়াত্বের ক্ষেত্রে। বখাটেদের দ্বারা আক্রান্ত হয়ে দেশের কিশোরী/তরুণীরা আতœঘাতী হয়ে থাকে কিংবা বখাটেদের হামলায় মৃত্যুবরণ করে থাকে। আমরা প্রায়ই পত্র-পত্রিকায় দেখে থাকি, কিন্তু সমাধানের ব্যাপারে যাদের কিছু করার কথা তারা কিছুই করছেন না। আমাদের এক শ্রেণির রাজনীতিবিদরা এতোটাই লাগামহীন হয়েছেন যে, তারা তাদের রাজনৈতিক ভিত্তিকে শক্ত কাঠামোর মধ্যে দাঁড় করাবার জন্য এমন সব লোকদের কিংবা বখাটে সন্ত্রাসীদের দলে টানেন, যা দেখে সত্যিকার অর্থে যারা দেশের জন্য কিছু করতে চান সেইসব হৃদয়বান রাজনীতিবিদরা রাজনীতির পথ আর ধরেন না। কেননা সচেতন ব্যক্তিবর্গরা ভালো করেই জানেন, রাজনীতির মাঠে এখন এমন সব মানুষের আমদানি হয়েছে, যাদের ঠেলায় ভালো মানুষরা মানুষের জন্য কিছু করতে পারবেন না। একটা কথা সবারই মনে রাখা উচিত দেশের রাজনীতির মাঠে যখন একশ্রেণির নষ্ট রাজনীতিকদের প্রভাব প্রতিপত্তি বেড়ে যায়, তখন নীলা রায়ের মতো কিশোরীরা রাস্তার বখাটের দ্বারা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করবেই। তা রাষ্ট্র কিংবা কেউ ঠেকাতে পারবে না। কেননা রাজনীতির মাঠে নষ্ট রাজনৈতিকরা নিজেদের পদ পদবী ঠিক রাখার জন্য আজ যা ইচ্ছা করতে পারেন। এমনকি নিজের আপন বন্ধু কিংবা সন্তানকেও যদি বলি দিতে হয়, তা-ও তারা করতে পারবেন। একটা বখাটে কিভাবে সাহস পায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে আমাদের কন্যাদের উত্যক্ত করার কিংবা গৃহবধূকে ধর্ষণ করার কিংবা ছাত্রীদের জড়িয়ে ধরার কিংবা ভাইয়ের হাত থেকে জোর করে টেনে-হিঁচড়ে তুলে নিয়ে হত্যা করার। বখাটের দল তখনই সাহস পায়, যখন একটা বখাটে কিংবা বখাটের দল বুঝে যে, সে যতই দূর্বৃত্তপনা করুক না কেন, একজন পর্দার আড়াল থেকে তাকে কিংবা তাদেরকে কেউ না কেউ কিংবা একজন রক্ষা করে যাবেই। এমনি এমনি সাভারের মিজানুর কিংবা সিলেট এম.সি. কলেজের কতিপয় ছাত্র নামধারী ধর্ষক কিংবা বরগুনার রিফাত হত্যা মামলার আসামী ক্রসফায়ারে নিহত নয়ন বন্ড সৃষ্টি হয় না। তাদের মত ভয়ঙ্কর মানুষদেরকে এক শ্রেণির ক্ষমতাবানরাই সৃষ্টি করে থাকেন। বখাটেদের জন্য পর্দার আড়ালে থাকা একশ্রেণির ক্ষমতাবনরা সাহস না যোগালে বখাটে কিংবা সন্ত্রাসীরা কি সাহস পাবে তাদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড কিংবা বখাটেপনা চালিয়ে যাওয়ার?
এখন স্বাভাবিকভাবেই একটা প্রশ্ন আসতে পারে এই যে এম.সি কলেজের ছাত্রাবাসে গৃহবধূ ধর্ষিত হলো কিংবা আপন দলের বড় ভাই দ্বারা একজন ছাত্রী ধর্ষিত হলো কিংবা নীলা রায়ের মতো একজন কিশোরী চলার পথে কিংবা ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা করতে গিয়ে রাস্তার বখাটের দ্বারা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে, তার দায় কি রাষ্ট্রের নয়? আমাদের সমাজটা কি এতোটাই পঁচে গেছে যে একজন ভাই তার বোনকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে নির্ভয়ে যেতে পারবে না কিংবা একজন স্বামী তার প্রিয়তমা বধূকে নিয়ে কোথাও বেড়াতে যেতে পারবে না কিংবা একজন ছাত্রী কি তার নিজ দলের বড় ভাইদের কাছে নিরাপদ থাকবে না। সাধারণ মানুষ মনে করে রাষ্টের কর্তা ব্যক্তিরা তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছেন না বলেই আমাদের পথ-ঘাট, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাস সবকিছু ধর্ষক-দুর্বৃত্তদের দখলে চলে যাচ্ছে। তাই দেশবাসী মনে করেন আমার এই দেশমাতৃকাকে ধর্ষক ও বখাটে শূন্য করতে এবং আগামী প্রজন্মের জন্য নিরাপদ বাসযোগ্য করার জন্য রাষ্ট্রের কর্তাব্যক্তিদেরই দায়িত্ব নিতে হবে।

লেখক : শরদিন্দু ভট্টাচার্য্য টুটুল
আইনজীবি, কবি ও গল্পকার
কালীবাড়ী সড়ক, হবিগঞ্জ।